অনুগমন ব
অনুগমন ব
--
ব=ব্- অন করে যে, বাহী।
ইংরেজীসহ অনেক ভাষাতেই দু'তিন রকমের 'ব' আছে।
বাংলা বর্ণমালায় প বর্গে আছে ব।আবার ষ, র,ল,এর পরবর্তী ব যাকে অন্তঃস্থ বলা হয়।
ব এর রকম দুই ধরনের হলেও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বলা ও লেখায় একই রকম উচ্চারণ ও লেখা।
আমার ছোট বেলায় অন্তঃস্থ ব পড়তাম।আমার মনে প্রশ্ন জাগতো ব একই রকম দেখতে, লেখতেও একইরকম তবে একটাকে কেন অন্তঃস্থ বর্ণ বলবো!
উত্তর পাই নি কোথাও।
বর্তমানে পাঠ্যবইয়ে ৯ বর্ণের মতো অন্তঃস্থ ব বর্ণটিও তুলে দেয়া হয়েছে।
তাহলে বর্ণ দুটি কি একই?
সংস্কৃতকারগণ দুরকম ব কে দুভাবে লিখেছেন,উচ্চারণ ও দুভাবেই করেছেন।
'ব' লেখার ক্ষেত্রে তারা দেবনাগরী লিপি অর্থাৎ ব কে পেটকেটে লিখতেন ( এই বর্ণটি রিদমিক কি বোর্ডে নেই বলে লেখা যাচ্ছে না) এবং অন্তঃস্থ ব কে ব এর মতই লিখতেন,উচ্চারণও এমনই করতেন।
বাংলাভাষার প্রাচীন ব্যাকরণবিদগণ সংস্কৃত রীতি অনুসরণ করে বর্গীয় ব কে রেখেছেন ফ এর পরে এবং অন্তঃস্থ ব কে রেখেছেন ল এর পরে।
শ্রীহরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার বঙ্গীয় শব্দকোষ অভিধানে 'অন্তঃস্থ ব কে প- বর্গে বর্গীয় ব হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন।
** বর্গীয় ব ও অন্তঃস্থ ব এর পার্থক্য ও মিল কোথায়?
বাংলা বর্ণমালায় বর্ণগুলি একটি ক্রম অনুযায়ী সাজানো হয়েছে।
ক্রমটি দেখে নেই---
ক- বর্গঃ কোনো কাজ করা
চ- বর্গঃকৃত কর্মফলকে চয়ন করা
ট- বর্গঃচয়ন ঠিকঠাক হলে তার টঙ্কারিত হওয়া
ত- বর্গঃকর্মফলটি তারিত হয়ে প্রদত্ত(দ) ও ধারিত (ধ) হওয়া
প- বর্গঃসেই কর্মফল লাভ করা,পাওয়া বা পালন করা, পালনস্থিত(ফ) হওয়া
তারপর আসে সেই গৃহীত -পালিতের(বা উৎপাদিতের বা দ্বৈতাদ্বৈত সত্তাটির) বয়ন-বর্ধন-বহন প্রভৃতি ক্রিয়ার কথা বা ব এর কথা।
অর্থাৎ ব -এর অর্থ হতে পারে (দ্বৈতাদ্বৈত সত্তাটিকে) বৃদ্ধিসাধনপূর্ব্বক বহন করা।
* অন্তঃস্থ ব এর ক্ষেত্রে বর্ণটি তৈরি হয়েছে উ বা ঊ+ অ প্রভৃতি স্বরবর্ণ যোগ করে।যার মানে হল ' তুলে রাখা', সেটি কাঁধে তুলেও হতে পারে বা অন্য কোনো স্থানেও হতে পারে।
লোকে বহন করে- মাথায়,কাঁধে,পিঠে,হাতে।
সেক্ষেত্রে অন্তঃস্থ ব মানে হল বহন করা।
* সুতরাং বর্গীয় ব ও অন্তঃস্থ ব এর পার্থক্য হল
বর্গীয় ব - বৃদ্ধিসাধনপূর্ব্বক বহন করে
অন্তঃস্থ ব- (তুলে) বহন করে। বহন করলেও জানিয়ে রাখে যে বহনের পথ দুরকম,এবং বহন সে প্রচলিত পথে চালায় না,নতুন পথ ধরে বহন করে নিয়ে যায়।অন্তঃস্থ ব প্রচলিতের পাশাপাশি অন্য পথের দিকেও নির্দেশ করে কার্যত দুরকম পথের কথা বলে,যা আমরা পাই ' বা কিংবা অথবা শব্দে" যেখানে আমরা 'এটা' এবং 'ওটা' দুটোকেই বা - এর দুদিকে পাই।
'বনাম ( অন্য নাম)'শব্দে সেই ব- কে পাই 'অন্য'অর্থে।
তার মানে অন্তঃস্থ ব একই সঙ্গে ' দুই' অর্থটিকেও তার ভিতরে অব্যক্ত ভাবে ধরে রাখে।
দুটো ব এর মধ্যে মিল হল দুজনেই বহন করে।
কিন্তু বর্গীয় ব অতিবহন করে,এবং অন্তঃস্থ ব শুধুই বহন করে এবং কখনো তা দ্বিতীয় পথে।
একটি ব অতিবাহী এবং অন্যটি বাহী।এই দুই ব এর দুইটি রূপ অনেক জটিলতার সৃষ্টি করে বিধায় এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দুটো ব কে এক করে ফেলা হয়েছে।
সেই এক করে ফেলার কারণটি রয়েছে বর্গীয় ব ও অন্তঃস্থ ব এর অর্থের ভিতরে একই ক্রিয়ার গভীর রূপ থেকে শুরু করে অগভীর রূপ পর্যন্ত সর্বরূপের ধারণক্ষমতায়।
অমরকোষ এর মতে - অশ্ব,গন্ধর্ব্ব,
কম্বু,দ্বিজিহ্ব,পূর্ব্ব এই শব্দগুলির শেষে আছে বর্গীয় ব।
এবং দব,দাব,ভব,সচিব,ধব,অবি,হব,ভাব,প্রসব, নিহ্নব,,উৎসব, অনুভাব,প্রভব,পারশব,ধ্রুব,স্ব,ন
ীবী,শিবা,দ্বদ্ধ,সত্ত্ব,ক্লীব এই শব্দগুলির শেষে যে ব যুক্ত তা হল অন্তঃস্থ ব।
সবশেষে আমরা সংক্ষেপে জানব অতিবহনের ব্যাপার যেখানে স্পষ্ট সেখানে ব-= অতিবহন করে যে,অতিবাহী
আর বহনের ব্যাপার যেখানে সাধারণভাবে বা অনির্দিষ্টভাবে আছে
সেই ব -= বহন করে যে; বাহী।
---- কৃতজ্ঞতাঃ বঙ্গীয় শব্দার্কোষ।
১৬/০৪/২০১৯
--
ব=ব্- অন করে যে, বাহী।
ইংরেজীসহ অনেক ভাষাতেই দু'তিন রকমের 'ব' আছে।
বাংলা বর্ণমালায় প বর্গে আছে ব।আবার ষ, র,ল,এর পরবর্তী ব যাকে অন্তঃস্থ বলা হয়।
ব এর রকম দুই ধরনের হলেও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বলা ও লেখায় একই রকম উচ্চারণ ও লেখা।
আমার ছোট বেলায় অন্তঃস্থ ব পড়তাম।আমার মনে প্রশ্ন জাগতো ব একই রকম দেখতে, লেখতেও একইরকম তবে একটাকে কেন অন্তঃস্থ বর্ণ বলবো!
উত্তর পাই নি কোথাও।
বর্তমানে পাঠ্যবইয়ে ৯ বর্ণের মতো অন্তঃস্থ ব বর্ণটিও তুলে দেয়া হয়েছে।
তাহলে বর্ণ দুটি কি একই?
সংস্কৃতকারগণ দুরকম ব কে দুভাবে লিখেছেন,উচ্চারণ ও দুভাবেই করেছেন।
'ব' লেখার ক্ষেত্রে তারা দেবনাগরী লিপি অর্থাৎ ব কে পেটকেটে লিখতেন ( এই বর্ণটি রিদমিক কি বোর্ডে নেই বলে লেখা যাচ্ছে না) এবং অন্তঃস্থ ব কে ব এর মতই লিখতেন,উচ্চারণও এমনই করতেন।
বাংলাভাষার প্রাচীন ব্যাকরণবিদগণ সংস্কৃত রীতি অনুসরণ করে বর্গীয় ব কে রেখেছেন ফ এর পরে এবং অন্তঃস্থ ব কে রেখেছেন ল এর পরে।
শ্রীহরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার বঙ্গীয় শব্দকোষ অভিধানে 'অন্তঃস্থ ব কে প- বর্গে বর্গীয় ব হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন।
** বর্গীয় ব ও অন্তঃস্থ ব এর পার্থক্য ও মিল কোথায়?
বাংলা বর্ণমালায় বর্ণগুলি একটি ক্রম অনুযায়ী সাজানো হয়েছে।
ক্রমটি দেখে নেই---
ক- বর্গঃ কোনো কাজ করা
চ- বর্গঃকৃত কর্মফলকে চয়ন করা
ট- বর্গঃচয়ন ঠিকঠাক হলে তার টঙ্কারিত হওয়া
ত- বর্গঃকর্মফলটি তারিত হয়ে প্রদত্ত(দ) ও ধারিত (ধ) হওয়া
প- বর্গঃসেই কর্মফল লাভ করা,পাওয়া বা পালন করা, পালনস্থিত(ফ) হওয়া
তারপর আসে সেই গৃহীত -পালিতের(বা উৎপাদিতের বা দ্বৈতাদ্বৈত সত্তাটির) বয়ন-বর্ধন-বহন প্রভৃতি ক্রিয়ার কথা বা ব এর কথা।
অর্থাৎ ব -এর অর্থ হতে পারে (দ্বৈতাদ্বৈত সত্তাটিকে) বৃদ্ধিসাধনপূর্ব্বক বহন করা।
* অন্তঃস্থ ব এর ক্ষেত্রে বর্ণটি তৈরি হয়েছে উ বা ঊ+ অ প্রভৃতি স্বরবর্ণ যোগ করে।যার মানে হল ' তুলে রাখা', সেটি কাঁধে তুলেও হতে পারে বা অন্য কোনো স্থানেও হতে পারে।
লোকে বহন করে- মাথায়,কাঁধে,পিঠে,হাতে।
সেক্ষেত্রে অন্তঃস্থ ব মানে হল বহন করা।
* সুতরাং বর্গীয় ব ও অন্তঃস্থ ব এর পার্থক্য হল
বর্গীয় ব - বৃদ্ধিসাধনপূর্ব্বক বহন করে
অন্তঃস্থ ব- (তুলে) বহন করে। বহন করলেও জানিয়ে রাখে যে বহনের পথ দুরকম,এবং বহন সে প্রচলিত পথে চালায় না,নতুন পথ ধরে বহন করে নিয়ে যায়।অন্তঃস্থ ব প্রচলিতের পাশাপাশি অন্য পথের দিকেও নির্দেশ করে কার্যত দুরকম পথের কথা বলে,যা আমরা পাই ' বা কিংবা অথবা শব্দে" যেখানে আমরা 'এটা' এবং 'ওটা' দুটোকেই বা - এর দুদিকে পাই।
'বনাম ( অন্য নাম)'শব্দে সেই ব- কে পাই 'অন্য'অর্থে।
তার মানে অন্তঃস্থ ব একই সঙ্গে ' দুই' অর্থটিকেও তার ভিতরে অব্যক্ত ভাবে ধরে রাখে।
দুটো ব এর মধ্যে মিল হল দুজনেই বহন করে।
কিন্তু বর্গীয় ব অতিবহন করে,এবং অন্তঃস্থ ব শুধুই বহন করে এবং কখনো তা দ্বিতীয় পথে।
একটি ব অতিবাহী এবং অন্যটি বাহী।এই দুই ব এর দুইটি রূপ অনেক জটিলতার সৃষ্টি করে বিধায় এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দুটো ব কে এক করে ফেলা হয়েছে।
সেই এক করে ফেলার কারণটি রয়েছে বর্গীয় ব ও অন্তঃস্থ ব এর অর্থের ভিতরে একই ক্রিয়ার গভীর রূপ থেকে শুরু করে অগভীর রূপ পর্যন্ত সর্বরূপের ধারণক্ষমতায়।
অমরকোষ এর মতে - অশ্ব,গন্ধর্ব্ব,
কম্বু,দ্বিজিহ্ব,পূর্ব্ব এই শব্দগুলির শেষে আছে বর্গীয় ব।
এবং দব,দাব,ভব,সচিব,ধব,অবি,হব,ভাব,প্রসব, নিহ্নব,,উৎসব, অনুভাব,প্রভব,পারশব,ধ্রুব,স্ব,ন
ীবী,শিবা,দ্বদ্ধ,সত্ত্ব,ক্লীব এই শব্দগুলির শেষে যে ব যুক্ত তা হল অন্তঃস্থ ব।
সবশেষে আমরা সংক্ষেপে জানব অতিবহনের ব্যাপার যেখানে স্পষ্ট সেখানে ব-= অতিবহন করে যে,অতিবাহী
আর বহনের ব্যাপার যেখানে সাধারণভাবে বা অনির্দিষ্টভাবে আছে
সেই ব -= বহন করে যে; বাহী।
---- কৃতজ্ঞতাঃ বঙ্গীয় শব্দার্কোষ।
১৬/০৪/২০১৯
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পি পি আলী আকবর ১৭/০৫/২০১৯ভালো লাগলো
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৫/০৫/২০১৯ভালো।