তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথা
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথা,মর্মে আমার আছে সে বারতাঃ
---
কেউ বলে কেউ শোনে।
কেউ বলে কেউ কেউ শোনে।
কেউ বলে সবাই শোনে।
কেউ কেউ বলে কেউ শোনে না।
কেউ কেউ বলে কেউ কেউ শোনে।
সবাই বলে কিন্তু কেউ শোনে না।
বলাটা প্রাসঙ্গিক,চিত্তাকর্ষক এবং যৌক্তিক হতে হবে,উপস্থাপনটা হতে হবে শৈল্পিক।
শোনা এবং না শোনার মধ্যে,মানা এবং না মানার মধ্যে আছে নিজের মতাদর্শ,ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টিগত লাভালাভের হিসেব।
কেউ কাউকে ছাড় দিতে চায় না যদি সে ঘোর ত্যাদর টাইপ হয়।আমি যাহা বলি তাহাই চূড়ান্ত,ইহার উপরে নাই।
আমি ডিম খাই না,এলার্জি।তুমি খাও, তোমার ভালো লাগে,এলার্জিও নাই।তো আমি খাইনা আমার ব্যপার এবং একদমই ব্যক্তিগত- এ নিয়ে কারও মাথাব্যথার কোনও কারণ থাকার কথা নয়।
কোনও কিছু ধরে রাখতে হবে আজীবন? কোনও কিছু কি ধরে রাখা যায় পৃথিবীতে?
লেখার বিষয়ে বলি,কিছু লিখলেই এটার শানেনযুল খুঁজতে হবে?
কোনও গল্প লিখি তো নায়িকা আমি হয়ে যাবো কেন?
কবিতা লিখি তো এর পিছনে আমিই থাকবো,থাকবে আমারই কোনও ব্যক্তিগত বিষয়- এ ধারণা হবে কেন?
আমি লিখি ভালো লাগে লিখতে,আমি লেখক এ দাবী আমি করি না,শুধু মাত্র ভালো লাগে বলেই সময় পেলেই অক্ষরগুলো সাজাই একের পর এক।
আমি সারাদিন লিখি,প্রচুর লিখি,সব কি সবাই দেখে?
আমার যা ইচ্ছে হয় তাই শুধু পোস্ট করি।
আমি কি কাউকে দিব্যি দেই পড়ার জন্য!?
আমি তো আমার অনেক ফ্রেন্ডদের লেখা দেখি না,মানে সামনে আসে না।এতে কি কোনও ক্ষতি আছে?
"মান" নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম।
মান শব্দটির অনেক অর্থ আছে।মানের আগে বিভিন্ন উপসর্গ যুক্ত হয়ে অনেক মানসম্পন্ন ও বিভিন্ন ধরনের মান প্রকাশক শব্দ তৈরি হয়।
মানের সবচে কাছাকাছি অর্থ আমার মনে হচ্ছে এমন একটি নির্ণায়ক যা দিয়ে কোনও কিছুর যোগ্যতার মাত্রা পরিমাপ করা যায়,যেমন তুলাদণ্ড,মানদণ্ড।
মান নির্ধারণ হবে সমজাতীয় বস্তুর ক্ষেত্রে একই মাত্রার।তুলনা করতে হলে সমগোত্রীয় হতে হবে অবশ্যই।
এখন কথা হচ্ছে কোনও মানুষ নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবতেই পারে, হয়তো তার মানে সে শ্রেষ্ঠ।কিন্তু অনেকের মাঝে অন্যতম হতে হলে সেই অনেকের সাথে একই মাত্রার মানদণ্ড অবশ্যই অন্যতম বিবেচ্য।
সমমানের,সমগোত্রীয়দের মাঝেই প্রতিযোগিতা হয়।
তোমার হাতে তুমি সাড়ে তিনহাত,আমার হাতে আমি আড়াই হাত নই,সাড়ে তিন হাতই।
এগুলো হলো কথার সাথের বার্তা,কথার সাথে বার্তা না থাকলে কি কথাবার্তা হয়?
কথা হয় তখন প্রলাপ- কাজেই বলার পিছে কারণ আছে এবং সেটা উহ্যই থাকুক।
আমরা কোথায় আছি?
আসলে আমরা কোথায় নেই?
যাবতীয় সব বিষয়ে আমরাই শ্রেষ্ঠ হতে চলেছি।শ্রেষ্ঠ হলে বিখ্যাত বা বিশেষ ভাবে খ্যাত হওয়া যায়।
আরে ভালো কাজ করেও বিখ্যাত হওয়া যায় আবার মন্দটা করেও বিশেষ ভাবে খ্যাত হওয়া যায়।সবটাই তো বিখ্যাত।
---- একজন প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে আমি মান কথাটি নিয়ে গভীরভাবে ভাবছি,আসলে ভাবছি ঠিক নয়, আসলে মান কথাটিই আমাকে ভাবাচ্ছে বলাই সঠিক এক্ষেত্রে হবে।
আমি কথার বুননে দক্ষ শিল্পী নই,আমি বলি সাদামাটা ভাবে,জলঘোলা করে লাভ নেই।
আমাদের এখন মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে- সবাই ভাবছে, আমিও ভাবছি।
টার্গেট ২০১৬ - ২০৩০।
পরিকল্পনার বিষয়ে কিছু লিখেছি কি! পরি থাকে যে কল্পনায়।
পরি সার্বিকতাকে বোঝায়, যদিও এটি একটি উপসর্গ এবং প্রচলিত আছে উপসর্গের অর্থ নাই।
পরিকল্পনা কিন্তু বৃহৎ একটি বিষয়।
এ বিষয়গুলো নিয়ে লেখার পরিকল্পনা আছে,এ নিয়ে কল্পনা করছি বহুকিছুই।
ভুল কিছু মনের ভুলে লিখে থাকলে অবশ্যই মার্জনীয়।
----২১/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথা(দুই)
-------
কোনও কিছুকে তার নির্দিষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে হলে লক্ষে পৌঁছানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট মাপকাঠি,যোগ্যতা বা মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হয় এবং তা অর্জনও করতে হয় এবং সেটা হচ্ছে ঐ লক্ষ অর্জনের মান।এই মান আবার সাময়িক হয়,চূড়ান্তও হয়( আমার মতে)।
মান শব্দটির অর্থ জেনে নিই--
**
মানঃ(যুক্ত অর্থবাচক প্রত্যয়বিশেষ,মানকচু ও তার গাছ,মাত্রা,ওজন করা,প্রকৃতমূল্য,উৎকর্ষ বা অপকর্ষের পরিমাণ,আদর্শ,সম্মান,গৌরব)মান্ ( বাংলা একাডেমী উচ্চারণ অভিধান)
**
বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ বলছেন--
মান= মন হইতে জাত,
" আমার সমান কেহ নাই"- এইরূপ মনন,
যাহার দ্বারা পরিমাপ সাধিত হয়।
মানঃপূজা,চিত্তসমুন্নতি,আপনার প্রতি পূজ্যতাবুদ্ধি,আত্মসম্মানবোধ,গ্রহ,অববোধ,জ্ঞান,
পরিমাণ,উন্মান ইত্যাদি।
মন একটি যন্ত্র,সে মন্ ক্রিয়া ( পরিমাপ), তার ফলে যে ফল পায়,তাকেও মন বলে।এই মন বা পরিমাপিত ফলটি যখন কোনো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়,তখন সেই পরিমাপিত -ফলস্বরূপ মন-এর সেই প্রযুক্ত রূপটিকে মান বলে,তা সে যে প্রকারেই হোক।
মন থেকে জাত মান,মনে বহু কিছুই জন্মে,তাই বহু কিছুকেই মান বলে অর্থাৎ মানের বহুবিধ অর্থ আছে।
মানুষের দেহ ও মন চলে যার নিয়ন্ত্রণে তার নাম হলো " আমিত্ববোধ" বা "আত্মা"।
মনের নিয়ন্ত্রণ করে অন্তঃকরণ যাকে মনই বলে।
অন্তঃকরণে থাকে মন ও বুদ্ধি,
মন দ্বারা পরিচালিত হয় মনন-বৃত্তি যেখানে মনের নির্দেশে চিত্তের অনুসন্ধান ও অহঙ্কার -এর ফলাফল সংগ্রহের কাজ চলে।এটাকে ঘরোয়া বলা যায়।
বুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত বুদ্ধি- বৃত্তিতে বুদ্ধির নির্দেশে চিত্তের অনুসন্ধান ও অহঙ্কার-এর ফলাফল সংগ্রহের কাজ চলে।এটাকে যান্ত্রিক বলা যায়।
ঘরোয়া হলো জ্ঞান আর যান্ত্রিক হলো দক্ষতা।
**
কোনও কিছুকে মানসম্মত করতে হলে তার প্রেক্ষিত,সামগ্রিক পরিবেশ,ভৌত- অবকাঠামো,বেষ্টিত জনবল বা দ্রব্যাদি, সামগ্রিক পরিকল্পনা সবকিছুকেই মানসম্মত হতে হবে।
শুধু কথায় কি চিড়া ভিজে? চিড়া ভিজাতে গেলে পানি আবশ্যক।পানির পরিবর্তে দুধও ব্যবহার করা যায়।তবে তা খাঁটি হতে হবে,পানিও বিশুদ্ধ হতে হবে তা নাহলে পেট খারাপ হবে চিড়া খেয়ে।
**
বলবো কি আর! ভেজাল খেয়ে খেয়ে আমাদের এমন অবস্থা খাঁটি কিছুই সয়না,না পেটে না মনে।
মন্দ কিছু দেখলে স্বাভাবিক মনে হয় যেন এটা হওয়ারই ছিলো,যদি অন্যথা হয়?
ভালো সব কিছুতেই মনটা খু্ঁতখুঁত করে,কিন্তু খুঁজে,কারণ ভালোটা যে দেখে অভ্যস্থ নই।
ঘিয়ে কি কাঁটা থাকে? থাকেনা,মাছের থাকে কাঁটা।
কিন্তু আমাদের স্বভাব এমন হয়েছে এখন মাছ রেখে ঘিতে কাঁটা খুঁজি।
**
তুমি কেমন?
আমি যেমন।
তুমি আমার কাছে তেমনই যেমন আমার কাছে আমি,অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষ নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে অন্যকে বিচার করে,ফলে ভুলটা থাকে সে বিচারে।
**
কথা ঘুরে নাই,মান নিয়ে কথা আরও আছে।
আসছি আবার।
২২/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথা( তিন)
---
মান নিয়ে কথা বলছিলাম,মান নিয়ে আরও কত কথাই বলা যায়-অনুমান করে সে, যে ভাগটা পরিমাণে কম।এটা প্রমাণ হলো, অপমান না করে সম্মান দেখিয়ে বিমানে করে চলে গেলো,কারও অভিমান প্রতীয়মান হতেই পারে এতে অন্য কারও মান কি আর অবমান হয়?
আছে স্থানীয় আর স্বকীয় মান।
আমি আসলে মানসম্মত শব্দটি নিয়েই বলতে চাই।
মান বুঝেছি,সম্মতটা আসলে কি?
**সম্মত হলো= স্বীকৃত,অনুমোদিত,অভিপ্রেত,ইচ্ছ
ুক,রাজি
( বাংলা একাডেমী)
** সম্মত=অনুমত,স্বীকৃত,রাজী, ইচ্ছুক।
( ইংলিশ বাংলা অভিধান)
**
কোনও কিছু মানসম্মত হতে হলে তার প্রাসঙ্গিক উপকরণগুলো মানসম্মত হতে হবেই।
যেমন আপনি একটি দ্বি-তল বাড়ি করবেন।এখন যে জমিতে করবেন সেটা ভেজালমুক্ত হতে হবে প্রথমেই,সয়েলটেস্ট করে বুঝতে হবে সেটা দ্বি-তল ভবনের উপযোগী কিনা।প্রয়োজনীয় টাকা,সময় লোকবল লাগবে শুধু মেটেরিয়ালস যোগানো ও দেখভাল করার জন্য।ভালো স্থপতি, মিস্ত্রী, রড,সিমেন্ট,পাথর,বালু,পানির ব্যবস্থা,বাঁশ সহ যাবতীয় যা কিছু আছে সবই পারফেক্ট বা মানসম্মত হতে হবে।
যেমন গুড় তেমন পিঠা তাই কোনও একটির ঘাটতিতেও আপনার দ্বি-তল মানসম্মত অর্থাৎ আপনি যেমনটি চেয়েছিলেন তেমনটি হবে না।
মানসম্মত তাই উপযুক্তের জন্য উপযুক্ত।
মানসম্মত শিক্ষার জন্য কি চাই!
কি কি আনুষঙ্গিক বিষয়াদি প্রয়োজন,কি কি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে তা ভাবা জরুরী।
হুট করে চাপিয়ে দিলে চাপাচাপি হবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ অর্জন হবে না।
হ্যাঁ,আর সেজন্যই দরকার পরিকল্পনা।পরিকল্পনা পরিকল্পনামাফিক করতে হবে বাস্তবতার আলোকে।
**
আপনি দেখলেন আপনার প্রতিবেশী হাঁস পালন করেন,প্রতিদিন প্রচুর ডিম বিক্রি করে বেশ আয় করছেন,আপনি ভাবলেন আপনিও হাঁসের খামার করবেন।এ থেকে আপনি কি পরিমাণ লাভ করবেন,কি পরিমাণ খাটনি হবে তাও ভাবছেন।তারপর সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপনিও এটা করবেন- এ পর্যন্ত আপনি কল্পনায় ছিলেন।
আপনি খাতা নিলেন,কাজের ছক করলেন,একটার পর একটা ধাপগুলো সাজালেন ,কিভাবে এটা বাস্তবায়ন করবেন,- আপনি এখন পরিকল্পনায় আছেন।
**
একটি কাজের সুষ্ঠু সমাপ্তি নির্ভর করবে তা সম্পাদনের জন্য গৃহীত সুষ্ঠু পরিকল্পনার উপর।আমরা জানি, " বড় গাছের উপর দিয়েই ঝড় বয়ে যায়"।
ঝড়ের গতিপ্রকৃতিই হয়তো এমন যে সে তার যাত্রাপথে পাওয়া সব বড় কিছুকেই ছুঁয়ে দিয়ে যেতে চায়।তাই প্রাকৃতিক ঝড়ের তাণ্ডব বড় গাছের উপর দিয়েই যাবে।আর পানি গড়াবে নিচের দিকে।
মানসিক ঝড় যায় মাথার উপর দিয়ে।মানসিক ঝড়ের কারণ থাকবে দৃশ্যমান অথবা অদৃশ্য,সে ঝড়ের সূত্রপাত পারিবারিক,সামাজিক যে কোনও একটা পর্যায় থেকে হতে পারে।মাথায় চিন্তনের কাজটা হয় কাজেই ঝড়টা মাথার উপর দিয়েই যাবে।
রোগ-শোক,মারামারি, পিটাপিটি বা যে কোনও অনৈতিক আক্রমণে দেহ আক্রান্ত হলে দৈহিক ঝড় বয়ে যাবে।
ঝড়গুলো ঝটিকার মতই আসে,আবার চলে যায়।বদলে দিয়ে যায় অনেক কিছু,আবার ধ্বংস করেও যায় অনেক কিছু,তখন আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হয়।
নতুন কিছু যে শুরু করবেন সেটা আপনি ভাবলেন,চিন্তা করলেন।আপনার টিনের তৈরী চাল ঝড়ে নিয়ে গেলো,আপনি ভাবছেন ইটের তৈরি ছাদ হলে উড়িয়ে নিতো না ঝড়ে।আপনার চোখের সামনে ইটের দালান ভাসছে,আপনি ভাবছেন ওরকম একটা দালান আমার যদি হতো,আমি এরকম একটি দালান তৈরী করবো-- এতদূর পর্যন্ত যে আপনি ভাবলেন এটা হলো আপনার কল্পনা।
আর কল্পনাটিকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করতে হবে,বিভিন্ন পর্যায়টিকে যথাযথ ক্রম অনুযায়ী সাজাতে হবে, বড় কথা সমস্ত ব্যাপারটির সার্বিক একটি করণীয় স্থির করতে হবে এবং সেটাই হলো পরিকল্পনা।
কল্পনায় পরি থাকলেই বাস্তবে রূপান্তর করা সম্ভব,নয়তো নয়।
পরি কি?
পরি একটি উপসর্গ,বলা হয় উপসর্গের নিজস্ব অর্থ নেই,অন্য শব্দের পূর্বে যুক্ত হয় শব্দটির অর্থের পরিবর্তন,পরিবর্ধন বা সংকোচন করতে পারে।
কিন্তু বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ বলছেন " পর গতিশীল যাহাতে তাই পরি।এটি উপসর্গ এবং সে নিয়ম মেনেই চলে।পরির প্রথম অর্থ কালার্থক,দ্বিতীয় অর্থ স্থানার্থক।অস্তিত্বের বাইরে যা কিছু আছে তারাই পর।বাইরের সেই পরগুলি সক্রিয় থাকে পরিতে।"
তার মানে কোনো সত্তার সম্ভাব্য সামগ্রিকতায় পরি থাকে।
কাজেই পরিকল্পনা হলো সামগ্রিক কল্পনাটাকে আপনি যে ছকে রাখলেন।যে কল্পনায় সামগ্রিক কল্পনা থাকে তাই হলো পরিকল্পনা।
পরিকল্পনা করতে হবে চাহিদা ও বাস্তবতার সাথে সঙ্গতি রেখে।উদ্ভট কল্পনাকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য বহু উদ্ভট পরিকল্পনা গৃহীত হয় এবং বহু সময় আর অর্থ অপচয় শেষে তা পরিত্যক্ত হয়।আবার নতুন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয় বাস্তব প্রেক্ষিত বিচার না করেই।
তো শুরুটা হয়েছিলো ঝড় দিয়ে।আর পরিকল্পনা শুধু ঝড়ের পরে করতে হবে এমন কোনও কথা নেই।
যে কোনও সময়ে চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে যে কোনও পরিকল্পনা নেয়া যেতেই পারে।
তাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ অর্জনে যাবতীয় উপকরণ যথাযথ ব্যবহার করে পর্যায়ক্রমিকভাবে কাজ সম্পাদনের যে পর্যায়ক্রমিক রূপরেখা সেটাই পরিকল্পনা।
পরিকল্পনা লিখিত হয়,অলিখিতও হতে পারে।
লিখিত পরিকল্পনা গ্রহনযোগ্য সর্বাধিক, সর্বমহলে।
লিখিত পরিকল্পনা তিন ধরনের-
১।স্বল্প মেয়াদীঃছোট ছোট পরিকল্পনা- ১ ঘন্টা থেকে ১ বছর মেয়াদীও হতে পারে।
বিদ্যালয়ে অসংখ্য স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়।
যার ব্যাপ্তি ১ঘন্টা বা ১বছর মেয়াদীও হয়।
২।দীর্ঘমেয়াদীঃ এর ব্যাপ্তি ১ বছর থেকে ৫ বছর মেয়াদীও হতে পারে।
বিদ্যালয়ে এ ধরনের পরিকল্পনাও হয়ে থাকে।
৩। প্রেক্ষিত পরিকল্পনাঃ৫ বছর থেকে ২৫ বছর মেয়াদী পরিকলপনাকে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বলা হয়ে থাকে।
**
২০১৬ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নের যে পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে তা প্রেক্ষিত পরিকল্পনার অন্তর্ভূক্ত।
এই পরিকল্পনা প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে,যাবতীয় সমস্যা চিহ্নিত করে তা দূরীকরণের ব্যবস্থা করে ও বাস্তব পরিস্থিতির সঠিক আলোকে গৃহীত হয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস।
কোয়ান্টিটি নয় কোয়ালিটি বড় প্রয়োজন সর্বক্ষেত্রেই।
**
একটি গ্লাসে দুধ যদি অর্ধেকই থাকে তা যেন খাঁটি হয়,গ্লাস ভর্তি জল মেশানো দুধের কি প্রয়োজন?
--২২/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথা(চার)ঃ
------
মানসম্মত নিয়ে কথা বলছিলাম,
মানসম্মত পরিকল্পনার কথাও বলেছি।
**
আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রেই মানসম্মত পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে।স্বাস্থ্য বিভাগের একটি কর্মসূচী রয়েছে" পরিবার পরিকল্পনা "নামে।
পরিবার পরিকল্পনা শুধু একটি বিশেষ বিষয়ে প্রযোজ্য নয়,পরিবারকেন্দ্রিক সামগ্রিক বিষয় এতে জড়িত থাকবে।
পরিকল্পিত পরিবারে বাবা- মায়ের সাথে সন্তানের নিবিড় সম্পর্ক,বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে।সন্তানের অকপট ভাব বিনিময়ের দ্বিধামুক্ত পরিবেশ থাকবে,তখন সন্তানের ভেতর কোনও লুকোচুরি থাকবে না।কোনও অবাঞ্চিত,অযাচিত পরিস্থিতি সে মা বাবার অগোচর রাখবে না।পরিবার পরিকল্পনায় আমরা শুধু সন্তান সংখ্যা সীমিত রাখার বিষয়টি রেখেছি,আর সব বিষয় গৌণ হয়ে গেছে সন্তানকে শিক্ষা নামক বটিকাটি গেলানোর প্রতিযোগিতায় মেতে থেকে।
কেন ধর্ষণ ও সামাজিক অবক্ষয় ও অস্থিরতা আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে গেছে? মূল্যবোধে কেন ধ্বস নেমেছে? আমাদের পারিবারিক,সামাজিক বন্ধনগুলো শিথিল হয়ে গেছে বলে এবং এর পিছনে আরও অনেক কারণ আছে হয়তো বা।
কিন্তু আমার মতে এটাই মুখ্য কারণ।
**
স্কুল পর্যায়ে কেবল প্রধান শিক্ষক একা নন,বরং ম্যানেজমেন্টের সাথে জড়িত সবাই,ক্যাচমেন্ট এলাকার বাসিন্দা এবং অভিভাবক, শিক্ষক সমন্বয়ে যাবতীয় বিষয় মাথায় রেখে পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
"Nothing is old,everything should be new.
Human beings,human values the part of history, contemporary and future needs of humans through a well designed,active humanistic curriculum,use technology to leverage.
All and what more needs to be done?"
পরিকল্পনা প্রনয়ণঃ
1.What's need to be done?
2.What is new?
You are a man of today.
You want to give your children the best.
**
আকাশে পাখিরা কিভাবে দল বেঁধে উড়ে দেখেছেন? পাখিরা দল বেঁধে আকাশে উড়ে।তাদের আগে থাকে একটি পাখি।অন্য পাখিরা চারপাশ থেকে তাকে ঘিরে একটি বলয় তৈরী করে।নিরাপত্তা বলয়।প্রতিটি কাজে সফলতার জন্য একজন সেনাপতি বা নেতার প্রয়োজন হয়।তার চারপাশে থাকতে হয় অগণিত কর্মী যারা নেতাকে নিয়ে কাজ করবে,নেতৃত্বে থেকে নেতা সবাইকে নিয়ে কাজ করবে,কর্মীরা নেতাকে দিবে সাহস,অনুপ্রেরণা আর শক্তি যা একটি নিরাপত্তা বলয়ের মত।আর সেই কাজের সফলতার সমান অংশিদার সবাই,সবাই এর সুফল ভোগ করবে।
( অংশটুকু আমারই একটি পুরনো লেখা থেকে নেয়া)
**
প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে যে কোনও পরিকল্পনাও আমরা বিশ্বাস করি সারাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং সারাদেশের আঞ্চলিক প্রতিনিধিদের নিয়ে ব্যপক আলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমেই গৃহীত হয়।আঞ্চলিক প্রতিনিধি বলতে আমি বিকেন্দ্রিকরণ বুঝাতে চেয়েছি,সারাদেশের সব এলাকার পরিবেশ,সুযোগ সুবিধা,চাহিদা এক নয়।
পাহাড়ি অঞ্চলের একজন গ্রহনযোগ্য প্রতিনিধি বলতে পারবেন সেখানের সমস্যা ও সুযোগ এবং চাহিদার ব্যপারটি ভালো বলতে পারবেন ,হাওর অঞ্চলের প্রতিনিধি বলতে পারবেন সেখানে সমস্যার ধরণ কি,সুযোগ সুবিধা কি এবং চাহিদা কি,তেমনি বিভিন্ন ভৌগলিক পরিবেশে বিদ্যমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ কেবল সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষই বলতে পারবেন।
**
মানসম্মত শিক্ষা আমরা চাই,আমরা চাই বাস্তবতার আলোকে নেয়া একটি মানসম্মত পরিকল্পনা- যা আমরা প্রকৃত অর্থেই বাস্তবায়ন করতে পারি,কখনই করতে হবে বলে কোনও মতে করা নয়- আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
--২৩/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথা(পাঁচ)
----
স্কুলে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্নমুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
**
স্কুলভবনটি কেমন হবে?
অবশ্য শিশুদের উপযোগী ও আকর্ষণীয় ভবন হতে হবে,সামনে থাকবে পর্যাপ্ত খেলাধুলা ও সমাবেশ প্যাকমিটিং, মা সমাবেশ, পুরষ্কার বিতরণীসহ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান করার পর্যাপ্ত জায়গা।
শহরগুলোতে দেখা যায় সরকারি ও বিভিন্ন ক্যাটাগরীর স্কুল গিজগিজ করছে পাশাপাশি।অথচ স্কুল কোথায় স্থাপন করা যাবে তার একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে।
কে মানে নিয়ম।অথচ অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল আছে যেখানে খুবই জরুরী স্কুল তৈরি।সরকারি স্কুলই ভরসা যেখানে শিক্ষার্থীদের স্থান সংকুলান হয়না।
যারা বলেন আমরা শিক্ষানুরাগী, শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে আমরা সদা তৎপর সেজন্য কেজি,ইংলিশ,বাংল
িশ মিডিয়াম স্কুল তৈরি করছি,তারা কিন্তু ওসব প্রত্যন্ত এলাকায় স্কুল করেন না,মালকড়ি মিলবেনা।
আর বড় বড় শহরগুলোতে বড়লোকি স্কুলের দাপটে সরকারি স্কুলগুলো ক্রমশ ম্রিয়মান।
কেন একটি স্বাধীন দেশের শিশুরা একই ধরনের সিলেবাস,পদ্ধতি অনুযায়ী শিক্ষার সুযোগ পাবেনা?
আমাদের দেশে বিত্ত অনুযায়ী শিশুরা বিভিন্ন ক্যাটাগরীর শিক্ষা পাচ্ছে,শিশুরা শৈশব থেকেই বৈষম্যের মাঝে বড় হয়ে উঠছে।
স্কুল ভবন কোথাও নির্মাণকার্য সমাপ্তির আগেই ধ্বসে পড়ে।কখনও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভবনে ফাটল ধরে,ধ্বসে যায়।
একটি স্কুল ভবন নির্মাণে সরকারের প্রচুর টাকা লাগে,কেন ভবন হস্তান্তের পরপরই পলেস্তারা খসে যায়,ফাটল ধরে,পানি চুষে,ঝুঁকিপূর্ণ হয়?
স্কুলের ওয়াশব্লক- কেন পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সুষ্টু হয়না,কেন টিওবয়েল বহু টাকার বিনিময়ে বসালেও পানি উঠেনা?কেন ভবন রঙ করালে বৃষ্টি হলেই শ্যাওলা জন্মে?
এই সমস্ত সমস্যাগুলো শেষ পর্যন্ত শিক্ষকদেরই ফেস করতে হয়।
**
ক্লাসে যাই।কোনও কোনও স্কুলে কক্ষগুলো ছোট থাকে।বেঞ্চে দুজন করে বসলে বই খাতা ব্যাগ কই রাখবে? ডেস্ক দিতে হবে।
একটি শ্রেণিতে কতজন শিক্ষার্থী বসে?
অনেক স্কুল আছে যেখানে একটি শ্রেণিতে ৭০ থেকে ৮০ জন শিশু গাদাগাদি করে বসে।
ছাত্র শিক্ষক অনুপাত ১:২০ অথবা ১:২৫ করতে হবে।
যদি কোনও শ্রেণিতে মিনিমাম ৪০ জন স্টুডেন্টও বসে তবে ৪০ মিনিট( ধরে নিলাম) এর ক্লাসে শিক্ষক কত কি শেখাবেন?
**
ইসিএল ট্রেনিং নিয়েছিলাম,ওখানে স্তরভিত্তিক পাঠদানের বিষয়টি ছিলো- ২৬ দিনের ট্রেনিং।
আমরা বলেছিলাম এটা কার্যকর অন্যান্য দেশে সম্ভব হলেও( যেসব দেশ থেকে আইডিয়াটি আনা হয়েছিলো) আমাদের দেশে সেটা সম্ভব না।আমাদের বলা হয়েছিলো,আমরা ইতিবাচক নই।
এর ঠিক পরের বছর ইসিএল বাদ,দিলাম ২৬ দিনের ডিপিএড ট্রেনিং,এখানে স্তরভিত্তিক বিষয়টিকে আরেকটু ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে।আমরা বললাম সম্ভব নয়,বলা হলো আমরা ইতিবাচক, আন্তরিক নই।
আমরা মাঠে সরাসরি কাজ করি, আমরা জানি সমস্যা কোথায়, আমরা বুঝি কোনটা আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে ফলপ্রসূ হবে।কিন্তু আমাদের থামিয়ে দেয়া হয় আন্তরিক নই বলে,ইতিবাচক নই বলে।
এখন নতুন নির্দেশনা- স্তরভিত্তিক বাদ।
তো? কেন এতো এতো টাকা খরচ করে বিশাল আয়োজন?যদি শেষে দেখা যায় এটা বাতিলই করতে হয়!
২৪/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথাঃ(ছয়)
----
বহু বহু বার লেখেছি,চর্বিতচর্বণ কিন্তু লেখে লাভ কি!
বিবিধ বিষয় নিয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো স্থির করা ভাবনার কেন্দ্র বিন্দু থেকে ভাবনাগুলোকে বিচ্যুত করে দেয়।
**
প্রধান শিক্ষক স্কুলের সভাপতি কর্তৃক প্রহৃত হয়েছেন।
কয়েকদিন পর পর এধরণের ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে।কারণটা কি?
এইযে এতো এতো শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে,তার কোনও বিচার হয় কি না,তাও জানা যায় না আর।
স্কুল জনগণের,শিক্ষক শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে চাকরীর শর্তাবলী মেনে নিয়েই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করেন।
প্রাথমিক স্কুলে কোনও টাকার খনি নেই, সম্পত্তির মালিকানার বিষয়াদি নেই- তবে কেন এমন হয়?
শিক্ষকের নিরাপত্তা জরুরী আগে,তারপর মানসম্মত শিক্ষা।
**
কিছুদিন আগে তোলপাড় ছিলো সহঃপ্রধান শিক্ষক পোস্ট নিয়ে, পক্ষে বিপক্ষে তুমুল শোরগোল।
এখন যোগ্যতা ভিত্তিক স্কেল নিয়ে গরম হাওয়া বইছে।
যোগ্যতা ভিত্তিক স্কেলের পক্ষালম্বীদের অন্যতম টার্গেট নারী শিক্ষক।
নানা ধরনের হেয়মূলক লেখা কেউ কেউ নির্দ্বিধায় লিখে যাচ্ছেন-
আমার প্রশ্ন-আপনার প্রথম শিক্ষক কে?
আপনার "মা"।
নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী একজন মহিলাশিক্ষক যেভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন পুরুষশিক্ষকও তেমনি তাঁর শর্ত পূরণ করেই নিয়োগপ্রাপ্ত।
আপনি এতো এতো যোগ্যতা সম্পন্ন তবে কম যোগ্যতার পদে কেন এলেন?
এলেন তো এলেন এখন সবাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে বিভেদ সৃষ্টির পায়তারা কষছেন?
কেন পদোন্নতি চাচ্ছেন না?
আপনার যোগ্যতা থাকলে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চতর স্কেলে যান,উচ্চতর পদে যান- কেউ কি বাধা দিচ্ছে?
তা নয় একই ঘরে বাস করে,কেউ খাবে শাকভাত,কেউ খাবে পোলাও মাংস?
এরকম পার্থক্য বিভাজন কেন হবে?
যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে ভয় পান? কেন?
কেনই বা মহিলাশিক্ষকদের নিয়ে একদল পোস্ট করেন আর আরেকদল বিভিন্ন কমেন্ট করেন- খুব মজা পান বুঝি!!
সার্টিফিকেট সার্টিফিকেট বলে মুখে ফেনা তুলছেন? কয় কেজি ওজন আপনার সার্টিফিকেটের যদি তা আপনাকে সভ্য আচরণ না শেখায়,কাউকে সম্মান করতে না শেখায়!! তাহলে বলবো আপনার অর্জন শূন্য।
মহিলারা ফাঁকি দেয়,গণিত বুঝেনা,ইংরেজী বুঝেনা,সংসার নিয়ে ভাবে - তারা অযোগ্য।
তো আপনি কি করেন?
আপনি মহিলা নিয়ে গবেষণায় সময় কাটান- কারণ এ তথ্য যোগাড় চাট্রিখানি কথা নয়।সারাদেশের ব্যপার।
( কথাগুলো সার্বিক নয়,কারণ আমি জানি সবাই একরকম নয়)।
**
প্রাথমিক শিক্ষকগণ যেহেতু জাতির ভিত তৈরি করার কাজে নিয়োজিত,তাই তাঁদের সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।পাশাপাশি নিজেদের মধ্যেও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধটুকু বজায় রাখার প্রতি সচেষ্ট হতে হবে।
এমনিতেই নিয়োগের ধরণ অনুযায়ী,পদোন্নতি সহ নানাধরনের বিভক্তিতে আমরা বিভক্ত।
আর কত বিভক্ত হবেন?
**
আমি হাইস্কুলে পড়ার সময় আমার এক হেড স্যার ছিলেন পিএইচডি ডিগ্রী ধারী।উনার নাম ছিলো সৈয়দ আহমদ।স্যার নিজের যোগ্যতায়ই সরকারি হাই স্কুল ছেড়ে অন্যত্র চলে যান,তিনি তাঁর যোগ্যতাকে সম্মান জানিয়েছিলেন এবং নিজের প্রতি আস্থা ছিলো তাঁর।
**
ক্রমাগত শিক্ষক নির্যাতন,শিক্ষক সমাজের মধ্যে অনৈক্যও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে অন্যতম অন্তরায়।
----২৫/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথাঃসাত
----
**
প্রায় প্রতিটি সরকারি দপ্তরের লোকজন যা বলেন,বলেন পাড়ার নীরিহ বউটিও," আপনাদের চাকরিতো আরামের, খালি ছুটি আর ছুটি"।
হ্যাঁ, আমরা ভেকেশনাল ডিপার্টমেন্ট,ছুটি তো আমাদের থাকবেই।
আগে দেখি ছুটির হিসেবটি।
বছরে ৫২ সপ্তাহ- কাজেই আমরা ৫২ টি শুক্রবার ছুটি ভোগ করি।
৭৫ দিন সব মিলিয়ে আরও ছুটি আমাদের।
এবার ছুটি কেমন ভোগ করি তা জানাই।
৭৫ দিন ছুটির মধ্যে ২ দিন প্রধান শিক্ষকের হাতে সংরক্ষিত।
মনে রাখতে হবে একমাত্র রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ছাড়া প্রাথমিক স্কুল বন্ধ রাখার এখতিয়ার কারও নেই,শুধু প্রধান শিক্ষক ২ দিন ছুটি দেয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন।কিন্তু দুঃখের বিষয়,এই ছুটি ভোগ করা ঝামেলা হয়ে দাড়ায় বিধায় অনেক প্রধান শিক্ষক এই ছুটি এড়িয়ে চলেন।
বাকী থাকলো ৭৩ দিন,এর মধ্যে ৬ টি জাতীয় দিবস আছে যে দিবসগুলো পালনের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েরই স্কুলে যেতে হয়,এবং গত বৎসর আমরা ৭টি দিবস পালন করেছি,নতুন সংযোজন ছিলো ঈদ-ই - মিলাদুন্নবী।
কথা হলো জাতীয় দিবসগুলো অবশ্যই পালন করবো,কিন্তু ছুটি জানে শিক্ষার্থীরা, তাদের স্কুলে আসতে হয়,তাদের মন খারাপ হয়,বিভিন্ন কর্মসূচীতে তাদের অংশ নিতে হয় এই পরিমাণে যে তারা ক্লান্ত হয় খোলাবারের চেয়ে।
আর ছুটি পরিণত হয় কর্মদিবসে অলিখিত ভাবে।জাতীয় দিবস গুলো কার্যদিবস হিসেবেই থাকুক না,না হয় নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম বন্ধই থাকলো।
**
এবার আসি অন্য সরকারি দপ্তরের ছুটির হিসেবে।
৫২+৫২= ১০৪ দিন তাঁরা ছুটি ভোগ করেন,এবছরের ক্যালেন্ডারে গুনে দেখলাম ১৯ দিন সরকারি বন্ধ,বিভিন্ন কারণে এটা বেড়েও যায়।
বাড়তিটা বাদ দিলাম,১০৪+১৯=১২৩।
মাত্র ৪ দিন বেশি আমরা ভোগ করি!
( হিসেবে ভুল হলে সংশোধন যোগ্য)
**
বলা হয় বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস।
সেই অর্ধদিবস আড়াইটা পর্যন্ত।
তারপর বাকি সময়গুলোতে কত কত কাজ করার নির্দেশ জারী হয় প্রতিনিয়ত,অর্ধদিবস হয়ে যায় পূর্ণদিবসেরও বেশি।
**
রোজায় ৩০ দিনের বন্ধের সাথে আমাদের শ্রান্তি বিনোদন ছুটি মিলিয়ে দেয়া হয়,ফলে আমরা শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ৩ বছর অন্তর পাওয়ার কথা থাকলেও পাই ৪বছর অন্তর,কোনও কোনও সময় ৫ বছরেও - বরাদ্দ না থাকলে।কারণ বলা হয় রোজা এগিয়ে আসে প্রতিবছর ১১/১২ দিন করে।
অন্যান্য দপ্তর ভাতার সাথে ছুটিও পান পনেরো দিন,আমরা পাইনা।
অথচ ভেকেশনাল বলে আমরা শিক্ষকগণ পেনশনে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির শিকার হই,একই গ্রেডের অন্য দপ্তরের লোকজনের চেয়ে কয়েক লাখ টাকা আমরা কম পাই।- এ দুঃখ শিক্ষকগণ কিভাবে মেনে নেন! আল্লাহ জানেন।
**
আসি রোজার ৩০ দিনের ছুটিতে।
রোজার সময় সকল অফিস ৯/১০ থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
আর আমরা তো ছুটিতেই তাই আয়োজন করা হয় সকল ট্রেনিং কার্যক্রম, ৯- ৫ টা পর্যন্ত এর সময়সূচী,ট্রেনার সদয় হলে সময়ের কিছুটা হেরফের হয়,নয়তো নয়।
সারাদিন রোজা রেখে একটানা ট্রেনিং গ্রহন!
যারা মহিলা তারা কেবল ছটফট করেন, কখন বাড়ি যাবেন,কখন সারাদিনের কাজ সেরে পরের দিনের রান্না সারবেন।
**
ট্রেনিং নেই? স্পেশাল ক্লাস করো কোচিং নিষিদ্ধ তবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে একটু কষ্ট করেন- বিশেষ ক্লাস করেন।নির্দেশনা আসে,আমার ইচ্ছে হলে আমি বিশেষ ক্লাস নেবো- চাপানো কেন বন্ধের সময়?
**
এই হলো আমাদের ছুটি ডিপার্টমেন্টের ছুটির আদ্যোপান্ত।
দেখেন তো কোথায় আমরা ছুটি ভোগ করি কতটুকু আর কোথায় আমরা বঞ্চিত হই!
এই সমস্ত বিষয়গুলো একজন তরুণ শিক্ষক মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, শুধু বৈষম্য আর বৈষম্যের ভারে ভারাক্রান্ত প্রাথমিক সেক্টর।
কি করে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়িত হবে এতসব বৈষম্য জিইয়ে রেখে!!
--২৬/০৫/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথাঃআট
---
**
প্রাথমিক বললে অনেকের চোখে মুখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি খেলে যায়- এ আমি অনেক দেখেছি।আবার অনেকে প্রভূত সম্মান প্রদর্শন করেন - এটাও আমি দেখেছি অনেক।
নামে প্রাথমিক হলেও আমাদের কাজের বহর কম নয় কিন্তু।ঠিক এই মুহূর্তে সারাদেশে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছে এবং আমাদের অনেক শিক্ষক ভাই বোন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করছেন গ্রামে,শহরে,বস্
তিতে রোদ বৃষ্টিতে পুড়ে এবং ভিজে।
প্রাথমিকের ভাইবোনেরা এই কাজটা না করলে তথ্যগুলো সঠিক হয়না।সাথে খাতা কাটা,উপবৃত্তি,স
্লিপ সহ আরও বিবিধ কাজ আছে তো।
না আমরা কাজকে না বলিনা।আমরা বলি আমাদের দম ফেলার ফুরসৎ না দাও দিওনা,আমাদের কচি শিশুগুলি কি অপরাধে একদিনে দুই বিষয়ে পরীক্ষা দিবে?
আশার কথা এইযে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় ১ম-৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।মমতাময়ী মায়ের মতোই তিনি কচি কচি শিক্ষার্থীদের যাতনার বিষয়টি আমলে নিয়েছেন।
**
মহাসমারোহে সৃজনশীল বিষয়াদি প্রশ্নপত্রে আনা হয়েছে,বইতে সৃজনশীলতা নেই।কিছু কিছু বিষয়ে বইতে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই।শিশুরা শিখবে কোথা থেকে।
বানানরীতি একেক বিষয়ে একেক রকম,পরিসংখ্যান একেক বইতে একেকরকম।
কোথাও যেন সমন্বয় নেই।
আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো এক প্রশিক্ষণে পাঠ্যপুস্তক প্রনয়ণ ও প্রশ্নপত্র পদ্ধতি প্রনয়ণ কমিটির সাথে সরাসরি জড়িত এবং সেই সাথে প্রাথমিকের একজন বিশেষজ্ঞ মহোদয়ের সাথে কথা বলার।
আমি খুঁটিনাটি সব বিষয় তোলে ধরি,বইয়ে তথ্যে ভুল,যথাযথ তথ্য সন্নিবেশিত নেই শুনে তিনি অবাক, তিনি আরও অবাক হন জেনে যে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পরীক্ষা নেয়া হয়।
উনার সাথে কথোপকথনের ডিটেলস আমি ইতিপূর্বেও লেখেছি।
সৃজনশীল কি? সৃজনশীলতা বিষয়টা কি?
সবাই কি তা জানে? কোনও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে শিক্ষকদের?
বেঞ্জামিন ব্লুমের Concept of Learning Domain - এর উপর বেইজ করে যে অভীক্ষা-পদ প্রনয়ণের তিনদিনের প্রশিক্ষণ যা আমরা মার্কিং স্কিম প্রশিক্ষণ বলে জানি এবং গ্রহন করি সেটাই কি সৃজনশীলতা?
সৃজনশীল একটি ব্যাপক বিষয়- একটি প্রশ্ন পত্র প্রনয়ণ এবং তা দিয়ে পরীক্ষা গ্রহনের নাম সৃজনশীলতা নয়।
সৃজনশীল প্রশ্ন হতে হলে বইটিকেও সৃজনশীলতার আলোকে রচিত হতে হবে- অসম্পূর্ণ তথ্য সম্বলিত বই সৃজনশীলতার উৎস হতে পারেনা।
পাঠদান কার্যক্রম কিংবা বইয়ে সৃজনশীলতা না থাকলেও এক জায়গায় আছে।
সেটা কড়াকড়ি নিষিদ্ধ শিক্ষকের জন্য,শিক্ষার্থী
দের জন্য।
বিনীত প্রশ্ন- বাজারে, লাইব্রেরীতে সৃজনশীল গাইড বই কেন তবে? যে কোনও পদ্ধতি, প্রশ্ন কাঠামো কখন পরিবর্তন হবে তা শিক্ষক কিংবা উপজেলা এমনকি জেলা পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাবৃন্দ না জানলেও পাবলিশাররা টের পায় কি করে? তারা বছরে মিনিমাম তিনবার নতুন গাইড ছাপায় এবং মিনিমাম তিনবারও কোনও কোনও সময় প্রশ্নকাঠামো চেঞ্জ হয়।
সেই নিষিদ্ধ গাইড বইগুলোই সৃজনশীলতার অন্যতম উৎস,নিষিদ্ধ সত্ত্বেও ওটাই শিক্ষার্থীরা পড়ে,শিক্ষকগণও কোনও কোনও সময় ওটার সাহায্য নিতে বাধ্য হন।
প্রশ্ন আসতে পারে শিক্ষকগণ কি তবে জানেন না?
হ্যাঁ জানতে হলে পড়তে হয়,পাঠ্যপুস্তকে না থাকলেও সংশ্লিষ্ট তথ্য সম্বলিত বই পড়তে হবে,লাইব্রেরীতে যেতে হবে।আইটি সম্পর্কে জানা থাকলেও অন্তত কিছু তথ্য তিনি জানতে এবং জানাতে সক্ষম হবেন।
কোনও শিক্ষকই চলন্ত লাইব্রেরী নন।তাঁকেও পড়েই জানতে হয়।
পড়ার সময় কই? গড়ে যদি পাঁচটি ক্লাসও নেন- সাথে এই কাজ, সেই কাজ করতে হয়- পড়াটা পড়বেন কখন?
জানার কোনও বিকল্প নেই,বই পড়ে জানতে হয়,জানতে হয় আরও বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা।সেই সুযোগ দিতে হবে।
এ সপ্তাহের সেরা আলোচ্য- ডিজিটাল হাজিরা মেশিন।
স্বাগত জানাই,আন্তরিকতা না থাকলে ন'টা সাড়ে চারটা কেন সারা দিনরাত স্কুলে উপস্থিত থেকেও কাজের কাজ কিছুই হবেনা।
আন্তরিকতা আনতে হলে, আন্তরিকতা থাকতে হলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আন্তরিক হতে হবে।
গাইড দেখে পড়াতে হলে,গাইড দেখে প্রশ্ন করতে হলে সৃজনশীল পদ্ধতি নাম বাদ দিয়ে হিডেন গাইড পদ্ধতি নাম দিলেই ভালো এবং যথার্থ হবে।
---২৯/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথাঃ শেষ পর্ব
--
(লেখাটি শেষ করতে চাইছি,তাই আলোচনা সংক্ষেপ করছি।)
আমাদের বিবিধ সমস্যা আছে, তারপরও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত যে মহাপরিকল্পনা তা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়নে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ,আন্তরিক এবং সচেতন।
এ প্রসঙ্গে আমাদের কিছু সমস্যার কথা তোলে ধরছি।
**
হাজিরা নিশ্চিতঃপ্রতিটি পেশাজীবীকে তার কর্মস্থলে সময়মতো উপস্থিত হতে হয়,হওয়া উচিত।
প্রাথমিক শিক্ষকবৃন্দ এর থেকে ব্যতিক্রম নন।বলা হচ্ছে বায়োমেট্রিক মেশিনের মাধ্যমে আগমন ও প্রস্থানের সময় নিশ্চিত করতে হবে।
বায়োমেট্রিক হাজিরার যে মেশিনটি তা কি কারেন্টের সাহায্যে চলে? আমি শুনেছি কারেন্ট দরকার পড়ে,তো আমি স্কুলে উপস্থিত হলাম পৌনে ন'টা বা ন'টা বাজার পাঁচ মিনিট আগে কিংবা ঠিক ন'টায়- তখন যদি কারেন্ট না থাকে!
**
স্কুল সময়ঃ এক শিফ্ট পরিচালিত স্কুলগুলোতে ন'টা থেকে সোয়া চারটা পর্যন্ত মাঝখানে আধঘন্টা বিরতি বাদে শিক্ষার্থীরা একটানা স্কুল কার্যক্রমে,পাঠগ
্রহন কার্যক্রমে রত থাকবে।শিক্ষক যদিও বা কোনও ক্লাস বিরতি পান( সংখ্যা কম- অন্য কাজ থাকে) শিশুরা পায়না।
খাঁচায় বন্দী শৈশব?
আবার ৩৫/৪০ মিনিটের একটি ক্লাসে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর ক্লাসে নির্দেশিত কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম উপস্থাপন,মূল্যূায়ণ কি করে সম্ভব!! গড়ে এক মিনিটও কি প্রতি শিক্ষার্থী পায়?
সেদিন এক আলোচনায় একথা বলাতে একজন কর্মকর্তা বলেন এ ক্ষেত্রে দুর্বল সবল চিহ্নিত করে কাকে প্রাধান্য দিতে হবে,তা ঠিক করতে হবে।অভিভাবকগণ কেন মানবে তা?
আবার এও তিনি বললেন যে আপনারাই তো বলেন স্কুল টাইম দীর্ঘ,এবং তা কমানোর দাবী করেন।
তখন আমার উত্তর ছিলো এমন যে হ্যাঁ স্কুল টাইম দীর্ঘ, ক্লাসটাইম কম।
১০টা থেকে ৩টা স্কুল টাইম করলে ভালো হয়।মেইন বিষয়গুলো প্রতিদিন এক ঘন্টা ব্যাপী ক্লাস হবে।আর বাকি তিনটি বিষয় এক ঘন্টা করে সপ্তাহে দুইদিন করে হোক।টিফিন একঘন্টা- বৃহস্পতিবার পূর্ণ দিবস করে সেই সময়ে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম থাকুক।
এতে প্রতিদিন শিশুরা পাঁচ ঘন্টা ক্লাস করবে,আর বৃহস্পতিবারে যেহেতু এখনও কিছু বিষয় বাদ যায় সেহেতু ক্লাস সময়টা একটু কমিয়ে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম করা যায়।
এক্ষেত্রে কিছু বইয়ের অধ্যায় কমাতে হবে,এই ছিলো আমার প্রস্তাব।
শিশু একটানা মুখ গুজে ক্লাসে বসে থাকবে,শিশুদের কষ্ট হয়- নিজের ছেলেবেলার কথা মনে পড়লেই তা বোঝা যায়।
( এটা আমার মতে)
**
দেশের সকল স্থানের ভৌগলিক বিন্যাস এক নয়,নয় একই রকম যাতায়াত সুবিধা।স্কুল টাইম দশটা তিনটা করলে শিক্ষকদেরও সুবিধা হয়।সময়মতো স্কুলে যেতে কে চাইবেনা? কিন্তু অবস্থা যদি এমন হয় যে তাকে হেঁটেই পাঁচ মাইল যেতে হয় রোজ - এক্ষেত্রে বিকল্প কিছু ভাবতে হবে বৈকি।
**
শিক্ষকদের প্রাপ্য সুবিধাদি দিতে হবে।শিক্ষকদের মর্যাদা সুনিশ্চিত করতে হবে,শিক্ষক সুরক্ষা আইন প্রনয়ণ করতে হবে।
বদলীর জন্য,ছুটির জন্য,টাইমস্কেলের জন্য,ইনক্রমিনেন
্ট ধরানোর জন্য শিক্ষক কেন টাকা গুনবেন?
আর শিক্ষকের মর্যাদা যেহেতু কারও সাথে তুল্য নয়- এজন্য এ দেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষকের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল নির্ধারণ করুন।
আমি আশাবাদী মানুষ।বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার- মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে এবং এদেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষা ব্যাবস্থাকে যুগোপযোগী করতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা লক্ষণীয়।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন শিক্ষাবান্ধব,শিক্ষকবান্ধব সেই সাথে শিক্ষার্থীদের জন্য একজন মমতাময়ী মায়ের মতোই - যা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি বিভিন্ন সময়ে।
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথাঃ(ছয়)
----
বহু বহু বার লেখেছি,চর্বিতচর্বণ কিন্তু লেখে লাভ কি!
বিবিধ বিষয় নিয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো স্থির করা ভাবনার কেন্দ্র বিন্দু থেকে ভাবনাগুলোকে বিচ্যুত করে দেয়।
**
প্রধান শিক্ষক স্কুলের সভাপতি কর্তৃক প্রহৃত হয়েছেন।
কয়েকদিন পর পর এধরণের ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে।কারণটা কি?
এইযে এতো এতো শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে,তার কোনও বিচার হয় কি না,তাও জানা যায় না আর।
স্কুল জনগণের,শিক্ষক শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে চাকরীর শর্তাবলী মেনে নিয়েই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করেন।
প্রাথমিক স্কুলে কোনও টাকার খনি নেই, সম্পত্তির মালিকানার বিষয়াদি নেই- তবে কেন এমন হয়?
শিক্ষকের নিরাপত্তা জরুরী আগে,তারপর মানসম্মত শিক্ষা।
**
কিছুদিন আগে তোলপাড় ছিলো সহঃপ্রধান শিক্ষক পোস্ট নিয়ে, পক্ষে বিপক্ষে তুমুল শোরগোল।
এখন যোগ্যতা ভিত্তিক স্কেল নিয়ে গরম হাওয়া বইছে।
যোগ্যতা ভিত্তিক স্কেলের পক্ষালম্বীদের অন্যতম টার্গেট নারী শিক্ষক।
নানা ধরনের হেয়মূলক লেখা কেউ কেউ নির্দ্বিধায় লিখে যাচ্ছেন-
আমার প্রশ্ন-আপনার প্রথম শিক্ষক কে?
আপনার "মা"।
নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী একজন মহিলাশিক্ষক যেভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন পুরুষশিক্ষকও তেমনি তাঁর শর্ত পূরণ করেই নিয়োগপ্রাপ্ত।
আপনি এতো এতো যোগ্যতা সম্পন্ন তবে কম যোগ্যতার পদে কেন এলেন?
এলেন তো এলেন এখন সবাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে বিভেদ সৃষ্টির পায়তারা কষছেন?
কেন পদোন্নতি চাচ্ছেন না?
আপনার যোগ্যতা থাকলে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চতর স্কেলে যান,উচ্চতর পদে যান- কেউ কি বাধা দিচ্ছে?
তা নয় একই ঘরে বাস করে,কেউ খাবে শাকভাত,কেউ খাবে পোলাও মাংস?
এরকম পার্থক্য বিভাজন কেন হবে?
যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে ভয় পান? কেন?
কেনই বা মহিলাশিক্ষকদের নিয়ে একদল পোস্ট করেন আর আরেকদল বিভিন্ন কমেন্ট করেন- খুব মজা পান বুঝি!!
সার্টিফিকেট সার্টিফিকেট বলে মুখে ফেনা তুলছেন? কয় কেজি ওজন আপনার সার
কাজেই অবস্থার পরিবর্তন হবেই,শিক্ষকদের জন্য পৃথক মর্যাদাসম্পন্ন বেতনক্রম হয়তো আমরা পেয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা সুনিশ্চিত হোক অতিদ্রুত- আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবো সহসাই এই শুভকামনা রেখে শেষ করছি।
ধন্যবাদ।
০২/০৫/২০১৯
---
কেউ বলে কেউ শোনে।
কেউ বলে কেউ কেউ শোনে।
কেউ বলে সবাই শোনে।
কেউ কেউ বলে কেউ শোনে না।
কেউ কেউ বলে কেউ কেউ শোনে।
সবাই বলে কিন্তু কেউ শোনে না।
বলাটা প্রাসঙ্গিক,চিত্তাকর্ষক এবং যৌক্তিক হতে হবে,উপস্থাপনটা হতে হবে শৈল্পিক।
শোনা এবং না শোনার মধ্যে,মানা এবং না মানার মধ্যে আছে নিজের মতাদর্শ,ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টিগত লাভালাভের হিসেব।
কেউ কাউকে ছাড় দিতে চায় না যদি সে ঘোর ত্যাদর টাইপ হয়।আমি যাহা বলি তাহাই চূড়ান্ত,ইহার উপরে নাই।
আমি ডিম খাই না,এলার্জি।তুমি খাও, তোমার ভালো লাগে,এলার্জিও নাই।তো আমি খাইনা আমার ব্যপার এবং একদমই ব্যক্তিগত- এ নিয়ে কারও মাথাব্যথার কোনও কারণ থাকার কথা নয়।
কোনও কিছু ধরে রাখতে হবে আজীবন? কোনও কিছু কি ধরে রাখা যায় পৃথিবীতে?
লেখার বিষয়ে বলি,কিছু লিখলেই এটার শানেনযুল খুঁজতে হবে?
কোনও গল্প লিখি তো নায়িকা আমি হয়ে যাবো কেন?
কবিতা লিখি তো এর পিছনে আমিই থাকবো,থাকবে আমারই কোনও ব্যক্তিগত বিষয়- এ ধারণা হবে কেন?
আমি লিখি ভালো লাগে লিখতে,আমি লেখক এ দাবী আমি করি না,শুধু মাত্র ভালো লাগে বলেই সময় পেলেই অক্ষরগুলো সাজাই একের পর এক।
আমি সারাদিন লিখি,প্রচুর লিখি,সব কি সবাই দেখে?
আমার যা ইচ্ছে হয় তাই শুধু পোস্ট করি।
আমি কি কাউকে দিব্যি দেই পড়ার জন্য!?
আমি তো আমার অনেক ফ্রেন্ডদের লেখা দেখি না,মানে সামনে আসে না।এতে কি কোনও ক্ষতি আছে?
"মান" নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম।
মান শব্দটির অনেক অর্থ আছে।মানের আগে বিভিন্ন উপসর্গ যুক্ত হয়ে অনেক মানসম্পন্ন ও বিভিন্ন ধরনের মান প্রকাশক শব্দ তৈরি হয়।
মানের সবচে কাছাকাছি অর্থ আমার মনে হচ্ছে এমন একটি নির্ণায়ক যা দিয়ে কোনও কিছুর যোগ্যতার মাত্রা পরিমাপ করা যায়,যেমন তুলাদণ্ড,মানদণ্ড।
মান নির্ধারণ হবে সমজাতীয় বস্তুর ক্ষেত্রে একই মাত্রার।তুলনা করতে হলে সমগোত্রীয় হতে হবে অবশ্যই।
এখন কথা হচ্ছে কোনও মানুষ নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবতেই পারে, হয়তো তার মানে সে শ্রেষ্ঠ।কিন্তু অনেকের মাঝে অন্যতম হতে হলে সেই অনেকের সাথে একই মাত্রার মানদণ্ড অবশ্যই অন্যতম বিবেচ্য।
সমমানের,সমগোত্রীয়দের মাঝেই প্রতিযোগিতা হয়।
তোমার হাতে তুমি সাড়ে তিনহাত,আমার হাতে আমি আড়াই হাত নই,সাড়ে তিন হাতই।
এগুলো হলো কথার সাথের বার্তা,কথার সাথে বার্তা না থাকলে কি কথাবার্তা হয়?
কথা হয় তখন প্রলাপ- কাজেই বলার পিছে কারণ আছে এবং সেটা উহ্যই থাকুক।
আমরা কোথায় আছি?
আসলে আমরা কোথায় নেই?
যাবতীয় সব বিষয়ে আমরাই শ্রেষ্ঠ হতে চলেছি।শ্রেষ্ঠ হলে বিখ্যাত বা বিশেষ ভাবে খ্যাত হওয়া যায়।
আরে ভালো কাজ করেও বিখ্যাত হওয়া যায় আবার মন্দটা করেও বিশেষ ভাবে খ্যাত হওয়া যায়।সবটাই তো বিখ্যাত।
---- একজন প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে আমি মান কথাটি নিয়ে গভীরভাবে ভাবছি,আসলে ভাবছি ঠিক নয়, আসলে মান কথাটিই আমাকে ভাবাচ্ছে বলাই সঠিক এক্ষেত্রে হবে।
আমি কথার বুননে দক্ষ শিল্পী নই,আমি বলি সাদামাটা ভাবে,জলঘোলা করে লাভ নেই।
আমাদের এখন মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে- সবাই ভাবছে, আমিও ভাবছি।
টার্গেট ২০১৬ - ২০৩০।
পরিকল্পনার বিষয়ে কিছু লিখেছি কি! পরি থাকে যে কল্পনায়।
পরি সার্বিকতাকে বোঝায়, যদিও এটি একটি উপসর্গ এবং প্রচলিত আছে উপসর্গের অর্থ নাই।
পরিকল্পনা কিন্তু বৃহৎ একটি বিষয়।
এ বিষয়গুলো নিয়ে লেখার পরিকল্পনা আছে,এ নিয়ে কল্পনা করছি বহুকিছুই।
ভুল কিছু মনের ভুলে লিখে থাকলে অবশ্যই মার্জনীয়।
----২১/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথা(দুই)
-------
কোনও কিছুকে তার নির্দিষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে হলে লক্ষে পৌঁছানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট মাপকাঠি,যোগ্যতা বা মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হয় এবং তা অর্জনও করতে হয় এবং সেটা হচ্ছে ঐ লক্ষ অর্জনের মান।এই মান আবার সাময়িক হয়,চূড়ান্তও হয়( আমার মতে)।
মান শব্দটির অর্থ জেনে নিই--
**
মানঃ(যুক্ত অর্থবাচক প্রত্যয়বিশেষ,মানকচু ও তার গাছ,মাত্রা,ওজন করা,প্রকৃতমূল্য,উৎকর্ষ বা অপকর্ষের পরিমাণ,আদর্শ,সম্মান,গৌরব)মান্ ( বাংলা একাডেমী উচ্চারণ অভিধান)
**
বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ বলছেন--
মান= মন হইতে জাত,
" আমার সমান কেহ নাই"- এইরূপ মনন,
যাহার দ্বারা পরিমাপ সাধিত হয়।
মানঃপূজা,চিত্তসমুন্নতি,আপনার প্রতি পূজ্যতাবুদ্ধি,আত্মসম্মানবোধ,গ্রহ,অববোধ,জ্ঞান,
পরিমাণ,উন্মান ইত্যাদি।
মন একটি যন্ত্র,সে মন্ ক্রিয়া ( পরিমাপ), তার ফলে যে ফল পায়,তাকেও মন বলে।এই মন বা পরিমাপিত ফলটি যখন কোনো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়,তখন সেই পরিমাপিত -ফলস্বরূপ মন-এর সেই প্রযুক্ত রূপটিকে মান বলে,তা সে যে প্রকারেই হোক।
মন থেকে জাত মান,মনে বহু কিছুই জন্মে,তাই বহু কিছুকেই মান বলে অর্থাৎ মানের বহুবিধ অর্থ আছে।
মানুষের দেহ ও মন চলে যার নিয়ন্ত্রণে তার নাম হলো " আমিত্ববোধ" বা "আত্মা"।
মনের নিয়ন্ত্রণ করে অন্তঃকরণ যাকে মনই বলে।
অন্তঃকরণে থাকে মন ও বুদ্ধি,
মন দ্বারা পরিচালিত হয় মনন-বৃত্তি যেখানে মনের নির্দেশে চিত্তের অনুসন্ধান ও অহঙ্কার -এর ফলাফল সংগ্রহের কাজ চলে।এটাকে ঘরোয়া বলা যায়।
বুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত বুদ্ধি- বৃত্তিতে বুদ্ধির নির্দেশে চিত্তের অনুসন্ধান ও অহঙ্কার-এর ফলাফল সংগ্রহের কাজ চলে।এটাকে যান্ত্রিক বলা যায়।
ঘরোয়া হলো জ্ঞান আর যান্ত্রিক হলো দক্ষতা।
**
কোনও কিছুকে মানসম্মত করতে হলে তার প্রেক্ষিত,সামগ্রিক পরিবেশ,ভৌত- অবকাঠামো,বেষ্টিত জনবল বা দ্রব্যাদি, সামগ্রিক পরিকল্পনা সবকিছুকেই মানসম্মত হতে হবে।
শুধু কথায় কি চিড়া ভিজে? চিড়া ভিজাতে গেলে পানি আবশ্যক।পানির পরিবর্তে দুধও ব্যবহার করা যায়।তবে তা খাঁটি হতে হবে,পানিও বিশুদ্ধ হতে হবে তা নাহলে পেট খারাপ হবে চিড়া খেয়ে।
**
বলবো কি আর! ভেজাল খেয়ে খেয়ে আমাদের এমন অবস্থা খাঁটি কিছুই সয়না,না পেটে না মনে।
মন্দ কিছু দেখলে স্বাভাবিক মনে হয় যেন এটা হওয়ারই ছিলো,যদি অন্যথা হয়?
ভালো সব কিছুতেই মনটা খু্ঁতখুঁত করে,কিন্তু খুঁজে,কারণ ভালোটা যে দেখে অভ্যস্থ নই।
ঘিয়ে কি কাঁটা থাকে? থাকেনা,মাছের থাকে কাঁটা।
কিন্তু আমাদের স্বভাব এমন হয়েছে এখন মাছ রেখে ঘিতে কাঁটা খুঁজি।
**
তুমি কেমন?
আমি যেমন।
তুমি আমার কাছে তেমনই যেমন আমার কাছে আমি,অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষ নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে অন্যকে বিচার করে,ফলে ভুলটা থাকে সে বিচারে।
**
কথা ঘুরে নাই,মান নিয়ে কথা আরও আছে।
আসছি আবার।
২২/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথা( তিন)
---
মান নিয়ে কথা বলছিলাম,মান নিয়ে আরও কত কথাই বলা যায়-অনুমান করে সে, যে ভাগটা পরিমাণে কম।এটা প্রমাণ হলো, অপমান না করে সম্মান দেখিয়ে বিমানে করে চলে গেলো,কারও অভিমান প্রতীয়মান হতেই পারে এতে অন্য কারও মান কি আর অবমান হয়?
আছে স্থানীয় আর স্বকীয় মান।
আমি আসলে মানসম্মত শব্দটি নিয়েই বলতে চাই।
মান বুঝেছি,সম্মতটা আসলে কি?
**সম্মত হলো= স্বীকৃত,অনুমোদিত,অভিপ্রেত,ইচ্ছ
ুক,রাজি
( বাংলা একাডেমী)
** সম্মত=অনুমত,স্বীকৃত,রাজী, ইচ্ছুক।
( ইংলিশ বাংলা অভিধান)
**
কোনও কিছু মানসম্মত হতে হলে তার প্রাসঙ্গিক উপকরণগুলো মানসম্মত হতে হবেই।
যেমন আপনি একটি দ্বি-তল বাড়ি করবেন।এখন যে জমিতে করবেন সেটা ভেজালমুক্ত হতে হবে প্রথমেই,সয়েলটেস্ট করে বুঝতে হবে সেটা দ্বি-তল ভবনের উপযোগী কিনা।প্রয়োজনীয় টাকা,সময় লোকবল লাগবে শুধু মেটেরিয়ালস যোগানো ও দেখভাল করার জন্য।ভালো স্থপতি, মিস্ত্রী, রড,সিমেন্ট,পাথর,বালু,পানির ব্যবস্থা,বাঁশ সহ যাবতীয় যা কিছু আছে সবই পারফেক্ট বা মানসম্মত হতে হবে।
যেমন গুড় তেমন পিঠা তাই কোনও একটির ঘাটতিতেও আপনার দ্বি-তল মানসম্মত অর্থাৎ আপনি যেমনটি চেয়েছিলেন তেমনটি হবে না।
মানসম্মত তাই উপযুক্তের জন্য উপযুক্ত।
মানসম্মত শিক্ষার জন্য কি চাই!
কি কি আনুষঙ্গিক বিষয়াদি প্রয়োজন,কি কি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে তা ভাবা জরুরী।
হুট করে চাপিয়ে দিলে চাপাচাপি হবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ অর্জন হবে না।
হ্যাঁ,আর সেজন্যই দরকার পরিকল্পনা।পরিকল্পনা পরিকল্পনামাফিক করতে হবে বাস্তবতার আলোকে।
**
আপনি দেখলেন আপনার প্রতিবেশী হাঁস পালন করেন,প্রতিদিন প্রচুর ডিম বিক্রি করে বেশ আয় করছেন,আপনি ভাবলেন আপনিও হাঁসের খামার করবেন।এ থেকে আপনি কি পরিমাণ লাভ করবেন,কি পরিমাণ খাটনি হবে তাও ভাবছেন।তারপর সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপনিও এটা করবেন- এ পর্যন্ত আপনি কল্পনায় ছিলেন।
আপনি খাতা নিলেন,কাজের ছক করলেন,একটার পর একটা ধাপগুলো সাজালেন ,কিভাবে এটা বাস্তবায়ন করবেন,- আপনি এখন পরিকল্পনায় আছেন।
**
একটি কাজের সুষ্ঠু সমাপ্তি নির্ভর করবে তা সম্পাদনের জন্য গৃহীত সুষ্ঠু পরিকল্পনার উপর।আমরা জানি, " বড় গাছের উপর দিয়েই ঝড় বয়ে যায়"।
ঝড়ের গতিপ্রকৃতিই হয়তো এমন যে সে তার যাত্রাপথে পাওয়া সব বড় কিছুকেই ছুঁয়ে দিয়ে যেতে চায়।তাই প্রাকৃতিক ঝড়ের তাণ্ডব বড় গাছের উপর দিয়েই যাবে।আর পানি গড়াবে নিচের দিকে।
মানসিক ঝড় যায় মাথার উপর দিয়ে।মানসিক ঝড়ের কারণ থাকবে দৃশ্যমান অথবা অদৃশ্য,সে ঝড়ের সূত্রপাত পারিবারিক,সামাজিক যে কোনও একটা পর্যায় থেকে হতে পারে।মাথায় চিন্তনের কাজটা হয় কাজেই ঝড়টা মাথার উপর দিয়েই যাবে।
রোগ-শোক,মারামারি, পিটাপিটি বা যে কোনও অনৈতিক আক্রমণে দেহ আক্রান্ত হলে দৈহিক ঝড় বয়ে যাবে।
ঝড়গুলো ঝটিকার মতই আসে,আবার চলে যায়।বদলে দিয়ে যায় অনেক কিছু,আবার ধ্বংস করেও যায় অনেক কিছু,তখন আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হয়।
নতুন কিছু যে শুরু করবেন সেটা আপনি ভাবলেন,চিন্তা করলেন।আপনার টিনের তৈরী চাল ঝড়ে নিয়ে গেলো,আপনি ভাবছেন ইটের তৈরি ছাদ হলে উড়িয়ে নিতো না ঝড়ে।আপনার চোখের সামনে ইটের দালান ভাসছে,আপনি ভাবছেন ওরকম একটা দালান আমার যদি হতো,আমি এরকম একটি দালান তৈরী করবো-- এতদূর পর্যন্ত যে আপনি ভাবলেন এটা হলো আপনার কল্পনা।
আর কল্পনাটিকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করতে হবে,বিভিন্ন পর্যায়টিকে যথাযথ ক্রম অনুযায়ী সাজাতে হবে, বড় কথা সমস্ত ব্যাপারটির সার্বিক একটি করণীয় স্থির করতে হবে এবং সেটাই হলো পরিকল্পনা।
কল্পনায় পরি থাকলেই বাস্তবে রূপান্তর করা সম্ভব,নয়তো নয়।
পরি কি?
পরি একটি উপসর্গ,বলা হয় উপসর্গের নিজস্ব অর্থ নেই,অন্য শব্দের পূর্বে যুক্ত হয় শব্দটির অর্থের পরিবর্তন,পরিবর্ধন বা সংকোচন করতে পারে।
কিন্তু বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ বলছেন " পর গতিশীল যাহাতে তাই পরি।এটি উপসর্গ এবং সে নিয়ম মেনেই চলে।পরির প্রথম অর্থ কালার্থক,দ্বিতীয় অর্থ স্থানার্থক।অস্তিত্বের বাইরে যা কিছু আছে তারাই পর।বাইরের সেই পরগুলি সক্রিয় থাকে পরিতে।"
তার মানে কোনো সত্তার সম্ভাব্য সামগ্রিকতায় পরি থাকে।
কাজেই পরিকল্পনা হলো সামগ্রিক কল্পনাটাকে আপনি যে ছকে রাখলেন।যে কল্পনায় সামগ্রিক কল্পনা থাকে তাই হলো পরিকল্পনা।
পরিকল্পনা করতে হবে চাহিদা ও বাস্তবতার সাথে সঙ্গতি রেখে।উদ্ভট কল্পনাকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য বহু উদ্ভট পরিকল্পনা গৃহীত হয় এবং বহু সময় আর অর্থ অপচয় শেষে তা পরিত্যক্ত হয়।আবার নতুন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয় বাস্তব প্রেক্ষিত বিচার না করেই।
তো শুরুটা হয়েছিলো ঝড় দিয়ে।আর পরিকল্পনা শুধু ঝড়ের পরে করতে হবে এমন কোনও কথা নেই।
যে কোনও সময়ে চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে যে কোনও পরিকল্পনা নেয়া যেতেই পারে।
তাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ অর্জনে যাবতীয় উপকরণ যথাযথ ব্যবহার করে পর্যায়ক্রমিকভাবে কাজ সম্পাদনের যে পর্যায়ক্রমিক রূপরেখা সেটাই পরিকল্পনা।
পরিকল্পনা লিখিত হয়,অলিখিতও হতে পারে।
লিখিত পরিকল্পনা গ্রহনযোগ্য সর্বাধিক, সর্বমহলে।
লিখিত পরিকল্পনা তিন ধরনের-
১।স্বল্প মেয়াদীঃছোট ছোট পরিকল্পনা- ১ ঘন্টা থেকে ১ বছর মেয়াদীও হতে পারে।
বিদ্যালয়ে অসংখ্য স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়।
যার ব্যাপ্তি ১ঘন্টা বা ১বছর মেয়াদীও হয়।
২।দীর্ঘমেয়াদীঃ এর ব্যাপ্তি ১ বছর থেকে ৫ বছর মেয়াদীও হতে পারে।
বিদ্যালয়ে এ ধরনের পরিকল্পনাও হয়ে থাকে।
৩। প্রেক্ষিত পরিকল্পনাঃ৫ বছর থেকে ২৫ বছর মেয়াদী পরিকলপনাকে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বলা হয়ে থাকে।
**
২০১৬ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নের যে পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে তা প্রেক্ষিত পরিকল্পনার অন্তর্ভূক্ত।
এই পরিকল্পনা প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে,যাবতীয় সমস্যা চিহ্নিত করে তা দূরীকরণের ব্যবস্থা করে ও বাস্তব পরিস্থিতির সঠিক আলোকে গৃহীত হয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস।
কোয়ান্টিটি নয় কোয়ালিটি বড় প্রয়োজন সর্বক্ষেত্রেই।
**
একটি গ্লাসে দুধ যদি অর্ধেকই থাকে তা যেন খাঁটি হয়,গ্লাস ভর্তি জল মেশানো দুধের কি প্রয়োজন?
--২২/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথা(চার)ঃ
------
মানসম্মত নিয়ে কথা বলছিলাম,
মানসম্মত পরিকল্পনার কথাও বলেছি।
**
আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রেই মানসম্মত পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে।স্বাস্থ্য বিভাগের একটি কর্মসূচী রয়েছে" পরিবার পরিকল্পনা "নামে।
পরিবার পরিকল্পনা শুধু একটি বিশেষ বিষয়ে প্রযোজ্য নয়,পরিবারকেন্দ্রিক সামগ্রিক বিষয় এতে জড়িত থাকবে।
পরিকল্পিত পরিবারে বাবা- মায়ের সাথে সন্তানের নিবিড় সম্পর্ক,বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে।সন্তানের অকপট ভাব বিনিময়ের দ্বিধামুক্ত পরিবেশ থাকবে,তখন সন্তানের ভেতর কোনও লুকোচুরি থাকবে না।কোনও অবাঞ্চিত,অযাচিত পরিস্থিতি সে মা বাবার অগোচর রাখবে না।পরিবার পরিকল্পনায় আমরা শুধু সন্তান সংখ্যা সীমিত রাখার বিষয়টি রেখেছি,আর সব বিষয় গৌণ হয়ে গেছে সন্তানকে শিক্ষা নামক বটিকাটি গেলানোর প্রতিযোগিতায় মেতে থেকে।
কেন ধর্ষণ ও সামাজিক অবক্ষয় ও অস্থিরতা আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে গেছে? মূল্যবোধে কেন ধ্বস নেমেছে? আমাদের পারিবারিক,সামাজিক বন্ধনগুলো শিথিল হয়ে গেছে বলে এবং এর পিছনে আরও অনেক কারণ আছে হয়তো বা।
কিন্তু আমার মতে এটাই মুখ্য কারণ।
**
স্কুল পর্যায়ে কেবল প্রধান শিক্ষক একা নন,বরং ম্যানেজমেন্টের সাথে জড়িত সবাই,ক্যাচমেন্ট এলাকার বাসিন্দা এবং অভিভাবক, শিক্ষক সমন্বয়ে যাবতীয় বিষয় মাথায় রেখে পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
"Nothing is old,everything should be new.
Human beings,human values the part of history, contemporary and future needs of humans through a well designed,active humanistic curriculum,use technology to leverage.
All and what more needs to be done?"
পরিকল্পনা প্রনয়ণঃ
1.What's need to be done?
2.What is new?
You are a man of today.
You want to give your children the best.
**
আকাশে পাখিরা কিভাবে দল বেঁধে উড়ে দেখেছেন? পাখিরা দল বেঁধে আকাশে উড়ে।তাদের আগে থাকে একটি পাখি।অন্য পাখিরা চারপাশ থেকে তাকে ঘিরে একটি বলয় তৈরী করে।নিরাপত্তা বলয়।প্রতিটি কাজে সফলতার জন্য একজন সেনাপতি বা নেতার প্রয়োজন হয়।তার চারপাশে থাকতে হয় অগণিত কর্মী যারা নেতাকে নিয়ে কাজ করবে,নেতৃত্বে থেকে নেতা সবাইকে নিয়ে কাজ করবে,কর্মীরা নেতাকে দিবে সাহস,অনুপ্রেরণা আর শক্তি যা একটি নিরাপত্তা বলয়ের মত।আর সেই কাজের সফলতার সমান অংশিদার সবাই,সবাই এর সুফল ভোগ করবে।
( অংশটুকু আমারই একটি পুরনো লেখা থেকে নেয়া)
**
প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে যে কোনও পরিকল্পনাও আমরা বিশ্বাস করি সারাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং সারাদেশের আঞ্চলিক প্রতিনিধিদের নিয়ে ব্যপক আলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমেই গৃহীত হয়।আঞ্চলিক প্রতিনিধি বলতে আমি বিকেন্দ্রিকরণ বুঝাতে চেয়েছি,সারাদেশের সব এলাকার পরিবেশ,সুযোগ সুবিধা,চাহিদা এক নয়।
পাহাড়ি অঞ্চলের একজন গ্রহনযোগ্য প্রতিনিধি বলতে পারবেন সেখানের সমস্যা ও সুযোগ এবং চাহিদার ব্যপারটি ভালো বলতে পারবেন ,হাওর অঞ্চলের প্রতিনিধি বলতে পারবেন সেখানে সমস্যার ধরণ কি,সুযোগ সুবিধা কি এবং চাহিদা কি,তেমনি বিভিন্ন ভৌগলিক পরিবেশে বিদ্যমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ কেবল সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষই বলতে পারবেন।
**
মানসম্মত শিক্ষা আমরা চাই,আমরা চাই বাস্তবতার আলোকে নেয়া একটি মানসম্মত পরিকল্পনা- যা আমরা প্রকৃত অর্থেই বাস্তবায়ন করতে পারি,কখনই করতে হবে বলে কোনও মতে করা নয়- আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
--২৩/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথা(পাঁচ)
----
স্কুলে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্নমুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
**
স্কুলভবনটি কেমন হবে?
অবশ্য শিশুদের উপযোগী ও আকর্ষণীয় ভবন হতে হবে,সামনে থাকবে পর্যাপ্ত খেলাধুলা ও সমাবেশ প্যাকমিটিং, মা সমাবেশ, পুরষ্কার বিতরণীসহ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান করার পর্যাপ্ত জায়গা।
শহরগুলোতে দেখা যায় সরকারি ও বিভিন্ন ক্যাটাগরীর স্কুল গিজগিজ করছে পাশাপাশি।অথচ স্কুল কোথায় স্থাপন করা যাবে তার একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে।
কে মানে নিয়ম।অথচ অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল আছে যেখানে খুবই জরুরী স্কুল তৈরি।সরকারি স্কুলই ভরসা যেখানে শিক্ষার্থীদের স্থান সংকুলান হয়না।
যারা বলেন আমরা শিক্ষানুরাগী, শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে আমরা সদা তৎপর সেজন্য কেজি,ইংলিশ,বাংল
িশ মিডিয়াম স্কুল তৈরি করছি,তারা কিন্তু ওসব প্রত্যন্ত এলাকায় স্কুল করেন না,মালকড়ি মিলবেনা।
আর বড় বড় শহরগুলোতে বড়লোকি স্কুলের দাপটে সরকারি স্কুলগুলো ক্রমশ ম্রিয়মান।
কেন একটি স্বাধীন দেশের শিশুরা একই ধরনের সিলেবাস,পদ্ধতি অনুযায়ী শিক্ষার সুযোগ পাবেনা?
আমাদের দেশে বিত্ত অনুযায়ী শিশুরা বিভিন্ন ক্যাটাগরীর শিক্ষা পাচ্ছে,শিশুরা শৈশব থেকেই বৈষম্যের মাঝে বড় হয়ে উঠছে।
স্কুল ভবন কোথাও নির্মাণকার্য সমাপ্তির আগেই ধ্বসে পড়ে।কখনও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভবনে ফাটল ধরে,ধ্বসে যায়।
একটি স্কুল ভবন নির্মাণে সরকারের প্রচুর টাকা লাগে,কেন ভবন হস্তান্তের পরপরই পলেস্তারা খসে যায়,ফাটল ধরে,পানি চুষে,ঝুঁকিপূর্ণ হয়?
স্কুলের ওয়াশব্লক- কেন পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সুষ্টু হয়না,কেন টিওবয়েল বহু টাকার বিনিময়ে বসালেও পানি উঠেনা?কেন ভবন রঙ করালে বৃষ্টি হলেই শ্যাওলা জন্মে?
এই সমস্ত সমস্যাগুলো শেষ পর্যন্ত শিক্ষকদেরই ফেস করতে হয়।
**
ক্লাসে যাই।কোনও কোনও স্কুলে কক্ষগুলো ছোট থাকে।বেঞ্চে দুজন করে বসলে বই খাতা ব্যাগ কই রাখবে? ডেস্ক দিতে হবে।
একটি শ্রেণিতে কতজন শিক্ষার্থী বসে?
অনেক স্কুল আছে যেখানে একটি শ্রেণিতে ৭০ থেকে ৮০ জন শিশু গাদাগাদি করে বসে।
ছাত্র শিক্ষক অনুপাত ১:২০ অথবা ১:২৫ করতে হবে।
যদি কোনও শ্রেণিতে মিনিমাম ৪০ জন স্টুডেন্টও বসে তবে ৪০ মিনিট( ধরে নিলাম) এর ক্লাসে শিক্ষক কত কি শেখাবেন?
**
ইসিএল ট্রেনিং নিয়েছিলাম,ওখানে স্তরভিত্তিক পাঠদানের বিষয়টি ছিলো- ২৬ দিনের ট্রেনিং।
আমরা বলেছিলাম এটা কার্যকর অন্যান্য দেশে সম্ভব হলেও( যেসব দেশ থেকে আইডিয়াটি আনা হয়েছিলো) আমাদের দেশে সেটা সম্ভব না।আমাদের বলা হয়েছিলো,আমরা ইতিবাচক নই।
এর ঠিক পরের বছর ইসিএল বাদ,দিলাম ২৬ দিনের ডিপিএড ট্রেনিং,এখানে স্তরভিত্তিক বিষয়টিকে আরেকটু ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে।আমরা বললাম সম্ভব নয়,বলা হলো আমরা ইতিবাচক, আন্তরিক নই।
আমরা মাঠে সরাসরি কাজ করি, আমরা জানি সমস্যা কোথায়, আমরা বুঝি কোনটা আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে ফলপ্রসূ হবে।কিন্তু আমাদের থামিয়ে দেয়া হয় আন্তরিক নই বলে,ইতিবাচক নই বলে।
এখন নতুন নির্দেশনা- স্তরভিত্তিক বাদ।
তো? কেন এতো এতো টাকা খরচ করে বিশাল আয়োজন?যদি শেষে দেখা যায় এটা বাতিলই করতে হয়!
২৪/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথাঃ(ছয়)
----
বহু বহু বার লেখেছি,চর্বিতচর্বণ কিন্তু লেখে লাভ কি!
বিবিধ বিষয় নিয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো স্থির করা ভাবনার কেন্দ্র বিন্দু থেকে ভাবনাগুলোকে বিচ্যুত করে দেয়।
**
প্রধান শিক্ষক স্কুলের সভাপতি কর্তৃক প্রহৃত হয়েছেন।
কয়েকদিন পর পর এধরণের ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে।কারণটা কি?
এইযে এতো এতো শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে,তার কোনও বিচার হয় কি না,তাও জানা যায় না আর।
স্কুল জনগণের,শিক্ষক শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে চাকরীর শর্তাবলী মেনে নিয়েই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করেন।
প্রাথমিক স্কুলে কোনও টাকার খনি নেই, সম্পত্তির মালিকানার বিষয়াদি নেই- তবে কেন এমন হয়?
শিক্ষকের নিরাপত্তা জরুরী আগে,তারপর মানসম্মত শিক্ষা।
**
কিছুদিন আগে তোলপাড় ছিলো সহঃপ্রধান শিক্ষক পোস্ট নিয়ে, পক্ষে বিপক্ষে তুমুল শোরগোল।
এখন যোগ্যতা ভিত্তিক স্কেল নিয়ে গরম হাওয়া বইছে।
যোগ্যতা ভিত্তিক স্কেলের পক্ষালম্বীদের অন্যতম টার্গেট নারী শিক্ষক।
নানা ধরনের হেয়মূলক লেখা কেউ কেউ নির্দ্বিধায় লিখে যাচ্ছেন-
আমার প্রশ্ন-আপনার প্রথম শিক্ষক কে?
আপনার "মা"।
নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী একজন মহিলাশিক্ষক যেভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন পুরুষশিক্ষকও তেমনি তাঁর শর্ত পূরণ করেই নিয়োগপ্রাপ্ত।
আপনি এতো এতো যোগ্যতা সম্পন্ন তবে কম যোগ্যতার পদে কেন এলেন?
এলেন তো এলেন এখন সবাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে বিভেদ সৃষ্টির পায়তারা কষছেন?
কেন পদোন্নতি চাচ্ছেন না?
আপনার যোগ্যতা থাকলে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চতর স্কেলে যান,উচ্চতর পদে যান- কেউ কি বাধা দিচ্ছে?
তা নয় একই ঘরে বাস করে,কেউ খাবে শাকভাত,কেউ খাবে পোলাও মাংস?
এরকম পার্থক্য বিভাজন কেন হবে?
যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে ভয় পান? কেন?
কেনই বা মহিলাশিক্ষকদের নিয়ে একদল পোস্ট করেন আর আরেকদল বিভিন্ন কমেন্ট করেন- খুব মজা পান বুঝি!!
সার্টিফিকেট সার্টিফিকেট বলে মুখে ফেনা তুলছেন? কয় কেজি ওজন আপনার সার্টিফিকেটের যদি তা আপনাকে সভ্য আচরণ না শেখায়,কাউকে সম্মান করতে না শেখায়!! তাহলে বলবো আপনার অর্জন শূন্য।
মহিলারা ফাঁকি দেয়,গণিত বুঝেনা,ইংরেজী বুঝেনা,সংসার নিয়ে ভাবে - তারা অযোগ্য।
তো আপনি কি করেন?
আপনি মহিলা নিয়ে গবেষণায় সময় কাটান- কারণ এ তথ্য যোগাড় চাট্রিখানি কথা নয়।সারাদেশের ব্যপার।
( কথাগুলো সার্বিক নয়,কারণ আমি জানি সবাই একরকম নয়)।
**
প্রাথমিক শিক্ষকগণ যেহেতু জাতির ভিত তৈরি করার কাজে নিয়োজিত,তাই তাঁদের সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।পাশাপাশি নিজেদের মধ্যেও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধটুকু বজায় রাখার প্রতি সচেষ্ট হতে হবে।
এমনিতেই নিয়োগের ধরণ অনুযায়ী,পদোন্নতি সহ নানাধরনের বিভক্তিতে আমরা বিভক্ত।
আর কত বিভক্ত হবেন?
**
আমি হাইস্কুলে পড়ার সময় আমার এক হেড স্যার ছিলেন পিএইচডি ডিগ্রী ধারী।উনার নাম ছিলো সৈয়দ আহমদ।স্যার নিজের যোগ্যতায়ই সরকারি হাই স্কুল ছেড়ে অন্যত্র চলে যান,তিনি তাঁর যোগ্যতাকে সম্মান জানিয়েছিলেন এবং নিজের প্রতি আস্থা ছিলো তাঁর।
**
ক্রমাগত শিক্ষক নির্যাতন,শিক্ষক সমাজের মধ্যে অনৈক্যও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে অন্যতম অন্তরায়।
----২৫/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথাঃসাত
----
**
প্রায় প্রতিটি সরকারি দপ্তরের লোকজন যা বলেন,বলেন পাড়ার নীরিহ বউটিও," আপনাদের চাকরিতো আরামের, খালি ছুটি আর ছুটি"।
হ্যাঁ, আমরা ভেকেশনাল ডিপার্টমেন্ট,ছুটি তো আমাদের থাকবেই।
আগে দেখি ছুটির হিসেবটি।
বছরে ৫২ সপ্তাহ- কাজেই আমরা ৫২ টি শুক্রবার ছুটি ভোগ করি।
৭৫ দিন সব মিলিয়ে আরও ছুটি আমাদের।
এবার ছুটি কেমন ভোগ করি তা জানাই।
৭৫ দিন ছুটির মধ্যে ২ দিন প্রধান শিক্ষকের হাতে সংরক্ষিত।
মনে রাখতে হবে একমাত্র রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ছাড়া প্রাথমিক স্কুল বন্ধ রাখার এখতিয়ার কারও নেই,শুধু প্রধান শিক্ষক ২ দিন ছুটি দেয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন।কিন্তু দুঃখের বিষয়,এই ছুটি ভোগ করা ঝামেলা হয়ে দাড়ায় বিধায় অনেক প্রধান শিক্ষক এই ছুটি এড়িয়ে চলেন।
বাকী থাকলো ৭৩ দিন,এর মধ্যে ৬ টি জাতীয় দিবস আছে যে দিবসগুলো পালনের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েরই স্কুলে যেতে হয়,এবং গত বৎসর আমরা ৭টি দিবস পালন করেছি,নতুন সংযোজন ছিলো ঈদ-ই - মিলাদুন্নবী।
কথা হলো জাতীয় দিবসগুলো অবশ্যই পালন করবো,কিন্তু ছুটি জানে শিক্ষার্থীরা, তাদের স্কুলে আসতে হয়,তাদের মন খারাপ হয়,বিভিন্ন কর্মসূচীতে তাদের অংশ নিতে হয় এই পরিমাণে যে তারা ক্লান্ত হয় খোলাবারের চেয়ে।
আর ছুটি পরিণত হয় কর্মদিবসে অলিখিত ভাবে।জাতীয় দিবস গুলো কার্যদিবস হিসেবেই থাকুক না,না হয় নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম বন্ধই থাকলো।
**
এবার আসি অন্য সরকারি দপ্তরের ছুটির হিসেবে।
৫২+৫২= ১০৪ দিন তাঁরা ছুটি ভোগ করেন,এবছরের ক্যালেন্ডারে গুনে দেখলাম ১৯ দিন সরকারি বন্ধ,বিভিন্ন কারণে এটা বেড়েও যায়।
বাড়তিটা বাদ দিলাম,১০৪+১৯=১২৩।
মাত্র ৪ দিন বেশি আমরা ভোগ করি!
( হিসেবে ভুল হলে সংশোধন যোগ্য)
**
বলা হয় বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস।
সেই অর্ধদিবস আড়াইটা পর্যন্ত।
তারপর বাকি সময়গুলোতে কত কত কাজ করার নির্দেশ জারী হয় প্রতিনিয়ত,অর্ধদিবস হয়ে যায় পূর্ণদিবসেরও বেশি।
**
রোজায় ৩০ দিনের বন্ধের সাথে আমাদের শ্রান্তি বিনোদন ছুটি মিলিয়ে দেয়া হয়,ফলে আমরা শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ৩ বছর অন্তর পাওয়ার কথা থাকলেও পাই ৪বছর অন্তর,কোনও কোনও সময় ৫ বছরেও - বরাদ্দ না থাকলে।কারণ বলা হয় রোজা এগিয়ে আসে প্রতিবছর ১১/১২ দিন করে।
অন্যান্য দপ্তর ভাতার সাথে ছুটিও পান পনেরো দিন,আমরা পাইনা।
অথচ ভেকেশনাল বলে আমরা শিক্ষকগণ পেনশনে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির শিকার হই,একই গ্রেডের অন্য দপ্তরের লোকজনের চেয়ে কয়েক লাখ টাকা আমরা কম পাই।- এ দুঃখ শিক্ষকগণ কিভাবে মেনে নেন! আল্লাহ জানেন।
**
আসি রোজার ৩০ দিনের ছুটিতে।
রোজার সময় সকল অফিস ৯/১০ থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
আর আমরা তো ছুটিতেই তাই আয়োজন করা হয় সকল ট্রেনিং কার্যক্রম, ৯- ৫ টা পর্যন্ত এর সময়সূচী,ট্রেনার সদয় হলে সময়ের কিছুটা হেরফের হয়,নয়তো নয়।
সারাদিন রোজা রেখে একটানা ট্রেনিং গ্রহন!
যারা মহিলা তারা কেবল ছটফট করেন, কখন বাড়ি যাবেন,কখন সারাদিনের কাজ সেরে পরের দিনের রান্না সারবেন।
**
ট্রেনিং নেই? স্পেশাল ক্লাস করো কোচিং নিষিদ্ধ তবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে একটু কষ্ট করেন- বিশেষ ক্লাস করেন।নির্দেশনা আসে,আমার ইচ্ছে হলে আমি বিশেষ ক্লাস নেবো- চাপানো কেন বন্ধের সময়?
**
এই হলো আমাদের ছুটি ডিপার্টমেন্টের ছুটির আদ্যোপান্ত।
দেখেন তো কোথায় আমরা ছুটি ভোগ করি কতটুকু আর কোথায় আমরা বঞ্চিত হই!
এই সমস্ত বিষয়গুলো একজন তরুণ শিক্ষক মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, শুধু বৈষম্য আর বৈষম্যের ভারে ভারাক্রান্ত প্রাথমিক সেক্টর।
কি করে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়িত হবে এতসব বৈষম্য জিইয়ে রেখে!!
--২৬/০৫/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথাঃআট
---
**
প্রাথমিক বললে অনেকের চোখে মুখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি খেলে যায়- এ আমি অনেক দেখেছি।আবার অনেকে প্রভূত সম্মান প্রদর্শন করেন - এটাও আমি দেখেছি অনেক।
নামে প্রাথমিক হলেও আমাদের কাজের বহর কম নয় কিন্তু।ঠিক এই মুহূর্তে সারাদেশে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছে এবং আমাদের অনেক শিক্ষক ভাই বোন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করছেন গ্রামে,শহরে,বস্
তিতে রোদ বৃষ্টিতে পুড়ে এবং ভিজে।
প্রাথমিকের ভাইবোনেরা এই কাজটা না করলে তথ্যগুলো সঠিক হয়না।সাথে খাতা কাটা,উপবৃত্তি,স
্লিপ সহ আরও বিবিধ কাজ আছে তো।
না আমরা কাজকে না বলিনা।আমরা বলি আমাদের দম ফেলার ফুরসৎ না দাও দিওনা,আমাদের কচি শিশুগুলি কি অপরাধে একদিনে দুই বিষয়ে পরীক্ষা দিবে?
আশার কথা এইযে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় ১ম-৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।মমতাময়ী মায়ের মতোই তিনি কচি কচি শিক্ষার্থীদের যাতনার বিষয়টি আমলে নিয়েছেন।
**
মহাসমারোহে সৃজনশীল বিষয়াদি প্রশ্নপত্রে আনা হয়েছে,বইতে সৃজনশীলতা নেই।কিছু কিছু বিষয়ে বইতে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই।শিশুরা শিখবে কোথা থেকে।
বানানরীতি একেক বিষয়ে একেক রকম,পরিসংখ্যান একেক বইতে একেকরকম।
কোথাও যেন সমন্বয় নেই।
আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো এক প্রশিক্ষণে পাঠ্যপুস্তক প্রনয়ণ ও প্রশ্নপত্র পদ্ধতি প্রনয়ণ কমিটির সাথে সরাসরি জড়িত এবং সেই সাথে প্রাথমিকের একজন বিশেষজ্ঞ মহোদয়ের সাথে কথা বলার।
আমি খুঁটিনাটি সব বিষয় তোলে ধরি,বইয়ে তথ্যে ভুল,যথাযথ তথ্য সন্নিবেশিত নেই শুনে তিনি অবাক, তিনি আরও অবাক হন জেনে যে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পরীক্ষা নেয়া হয়।
উনার সাথে কথোপকথনের ডিটেলস আমি ইতিপূর্বেও লেখেছি।
সৃজনশীল কি? সৃজনশীলতা বিষয়টা কি?
সবাই কি তা জানে? কোনও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে শিক্ষকদের?
বেঞ্জামিন ব্লুমের Concept of Learning Domain - এর উপর বেইজ করে যে অভীক্ষা-পদ প্রনয়ণের তিনদিনের প্রশিক্ষণ যা আমরা মার্কিং স্কিম প্রশিক্ষণ বলে জানি এবং গ্রহন করি সেটাই কি সৃজনশীলতা?
সৃজনশীল একটি ব্যাপক বিষয়- একটি প্রশ্ন পত্র প্রনয়ণ এবং তা দিয়ে পরীক্ষা গ্রহনের নাম সৃজনশীলতা নয়।
সৃজনশীল প্রশ্ন হতে হলে বইটিকেও সৃজনশীলতার আলোকে রচিত হতে হবে- অসম্পূর্ণ তথ্য সম্বলিত বই সৃজনশীলতার উৎস হতে পারেনা।
পাঠদান কার্যক্রম কিংবা বইয়ে সৃজনশীলতা না থাকলেও এক জায়গায় আছে।
সেটা কড়াকড়ি নিষিদ্ধ শিক্ষকের জন্য,শিক্ষার্থী
দের জন্য।
বিনীত প্রশ্ন- বাজারে, লাইব্রেরীতে সৃজনশীল গাইড বই কেন তবে? যে কোনও পদ্ধতি, প্রশ্ন কাঠামো কখন পরিবর্তন হবে তা শিক্ষক কিংবা উপজেলা এমনকি জেলা পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাবৃন্দ না জানলেও পাবলিশাররা টের পায় কি করে? তারা বছরে মিনিমাম তিনবার নতুন গাইড ছাপায় এবং মিনিমাম তিনবারও কোনও কোনও সময় প্রশ্নকাঠামো চেঞ্জ হয়।
সেই নিষিদ্ধ গাইড বইগুলোই সৃজনশীলতার অন্যতম উৎস,নিষিদ্ধ সত্ত্বেও ওটাই শিক্ষার্থীরা পড়ে,শিক্ষকগণও কোনও কোনও সময় ওটার সাহায্য নিতে বাধ্য হন।
প্রশ্ন আসতে পারে শিক্ষকগণ কি তবে জানেন না?
হ্যাঁ জানতে হলে পড়তে হয়,পাঠ্যপুস্তকে না থাকলেও সংশ্লিষ্ট তথ্য সম্বলিত বই পড়তে হবে,লাইব্রেরীতে যেতে হবে।আইটি সম্পর্কে জানা থাকলেও অন্তত কিছু তথ্য তিনি জানতে এবং জানাতে সক্ষম হবেন।
কোনও শিক্ষকই চলন্ত লাইব্রেরী নন।তাঁকেও পড়েই জানতে হয়।
পড়ার সময় কই? গড়ে যদি পাঁচটি ক্লাসও নেন- সাথে এই কাজ, সেই কাজ করতে হয়- পড়াটা পড়বেন কখন?
জানার কোনও বিকল্প নেই,বই পড়ে জানতে হয়,জানতে হয় আরও বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা।সেই সুযোগ দিতে হবে।
এ সপ্তাহের সেরা আলোচ্য- ডিজিটাল হাজিরা মেশিন।
স্বাগত জানাই,আন্তরিকতা না থাকলে ন'টা সাড়ে চারটা কেন সারা দিনরাত স্কুলে উপস্থিত থেকেও কাজের কাজ কিছুই হবেনা।
আন্তরিকতা আনতে হলে, আন্তরিকতা থাকতে হলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আন্তরিক হতে হবে।
গাইড দেখে পড়াতে হলে,গাইড দেখে প্রশ্ন করতে হলে সৃজনশীল পদ্ধতি নাম বাদ দিয়ে হিডেন গাইড পদ্ধতি নাম দিলেই ভালো এবং যথার্থ হবে।
---২৯/০৪/২০১৯
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথাঃ শেষ পর্ব
--
(লেখাটি শেষ করতে চাইছি,তাই আলোচনা সংক্ষেপ করছি।)
আমাদের বিবিধ সমস্যা আছে, তারপরও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত যে মহাপরিকল্পনা তা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়নে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ,আন্তরিক এবং সচেতন।
এ প্রসঙ্গে আমাদের কিছু সমস্যার কথা তোলে ধরছি।
**
হাজিরা নিশ্চিতঃপ্রতিটি পেশাজীবীকে তার কর্মস্থলে সময়মতো উপস্থিত হতে হয়,হওয়া উচিত।
প্রাথমিক শিক্ষকবৃন্দ এর থেকে ব্যতিক্রম নন।বলা হচ্ছে বায়োমেট্রিক মেশিনের মাধ্যমে আগমন ও প্রস্থানের সময় নিশ্চিত করতে হবে।
বায়োমেট্রিক হাজিরার যে মেশিনটি তা কি কারেন্টের সাহায্যে চলে? আমি শুনেছি কারেন্ট দরকার পড়ে,তো আমি স্কুলে উপস্থিত হলাম পৌনে ন'টা বা ন'টা বাজার পাঁচ মিনিট আগে কিংবা ঠিক ন'টায়- তখন যদি কারেন্ট না থাকে!
**
স্কুল সময়ঃ এক শিফ্ট পরিচালিত স্কুলগুলোতে ন'টা থেকে সোয়া চারটা পর্যন্ত মাঝখানে আধঘন্টা বিরতি বাদে শিক্ষার্থীরা একটানা স্কুল কার্যক্রমে,পাঠগ
্রহন কার্যক্রমে রত থাকবে।শিক্ষক যদিও বা কোনও ক্লাস বিরতি পান( সংখ্যা কম- অন্য কাজ থাকে) শিশুরা পায়না।
খাঁচায় বন্দী শৈশব?
আবার ৩৫/৪০ মিনিটের একটি ক্লাসে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর ক্লাসে নির্দেশিত কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম উপস্থাপন,মূল্যূায়ণ কি করে সম্ভব!! গড়ে এক মিনিটও কি প্রতি শিক্ষার্থী পায়?
সেদিন এক আলোচনায় একথা বলাতে একজন কর্মকর্তা বলেন এ ক্ষেত্রে দুর্বল সবল চিহ্নিত করে কাকে প্রাধান্য দিতে হবে,তা ঠিক করতে হবে।অভিভাবকগণ কেন মানবে তা?
আবার এও তিনি বললেন যে আপনারাই তো বলেন স্কুল টাইম দীর্ঘ,এবং তা কমানোর দাবী করেন।
তখন আমার উত্তর ছিলো এমন যে হ্যাঁ স্কুল টাইম দীর্ঘ, ক্লাসটাইম কম।
১০টা থেকে ৩টা স্কুল টাইম করলে ভালো হয়।মেইন বিষয়গুলো প্রতিদিন এক ঘন্টা ব্যাপী ক্লাস হবে।আর বাকি তিনটি বিষয় এক ঘন্টা করে সপ্তাহে দুইদিন করে হোক।টিফিন একঘন্টা- বৃহস্পতিবার পূর্ণ দিবস করে সেই সময়ে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম থাকুক।
এতে প্রতিদিন শিশুরা পাঁচ ঘন্টা ক্লাস করবে,আর বৃহস্পতিবারে যেহেতু এখনও কিছু বিষয় বাদ যায় সেহেতু ক্লাস সময়টা একটু কমিয়ে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম করা যায়।
এক্ষেত্রে কিছু বইয়ের অধ্যায় কমাতে হবে,এই ছিলো আমার প্রস্তাব।
শিশু একটানা মুখ গুজে ক্লাসে বসে থাকবে,শিশুদের কষ্ট হয়- নিজের ছেলেবেলার কথা মনে পড়লেই তা বোঝা যায়।
( এটা আমার মতে)
**
দেশের সকল স্থানের ভৌগলিক বিন্যাস এক নয়,নয় একই রকম যাতায়াত সুবিধা।স্কুল টাইম দশটা তিনটা করলে শিক্ষকদেরও সুবিধা হয়।সময়মতো স্কুলে যেতে কে চাইবেনা? কিন্তু অবস্থা যদি এমন হয় যে তাকে হেঁটেই পাঁচ মাইল যেতে হয় রোজ - এক্ষেত্রে বিকল্প কিছু ভাবতে হবে বৈকি।
**
শিক্ষকদের প্রাপ্য সুবিধাদি দিতে হবে।শিক্ষকদের মর্যাদা সুনিশ্চিত করতে হবে,শিক্ষক সুরক্ষা আইন প্রনয়ণ করতে হবে।
বদলীর জন্য,ছুটির জন্য,টাইমস্কেলের জন্য,ইনক্রমিনেন
্ট ধরানোর জন্য শিক্ষক কেন টাকা গুনবেন?
আর শিক্ষকের মর্যাদা যেহেতু কারও সাথে তুল্য নয়- এজন্য এ দেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষকের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল নির্ধারণ করুন।
আমি আশাবাদী মানুষ।বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার- মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে এবং এদেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষা ব্যাবস্থাকে যুগোপযোগী করতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা লক্ষণীয়।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন শিক্ষাবান্ধব,শিক্ষকবান্ধব সেই সাথে শিক্ষার্থীদের জন্য একজন মমতাময়ী মায়ের মতোই - যা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি বিভিন্ন সময়ে।
তোমাতে আমাতে হয়নি যে কথাঃ(ছয়)
----
বহু বহু বার লেখেছি,চর্বিতচর্বণ কিন্তু লেখে লাভ কি!
বিবিধ বিষয় নিয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো স্থির করা ভাবনার কেন্দ্র বিন্দু থেকে ভাবনাগুলোকে বিচ্যুত করে দেয়।
**
প্রধান শিক্ষক স্কুলের সভাপতি কর্তৃক প্রহৃত হয়েছেন।
কয়েকদিন পর পর এধরণের ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে।কারণটা কি?
এইযে এতো এতো শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে,তার কোনও বিচার হয় কি না,তাও জানা যায় না আর।
স্কুল জনগণের,শিক্ষক শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে চাকরীর শর্তাবলী মেনে নিয়েই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করেন।
প্রাথমিক স্কুলে কোনও টাকার খনি নেই, সম্পত্তির মালিকানার বিষয়াদি নেই- তবে কেন এমন হয়?
শিক্ষকের নিরাপত্তা জরুরী আগে,তারপর মানসম্মত শিক্ষা।
**
কিছুদিন আগে তোলপাড় ছিলো সহঃপ্রধান শিক্ষক পোস্ট নিয়ে, পক্ষে বিপক্ষে তুমুল শোরগোল।
এখন যোগ্যতা ভিত্তিক স্কেল নিয়ে গরম হাওয়া বইছে।
যোগ্যতা ভিত্তিক স্কেলের পক্ষালম্বীদের অন্যতম টার্গেট নারী শিক্ষক।
নানা ধরনের হেয়মূলক লেখা কেউ কেউ নির্দ্বিধায় লিখে যাচ্ছেন-
আমার প্রশ্ন-আপনার প্রথম শিক্ষক কে?
আপনার "মা"।
নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী একজন মহিলাশিক্ষক যেভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন পুরুষশিক্ষকও তেমনি তাঁর শর্ত পূরণ করেই নিয়োগপ্রাপ্ত।
আপনি এতো এতো যোগ্যতা সম্পন্ন তবে কম যোগ্যতার পদে কেন এলেন?
এলেন তো এলেন এখন সবাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে বিভেদ সৃষ্টির পায়তারা কষছেন?
কেন পদোন্নতি চাচ্ছেন না?
আপনার যোগ্যতা থাকলে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চতর স্কেলে যান,উচ্চতর পদে যান- কেউ কি বাধা দিচ্ছে?
তা নয় একই ঘরে বাস করে,কেউ খাবে শাকভাত,কেউ খাবে পোলাও মাংস?
এরকম পার্থক্য বিভাজন কেন হবে?
যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে ভয় পান? কেন?
কেনই বা মহিলাশিক্ষকদের নিয়ে একদল পোস্ট করেন আর আরেকদল বিভিন্ন কমেন্ট করেন- খুব মজা পান বুঝি!!
সার্টিফিকেট সার্টিফিকেট বলে মুখে ফেনা তুলছেন? কয় কেজি ওজন আপনার সার
কাজেই অবস্থার পরিবর্তন হবেই,শিক্ষকদের জন্য পৃথক মর্যাদাসম্পন্ন বেতনক্রম হয়তো আমরা পেয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা সুনিশ্চিত হোক অতিদ্রুত- আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবো সহসাই এই শুভকামনা রেখে শেষ করছি।
ধন্যবাদ।
০২/০৫/২০১৯
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ফয়েজ উল্লাহ রবি ০৭/০৫/২০১৯খুব ভালো লিখেছেন ।
-
রনোজিত সরকার(বামুনের চাঁদ) ০৬/০৫/২০১৯ভালো🙂
-
ইমন শরীফ ০৬/০৫/২০১৯চমৎকার প্রকাশ।
-
সৌবর্ণ বাঁধন ০৬/০৫/২০১৯সমৃদ্ধ লেখনী