www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নীতি

তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা,এ সমুদ্রে আর কভু হব নাকো পথহারাঃ প্রসঙ্গ " নীতি"
-----
তমসাচ্ছন্ন ছিলো প্রাচীন পৃথিবী,চেতনার,বোধের তমসা। মানুষই নিজস্ব উপলব্ধি দিয়ে প্রকৃতির সাহায্যে দূর করতে সচেষ্ট হয়েছে সেই তমসা।যুগ যুগ ধরে প্রবহমান মানুষ থেকে মানুষে,প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চারিত হয়েছে আলো, জাগ্রত হয়েছে চেতনা,উপলব্ধি, আবিষ্কার করেছে জীবনের অনুষঙ্গ,আর তারই ধারাবাহিকতায় আজকের পৃথিবী দাড়িয়ে।
তমসা দূরীভূত হয়েছে আলোর সাহায্যে।যে আলো আমরা সূর্য থেকে পাই,আর হাতের কাছে পাই আগুন থেকে।
আগুন মানুষই আবিষ্কার করেছে,মানুষ তার মননে চেতনায় জ্ঞানের আগুন জ্বেলেছে ওই আলো থেকেই।
জ্ঞান ও শিক্ষার পার্থক্য আমি ইতোপূর্বে আরেকটি নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।এখানে সংক্ষেপে বলি জ্ঞান আর শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য আছে,ব্যপক পার্থক্য।
প্রাচীন মানুষ শিক্ষিত ছিলেন না,জ্ঞানী ছিলেন।জ্ঞানটা অর্জন করেছিলেন নিজে নিজে,প্রকৃতি থেকে,কাজ করতে করতে,পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধি থেকে।
অগ্নি সৃজন করে,আবার অগ্নি সর্বগ্রাস করে।
জ্ঞান আলো জ্বালায়,অপব্যবহারে জ্ঞান ধ্বংস ডেকে আনে।
জ্ঞান শুরুতে অব্যক্ত ছিলো,মানুষ স্রষ্টাকে চিনে নিলো,এরপর জ্ঞান হলো প্রকাশিত।
তারপর বহু বহু বছর অতিক্রান্ত হলো, প্রকাশিত জ্ঞানকে এবার কুক্ষিগত করার পালা।
আর ইংরেজরা আমাদের দিয়ে গেলো শিক্ষা নামক কারখানা,যেখানে মানব শিশু ঢুকে আর বের হয় যন্ত্র।আমরা শিক্ষক আমরা চাকর,আমরা আরও আরও চাকর তৈরী করি।এটাই এখন শিক্ষা, এখানে জ্ঞান নির্বাসিত।সকলের লক্ষ্য কে কত বড় চাকর তৈরী করতে পারি।
নীতি বিষয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে বিরাট লেখা হয়ে যাবে।সংক্ষেপে বলি।
নীতি শব্দের অনেক প্রতিশব্দ আছে,প্রতিটি প্রতিশব্দ একেক ধরনের ব্যঞ্জণা প্রকাশ করবে।
তো জীবন যাপন শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য,সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সমাজে যাঁরা জ্ঞানী, যাঁদেরকে সমাজ মানে তাঁদের দ্বারা কিছু কর্মপন্হা বা প্রণালী প্রণীত হয়।সেটাই নিয়ম বা নীতি।নিয়ম ও নীতি সম্পর্কযুক্ত।
ব্যক্তিও তার নিজস্ব জীবন পরিচালনায় কিছু নীতি মেনে চলে।
রবীন্দ্রনাথ কি বলেছেন জানি"নীতিমান ব্যক্তি সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থা থেকে' এটা নেবনা,এটা নেব' ইত্যাকার আচরণের যে বিশেষ নিয়ম পালন করেন,সেটাই তাঁর প্রয়োজনীয় বিষয় ও বস্তু সংগ্রহের পদ্ধতি; অতএব সেটাই তার নীতি।"
তো যে সমাজে জ্ঞানকে সংকুচিত করা হয়,শিক্ষাকে করা হয় পণ্য, শিক্ষাকেন্দ্রকে করা হয় চাকর তৈরীর কারখানা- সেখানে কি নীতি তৈরী হবে মানুষের মধ্যে?
নীতি এখন আমি,নীতি এখন আপনি,নীতি এখন সে।
আমার স্বার্থে আমি নীতি প্রনয়ণ করবো,আপনার স্বার্থে আপনি,তার স্বার্থে সে।
সবাই আপনাপন স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত,তা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কেন্দ্রিক যাই হোক না কেন।
নীতির মা এখন নির্বাসনে।
এ সমাজে জন্ম নেয়া একটি শিশু কোথায় করবে নৈতিক চর্চা? কোথায় চর্চা হয় নৈতিকতার?
নীতি,নৈতিকতা কেনার জিনিস নয়,চাপিয়ে দেবার জিনিস নয়।এ হলো একটি বোধ।এটা তৈরী হয় পরিবার, সংগঠন, সমাজ থেকে।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন"আমরা গতিকেও চাই,স্থিতিকেও চাই,অখণ্ডকে চাই,খণ্ডকেও চাই,নইলে সম্পূর্ণ বোঝা হয়না"।
তো আমরা কি বুঝবো গতি আর স্থিতি থেকে,কি শিখবো অখণ্ড আর খণ্ড থেকে?
পার্থক্যটা বুঝতে হবে,ভালো আর মন্দের,সত্য আর অসত্যের।
এখন হয়েছে ক্ষমতা সত্য বাকি সব মিথ্যা।
নীতি আর আছে কি অবশিষ্ট?
রবীন্দ্রনাথ সেটা বলতে পারতেন ভালো,আমরা অর্বাচীন সব চলতি হাওয়ার পন্হী।
তবু প্রাণে সুর বাজে," যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন,/ সেইখানে যে চরণ তোমার বাজে।"
আমাদের আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত আলোর বড় প্রয়োজন ছিলো।
খুবই প্রয়োজন ছিলো।
---- ৬/১১/২০১৮
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৪৮৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/০১/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast