নৌকাযাত্রী
নৌকা যাত্রী
চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরু, কড়া রৌদ্রে আর সেদিনের গরমে গলা শুকিয়ে একেবারে দুরুদুরু। এমন সময় ডাক এলো, বড়ডিয়ায় ভ্রমন। নৌকায় ভ্রমন, সবাই আনন্দে মেতে উঠলো, তবে কেউ কেউ দিধা করছিল, পরবর্তীতে তারাও রাজি। কথা পাকা পাকি হয়ে গেল বৈকাল তিনটায় পাড়ি দিবো, তার আগেই সবাইকে ঘাটে উপস্থিত হতে হবে। দুপুরের খাওয়া সেরে অনেকেই ইতিমধ্যে উপস্থিত, কেউ কেউ খাওয়া তো দুরের কথা স্নানও করেনি, আনন্দে মেতে ঘাটে উপস্থিত। সেখানে দশ দিনের মতো ভ্রমন, সেই মতো আসবাবপত্র, চাল,ডাল, তরিতরকারি, মশলাপাতি সবকিছু ঠিকঠাক জোগাড় নেওয়া হলো। তারপর আর কেউ বাকি আছে নাকি দেখে তা দেখে তিনটে পনেরো মিনিট হবে এমন সময় নৌকায় চাপা
হলো। চাপার সময় নৌকাটা একটু একটু দুল ছিল, এতে অনেকেই আনন্দ উপভোগ করছিল, আবার কেউ কেউ ভয়ে কাঠ, যারা আনন্দ পাচ্ছিল তারা এর আগে বারকয়েক নৌকায় ভ্রমন করেছে, আর যারা ভয় ভয় করছে তারা এই প্রথম।
আব্দুল মাঝি এক্কেবারে পাক্কা মাঝি, প্রচুর তার নাম ডাক,এখনো বয়স বেশি হয়নি, তবুও প্রচুর দক্ষ। সেই........ তার বয়স যখন তিনচারের মতোই হবে তখন থেকে নৌকায় থাকে।
তার বাবা পাঁচু মাঝি তখনকার সময়ে কতই না
নাম ডাক ছিল। "হঠাৎ একদিন সে ডুবে মারা গেল"। পড়ে থাকা পাচুর নৌকা হাল ধরলো আব্দুল। তার অ্যাসিস্ট্যান্ট নুরুদ্দিন মালিকের খুব বিশ্বস্থ। মালিক আদেশ করলো মেশিন জুড়ে দে,অমনি সে মেশিন স্টার্ট করলো,আর আব্দুল ভ্রমনের পথে হ্যাল ধরে বসে পড়লো। ইতিমধ্যে সবাই একেঅপরের সাথে হাসি মজার গল্প শুরু করেছে। প্রচন্ড তাপ আর কড়া রৌদ্রে নৌকা চলছে।সকলের শরীর থেকে ঘাম ঝরে ঝরে পড়ছে। "সূর্য যেন লাল টগবগে দৃষ্টিতে শত্রুর মতো তাকিয়ে রয়েছে নদীর দিকে"। যাত্রীরা আকাশপটে তাকিয়ে মিন মিন কি যেন বললো। সবাই আশাতীত একটু বাতাসের! এমনি সময় সূর্য যেন সবাই কে বিদায় জানিয়ে ক্ষণিকের মধ্যে উধাও হলো। সূর্য চোখের আড়াল হতে না হতেই গুমোট লাগতে লাগলো। গুমোট বাড়তেই থাকলো, "সবাই ক্ষিপ্ত মেজাজে আল্লাহ্ ভগবানের মুন্ডপাত করতে থাকল "। সকলের শরীরে যেন ঘামের স্রোত প্রবাহিত হতে থাকলো। "তারপর হঠাৎ এক কান্ড"! সূর্য বাতাসের সঙ্গে শত্রুতা কিংবা বন্ধুত্ব করলো বোঝা গেলো না। কিছুক্ষণ পর হালকা শির শিরে বাতাসের আবির্ভাব হলো। সবার শরীর শিরশিরে বাতাসের স্পর্শ পেতেই বাজিমাৎ। নতুন কর সবাই আবার জীবন পেলো। বাতাসের কেমন যেন একটা ভাব দেখা দিলো, বাতাস মনে মনে হালকা হাসলো। তারপর আকাশে ঘন মেঘ দেখা দিলো, মেঘের সাথে বাতাসের গোপনে কিযে আলাপ হলো তা বোঝা গেলো না। বাতাসের হাসি বেড়ে গেলো,মেঘ আনন্দে মেতে গর্জন করতে লাগলো।
গর্জন করতে করতে মেঘ সারা বসতি জানিয়ে দিলো 'তোমরা জাগো '। তখনিই আনন্দে মেতে সারা বসতির মেঘ আরও ঘন কালো হয়ে পুরো আকাশটাকে ছেয়ে ফেললো। যাত্রীদের মনে এবার একটু ভয়ের আশঙ্কা দেখা গেলো। বাতাস ও মেঘের গোপন কথা মেশিন টা একটু একটু বুঝতে পারলো। "কিন্তু আবলা মেশিন কস্ট করে আপন মনে চলতে থাকলো"। মেশিনের দিকে খেয়াল করে এবার মাঝি আব্দুল ধরে ফেলেছে বাতাসের হাসির কারন। মাঝি হালকা ভাবলো, মনস্থির করলো, কাওকে কিছু না বলে গতি বাড়িয়ে দিকপরিবর্তন না করে চলতে থাকলো।
এরই মধ্যে মেঘ নদীর জলের সাথে বন্ধুত্ব পাতাল। মেঘ কে পেয়ে নদীর জল বিশাল বিশাল ঢেউ তুলতে থাকলো, একদিকে মেঘের গর্জন অন্যদিকে যাত্রীদের হাহাকার,তারা দিশেহারা হয়ে নীরব, ভাবতেও পারেনা তারা কি করবে। এরই মধ্যে বাতাস অন্যরূপ ধারণ করলো। বাতাস আর মেঘ গর্জন করতে করতে ধেয়ে পড়লো নদীর জলে। নদীর জল বাতাস আর মেঘের বন্ধুত্ব পেয়ে ঢেউ এর আকার পাল্টে নিলো। নৌকা টলমল, যাত্রীরা এদিক ওদিক জলে পড়তে শুরু করেছে, পুটী মাছের মতো চুবুক চুবুক করছে, সাঁতার কাটার ক্ষমতা নেই।
বাকিদের কাঁন্নার স্বর উত্তেজিত হলো, মাঝি তখনও অনড় ছিল, আর কোনো আশা নেই, নিরাশায় নৌকা থেকে জলে ঝাঁপ দিলো কিনারা পৌঁছানোর উদ্দ্যেসে।
(কালাম হাবিব)
চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরু, কড়া রৌদ্রে আর সেদিনের গরমে গলা শুকিয়ে একেবারে দুরুদুরু। এমন সময় ডাক এলো, বড়ডিয়ায় ভ্রমন। নৌকায় ভ্রমন, সবাই আনন্দে মেতে উঠলো, তবে কেউ কেউ দিধা করছিল, পরবর্তীতে তারাও রাজি। কথা পাকা পাকি হয়ে গেল বৈকাল তিনটায় পাড়ি দিবো, তার আগেই সবাইকে ঘাটে উপস্থিত হতে হবে। দুপুরের খাওয়া সেরে অনেকেই ইতিমধ্যে উপস্থিত, কেউ কেউ খাওয়া তো দুরের কথা স্নানও করেনি, আনন্দে মেতে ঘাটে উপস্থিত। সেখানে দশ দিনের মতো ভ্রমন, সেই মতো আসবাবপত্র, চাল,ডাল, তরিতরকারি, মশলাপাতি সবকিছু ঠিকঠাক জোগাড় নেওয়া হলো। তারপর আর কেউ বাকি আছে নাকি দেখে তা দেখে তিনটে পনেরো মিনিট হবে এমন সময় নৌকায় চাপা
হলো। চাপার সময় নৌকাটা একটু একটু দুল ছিল, এতে অনেকেই আনন্দ উপভোগ করছিল, আবার কেউ কেউ ভয়ে কাঠ, যারা আনন্দ পাচ্ছিল তারা এর আগে বারকয়েক নৌকায় ভ্রমন করেছে, আর যারা ভয় ভয় করছে তারা এই প্রথম।
আব্দুল মাঝি এক্কেবারে পাক্কা মাঝি, প্রচুর তার নাম ডাক,এখনো বয়স বেশি হয়নি, তবুও প্রচুর দক্ষ। সেই........ তার বয়স যখন তিনচারের মতোই হবে তখন থেকে নৌকায় থাকে।
তার বাবা পাঁচু মাঝি তখনকার সময়ে কতই না
নাম ডাক ছিল। "হঠাৎ একদিন সে ডুবে মারা গেল"। পড়ে থাকা পাচুর নৌকা হাল ধরলো আব্দুল। তার অ্যাসিস্ট্যান্ট নুরুদ্দিন মালিকের খুব বিশ্বস্থ। মালিক আদেশ করলো মেশিন জুড়ে দে,অমনি সে মেশিন স্টার্ট করলো,আর আব্দুল ভ্রমনের পথে হ্যাল ধরে বসে পড়লো। ইতিমধ্যে সবাই একেঅপরের সাথে হাসি মজার গল্প শুরু করেছে। প্রচন্ড তাপ আর কড়া রৌদ্রে নৌকা চলছে।সকলের শরীর থেকে ঘাম ঝরে ঝরে পড়ছে। "সূর্য যেন লাল টগবগে দৃষ্টিতে শত্রুর মতো তাকিয়ে রয়েছে নদীর দিকে"। যাত্রীরা আকাশপটে তাকিয়ে মিন মিন কি যেন বললো। সবাই আশাতীত একটু বাতাসের! এমনি সময় সূর্য যেন সবাই কে বিদায় জানিয়ে ক্ষণিকের মধ্যে উধাও হলো। সূর্য চোখের আড়াল হতে না হতেই গুমোট লাগতে লাগলো। গুমোট বাড়তেই থাকলো, "সবাই ক্ষিপ্ত মেজাজে আল্লাহ্ ভগবানের মুন্ডপাত করতে থাকল "। সকলের শরীরে যেন ঘামের স্রোত প্রবাহিত হতে থাকলো। "তারপর হঠাৎ এক কান্ড"! সূর্য বাতাসের সঙ্গে শত্রুতা কিংবা বন্ধুত্ব করলো বোঝা গেলো না। কিছুক্ষণ পর হালকা শির শিরে বাতাসের আবির্ভাব হলো। সবার শরীর শিরশিরে বাতাসের স্পর্শ পেতেই বাজিমাৎ। নতুন কর সবাই আবার জীবন পেলো। বাতাসের কেমন যেন একটা ভাব দেখা দিলো, বাতাস মনে মনে হালকা হাসলো। তারপর আকাশে ঘন মেঘ দেখা দিলো, মেঘের সাথে বাতাসের গোপনে কিযে আলাপ হলো তা বোঝা গেলো না। বাতাসের হাসি বেড়ে গেলো,মেঘ আনন্দে মেতে গর্জন করতে লাগলো।
গর্জন করতে করতে মেঘ সারা বসতি জানিয়ে দিলো 'তোমরা জাগো '। তখনিই আনন্দে মেতে সারা বসতির মেঘ আরও ঘন কালো হয়ে পুরো আকাশটাকে ছেয়ে ফেললো। যাত্রীদের মনে এবার একটু ভয়ের আশঙ্কা দেখা গেলো। বাতাস ও মেঘের গোপন কথা মেশিন টা একটু একটু বুঝতে পারলো। "কিন্তু আবলা মেশিন কস্ট করে আপন মনে চলতে থাকলো"। মেশিনের দিকে খেয়াল করে এবার মাঝি আব্দুল ধরে ফেলেছে বাতাসের হাসির কারন। মাঝি হালকা ভাবলো, মনস্থির করলো, কাওকে কিছু না বলে গতি বাড়িয়ে দিকপরিবর্তন না করে চলতে থাকলো।
এরই মধ্যে মেঘ নদীর জলের সাথে বন্ধুত্ব পাতাল। মেঘ কে পেয়ে নদীর জল বিশাল বিশাল ঢেউ তুলতে থাকলো, একদিকে মেঘের গর্জন অন্যদিকে যাত্রীদের হাহাকার,তারা দিশেহারা হয়ে নীরব, ভাবতেও পারেনা তারা কি করবে। এরই মধ্যে বাতাস অন্যরূপ ধারণ করলো। বাতাস আর মেঘ গর্জন করতে করতে ধেয়ে পড়লো নদীর জলে। নদীর জল বাতাস আর মেঘের বন্ধুত্ব পেয়ে ঢেউ এর আকার পাল্টে নিলো। নৌকা টলমল, যাত্রীরা এদিক ওদিক জলে পড়তে শুরু করেছে, পুটী মাছের মতো চুবুক চুবুক করছে, সাঁতার কাটার ক্ষমতা নেই।
বাকিদের কাঁন্নার স্বর উত্তেজিত হলো, মাঝি তখনও অনড় ছিল, আর কোনো আশা নেই, নিরাশায় নৌকা থেকে জলে ঝাঁপ দিলো কিনারা পৌঁছানোর উদ্দ্যেসে।
(কালাম হাবিব)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সোহরাব রিপন ১৯/১০/২০১৮দারুন
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ১৮/১০/২০১৮দারুণ ছোট গল্প
-
পবিত্র কুমার গাঙ্গুলী ১৮/১০/২০১৮Vlo