নিউ অন্নপূর্না হোটেল
লোকমুখে শুনিলাম মহেশতলায় একটা বড় কারখানা হইতেছে. প্রচুর লোক নেওয়া হইবে. শুনিবা মাত্র বাহির হইয়া পড়িলাম.
বাসের ভিতর বসিয়া ভাবিলাম, যদি একটা কাজ কোনরকমে জুটাইতে পারি, তাহলে আমি কে, আর বর্ধমানের রাজা কে! জামার কলারটা একটু তুলিয়া ধরিলাম, ছাতিটা একটু তুলিয়া ধরিলাম. পরক্ষনেই ভবিলাম, এখনওতো কাজ জুটাইতে পারি নাই. একটু হাঁসির উদ্রেগ হইল. পাশের সিটে বসা লোকটা কিছু মনে করিল নাকি? একটু আড় চোখে দেখিলাম. নাঃ মনে হয় না. আমি চোখ বন্ধ করিলাম. একটু ঘুমাইয়া লইলাম. অবশেষে মহেশতলায় আসিয়া পোঁছাইলাম. বাস হইতে নামিবামাত্র হন্ততন্ত হইয়া ছুটিয়া পৌছাইলাম কারখানার গেটের কাছে.
সেইখানে পৌঁছাইয়া দেখি, সত্যি সত্যি প্রচুর লোক কাজ করিতেছে. ছোটাছুটির অন্ত নাই. আমিও ছুটিতে শুরু করিলাম. কিন্তু কোথায় যাইতেছি তার ঠিকঠিকানা নাই. আমি সবার দিকে তাকাইতেছি, কিন্তু আমার দিকে কেহ তাকাইতেছে না. ইত্তবসরে
ক্ষিদা লাগিল .কিছু টিফিন করিবার নিমিত্ত একটা ছোট দোকানে বসিলাম. মুড়ি খাইতে খাইতে দোকানদারকে জিঙ্গাসা করিলাম, আচ্ছা দাদা এখানে এত লোক কাজ পাইতেছে কিভাবে? লোকটি একটু হতাশার সুরে বলিল, আর কেন বলেন দাদা, আমরা কি এমনি এমনি এই দোকান খুলে বসেছি.
- তা ওরা কাজ পাইতেছে কিভাবে?
- ওইতো চলে যাননা, আপনাকে নেওয়ার জন্য ওরা রাস্তার দুধারে অফিস খুলে বসে আছে.
বুকে একটু সাহস পাইলাম. দোকানের পাওনা গন্ডা মিটাইয়া বাহির হইয়া পড়িলাম. দেখিলাম, রাস্তার দুপাশে ছোট ছোট অনেক অফিস. লোকের আনাগোনার অন্ত নেই. আমি ভয়ে ভয়ে একটা অফিসে ঢুকিয়া গেলাম. একজন লোক বলিয়া উঠিল, - কি চাই?
- এই কারখানার জন্য নাকি লোক নেওয়া হইবে, তাই ......
- হ্যাঁ কাজ পাবেন. তবে তার আগে দশ হাজার টাকা শেলামি দিতে হবে. আর প্রতিদিন মজুরি থেকে দশ টাকা করে এখানে দিয়ে যেতে হবে.
- আঙ্গে আমারতো এত টাকা নেই!
- তাহলে বিনা পয়সায় কাজ পাবেন ভেবেছেন?
সকলে হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল.
তারপর আঙুলের ইসারায় বলিল,-
- ওইযে পার্টি অফিসটা দেখছেন, ওইখানে গেলে বিনা পয়সায় আপনাকে একটা কাজ দিয়ে দেবে. যান....
আমি বিফল মনোরথ হইয়া গেলাম. একটু সাহস সঞ্চয় করিবার জন্য মনে মনে বলিলাম, এরা বলে কি ? যে লোকটা দুদিন পরে বর্ধমানের রাজা হইবে ! একটু হাঁসিয়া উঠিলাম. নাঃ এখন হাঁসির সময় নয়, যে করিয়াই হউক একটা কাজ যোগাড় করিতে হইবে. এই সব সাত পাঁচ ভাবিতে ভাবিতে পার্টি অফিসের সামনে হাজির হইলাম.
পার্টি অফিসে দেখি, একজন মধ্যমনি হইয়া বসিয়া আছে. আমি মস্তক নত করিয়া সেলাম করিলাম. খুব মিষ্টি স্বরে বলিল,-
- বলুন, কি চাই?
- আজ্ঞে একটা কাজ চাই.
- চিঠিপত্র কিছু আছে?
- আজ্ঞে না. কিসের চিঠি স্যার?
- আপনাদের লোকাল নেতার. আমরাতো যাকেতাকে কাজ দিতে পারিনা. আগে চিঠি নিয়ে আসুন . তারপর ভাবা যাবে.
আমি বাহির হইয়া আসিলাম. যাক সবেতো প্রথম দিন. একটু ধৈর্য্য ধরিতে হইবে. রাতারাতি তো আর বর্ধমানের রাজা হওয়া যায়না.
এদিকে সূর্য্য মাথার উপরে উঠিয়াছে. আবার ক্ষুদাও পাইয়াছে. হাঁটিতে হাঁটিতে একটা হোটেল খুজিতেছি. একটা মোড়ে আসিয়া পাইয়াও গেলাম. অন্নপূর্না হোটেল. যাক আর যাই হোক, খাওয়াটা মন্দ হইবে না. আগাইয়া গেলাম. বেশ কিছু লোকের জটলা. কিছু একটা গন্ডগোল বাঁধিয়া গিয়াছে বলিয়া মনে হয়.
- কি ব্যাপার দাদা?
- আর দাদা বলেন কেন? এরা লোককে খালি শুধু পচা, বাসি খাওয়ার দেয়. লোকেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে. বলে বলে হয়না. এগুলোতো আমাদের দেখতে হবে.
- হাঁ ঠিক. কিন্তু আমাদের যে প্রচুর ক্ষিদা পাইয়াছে.
- ওই পাশেরটাতে যান. ওখানে ভাল খাওয়ার পাবেন.
ওখানেও প্রচুর ভীড়. আমরা ফিরিয়া যাইবার উপক্রম করিতেছি. এমন সময় কে যেন বলিয়া উঠিল ,-
- দাদারা কেউ চলে যাবেননা, একটু ধৈর্য্য ধরুন . আমরা কাউকে না খাইয়ে ছাড়বনা. এদিকে পেটের ভিতর ছুঁচো ডন মারিতেছে. অগত্যা একটু ধরিতেই হইল. তবে আমি ভিড়ের ভিতর আগাইয়া গিয়া কোনরকমে একটা আসন দখল করিলাম. যাক্ নিউ অন্নপূর্না এক পেট খাওয়া যাইবে. কিছু সময় পর খাওয়ার আসিয়া পড়িল. গোগ্রাসে গিলিতেছি. এমন সময় পর্দার আড়াল হইতে দেখিলাম, পাচক গৃহে নিমেষের মধ্যে প্রচুর খাওয়ার পড়িতেছে. যা বাবাঃ লোক ডবল্ ,সঙ্গে সঙ্গে ভাত , তরিতরকারি ডবল্ ! সত্যি , মা অন্নপূর্নার আশীর্বাদ ঝরিয়া পড়িতেছে. নিজেকে ভাগ্যবান মনে করিলাম.
যাই হোক খাওয়া দাওয়া শেষ করিয়া পাওনা গন্ডা মিটাইয়া বাহির হইয়া পড়িলাম.
এবার ঘরে ফেরার পালা. বাসে বসিয়া ভাবিতেছি, আচ্ছা হোটেলটাতে হঠাৎ করিয়া লোক না হয় ডবল্ হইল, কিন্তু নিমেষের মধ্যে খাওয়ার ডবল্ হইল কিভাবে? যতক্ষনে বুঝিলাম, ততক্ষনে পেট বাবাজি শান্ত হইয়া গিয়াছে. যাক্ রাজা, প্রজা, পাত্র, মিত্র সকলের পেটতো ভরিল. সুতরাং জয় মা অন্নপূর্নার জয়.
.................
বাসের ভিতর বসিয়া ভাবিলাম, যদি একটা কাজ কোনরকমে জুটাইতে পারি, তাহলে আমি কে, আর বর্ধমানের রাজা কে! জামার কলারটা একটু তুলিয়া ধরিলাম, ছাতিটা একটু তুলিয়া ধরিলাম. পরক্ষনেই ভবিলাম, এখনওতো কাজ জুটাইতে পারি নাই. একটু হাঁসির উদ্রেগ হইল. পাশের সিটে বসা লোকটা কিছু মনে করিল নাকি? একটু আড় চোখে দেখিলাম. নাঃ মনে হয় না. আমি চোখ বন্ধ করিলাম. একটু ঘুমাইয়া লইলাম. অবশেষে মহেশতলায় আসিয়া পোঁছাইলাম. বাস হইতে নামিবামাত্র হন্ততন্ত হইয়া ছুটিয়া পৌছাইলাম কারখানার গেটের কাছে.
সেইখানে পৌঁছাইয়া দেখি, সত্যি সত্যি প্রচুর লোক কাজ করিতেছে. ছোটাছুটির অন্ত নাই. আমিও ছুটিতে শুরু করিলাম. কিন্তু কোথায় যাইতেছি তার ঠিকঠিকানা নাই. আমি সবার দিকে তাকাইতেছি, কিন্তু আমার দিকে কেহ তাকাইতেছে না. ইত্তবসরে
ক্ষিদা লাগিল .কিছু টিফিন করিবার নিমিত্ত একটা ছোট দোকানে বসিলাম. মুড়ি খাইতে খাইতে দোকানদারকে জিঙ্গাসা করিলাম, আচ্ছা দাদা এখানে এত লোক কাজ পাইতেছে কিভাবে? লোকটি একটু হতাশার সুরে বলিল, আর কেন বলেন দাদা, আমরা কি এমনি এমনি এই দোকান খুলে বসেছি.
- তা ওরা কাজ পাইতেছে কিভাবে?
- ওইতো চলে যাননা, আপনাকে নেওয়ার জন্য ওরা রাস্তার দুধারে অফিস খুলে বসে আছে.
বুকে একটু সাহস পাইলাম. দোকানের পাওনা গন্ডা মিটাইয়া বাহির হইয়া পড়িলাম. দেখিলাম, রাস্তার দুপাশে ছোট ছোট অনেক অফিস. লোকের আনাগোনার অন্ত নেই. আমি ভয়ে ভয়ে একটা অফিসে ঢুকিয়া গেলাম. একজন লোক বলিয়া উঠিল, - কি চাই?
- এই কারখানার জন্য নাকি লোক নেওয়া হইবে, তাই ......
- হ্যাঁ কাজ পাবেন. তবে তার আগে দশ হাজার টাকা শেলামি দিতে হবে. আর প্রতিদিন মজুরি থেকে দশ টাকা করে এখানে দিয়ে যেতে হবে.
- আঙ্গে আমারতো এত টাকা নেই!
- তাহলে বিনা পয়সায় কাজ পাবেন ভেবেছেন?
সকলে হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল.
তারপর আঙুলের ইসারায় বলিল,-
- ওইযে পার্টি অফিসটা দেখছেন, ওইখানে গেলে বিনা পয়সায় আপনাকে একটা কাজ দিয়ে দেবে. যান....
আমি বিফল মনোরথ হইয়া গেলাম. একটু সাহস সঞ্চয় করিবার জন্য মনে মনে বলিলাম, এরা বলে কি ? যে লোকটা দুদিন পরে বর্ধমানের রাজা হইবে ! একটু হাঁসিয়া উঠিলাম. নাঃ এখন হাঁসির সময় নয়, যে করিয়াই হউক একটা কাজ যোগাড় করিতে হইবে. এই সব সাত পাঁচ ভাবিতে ভাবিতে পার্টি অফিসের সামনে হাজির হইলাম.
পার্টি অফিসে দেখি, একজন মধ্যমনি হইয়া বসিয়া আছে. আমি মস্তক নত করিয়া সেলাম করিলাম. খুব মিষ্টি স্বরে বলিল,-
- বলুন, কি চাই?
- আজ্ঞে একটা কাজ চাই.
- চিঠিপত্র কিছু আছে?
- আজ্ঞে না. কিসের চিঠি স্যার?
- আপনাদের লোকাল নেতার. আমরাতো যাকেতাকে কাজ দিতে পারিনা. আগে চিঠি নিয়ে আসুন . তারপর ভাবা যাবে.
আমি বাহির হইয়া আসিলাম. যাক সবেতো প্রথম দিন. একটু ধৈর্য্য ধরিতে হইবে. রাতারাতি তো আর বর্ধমানের রাজা হওয়া যায়না.
এদিকে সূর্য্য মাথার উপরে উঠিয়াছে. আবার ক্ষুদাও পাইয়াছে. হাঁটিতে হাঁটিতে একটা হোটেল খুজিতেছি. একটা মোড়ে আসিয়া পাইয়াও গেলাম. অন্নপূর্না হোটেল. যাক আর যাই হোক, খাওয়াটা মন্দ হইবে না. আগাইয়া গেলাম. বেশ কিছু লোকের জটলা. কিছু একটা গন্ডগোল বাঁধিয়া গিয়াছে বলিয়া মনে হয়.
- কি ব্যাপার দাদা?
- আর দাদা বলেন কেন? এরা লোককে খালি শুধু পচা, বাসি খাওয়ার দেয়. লোকেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে. বলে বলে হয়না. এগুলোতো আমাদের দেখতে হবে.
- হাঁ ঠিক. কিন্তু আমাদের যে প্রচুর ক্ষিদা পাইয়াছে.
- ওই পাশেরটাতে যান. ওখানে ভাল খাওয়ার পাবেন.
ওখানেও প্রচুর ভীড়. আমরা ফিরিয়া যাইবার উপক্রম করিতেছি. এমন সময় কে যেন বলিয়া উঠিল ,-
- দাদারা কেউ চলে যাবেননা, একটু ধৈর্য্য ধরুন . আমরা কাউকে না খাইয়ে ছাড়বনা. এদিকে পেটের ভিতর ছুঁচো ডন মারিতেছে. অগত্যা একটু ধরিতেই হইল. তবে আমি ভিড়ের ভিতর আগাইয়া গিয়া কোনরকমে একটা আসন দখল করিলাম. যাক্ নিউ অন্নপূর্না এক পেট খাওয়া যাইবে. কিছু সময় পর খাওয়ার আসিয়া পড়িল. গোগ্রাসে গিলিতেছি. এমন সময় পর্দার আড়াল হইতে দেখিলাম, পাচক গৃহে নিমেষের মধ্যে প্রচুর খাওয়ার পড়িতেছে. যা বাবাঃ লোক ডবল্ ,সঙ্গে সঙ্গে ভাত , তরিতরকারি ডবল্ ! সত্যি , মা অন্নপূর্নার আশীর্বাদ ঝরিয়া পড়িতেছে. নিজেকে ভাগ্যবান মনে করিলাম.
যাই হোক খাওয়া দাওয়া শেষ করিয়া পাওনা গন্ডা মিটাইয়া বাহির হইয়া পড়িলাম.
এবার ঘরে ফেরার পালা. বাসে বসিয়া ভাবিতেছি, আচ্ছা হোটেলটাতে হঠাৎ করিয়া লোক না হয় ডবল্ হইল, কিন্তু নিমেষের মধ্যে খাওয়ার ডবল্ হইল কিভাবে? যতক্ষনে বুঝিলাম, ততক্ষনে পেট বাবাজি শান্ত হইয়া গিয়াছে. যাক্ রাজা, প্রজা, পাত্র, মিত্র সকলের পেটতো ভরিল. সুতরাং জয় মা অন্নপূর্নার জয়.
.................
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পরশ ১০/০৫/২০১৭খুব ভাল
-
সাঁঝের তারা ১০/০৫/২০১৭বেশ তো...
-
মধু মঙ্গল সিনহা ১০/০৫/২০১৭সুন্দর।