www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বাংলা বিচিত্রা পর্ব ০৪

গত পর্বে আলোচনা করেছিলাম অলঙ্কারের প্রাথমিক ধারণা নিয়ে এই পর্বে শব্দালঙ্কার সম্পর্কে আলোচনার চেষ্টা করবো...

শব্দালঙ্কার

অর্থবহ ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে বলা হয় শব্দ।যে অলঙ্কার ধ্বনির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং যা শ্রুতিসৌকর্যবিধায়ক তাকেই বলা হয় শব্দালঙ্কার।এই অলঙ্কারটি একান্তভাবেই শব্দের ধ্বনিসুষমার ওপর নির্ভরশীল বলেই ধ্বনি তথা শব্দের পরিবর্তনে অলঙ্কার বিনষ্ট হয়।যথা-বাঘের বিক্রম সম মাঘের হিমানী।এই বাক্যে প্রথম দুটি শব্দের আদিতে 'ব' ধ্বনি,প্রথমটি বাদে বাকি সব শব্দে 'ম' ধ্বনি এবং প্রথম পর্বের আদিতে 'বাঘের' সঙ্কে মিল রেখে দ্বিতীয় পর্বের আদিতেও অনুরূপ শব্দ ব্যবহৃত হবার ফলে যে শ্রুতিসুখকর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়,এটিই এর অলঙ্কার।
শব্দ হলো মূর্তধ্বনি বা ধ্বনি সংকেত।শব্দের বহিরঙ্গের যে শব্দালঙ্কার নানা ধরনের হয়ে থাকে।তার মধ্যে প্রধায় কয়েকটি- অনুপ্রাস,যমক,শ্লেষ,বক্রোক্তি।

**অনুপ্রাস

একই বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছের বারবার বিন্যাসকে অনুপ্রাস বলে।যেমন :

ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে
জল সিঞ্চিত ক্ষিতি সৌরভ রভসে
ঘন গৌরবে নব যৌবনা বরষা।

একই বাক্যে অদূরবর্তী বিভিন্ন শব্দে একটি বা একাধিক বর্ণের ব্যবহারের পুনরাবৃত্তি হলে যে সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটে তার নাম অনুপ্রাস অলঙ্কার।যেমন :
আমি অজর অমর অক্ষয় আমি অব্যয় ।

** যমক

একই শব্দ একই স্বরধ্বনিসমেত একই ক্রমানুসারে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে একাধিকবার ব্যবহৃত হলে তাকে যমক অলঙ্কার বলে।যমক শব্দের অর্থ যুগ্ম।এতে একই শব্দ বা প্রায় এক রকমের উচ্চার্য শব্দ দুবার বা বেশি বার উচ্চারিত হয়।শব্দের অর্থও আলাদা হতে হবে।যেমন :

মাটির ভয়ে রাজ্য হবে মাটি
দিবস রাতি রহিলে আমি বন্ধ।

** শ্লেষ

একটি শব্দ একবার মাত্র ব্যবহৃত হয়ে বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ করলে তাকে শ্লেষ অলঙ্কার বলে।যেমন:

কে বলে ঈশ্বর গুপ্ত ব্যপ্ত চরাচর,/ যাহার প্রভায় প্রভা পায় প্রভাকর।
-এখানে সমগ্র বাক্যের দুটি অর্থ।এক অর্থে ঈশ্বর চরাচরে ব্যপ্ত,তার আলোকে সূর্য আলোকিত হয়।অন্য অর্থে যাঁর প্রতিভায় 'সংবাদ প্রভাকর' পত্রিকা উজ্জ্বলরূপে প্রকাশিত হয়,সেই ঈশ্বরগুপ্তকে অখ্যাতনামা কে বলবে? তার খ্যাতি চরাচরে ব্যাপ্ত।এটা শ্লেষ অলঙ্কার।যেমন:

আছিলাম একাকিনী বসিয়া কাননে।/আনিলা তোমার স্বামী বাঁধি নিজ গুণে।

-এখানে 'গুণে' অর্থ ১.ধনুকের ছিলায় ২.স্বভাবের উৎকর্ষে।


** বক্রোক্তি

রচনার সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য বক্রতা বা মনোহর ভঙ্গি দ্বার উক্তি সম্পন্ন হলে তাকে বক্রোক্তি বলে।সোজাসুজি না বলে বাঁকা ভাবে কোন বক্তব্য প্রকাশ পেলে তা হয় বক্রোক্তি।যেমন:
গৌরী সেনের আবার টাকার অভাব কী।

-এখানে টাকার অভাব নেই ভাবটি বাঁকাভাবে ব্যক্ত হয়েছে।

পরের পর্বে অর্থালঙ্কার সম্পর্কে বিশদ আলোচনা থাকবে।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৮২৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৩/১০/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast