সেঁজুতি (৩য় পর্ব)
সেঁজুতি (৩য় পর্ব)
কাক ডাকা ভোরে চলে গেলাম এতিমখানাটায়।প্রথমে ছেলেদের অংশটাতে কিছুক্ষণ ঘুরলাম তারপর চলে গেলাম মেয়েদের অংশটাতে,বিশেষ করে সেঁজুতির কাছে।ছবিটা রাতে ওখানে রেখে এসেছিলাম এখন নিতে হবে।এতিমখানা সম্পর্কে একটা ডকুমেন্টারি তৈরি করতে হবে।গতরাতে কিছুটা এগিয়ে রেখেছি আর বাকিটা শহরে গিয়ে করবো।যান্ত্রিক শহর থেকে দূরে আছি কিছুটা স্বস্তি লাগছে।এতিমখানা নিয়ে কাজ করছি বিধায় এই পল্লি এলাকাটা দেখা হলো।
ভোর বেলাতে জুনাব আলীকে পাওয়া গেলো না।একটা মাঝবয়সি মহিলা বারান্দাটা ঝাড়ু দিচ্ছে।আমি সোজা চলে গেলাম সেঁজুতির রুমের দিকে।সেঁজুতি ছবিটা সামনে নিয়ে বসে আছে।হাতে রঙ পেন্সিল।কিছু জায়গায় রং দিচ্ছে,হয়তো ছবিটা পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করছে।আমাকে দেখে ছবিটা নিয়ে এগিয়ে এলো।
থাক থাক,আসতে হবে না তুমি বসো।
বাধ্য মেয়ের মতো ফিরে গিয়ে চৌকিটাতে বসলো।
আমি তোমার এই ছবিটা কেনো নিচ্ছি জানো?
জানি না।
ছবিটা আমার খুব ভাল লেগেছে।আর একটা কারণে নিয়েছি কিন্তু সেটা বলা যাবে না।
মেয়েটা চুপ করে আছে।এরকম অতিমাত্রার মায়াবী মেয়ে আর দ্বিতীয়টি দেখিনি।এরকম একটা মেয়ে এই এতিমখানাটাতে পড়ে আছে এটা ভেবে খারাপ লাগছে।সেঁজুতির টুকটাক খবর নিয়ে নিলাম।ক্লাস রোল দুই।ভালো আঁকতে পারে।গাইতে পারে।খেলাধুলা অন্যদের তুলনায় একটু কম পারে তাই খেলে না।একটা কাগজে আমার ঠিকানা আর মোবাইল নাম্বার লিখে ওর কাছে দিলাম।এগুলোর প্রয়োজন হবে বলে মনে হয়না,কারণ আবার দেখা হবে।তারপরও দিলাম।আসার সময় ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আসলাম।
মেয়েটার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।মোছার চেষ্টা করছে না।আমি চলে আসলাম একবারও পেছনে না তাকিয়ে ।আমার চোখটাও ভিজে উঠছে।
কবিবন্ধু সামিউল বলেছিলো,এতিমখানার ডকুমেন্টারি করতে যেখানে যাবি সেখানে একটা মেয়ে আছে যে কিনা খুব ভাল আঁকতে পারে।ওরকাছে যতটুকু শুনেছি তার চাইতেও ভাল ছবি আঁকতে পারে এই সেঁজুতি।আগ্রহটা মূলত এই কারণেই হয়েছিলো।সেবার এই ছবিটা মাগুরা জেলা পরিষদ বার্ষিক অঙ্কন প্রতিযোগিতায় সেকেন্ড হয়েছিলো।জাতীয় পর্যায়েও সেরা দশেই ছিলো।তারপর সেঁজুতিকে আর ওখানে পড়ে থাকতে হয়নি।শুনেছি এখন টরেন্টোতে আছে।কি নিয়ে যেনো গবেষণা করছে,সাথে অঙ্কনটা ধরে রেখেছে।গতবার ঢাকাতে ওর আর্টের ওপর একটা প্রদর্শনী ছিলো যেতে পারি নি।শরীরটা ইদানীং তত ভালো যাচ্ছে না।পেটে সার্জারী করার পর থেকে কাশিটা কোনোরকমেই সারছে না।গতকাল সেঁজুতির একটা চিঠি আমার কাছে এসেছে,খুলে দেখিনি।সেঁজুতির চিঠি পেয়ে একটু স্মৃতিকাতর হয়ে গেছি।বারবার ওর কথা মনে পড়ছে।পুরষ্কার পেয়ে কি কান্নাটাই করলো।নাহ এতো ভাবলে চলবে না,এবার চিঠিটা খুলে দেখি।(সমাপ্ত)
গল্প: সেঁজুতি
-কামরুজ্জামান সাদ
মহেশপুর ঝিনাইদহ,বাংলাদেশ।
সেঁজুতি (১ম পর্ব)
http://www.tarunyo.com/kamruzzamansd/blog/sejutipart1
সেঁজুতি(২য় পর্ব)
http://www.tarunyo.com/kamruzzamansd/blog/sejutipart2
কাক ডাকা ভোরে চলে গেলাম এতিমখানাটায়।প্রথমে ছেলেদের অংশটাতে কিছুক্ষণ ঘুরলাম তারপর চলে গেলাম মেয়েদের অংশটাতে,বিশেষ করে সেঁজুতির কাছে।ছবিটা রাতে ওখানে রেখে এসেছিলাম এখন নিতে হবে।এতিমখানা সম্পর্কে একটা ডকুমেন্টারি তৈরি করতে হবে।গতরাতে কিছুটা এগিয়ে রেখেছি আর বাকিটা শহরে গিয়ে করবো।যান্ত্রিক শহর থেকে দূরে আছি কিছুটা স্বস্তি লাগছে।এতিমখানা নিয়ে কাজ করছি বিধায় এই পল্লি এলাকাটা দেখা হলো।
ভোর বেলাতে জুনাব আলীকে পাওয়া গেলো না।একটা মাঝবয়সি মহিলা বারান্দাটা ঝাড়ু দিচ্ছে।আমি সোজা চলে গেলাম সেঁজুতির রুমের দিকে।সেঁজুতি ছবিটা সামনে নিয়ে বসে আছে।হাতে রঙ পেন্সিল।কিছু জায়গায় রং দিচ্ছে,হয়তো ছবিটা পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করছে।আমাকে দেখে ছবিটা নিয়ে এগিয়ে এলো।
থাক থাক,আসতে হবে না তুমি বসো।
বাধ্য মেয়ের মতো ফিরে গিয়ে চৌকিটাতে বসলো।
আমি তোমার এই ছবিটা কেনো নিচ্ছি জানো?
জানি না।
ছবিটা আমার খুব ভাল লেগেছে।আর একটা কারণে নিয়েছি কিন্তু সেটা বলা যাবে না।
মেয়েটা চুপ করে আছে।এরকম অতিমাত্রার মায়াবী মেয়ে আর দ্বিতীয়টি দেখিনি।এরকম একটা মেয়ে এই এতিমখানাটাতে পড়ে আছে এটা ভেবে খারাপ লাগছে।সেঁজুতির টুকটাক খবর নিয়ে নিলাম।ক্লাস রোল দুই।ভালো আঁকতে পারে।গাইতে পারে।খেলাধুলা অন্যদের তুলনায় একটু কম পারে তাই খেলে না।একটা কাগজে আমার ঠিকানা আর মোবাইল নাম্বার লিখে ওর কাছে দিলাম।এগুলোর প্রয়োজন হবে বলে মনে হয়না,কারণ আবার দেখা হবে।তারপরও দিলাম।আসার সময় ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আসলাম।
মেয়েটার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।মোছার চেষ্টা করছে না।আমি চলে আসলাম একবারও পেছনে না তাকিয়ে ।আমার চোখটাও ভিজে উঠছে।
কবিবন্ধু সামিউল বলেছিলো,এতিমখানার ডকুমেন্টারি করতে যেখানে যাবি সেখানে একটা মেয়ে আছে যে কিনা খুব ভাল আঁকতে পারে।ওরকাছে যতটুকু শুনেছি তার চাইতেও ভাল ছবি আঁকতে পারে এই সেঁজুতি।আগ্রহটা মূলত এই কারণেই হয়েছিলো।সেবার এই ছবিটা মাগুরা জেলা পরিষদ বার্ষিক অঙ্কন প্রতিযোগিতায় সেকেন্ড হয়েছিলো।জাতীয় পর্যায়েও সেরা দশেই ছিলো।তারপর সেঁজুতিকে আর ওখানে পড়ে থাকতে হয়নি।শুনেছি এখন টরেন্টোতে আছে।কি নিয়ে যেনো গবেষণা করছে,সাথে অঙ্কনটা ধরে রেখেছে।গতবার ঢাকাতে ওর আর্টের ওপর একটা প্রদর্শনী ছিলো যেতে পারি নি।শরীরটা ইদানীং তত ভালো যাচ্ছে না।পেটে সার্জারী করার পর থেকে কাশিটা কোনোরকমেই সারছে না।গতকাল সেঁজুতির একটা চিঠি আমার কাছে এসেছে,খুলে দেখিনি।সেঁজুতির চিঠি পেয়ে একটু স্মৃতিকাতর হয়ে গেছি।বারবার ওর কথা মনে পড়ছে।পুরষ্কার পেয়ে কি কান্নাটাই করলো।নাহ এতো ভাবলে চলবে না,এবার চিঠিটা খুলে দেখি।(সমাপ্ত)
গল্প: সেঁজুতি
-কামরুজ্জামান সাদ
মহেশপুর ঝিনাইদহ,বাংলাদেশ।
সেঁজুতি (১ম পর্ব)
http://www.tarunyo.com/kamruzzamansd/blog/sejutipart1
সেঁজুতি(২য় পর্ব)
http://www.tarunyo.com/kamruzzamansd/blog/sejutipart2
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আবু সাইদ লিপু ২১/১০/২০১৭খুব ভাল হয়েছে।
-
আবুল খায়ের ১৬/১০/২০১৭wow
-
Rabia Onti ১৫/১০/২০১৭খুব ভাল লাগল সমাপ্তি টি পড়ে ।
-
কালকেতু (দুর্জয় কবি) ১৩/১০/২০১৭সুন্দর
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৩/১০/২০১৭ফিনিশিংটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে।
-
মধু মঙ্গল সিনহা ১৩/১০/২০১৭আন্তরিক শুভেচ্ছা।
-
আজাদ আলী ১৩/১০/২০১৭Etimkhanay jeeban sunlei vitarta kirakam kore uthe. Thanks dear poet for your writing .