সেঁজুতি (২য় পর্ব)
সেঁজুতি (২য় পর্ব)প্রায় সাথে সাথেই কুপি বন্ধ হয়ে গেলো।
আন্দাজ করতে পারি মেয়েটা এখন ঘুমাবে না।সে কুপি জ্বালিয়ে কোন একটা কাজ করছিলো সেটা বন্ধ করে তার ঘুম আসাটা কিছুটা অস্বাভাবিক।আমি জুনাব আলীকে বললাম,"ওর সাথে কথা বলতে পারি।"
"এহনই কথা কইবেন?"
"কেনো বললে কোনো সমস্যা আছে নাকি?"
"না না,সমস্যা থাকবো ক্যান।আপনি জ্ঞানী মানুষ কথাতো একটু বলতেই পারেন।আইচ্ছা চলেন।"
আমি জুনাব আলীর সাথে ওই ঘরটার দিকে এগোতে থাকলাম।মেয়েটার নামটা ভুলে গেছি।তাতে খুব সমস্যা হবে বলে মনে হচ্ছেনা।আরেকবার জিজ্ঞাসা করে নেবো।তার আর দরকার হবে না।ঘরের দরজাতেই মেয়েটার নাম লেখা আছে।সেঁজুতি।লাল রঙ দিয়ে লেখা হয়েছে,কাঁচা হাতের লেখা।ওপরের দিকে বাংলায় নিচে ইংরেজিতে খুব সুন্দর করে লেখা।এতিমখানার সব ছেলেমেয়েরাই নিয়মিত স্কুলে যায়।রাস্তার ওপাশেই একটা স্কুল আছে,স্কুলটার নাম রহমতউল্লাহ প্রাথমিক বিদ্যালয়।সরকারি না বেসরকারি এটার উল্লেখ নেই।ওখান থেকেই বাংলা ইংরেজি শিখে থাকবে।জুনাব আলী খুব নিচু স্বরে সেঁজুতিকে ডাকছেন,আগের সেই উচ্চস্বর এখন আর নেই।
"সেঁজুতি মা একটু উঠো তো তোমার সাথে একজনে দেহা করবার চায়।"
সেঁজুতি কিছুটা নিঃশব্দেই দরজার কপাট খুলে বেরিয়ে আসলো।চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই।গায়ের রঙ শ্যামবর্ণ,বয়স আট নয়ের বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে না।চেহারাটা মায়াবী ধরনের।জুনাব আলী পরিচয় করিয়ে দিলেন,"এই হইলো আমাগো সেঁজুতি।মাইয়াডা খুব ভালা।"
আমি চুপ করে রইলাম।জুনাব আলী আবার বলতে লাগলেন,"আর সেঁজুতি এইডা হইলো লেখক সাহেব ।বিকেলে যার কথা কইছিলাম।সেকেন্দার গাজী।"
এতোক্ষণে জুনাব আলী থামলেন।সেঁজুতিকে জিজ্ঞাসা করলাম,"কেমন আছো সেঁজুতি?"
"ভালো আছি।"
"পাল্টা কুশল জানার আগ্রহ বোধ করলো না।"
"তোমার রুমে গিয়ে বসতে পারি?
আসেন।"
রুমটা খুব সুন্দরভাবে সাজানো।একপাশে একটা চৌকি।পড়ার জন্য টেবিল চেয়ার রয়েছে।পুরো দেয়াল জুড়ে কাগজে আঁকানো ছবি।সুন্দর করে অঙ্কন করা হয়েছে।পশু পাখির ছবি,স্কুলের ছবি,মানুষের ছবি।কিছু প্রকৃতির ছবিও আছে।
"এগুলো কি তুমি আঁকিয়েছো?"
"হুম।"
"খুব সুন্দর এঁকেছো।কোন ক্লাসে পড়ো?"
"আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি।"
"এতো রাত জেগে কি পড়ছিলে তুমি?"
মেয়েটা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,"ছবি আঁকছিলাম।"
একটা বিষয় লক্ষণীয় যে,মেয়েটা শুদ্ধভাবে কথা বলে।থেমে থেমে গুছিয়ে কথা বলে।জুনাব আলীর মতো এতো কথা বলে না।
"কি আঁকছিলে?"
"দেখবেন আপনি?"
"তুমি দেখালে দেখবো না কেনো?"
সেঁজুতি বালিশের নিচ থেকে একটা কাগজ বের করে আমার হাতে দিলো।খুব সুন্দর আঁকা হয়েছে।একটা গ্রাম আঁকা হয়েছে,গ্রামের মাঝ বরাবর একটা নদী মতো,নদীর ওপারে ধান ক্ষেত।এপারে কিছু ছেলেমেয়ে খেলা করছে।নদীতে তিনটা নৌকা।
"বাহ!ভাল আঁকিয়েছো।ছবিটা আমাকে দেবে?"
একটু ইতস্তত করে বললো,"এখনো রঙ করিনি।আপনি একটু বসেন আমি রঙ করে দিচ্ছি।"
আমি বসে বসে ঘরের কাজ দেখছিলাম।জুনাব আলী হয়তো বাইরে দাড়িয়ে আছে।ভেতরে আসার প্রয়োজন মনে করছে না।ততক্ষণে রঙ করা হয়ে গেছে।রঙ করাটাও সুন্দর হয়েছে।ধান ক্ষেত হলুদ রঙে,গাছপালা সবুজ রঙে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
"সেঁজুতি,এখন ঘুমাতে যাও।সকালে তোমার সাথে দেখা করে যাবো।"
প্রথম পর্বের লিংক
http://www.tarunyo.com/kamruzzamansd/blog/sejutipart1
আন্দাজ করতে পারি মেয়েটা এখন ঘুমাবে না।সে কুপি জ্বালিয়ে কোন একটা কাজ করছিলো সেটা বন্ধ করে তার ঘুম আসাটা কিছুটা অস্বাভাবিক।আমি জুনাব আলীকে বললাম,"ওর সাথে কথা বলতে পারি।"
"এহনই কথা কইবেন?"
"কেনো বললে কোনো সমস্যা আছে নাকি?"
"না না,সমস্যা থাকবো ক্যান।আপনি জ্ঞানী মানুষ কথাতো একটু বলতেই পারেন।আইচ্ছা চলেন।"
আমি জুনাব আলীর সাথে ওই ঘরটার দিকে এগোতে থাকলাম।মেয়েটার নামটা ভুলে গেছি।তাতে খুব সমস্যা হবে বলে মনে হচ্ছেনা।আরেকবার জিজ্ঞাসা করে নেবো।তার আর দরকার হবে না।ঘরের দরজাতেই মেয়েটার নাম লেখা আছে।সেঁজুতি।লাল রঙ দিয়ে লেখা হয়েছে,কাঁচা হাতের লেখা।ওপরের দিকে বাংলায় নিচে ইংরেজিতে খুব সুন্দর করে লেখা।এতিমখানার সব ছেলেমেয়েরাই নিয়মিত স্কুলে যায়।রাস্তার ওপাশেই একটা স্কুল আছে,স্কুলটার নাম রহমতউল্লাহ প্রাথমিক বিদ্যালয়।সরকারি না বেসরকারি এটার উল্লেখ নেই।ওখান থেকেই বাংলা ইংরেজি শিখে থাকবে।জুনাব আলী খুব নিচু স্বরে সেঁজুতিকে ডাকছেন,আগের সেই উচ্চস্বর এখন আর নেই।
"সেঁজুতি মা একটু উঠো তো তোমার সাথে একজনে দেহা করবার চায়।"
সেঁজুতি কিছুটা নিঃশব্দেই দরজার কপাট খুলে বেরিয়ে আসলো।চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই।গায়ের রঙ শ্যামবর্ণ,বয়স আট নয়ের বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে না।চেহারাটা মায়াবী ধরনের।জুনাব আলী পরিচয় করিয়ে দিলেন,"এই হইলো আমাগো সেঁজুতি।মাইয়াডা খুব ভালা।"
আমি চুপ করে রইলাম।জুনাব আলী আবার বলতে লাগলেন,"আর সেঁজুতি এইডা হইলো লেখক সাহেব ।বিকেলে যার কথা কইছিলাম।সেকেন্দার গাজী।"
এতোক্ষণে জুনাব আলী থামলেন।সেঁজুতিকে জিজ্ঞাসা করলাম,"কেমন আছো সেঁজুতি?"
"ভালো আছি।"
"পাল্টা কুশল জানার আগ্রহ বোধ করলো না।"
"তোমার রুমে গিয়ে বসতে পারি?
আসেন।"
রুমটা খুব সুন্দরভাবে সাজানো।একপাশে একটা চৌকি।পড়ার জন্য টেবিল চেয়ার রয়েছে।পুরো দেয়াল জুড়ে কাগজে আঁকানো ছবি।সুন্দর করে অঙ্কন করা হয়েছে।পশু পাখির ছবি,স্কুলের ছবি,মানুষের ছবি।কিছু প্রকৃতির ছবিও আছে।
"এগুলো কি তুমি আঁকিয়েছো?"
"হুম।"
"খুব সুন্দর এঁকেছো।কোন ক্লাসে পড়ো?"
"আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি।"
"এতো রাত জেগে কি পড়ছিলে তুমি?"
মেয়েটা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,"ছবি আঁকছিলাম।"
একটা বিষয় লক্ষণীয় যে,মেয়েটা শুদ্ধভাবে কথা বলে।থেমে থেমে গুছিয়ে কথা বলে।জুনাব আলীর মতো এতো কথা বলে না।
"কি আঁকছিলে?"
"দেখবেন আপনি?"
"তুমি দেখালে দেখবো না কেনো?"
সেঁজুতি বালিশের নিচ থেকে একটা কাগজ বের করে আমার হাতে দিলো।খুব সুন্দর আঁকা হয়েছে।একটা গ্রাম আঁকা হয়েছে,গ্রামের মাঝ বরাবর একটা নদী মতো,নদীর ওপারে ধান ক্ষেত।এপারে কিছু ছেলেমেয়ে খেলা করছে।নদীতে তিনটা নৌকা।
"বাহ!ভাল আঁকিয়েছো।ছবিটা আমাকে দেবে?"
একটু ইতস্তত করে বললো,"এখনো রঙ করিনি।আপনি একটু বসেন আমি রঙ করে দিচ্ছি।"
আমি বসে বসে ঘরের কাজ দেখছিলাম।জুনাব আলী হয়তো বাইরে দাড়িয়ে আছে।ভেতরে আসার প্রয়োজন মনে করছে না।ততক্ষণে রঙ করা হয়ে গেছে।রঙ করাটাও সুন্দর হয়েছে।ধান ক্ষেত হলুদ রঙে,গাছপালা সবুজ রঙে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
"সেঁজুতি,এখন ঘুমাতে যাও।সকালে তোমার সাথে দেখা করে যাবো।"
প্রথম পর্বের লিংক
http://www.tarunyo.com/kamruzzamansd/blog/sejutipart1
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাঁঝের তারা ১৩/১০/২০১৭অপূর্ব
-
Rabia Onti ১২/১০/২০১৭খুব সুন্দর গল্প । পড়ে ভাল লাগল ।
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১২/১০/২০১৭বেশ!
-
মধু মঙ্গল সিনহা ১২/১০/২০১৭খুব ভালো লাগল।
-
অনিক মজুমদার ১২/১০/২০১৭বাহ ভালোইতো
-
আজাদ আলী ১২/১০/২০১৭Valoi lagche
-
মুহাম্মাদ রাসেল উদ্দীন ১২/১০/২০১৭সময় করে পড়ে নেব!