সেঁজুতি
সেঁজুতি (প্রথম পর্ব)
একযুগ শেষ হয়ে গেছে কিন্তু একটা মায়াবী মুখ ভুলতে পারিনি।গত বছরগুলোতে অনেক মুখ দেখেছি ,কোন মুখ হারিয়ে গেছে স্মৃতির পর্দা থেকে আবার কোন মুখ যোগ হয়েছে স্মৃতির পর্দায়।বাস্তবতা সবসময় বিচিত্রমুখী,নানান ধরনের জটিলতায় উজ্জীবিত।হঠাৎ করে সৃষ্টি হওয়া ঘটনাও দাগ কেটে দিতে পারে স্মৃতির মণিকোঠায়।এটা তেমনি একটা ঘটনা।জীবনে প্রথম বারের মত গিয়েছিলাম এতিমখানায়,সেখানেই পরিচয় হলো সেঁজুতি নামের মায়াবী চেহারার মেয়েটার সাথে।সন্ধ্যাবেলায় যাওয়াতে পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ ছিলো না।তবে হাতে নোকিয়া মোবাইলের টর্চ ছিলো।চোখ ধাঁধানো আলো।এই মোবাইল গুলো বেশ সস্তায় পাওয়া যায়।বড় রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে যেতে হয়,তারপর ইটবিছানো রাস্তা।এতিমখানাটা দুই অংশে বিভক্ত।একটা অংশ ছেলেদের জন্য আরেকটা মেয়েদের।কারো সাথে কারো যোগাযোগ হওয়া সম্ভব না।আমাকে বসতে দেওয়া হলো একটা ছোট খুপড়ি ঘরে।কয়েকটা বেঞ্চ এক সারিতে পাতা আছে।আমি বসলাম একপাশে থাকা একটা কাঠের চেয়ারে।সম্ভবত আমি আসবো বিধায় এখানে আনিয়ে রাখা হয়েছে।সামনের দেয়ালটার চুন সড়কি কিছুটা উঠে গেছে।তাতে দেয়ালটা কেমন বিবর্ণ দেখাচ্ছে।কয়েকটা দিনপঞ্জিকা ঝুলানো আছে।সবগুলোই বাংলা সনের।এখন অবশ্য বাংলা সনের আলাদা দিনপঞ্জিকা একরকম পাওয়া যায়না বললেই চলে।তবে এতিমখানাটায় আছে।এই রুমটাকে হয়তো গেস্টরুম বলা হয়।আমাকে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো।এখানকার তত্ত্বাবধায়ককে পাওয়া গেলো সন্ধ্যা আটটার দিকে।পল্লী এলাকায় আটটা মানেও অনেক রাত।ভদ্রলোক বেশ স্বাস্থ্যবান মানুষ।ভুড়িওয়ালা টাইপ কিছুটা।চুল সাদা হওয়া শুরু করেছে।ভদ্রলোক এসেই কথা শুরু করে দিলেন,"কেমন আছেন লেখক সাহেব?"
"ভাল আছি।"আমার সংক্ষিপ্ত জবাব।
তার অবস্থা জানার আগেই সে জানাল,ভাল আছে।আমি তার নামটা জিজ্ঞাসা করলাম।ভদ্রলোকের চট জলদি উত্তর,"জুনাব আলী,বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা।দেশের বাড়িতে হগলে থাকে।আমি এতিমখানায় পইড়া আছি।ওগো দেহাশোনা করি আরকি!এরাই আমার সবকিছু।হা হা ।"
আমি এর আগেও অনেক মানুষ দেখেছি যারা পান খেয়ে থাকে।এই লোকটি ব্যতিক্রম।পান যখন চিবায় তখন কাউকে কথা বলতে দেখিনি,ভদ্রলোক পান চিবাতে চিবাতে কথা বলতে পারেন।একটু বেশি কথা বলেন।এছাড়া তেমন কোনো দোষ খুঁজে পাচ্ছি না।আবার এটা গুণও হতে পারে!ভদ্রলোকের দেশের বাড়িতে একটা টং দোকান ছিলো ।প্রতি সন্ধ্যায় চা বিক্রি করতেন।প্রতি কাপ এক টাকা।চান্দিনার লোকজন দিনে যত কাজই করুক রাতে চা খাবেই।দোকানের নাম ছিলো,মনু টি স্টল।ভদ্রলোকের ছেলের নাম মনির।ছোট করে মনু।জুনাব আলীর সাথে গল্প করতে করতে সাড়ে নয়টা বেজে গেলো।এখানে সন্ধ্যা থেকেই ঘরগুলোতে কুপি জ্বলছিলো।এখন প্রায় সবগুলোই বন্ধ হয়ে গেছে।আমি যে রুমটাতে বসে আছি সেটাতে আর পশ্চিম দিকে একটা ঘরে এখনো কুপি জ্বলছে।কিছুক্ষণ আগে জুনাব আলী একবার কুপি বন্ধের তাগাদা দিয়েছেন।এখন একটু উচ্চস্বরে তাগাদা দিলেন,"সেঁজুতি কুপিটা বন্ধ করে শুয়ে পড় মা।"
একযুগ শেষ হয়ে গেছে কিন্তু একটা মায়াবী মুখ ভুলতে পারিনি।গত বছরগুলোতে অনেক মুখ দেখেছি ,কোন মুখ হারিয়ে গেছে স্মৃতির পর্দা থেকে আবার কোন মুখ যোগ হয়েছে স্মৃতির পর্দায়।বাস্তবতা সবসময় বিচিত্রমুখী,নানান ধরনের জটিলতায় উজ্জীবিত।হঠাৎ করে সৃষ্টি হওয়া ঘটনাও দাগ কেটে দিতে পারে স্মৃতির মণিকোঠায়।এটা তেমনি একটা ঘটনা।জীবনে প্রথম বারের মত গিয়েছিলাম এতিমখানায়,সেখানেই পরিচয় হলো সেঁজুতি নামের মায়াবী চেহারার মেয়েটার সাথে।সন্ধ্যাবেলায় যাওয়াতে পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ ছিলো না।তবে হাতে নোকিয়া মোবাইলের টর্চ ছিলো।চোখ ধাঁধানো আলো।এই মোবাইল গুলো বেশ সস্তায় পাওয়া যায়।বড় রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে যেতে হয়,তারপর ইটবিছানো রাস্তা।এতিমখানাটা দুই অংশে বিভক্ত।একটা অংশ ছেলেদের জন্য আরেকটা মেয়েদের।কারো সাথে কারো যোগাযোগ হওয়া সম্ভব না।আমাকে বসতে দেওয়া হলো একটা ছোট খুপড়ি ঘরে।কয়েকটা বেঞ্চ এক সারিতে পাতা আছে।আমি বসলাম একপাশে থাকা একটা কাঠের চেয়ারে।সম্ভবত আমি আসবো বিধায় এখানে আনিয়ে রাখা হয়েছে।সামনের দেয়ালটার চুন সড়কি কিছুটা উঠে গেছে।তাতে দেয়ালটা কেমন বিবর্ণ দেখাচ্ছে।কয়েকটা দিনপঞ্জিকা ঝুলানো আছে।সবগুলোই বাংলা সনের।এখন অবশ্য বাংলা সনের আলাদা দিনপঞ্জিকা একরকম পাওয়া যায়না বললেই চলে।তবে এতিমখানাটায় আছে।এই রুমটাকে হয়তো গেস্টরুম বলা হয়।আমাকে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো।এখানকার তত্ত্বাবধায়ককে পাওয়া গেলো সন্ধ্যা আটটার দিকে।পল্লী এলাকায় আটটা মানেও অনেক রাত।ভদ্রলোক বেশ স্বাস্থ্যবান মানুষ।ভুড়িওয়ালা টাইপ কিছুটা।চুল সাদা হওয়া শুরু করেছে।ভদ্রলোক এসেই কথা শুরু করে দিলেন,"কেমন আছেন লেখক সাহেব?"
"ভাল আছি।"আমার সংক্ষিপ্ত জবাব।
তার অবস্থা জানার আগেই সে জানাল,ভাল আছে।আমি তার নামটা জিজ্ঞাসা করলাম।ভদ্রলোকের চট জলদি উত্তর,"জুনাব আলী,বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা।দেশের বাড়িতে হগলে থাকে।আমি এতিমখানায় পইড়া আছি।ওগো দেহাশোনা করি আরকি!এরাই আমার সবকিছু।হা হা ।"
আমি এর আগেও অনেক মানুষ দেখেছি যারা পান খেয়ে থাকে।এই লোকটি ব্যতিক্রম।পান যখন চিবায় তখন কাউকে কথা বলতে দেখিনি,ভদ্রলোক পান চিবাতে চিবাতে কথা বলতে পারেন।একটু বেশি কথা বলেন।এছাড়া তেমন কোনো দোষ খুঁজে পাচ্ছি না।আবার এটা গুণও হতে পারে!ভদ্রলোকের দেশের বাড়িতে একটা টং দোকান ছিলো ।প্রতি সন্ধ্যায় চা বিক্রি করতেন।প্রতি কাপ এক টাকা।চান্দিনার লোকজন দিনে যত কাজই করুক রাতে চা খাবেই।দোকানের নাম ছিলো,মনু টি স্টল।ভদ্রলোকের ছেলের নাম মনির।ছোট করে মনু।জুনাব আলীর সাথে গল্প করতে করতে সাড়ে নয়টা বেজে গেলো।এখানে সন্ধ্যা থেকেই ঘরগুলোতে কুপি জ্বলছিলো।এখন প্রায় সবগুলোই বন্ধ হয়ে গেছে।আমি যে রুমটাতে বসে আছি সেটাতে আর পশ্চিম দিকে একটা ঘরে এখনো কুপি জ্বলছে।কিছুক্ষণ আগে জুনাব আলী একবার কুপি বন্ধের তাগাদা দিয়েছেন।এখন একটু উচ্চস্বরে তাগাদা দিলেন,"সেঁজুতি কুপিটা বন্ধ করে শুয়ে পড় মা।"
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অনিক মজুমদার ১১/১০/২০১৭
-
Rabia Onti ১১/১০/২০১৭বেশ ভাল গল্প । পড়ে খুব ভাল লাগল ।
-
শাহানাজ সুলতানা (শাহানাজ) ১১/১০/২০১৭দারুণ
-
আজাদ আলী ১১/১০/২০১৭Bah camatkar
অবশ্যই জানাবেন।