গতিপ্রকৃতি
এইযে গুলি হয়, এতে লাভ কার?
লাভ কারোর না; বরং ক্ষতি। স্বজন হারানোর ক্ষতি। রাষ্ট্রের ক্ষতি। ব্যক্তির ক্ষতি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চালিত হয় এই ক্ষতি। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের গুলি করার দায় কিন্তু প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে দিতে হচ্ছে পাকিস্তান নামক অপরিপক্ক রাষ্ট্রকে। একাত্তরের নির্বিচার মানুষ হত্যাও তাদের জন্য ভালো কিছু এনে দেয়নি। ১৯৯০এর দশকে স্বৈরাচারী এরশাদের পরিণতিও ভালো হয়নি। ২০২৪ যারা ঘটিয়েছে তাদেরও দায় নিতে হবে।
একটা বসন্ত আসন্ন ছিল। সেটা কী নামে অভিহিত হবে সেটা ইতিহাসবিদরা হয়তো লিখবে। কেউ বলবে বাংলা বিপ্লব, কেউ বলবে লাল বিপ্লব, কারও চোখে ব্যাপক অভ্যুত্থান।
আন্দোলনের কিছু মোমেন্টাম নিয়ে কথা বলি:
১. আবু সাঈদ হত্যা
সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল হিসেবে ধরা হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুলি চালানো। ছাত্র হত্যা কোনো শাসকের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনেনি।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতির সমীকরণ পরিবর্তন হয়ে গেছে। তিনি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রংপুর অঞ্চলে কোটা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তাঁর মৃত্যু পুরো ছাত্র সমাজকে একত্রিত করে। সারাদেশ তাঁর মৃত্যুর দৃশ্য অবলোকন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশের সব সেক্টরের মানুষ এর নিন্দা জানায়। তাঁর দুই হাত প্রসারিত করার দৃশ্য আন্দোলনকেও প্রসারিত করেছে।
২. ইন্টারনেট বন্ধ রাখা
ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ছিল সরকারকে ব্যাকফুটে দিয়ে দেওয়ার মত। ইন্টারনেট বন্ধের সময় আন্দোলন অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে কাদের ভূমিকা ছিল এটাও হয়তো সরকার জানে। যাত্রাবাড়ীসহ কিছু এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হল। এত মৃত্যুর দায় কে নেবে? ইন্টারনেট বন্ধের ফলে আন্দোলন সংগঠিত হওয়ার কম সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু ধীরে ধীরে বাড়ছে। মনে হচ্ছে অটো পাইলট মুডে আন্দোলন চলছে। আসলেই কী তাই চলছে?
৩. নয় দফা:
সরকারের কাছে ৯ দফা দাবি জানিয়েছে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এ আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের এই ঘোষণা দিল।
ঘোষণাটি আরেকবার পর্যালোচনা করার আগে দেখে নিই কী ছিল সেখানে?
দাবিগুলো হলো—
১. ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
৩. যেসব এলাকায় ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার পুলিশের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে বরখাস্ত করতে হবে।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে।
৫. নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৬. ছাত্র হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের আটক ও হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে।
৭. দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্রসংসদ চালু করতে হবে।
৮. অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলগুলো খুলে দিতে হবে।
৯. আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থী যেন একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
কখন, কোথায় বৈঠক হয়ে এই নয় দফা, তা জানা যায়নি।
তবে কিছু তথ্য বলে রাখি। এই দাবিগুলো সমন্বয়কেরা বিভিন্ন সময় হয়তো নিজেদের ভিতরে আলোচনা করেছে। কিন্তু সেটার গোছানো রূপটা কোথা থেকে এলো? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো জাতি খুঁজে পাবে। আমি একটা ধারণার কথা বলি, সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে এরকম কাজ করার মতো সংগঠন বাংলাদেশে খুব বেশি থাকার কথা নয়। তখন একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কথা আসবে। যারা ব্যক্তি জীবনে ধর্মের চর্চা করলেও বেড়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের সামনেই। ‘প্যারাসাইট অর্গানাইজেশন’ বলে অভিহিত করা যেতে পারে। ক্ষমতাসীন দলের এক্টিভিস্টরা এর জন্য সাবেক ছাত্রলীগের একজন নেতাকে দায়ী করে থাকে। আমি এদের কথা বললাম কারণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে একটিভ গ্রুপ এরাই। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের পদেও তাদের অবস্থান ছিল। মূল ৬ জন সমন্বয়কের অনুপস্থিতিতে আন্দোলন কিছুটা ঝিমিয়ে না পড়ে আরও প্রকট হয়েছে। কিছু জায়গায় ২০১৩-১৪ সালের মত ঘটনা দেখা গেছে। সরকার হয়তো অনুধাবন করতেছে; সাধারণ এই আন্দোলনে নেমেছে কিন্তু তাদের ভয় ভাঙিয়ে সামনে নেওয়ার বিষয়ে ভূমিকাটা কার? যা সরকারকে চাপে রেখেছে। কিছু জাতীয় পত্রিকা একজন আড়ালের মানুষ খুঁজতেছে; আমার ধারণা সংখ্যাটা একাধিক।
সরকারের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হয়তো বুঝতে পেরেছে। তাই এদের ওপর নেমে আসতে পারে কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত।
আরেকটা বিষয় হলো ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের সময় ৯ দফা গণমাধ্যমে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও শিক্ষার্থীদের একটা ভূমিকা আছে। অফলাইনে পৌঁছে দেয়া সহজ বিষয় নয়। কঠিন কাজটা কীভাবে হলো?
৯ দফা নিয়ে দুটি লাইন:
প্রথম দফাটি মানা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না, তার সাথে আন্দোলনকারীদের অনমনীয় মনোভাব দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতির সমীকরণ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে এমন কিছুই হয়তো অপেক্ষা করছে।
৪.কারফিউ জারি:
কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের নজিরবিহীন সংঘাত যেন থামছেই না। কোন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এতো কম সময়ের মধ্যে একশোর বেশি মানুষ নিহত হবার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো ঘটেনি।
বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিংবা সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের জন্য কারফিউ জারি করা নতুন কোন বিষয় নয়। সহিংসতা যখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায় তখন তা নিয়ন্ত্রণের সর্বশেষ উপায় হিসেবে কারফিউ বিবেচনা করে সরকার।
সর্বশেষ কারফিউ জারি করার ঘটনা ঘটেছিল ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। সেটিও হয়েছিল ছাত্র বিক্ষোভ দমনের জন্য।
৫. গণগ্রেপ্তার
আন্দোলন দমানোর সবচেয়ে পুরাতন কৌশল হলো গণগ্রেপ্তার। সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সক্রিয় নেতা কর্মী থেকে শুরু করে শিশুদের গ্রেপ্তার করছে। যা বৈশ্বিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। সরকারকে অবিলম্বে এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
৬. শোকের রং নির্ধারণ:
বাংলাদেশ আজীবন কালো শোক পালন করলেও রক্তাক্ত সংগ্রামের ফলে জুলাই বিপ্লব লাল শোক গ্রহণ করল। রাষ্ট্রীয় কালো শোকের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের লাল শোকের আহ্বান। এটা এমন একটা প্রতিবাদ যেখানে সরকারের আহ্বান প্রত্যাখান করা হয়েছে। অদ্ভুত ব্যাপার হল, ছাত্র জনতার সাথে রাষ্ট্রীয় সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীও কালো শোক প্রত্যাখান করেছে। সামাজিক মাধ্যমে সেনা সদস্য ও বিমান সদস্যদের বুটের নিচে কালো ব্যাচ দেখা গেছে। যা সরকারের প্রতি বাহিনীর ক্ষোভকে সামনে এনেছে।
সরকার এত বছরের শাসনে এরকম সমস্যায় পড়েনি।
৭. যাত্রাবাড়ি আসলে কী হচ্ছিল?
কোটা বিরোধী আন্দোলনে যেসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে তার মধ্যে যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়া এলাকা ছিল অন্যতম। যাত্রাবাড়ি শান্ত করতে বাহিনীর সদস্যরা ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলনের প্রাণ হয়ে ওঠা এই জায়গাটিকে কী নামে অভিহিত করা যায়?
৮. জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করলে এর ফসল কেমন হতে পারে?
গণমাধ্যমের সূত্র জানিয়েছে, ১৪ দল নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করবে। আসলেই করবে কিনা সেই প্রশ্ন তো আছেই। নিষিদ্ধ করেও কী আন্দোলন দমানো যাবে? সরকার হয়তো যেকোন মূল্যে আন্দোলন থামাতে চাচ্ছে।
৯. জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংগঠন ও দেশ বিভিন্ন সময়ে বিবৃতি দিচ্ছে। যা সরকারকে চাপে রাখছে।
দিনশেষে চাওয়া দেশ স্বাভাবিক হোক।
...
লাভ কারোর না; বরং ক্ষতি। স্বজন হারানোর ক্ষতি। রাষ্ট্রের ক্ষতি। ব্যক্তির ক্ষতি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চালিত হয় এই ক্ষতি। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের গুলি করার দায় কিন্তু প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে দিতে হচ্ছে পাকিস্তান নামক অপরিপক্ক রাষ্ট্রকে। একাত্তরের নির্বিচার মানুষ হত্যাও তাদের জন্য ভালো কিছু এনে দেয়নি। ১৯৯০এর দশকে স্বৈরাচারী এরশাদের পরিণতিও ভালো হয়নি। ২০২৪ যারা ঘটিয়েছে তাদেরও দায় নিতে হবে।
একটা বসন্ত আসন্ন ছিল। সেটা কী নামে অভিহিত হবে সেটা ইতিহাসবিদরা হয়তো লিখবে। কেউ বলবে বাংলা বিপ্লব, কেউ বলবে লাল বিপ্লব, কারও চোখে ব্যাপক অভ্যুত্থান।
আন্দোলনের কিছু মোমেন্টাম নিয়ে কথা বলি:
১. আবু সাঈদ হত্যা
সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল হিসেবে ধরা হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুলি চালানো। ছাত্র হত্যা কোনো শাসকের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনেনি।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতির সমীকরণ পরিবর্তন হয়ে গেছে। তিনি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রংপুর অঞ্চলে কোটা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তাঁর মৃত্যু পুরো ছাত্র সমাজকে একত্রিত করে। সারাদেশ তাঁর মৃত্যুর দৃশ্য অবলোকন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশের সব সেক্টরের মানুষ এর নিন্দা জানায়। তাঁর দুই হাত প্রসারিত করার দৃশ্য আন্দোলনকেও প্রসারিত করেছে।
২. ইন্টারনেট বন্ধ রাখা
ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ছিল সরকারকে ব্যাকফুটে দিয়ে দেওয়ার মত। ইন্টারনেট বন্ধের সময় আন্দোলন অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে কাদের ভূমিকা ছিল এটাও হয়তো সরকার জানে। যাত্রাবাড়ীসহ কিছু এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হল। এত মৃত্যুর দায় কে নেবে? ইন্টারনেট বন্ধের ফলে আন্দোলন সংগঠিত হওয়ার কম সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু ধীরে ধীরে বাড়ছে। মনে হচ্ছে অটো পাইলট মুডে আন্দোলন চলছে। আসলেই কী তাই চলছে?
৩. নয় দফা:
সরকারের কাছে ৯ দফা দাবি জানিয়েছে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এ আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের এই ঘোষণা দিল।
ঘোষণাটি আরেকবার পর্যালোচনা করার আগে দেখে নিই কী ছিল সেখানে?
দাবিগুলো হলো—
১. ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
৩. যেসব এলাকায় ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার পুলিশের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে বরখাস্ত করতে হবে।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে।
৫. নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৬. ছাত্র হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের আটক ও হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে।
৭. দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্রসংসদ চালু করতে হবে।
৮. অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলগুলো খুলে দিতে হবে।
৯. আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থী যেন একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
কখন, কোথায় বৈঠক হয়ে এই নয় দফা, তা জানা যায়নি।
তবে কিছু তথ্য বলে রাখি। এই দাবিগুলো সমন্বয়কেরা বিভিন্ন সময় হয়তো নিজেদের ভিতরে আলোচনা করেছে। কিন্তু সেটার গোছানো রূপটা কোথা থেকে এলো? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো জাতি খুঁজে পাবে। আমি একটা ধারণার কথা বলি, সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে এরকম কাজ করার মতো সংগঠন বাংলাদেশে খুব বেশি থাকার কথা নয়। তখন একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কথা আসবে। যারা ব্যক্তি জীবনে ধর্মের চর্চা করলেও বেড়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের সামনেই। ‘প্যারাসাইট অর্গানাইজেশন’ বলে অভিহিত করা যেতে পারে। ক্ষমতাসীন দলের এক্টিভিস্টরা এর জন্য সাবেক ছাত্রলীগের একজন নেতাকে দায়ী করে থাকে। আমি এদের কথা বললাম কারণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে একটিভ গ্রুপ এরাই। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের পদেও তাদের অবস্থান ছিল। মূল ৬ জন সমন্বয়কের অনুপস্থিতিতে আন্দোলন কিছুটা ঝিমিয়ে না পড়ে আরও প্রকট হয়েছে। কিছু জায়গায় ২০১৩-১৪ সালের মত ঘটনা দেখা গেছে। সরকার হয়তো অনুধাবন করতেছে; সাধারণ এই আন্দোলনে নেমেছে কিন্তু তাদের ভয় ভাঙিয়ে সামনে নেওয়ার বিষয়ে ভূমিকাটা কার? যা সরকারকে চাপে রেখেছে। কিছু জাতীয় পত্রিকা একজন আড়ালের মানুষ খুঁজতেছে; আমার ধারণা সংখ্যাটা একাধিক।
সরকারের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হয়তো বুঝতে পেরেছে। তাই এদের ওপর নেমে আসতে পারে কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত।
আরেকটা বিষয় হলো ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের সময় ৯ দফা গণমাধ্যমে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও শিক্ষার্থীদের একটা ভূমিকা আছে। অফলাইনে পৌঁছে দেয়া সহজ বিষয় নয়। কঠিন কাজটা কীভাবে হলো?
৯ দফা নিয়ে দুটি লাইন:
প্রথম দফাটি মানা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না, তার সাথে আন্দোলনকারীদের অনমনীয় মনোভাব দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতির সমীকরণ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে এমন কিছুই হয়তো অপেক্ষা করছে।
৪.কারফিউ জারি:
কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের নজিরবিহীন সংঘাত যেন থামছেই না। কোন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এতো কম সময়ের মধ্যে একশোর বেশি মানুষ নিহত হবার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো ঘটেনি।
বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিংবা সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের জন্য কারফিউ জারি করা নতুন কোন বিষয় নয়। সহিংসতা যখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায় তখন তা নিয়ন্ত্রণের সর্বশেষ উপায় হিসেবে কারফিউ বিবেচনা করে সরকার।
সর্বশেষ কারফিউ জারি করার ঘটনা ঘটেছিল ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। সেটিও হয়েছিল ছাত্র বিক্ষোভ দমনের জন্য।
৫. গণগ্রেপ্তার
আন্দোলন দমানোর সবচেয়ে পুরাতন কৌশল হলো গণগ্রেপ্তার। সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সক্রিয় নেতা কর্মী থেকে শুরু করে শিশুদের গ্রেপ্তার করছে। যা বৈশ্বিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। সরকারকে অবিলম্বে এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
৬. শোকের রং নির্ধারণ:
বাংলাদেশ আজীবন কালো শোক পালন করলেও রক্তাক্ত সংগ্রামের ফলে জুলাই বিপ্লব লাল শোক গ্রহণ করল। রাষ্ট্রীয় কালো শোকের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের লাল শোকের আহ্বান। এটা এমন একটা প্রতিবাদ যেখানে সরকারের আহ্বান প্রত্যাখান করা হয়েছে। অদ্ভুত ব্যাপার হল, ছাত্র জনতার সাথে রাষ্ট্রীয় সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীও কালো শোক প্রত্যাখান করেছে। সামাজিক মাধ্যমে সেনা সদস্য ও বিমান সদস্যদের বুটের নিচে কালো ব্যাচ দেখা গেছে। যা সরকারের প্রতি বাহিনীর ক্ষোভকে সামনে এনেছে।
সরকার এত বছরের শাসনে এরকম সমস্যায় পড়েনি।
৭. যাত্রাবাড়ি আসলে কী হচ্ছিল?
কোটা বিরোধী আন্দোলনে যেসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে তার মধ্যে যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়া এলাকা ছিল অন্যতম। যাত্রাবাড়ি শান্ত করতে বাহিনীর সদস্যরা ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলনের প্রাণ হয়ে ওঠা এই জায়গাটিকে কী নামে অভিহিত করা যায়?
৮. জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করলে এর ফসল কেমন হতে পারে?
গণমাধ্যমের সূত্র জানিয়েছে, ১৪ দল নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করবে। আসলেই করবে কিনা সেই প্রশ্ন তো আছেই। নিষিদ্ধ করেও কী আন্দোলন দমানো যাবে? সরকার হয়তো যেকোন মূল্যে আন্দোলন থামাতে চাচ্ছে।
৯. জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংগঠন ও দেশ বিভিন্ন সময়ে বিবৃতি দিচ্ছে। যা সরকারকে চাপে রাখছে।
দিনশেষে চাওয়া দেশ স্বাভাবিক হোক।
...
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ১৪/১০/২০২৪বেশ ভাল