হযবরল সমালোচনা
১.
ভার্সিটিতে প্রথম দিন।ছেলেটা মেয়েটার কাজলকালো চোখের দিকে তাকিয়েই প্রেমে পড়ে গেল।এখানে ছেলেটা মেয়েটার সমবয়সি হতে পারে আবার বড় হলেও অবাক হব না।দুজন যখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তখন খুবই ক্ষুদ্র ঘটনাতে প্রেমের সমাপ্তি ঘটল।এক্ষেত্রে যেটা ঘটে সেটা হল, নতুন কেউ এসে তাদের জীবনে হাল ধরবে নতুবা একজনের অকালপ্রয়াণ ঘটবে ।তারপর একজন প্রেমহীন জীবন কাটিয়ে দিবে।আর গল্পের শেষটা ভাল হলে নতুন করে প্রেমে পড়ার ঘটনা ঘটতে থাকবে।
বর্তমানে এই প্লটে গল্প লেখার প্রবণতা বেড়েছে তবে পাঠক কমে গেছে।পাঠক রীতিমত বিরক্ত।তবে এই প্লটের লেখকেরা ফেসবুকে জনপ্রিয় তাদের অন্ধ ভক্তরা তাদের প্রত্যেকটি গল্পে কমেন্ট করে Nice, আরো ছোট করে শুধু N লেখে।এই গল্পগুলো পর্ব আকারে হলে লেখে Next ।এই প্লটের গল্পগুলোতে এগারটি লাইক, সতেরটি হা হা রিঅ্যাক্ট,একটি লাভ রিঅ্যাক্ট,তেরটি আংগরি রিঅ্যাক্ট দেখা যায়।একটা কমেন্টে দেখা যায় লেখাটি ভাল হয়নি,সেখানে ভক্তরা ঝাঁপিয়ে পড়ে।ভক্তরা রিপ্লে দেয়, নিজে লিখতে পারেন না আরেকজনের ভুল ধরেন ক্যান? অবস্থা এমন যে, ভুলকে চুল বললে ভক্তরা খুশি।ভুল কোনরূপেই বলা যাবে না।
২.
দেশে এখন কাকের চেয়ে কবি বেশি।অতি আধুনিক কবিরা কি লেখে তার ভাবটা বোধগম্য হয়না।ছন্দ মিলাতে ব্যর্থ হলেই সেটাকে বানিয়ে দেয় গদ্যছন্দের কবিতা।অথচ এঁরা জানে না গদ্যছন্দ কতটা সাবলীল।ছন্দ মিলে গেলে নিজেকে মনে করে মহাকবি অথচ ভাবটা কিছুই থাকে না। এদের ছন্দগুলোও হাস্যকর -
"অ আ বগের ছা,
খুলে গেছে কাছা,
তুমি আমার ভালবাসা। "
আবার ভুল বানানে কবিতা লেখার একটা চল হয়েছে।যেটা প্রচলিত হলে বাঙলা সাহিত্যের বারোটা বাজতে সময় লাগবে কয়েক ন্যানো সেকেন্ড।
"জল পরে পাতা নরে
তুমার কতা মনে পরে"
এই কবিতাগুলোতে অ্যাঞ্জেল ফারিয়া ওরফে নার্গিস,এভ্রিল ওরফে আমেনা খাতুন কমেন্ট করে জানান দেয় ঘটনা তাদের জীবনের সাথে মিলে গেছে।সেই কমেন্টে চাঁন মিয়া এবং সুজন দা কান্নার রিঅ্যাক্ট দেখাতে থাকে।উল্লেখ্য, চাঁন মিয়া ফেসবুকে আবির চৌধুরি এবং সুজন দা প্রিন্স জন নামে ফেসবুকে অবস্থান করছেন।এই কবিতায় কোন পাঠক যদি কমেন্ট করেন কবিতাটি বুঝিনি কিংবা এর মানে কি, সেখান জনপ্রিয় কবি মন্তব্য করেন তুই কবিতার কি বুঝবি?উত্তরের ধরনে মনে হতে পারে ইনার কবিতাতে পিএইচডি আছে।উল্লেখ্য ইনার দুটি কবিতা একটা পেজে ও কিছু গ্রুপে প্রকাশ করা হয়েছে।বর্তমানে ইনি একজন সেলিব্রেটি।বর্তমান কবিদের ইয়াদ রাখতে হবে,কবিতা মন ও মননের বিকাশ করে ।ভুল বানানে কবিতা হয়না।আপনাদের প্রতিভা থাকলে ভালভাবেই লিখুন।দয়া করে পাঠককে বিভ্রান্ত করবেন না।
৩.
লেখার শিরোনাম আজকাল বিরক্তিকর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।শিরোনামের কিছু নমুনা : কিউট বর/বউ, লজ্জ্বাবতী বউ/লজ্জ্বাবান বর, অপ্সরি/পেত্নি/পরী,অমুক জামাই/তমুক জামাই,গুন্ডি মেয়ে/বালিকা।ডায়েরির পাতা থেকে অসংখ্য লেখা ফেসবুকে দেখা যায়, সেসব ডায়েরি লেখকের হাতে বিভিন্নভাবে আসবে এবং তিনি লিখে ফেলবেন তার লেখাটি।
৪.
ফেসবুকে মধ্যবিত্তদের নিয়ে যত লেখা হয় তারমধ্যে দশমিক এক শতাংশ লেখা উৎকৃষ্ট মানের হয় কিনা সন্দেহ।কিছু ভাল লেখা আসে সেটাও নগণ্য।লেখকেরা মধ্যবিত্তকে যত করুণভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে বাঙলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীও তত করুণ জীবনযাপন করে কিনা সন্দেহ।মধ্যবিত্ত ছেলেদের একটা প্রেমিকা থাকবেই এবং মাস শেষে অর্থ সংকটে ভুগতে থাকবে।এর মাঝেও তার পকেটে দেখা যাবে বেনসন অ্যান্ড হেজেজ এর সিগারেট।এই ছেলেটির প্রেমিকা হিশেবে দেখা যাবে তার টিউশন বাড়ির কোন মেয়ে অথবা তার ছাত্রীটি।কোন একসময় তাদের মধ্য বিবাহের বন্দোবস্ত লেখক নিজ হাতেই করে থাকেন।এই প্লটের গল্পগুলো পাঠক পাঠিকা বিরক্তি নিয়েই পড়ে ,ঠিক পড়ে না নিউজফিডে আসে তাই পড়তে হয়।এই গল্পেরও কিছু অন্ধ পাঠক থাকে।তারা কমেন্ট কান্নার ইমো দেয় এবং কান্নার রিঅ্যাক্ট দেয়।কোন লেখককে ছোট করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়।পাঠকদের মনটার দিকেও একটু গুরুত্ব দিন।আমার মত! অসংখ্য পাঠক আপনাদের লেখার দিকে তাকিয়ে আছে তাদেরকে নিরাশ করবেন না।গতানুগতিক ধারার বাইরে কিছু করার চেষ্টা করুন আমার মনে হয় আপনি বা আপনারা পারবেন।এই লেখাটা পড়ে যদি মনে করেন,ধুর ছাই! কি আজেবাজে লেখা।যে লিখছে সে হয়তো গাঁজা বেশি খেয়ে ফেলছে।তাদের উদ্দেশ্যে বলছি-আমি আপনাদের মত বড়মাপের লেখক নই।আমি নিম্নমানের পাঠক।পাঠক হিশেবে এটা আমার বিশ্লেষণ।এখনও গাঁজা খাওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি তবে পরিস্থিতি পাল্টে গেলে হয়তো জীবনে একটান গাঁজা খেতে পারি।জীবনে অনেক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে সেখানে গাঁজার অভিজ্ঞতাটাও খারাপ হবে বলে মনে হচ্ছে না।এই লেখায় যেকোন ভুল নির্দ্বিধায় তুলে ধরবেন আমি নিজেকে শুধরিয়ে নেব।নতুন লেখকদের জন্য শুভকামনা।
কলমে — কামরুজ্জামান সাদ
ভার্সিটিতে প্রথম দিন।ছেলেটা মেয়েটার কাজলকালো চোখের দিকে তাকিয়েই প্রেমে পড়ে গেল।এখানে ছেলেটা মেয়েটার সমবয়সি হতে পারে আবার বড় হলেও অবাক হব না।দুজন যখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তখন খুবই ক্ষুদ্র ঘটনাতে প্রেমের সমাপ্তি ঘটল।এক্ষেত্রে যেটা ঘটে সেটা হল, নতুন কেউ এসে তাদের জীবনে হাল ধরবে নতুবা একজনের অকালপ্রয়াণ ঘটবে ।তারপর একজন প্রেমহীন জীবন কাটিয়ে দিবে।আর গল্পের শেষটা ভাল হলে নতুন করে প্রেমে পড়ার ঘটনা ঘটতে থাকবে।
বর্তমানে এই প্লটে গল্প লেখার প্রবণতা বেড়েছে তবে পাঠক কমে গেছে।পাঠক রীতিমত বিরক্ত।তবে এই প্লটের লেখকেরা ফেসবুকে জনপ্রিয় তাদের অন্ধ ভক্তরা তাদের প্রত্যেকটি গল্পে কমেন্ট করে Nice, আরো ছোট করে শুধু N লেখে।এই গল্পগুলো পর্ব আকারে হলে লেখে Next ।এই প্লটের গল্পগুলোতে এগারটি লাইক, সতেরটি হা হা রিঅ্যাক্ট,একটি লাভ রিঅ্যাক্ট,তেরটি আংগরি রিঅ্যাক্ট দেখা যায়।একটা কমেন্টে দেখা যায় লেখাটি ভাল হয়নি,সেখানে ভক্তরা ঝাঁপিয়ে পড়ে।ভক্তরা রিপ্লে দেয়, নিজে লিখতে পারেন না আরেকজনের ভুল ধরেন ক্যান? অবস্থা এমন যে, ভুলকে চুল বললে ভক্তরা খুশি।ভুল কোনরূপেই বলা যাবে না।
২.
দেশে এখন কাকের চেয়ে কবি বেশি।অতি আধুনিক কবিরা কি লেখে তার ভাবটা বোধগম্য হয়না।ছন্দ মিলাতে ব্যর্থ হলেই সেটাকে বানিয়ে দেয় গদ্যছন্দের কবিতা।অথচ এঁরা জানে না গদ্যছন্দ কতটা সাবলীল।ছন্দ মিলে গেলে নিজেকে মনে করে মহাকবি অথচ ভাবটা কিছুই থাকে না। এদের ছন্দগুলোও হাস্যকর -
"অ আ বগের ছা,
খুলে গেছে কাছা,
তুমি আমার ভালবাসা। "
আবার ভুল বানানে কবিতা লেখার একটা চল হয়েছে।যেটা প্রচলিত হলে বাঙলা সাহিত্যের বারোটা বাজতে সময় লাগবে কয়েক ন্যানো সেকেন্ড।
"জল পরে পাতা নরে
তুমার কতা মনে পরে"
এই কবিতাগুলোতে অ্যাঞ্জেল ফারিয়া ওরফে নার্গিস,এভ্রিল ওরফে আমেনা খাতুন কমেন্ট করে জানান দেয় ঘটনা তাদের জীবনের সাথে মিলে গেছে।সেই কমেন্টে চাঁন মিয়া এবং সুজন দা কান্নার রিঅ্যাক্ট দেখাতে থাকে।উল্লেখ্য, চাঁন মিয়া ফেসবুকে আবির চৌধুরি এবং সুজন দা প্রিন্স জন নামে ফেসবুকে অবস্থান করছেন।এই কবিতায় কোন পাঠক যদি কমেন্ট করেন কবিতাটি বুঝিনি কিংবা এর মানে কি, সেখান জনপ্রিয় কবি মন্তব্য করেন তুই কবিতার কি বুঝবি?উত্তরের ধরনে মনে হতে পারে ইনার কবিতাতে পিএইচডি আছে।উল্লেখ্য ইনার দুটি কবিতা একটা পেজে ও কিছু গ্রুপে প্রকাশ করা হয়েছে।বর্তমানে ইনি একজন সেলিব্রেটি।বর্তমান কবিদের ইয়াদ রাখতে হবে,কবিতা মন ও মননের বিকাশ করে ।ভুল বানানে কবিতা হয়না।আপনাদের প্রতিভা থাকলে ভালভাবেই লিখুন।দয়া করে পাঠককে বিভ্রান্ত করবেন না।
৩.
লেখার শিরোনাম আজকাল বিরক্তিকর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।শিরোনামের কিছু নমুনা : কিউট বর/বউ, লজ্জ্বাবতী বউ/লজ্জ্বাবান বর, অপ্সরি/পেত্নি/পরী,অমুক জামাই/তমুক জামাই,গুন্ডি মেয়ে/বালিকা।ডায়েরির পাতা থেকে অসংখ্য লেখা ফেসবুকে দেখা যায়, সেসব ডায়েরি লেখকের হাতে বিভিন্নভাবে আসবে এবং তিনি লিখে ফেলবেন তার লেখাটি।
৪.
ফেসবুকে মধ্যবিত্তদের নিয়ে যত লেখা হয় তারমধ্যে দশমিক এক শতাংশ লেখা উৎকৃষ্ট মানের হয় কিনা সন্দেহ।কিছু ভাল লেখা আসে সেটাও নগণ্য।লেখকেরা মধ্যবিত্তকে যত করুণভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে বাঙলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীও তত করুণ জীবনযাপন করে কিনা সন্দেহ।মধ্যবিত্ত ছেলেদের একটা প্রেমিকা থাকবেই এবং মাস শেষে অর্থ সংকটে ভুগতে থাকবে।এর মাঝেও তার পকেটে দেখা যাবে বেনসন অ্যান্ড হেজেজ এর সিগারেট।এই ছেলেটির প্রেমিকা হিশেবে দেখা যাবে তার টিউশন বাড়ির কোন মেয়ে অথবা তার ছাত্রীটি।কোন একসময় তাদের মধ্য বিবাহের বন্দোবস্ত লেখক নিজ হাতেই করে থাকেন।এই প্লটের গল্পগুলো পাঠক পাঠিকা বিরক্তি নিয়েই পড়ে ,ঠিক পড়ে না নিউজফিডে আসে তাই পড়তে হয়।এই গল্পেরও কিছু অন্ধ পাঠক থাকে।তারা কমেন্ট কান্নার ইমো দেয় এবং কান্নার রিঅ্যাক্ট দেয়।কোন লেখককে ছোট করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়।পাঠকদের মনটার দিকেও একটু গুরুত্ব দিন।আমার মত! অসংখ্য পাঠক আপনাদের লেখার দিকে তাকিয়ে আছে তাদেরকে নিরাশ করবেন না।গতানুগতিক ধারার বাইরে কিছু করার চেষ্টা করুন আমার মনে হয় আপনি বা আপনারা পারবেন।এই লেখাটা পড়ে যদি মনে করেন,ধুর ছাই! কি আজেবাজে লেখা।যে লিখছে সে হয়তো গাঁজা বেশি খেয়ে ফেলছে।তাদের উদ্দেশ্যে বলছি-আমি আপনাদের মত বড়মাপের লেখক নই।আমি নিম্নমানের পাঠক।পাঠক হিশেবে এটা আমার বিশ্লেষণ।এখনও গাঁজা খাওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি তবে পরিস্থিতি পাল্টে গেলে হয়তো জীবনে একটান গাঁজা খেতে পারি।জীবনে অনেক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে সেখানে গাঁজার অভিজ্ঞতাটাও খারাপ হবে বলে মনে হচ্ছে না।এই লেখায় যেকোন ভুল নির্দ্বিধায় তুলে ধরবেন আমি নিজেকে শুধরিয়ে নেব।নতুন লেখকদের জন্য শুভকামনা।
কলমে — কামরুজ্জামান সাদ
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Abheek ১৮/০১/২০১৮খুব সুন্দর
-
ফয়সাল রহমান ১৮/০১/২০১৮ভালো
-
মধু মঙ্গল সিনহা ১৭/০১/২০১৮খুব ভালো লাগলো, সত্যিই তো বললেন।