শতাংশ জীবন- ৪ (মহারাজা)
টিক টিক করে ঘড়ির কাটা বাম থেকে ডানে ঘুরে যায়। অ-স্থবির জীবনের সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আমার অবয়বগত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। আমি বড় হয়ে যাই। কতো বড়?
আমি চিনতে পারি, এটা আমার। আমার ঘুড়ি, আমার লাঠিম, আমার মার্বেল ....। ঘর এখন আমার কাছে পর হয়ে গেছে। প্রিয় মায়ের আদরের শাসনকে এখন শোষণ মনে হয়। মায়ের সান্নিধ্যের চেয়ে ঘরের বাহিরের বন্ধুদের সান্নিধ্য অনেক সুখের ও আনন্দের। শুধুমাত্র পেটের ভেতরে ছুঁচুর নড়াচড়া অনুভব হলে ঘরে ফিরি। তা'ছাড়া ঘরকে মনে হয় কয়েদখানা। এটা করো না, ওটা করো না, এভাবে কথা বলো, ওভাবে বলা উচিৎ নয়; কত রকমের 'না' এবং আদেশের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখে চলার পথের সামনে। 'স্বাধীনতাহীন কে বা বাঁচিতে চাহে ? ' এ বোধ আমাকে ঘর থেকে বের করে নেয়, স্বাধীনতার আহ্বান বড়ো মধুর লাগে।
এখন আর বড়ো পিঁড়িতে দাঁড়িয়ে গোসল করতে হয় না। এখন মেঘনার কাক-চক্ষু কালো জলে ঝাপিয়ে, লাই ডুবানি খেলে, বাজি ধরে কত দূরে যাওয়া যায় সাঁতার কেটে, ইত্যকার বিবিধ কর্ম সম্পাদন করে, এক প্রহরের আগে গোসল শেষ হয় না। বন্ধুদের দল ছাড়া ভালো লাগে না। কি ঘুড়ি উড়াতে, কি মার্বেল খেলতে, কি লাঠিম ঘুরাতে বন্ধুদের খুঁজে খুঁজে বের করা এক মহা-আনন্দের কর্ম। তারপর, খেলা শেষে সবাই মিলে একসাথে মেঘনা নদীর পানি ঘোলা করে, আমাদের চোখগুলোতে কোকিল চোখের লাল মেখে বাড়ি ফিরতাম।
কিছুটা ভয় পেতাম। লাল চোখ দেখে হয়তো মা রাগ করবেন। তাই, বাড়ি ফিরার সময় কাক আর কোকিলকে ডেকে ডেকে আমাদের চোখের বদল করার জন্য মনে মনে অদেখা ঈশ্বরের কাছে করুণা চাইতাম-
' কোকিল রে তোর লাল চোখ নিয়ে যা,
কাউয়া রে তোর কালো চোখ দিয়ে যা।'
এ ছিলো এক মন্ত্রের মন্ত্র। তবে, এ মন্ত্রে সাধন হতো কি না, জানি না। বাড়িতে পৌঁছার পর শাসনের বদলে মায়ের চোখের উদ্ভিগ্নতা আশ্বস্ত করতো। দিনের এতোটা ক্ষণ কোথায় ছিলেম, এই নিয়ে মায়ের দুশ্চিন্তার অবসান ঘটাতাম আমার হাজিরা দিয়ে। প্রশ্নহীনা মা-জননী তরকারী তুলে দিতো ভাতের বাসনে।
সারদিন খেলা। ইচ্ছেমতো চলা। দল বেধে চাঁদনী রাতে গোল্লাছুট অথবা বৌ-ছি খেলা। আনন্দের উপর আনন্দ যেন আছড়ে পড়তো। এতো আনন্দময় স্বাধীনতায় হাওয়ায় ভর করে চলে যেতাম, ইচ্ছেমতো ইচ্ছে-ঘুড়ির সাথে।
এহেন দিনে আরেকটি খেলা ছিলো ভর দুপুরে যখন সকল পাড়া ঘুমিয়ে যেতো, আমরা চুপি চুপি বের হতাম সরকার বাড়ি পুকুর পাড়ের ঘন ও বিশাল আম বাগানে বিশ্ব জয়ের চেতনা নিয়ে। দল বেঁধে গাছে চড়ে ,আম-গাছের ডালে বসে ভাঙ্গা হেক্সোর দ্বারা নিজের হাতে তৈরী ছুরি দিয়ে আম কেটে খাওয়া অথবা কিপ্টে রমজান আলীর (আমরা জ্যাঠা বলে ডাকতাম) বাগানের পাকা গাব পাড়ার মতো মহা দক্ষতার পরিচয় দিতে কতোই না গর্বের কাজ সগৌরবে করে যেতাম। এই পৃথিবীর খোলা আকাশের নিচে আমরা সবাই রাজার রাজা ....
আমি চিনতে পারি, এটা আমার। আমার ঘুড়ি, আমার লাঠিম, আমার মার্বেল ....। ঘর এখন আমার কাছে পর হয়ে গেছে। প্রিয় মায়ের আদরের শাসনকে এখন শোষণ মনে হয়। মায়ের সান্নিধ্যের চেয়ে ঘরের বাহিরের বন্ধুদের সান্নিধ্য অনেক সুখের ও আনন্দের। শুধুমাত্র পেটের ভেতরে ছুঁচুর নড়াচড়া অনুভব হলে ঘরে ফিরি। তা'ছাড়া ঘরকে মনে হয় কয়েদখানা। এটা করো না, ওটা করো না, এভাবে কথা বলো, ওভাবে বলা উচিৎ নয়; কত রকমের 'না' এবং আদেশের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখে চলার পথের সামনে। 'স্বাধীনতাহীন কে বা বাঁচিতে চাহে ? ' এ বোধ আমাকে ঘর থেকে বের করে নেয়, স্বাধীনতার আহ্বান বড়ো মধুর লাগে।
এখন আর বড়ো পিঁড়িতে দাঁড়িয়ে গোসল করতে হয় না। এখন মেঘনার কাক-চক্ষু কালো জলে ঝাপিয়ে, লাই ডুবানি খেলে, বাজি ধরে কত দূরে যাওয়া যায় সাঁতার কেটে, ইত্যকার বিবিধ কর্ম সম্পাদন করে, এক প্রহরের আগে গোসল শেষ হয় না। বন্ধুদের দল ছাড়া ভালো লাগে না। কি ঘুড়ি উড়াতে, কি মার্বেল খেলতে, কি লাঠিম ঘুরাতে বন্ধুদের খুঁজে খুঁজে বের করা এক মহা-আনন্দের কর্ম। তারপর, খেলা শেষে সবাই মিলে একসাথে মেঘনা নদীর পানি ঘোলা করে, আমাদের চোখগুলোতে কোকিল চোখের লাল মেখে বাড়ি ফিরতাম।
কিছুটা ভয় পেতাম। লাল চোখ দেখে হয়তো মা রাগ করবেন। তাই, বাড়ি ফিরার সময় কাক আর কোকিলকে ডেকে ডেকে আমাদের চোখের বদল করার জন্য মনে মনে অদেখা ঈশ্বরের কাছে করুণা চাইতাম-
' কোকিল রে তোর লাল চোখ নিয়ে যা,
কাউয়া রে তোর কালো চোখ দিয়ে যা।'
এ ছিলো এক মন্ত্রের মন্ত্র। তবে, এ মন্ত্রে সাধন হতো কি না, জানি না। বাড়িতে পৌঁছার পর শাসনের বদলে মায়ের চোখের উদ্ভিগ্নতা আশ্বস্ত করতো। দিনের এতোটা ক্ষণ কোথায় ছিলেম, এই নিয়ে মায়ের দুশ্চিন্তার অবসান ঘটাতাম আমার হাজিরা দিয়ে। প্রশ্নহীনা মা-জননী তরকারী তুলে দিতো ভাতের বাসনে।
সারদিন খেলা। ইচ্ছেমতো চলা। দল বেধে চাঁদনী রাতে গোল্লাছুট অথবা বৌ-ছি খেলা। আনন্দের উপর আনন্দ যেন আছড়ে পড়তো। এতো আনন্দময় স্বাধীনতায় হাওয়ায় ভর করে চলে যেতাম, ইচ্ছেমতো ইচ্ছে-ঘুড়ির সাথে।
এহেন দিনে আরেকটি খেলা ছিলো ভর দুপুরে যখন সকল পাড়া ঘুমিয়ে যেতো, আমরা চুপি চুপি বের হতাম সরকার বাড়ি পুকুর পাড়ের ঘন ও বিশাল আম বাগানে বিশ্ব জয়ের চেতনা নিয়ে। দল বেঁধে গাছে চড়ে ,আম-গাছের ডালে বসে ভাঙ্গা হেক্সোর দ্বারা নিজের হাতে তৈরী ছুরি দিয়ে আম কেটে খাওয়া অথবা কিপ্টে রমজান আলীর (আমরা জ্যাঠা বলে ডাকতাম) বাগানের পাকা গাব পাড়ার মতো মহা দক্ষতার পরিচয় দিতে কতোই না গর্বের কাজ সগৌরবে করে যেতাম। এই পৃথিবীর খোলা আকাশের নিচে আমরা সবাই রাজার রাজা ....
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ফয়জুল মহী ০৪/১২/২০২০অনুপম মনের ভাবনা ।