www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শতাংশ জীবন-০১ (আঁতুর ঘর)

প্রভাতের সূর্য লাল হওয়ার আগে পূবাকাশে একটি শুভ্র আলোর রেখা দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে। এমনই সূবহ সাদেক সময়ে আমি এলাম মায়ের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে, হিংসা-দ্বেষ-বিদ্বেষের পৃথিবীতে। আঁতুর ঘরের মিটমিটে আলোয় এসে জানান দিলেম সুতীব্র চিৎকারে- আমি এসেছি। আমি এসেছি- ভালোবাসার ডালি নিয়ে। আমি মুহম্মদ নই, কৃষ্ণ নই, বুদ্ধ নই, ঈসা নই; নই আল্লাহ বা ঈশ্বরের অবতার। আমি এসেছি একজন অপরূপা সুন্দরী মায়ের ভালোবাসায় মথিত, কাঙ্খিত সত্ত্বা, অজস্র প্রেমের বহ্নিজ্বালা মানবী-সন্তান।

আমার চিৎকারে পরশীদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। বৃদ্ধ মুয়াজ্জিনের কন্ঠ কেঁপে কেঁপে উঠে সুরেলা আওয়াজে। সোমত্ত বলিষ্ঠ কিষাণ তার কাঁধের উপর লাঙ্গল ফেলে প্রশ্ন করে জেনে নেয়, আমার আগমনের কথা। আমার জ্যাঠতুতু কিশোরী বোন আমায় দেখে বিস্ময়ে বিহ্বল। উল্লসিত কন্ঠে জানিয়ে দেয় দেউরির বাইরে অপেক্ষমান সবাইকে- ' পুতুলের মতো ভাই'। সরলার মা- পাকা ধাত্রী- সুঠামদেহী বৃদ্ধা; চাঁপা অথচ তীক্ষ্ম স্বরে জানিয়ে দেয়- 'আসমানের চান এলো মাষ্টরের ঘরে'।

বাবা যখন শুনলো, ছেলে এসেছে তার ঔরসে। ক্ষোভে-দুঃখে-অভিমানে ঘর ছেড়ে যায় মুয়াজ্জিনের আহ্বানে সাড়া দিতে। সে-ই যে চলে গেলেন, সারাদিন এলো না আর ঘরে। আমি কান পেতে শুনি, মায়ের বিষাদিত কান্নার সুর। প্রচন্ড রৌদ্র মাখা দুপুর ঝুর ঝুর করে ঝরে পড়ে, তাঁর নিরব কান্নার অব্যক্ততায়।

অনেক অনেক দিন পর, মাকে জিজ্ঞেস করেছিলেম- 'মা, আমার জন্ম কবে?' মা তাঁর অনাবিল আনন্দে হেসে হেসে বাবার দিকে তাকিয়ে রস মাখা সুরে বলেছিলো- 'সে-ই দিন তোর জন্ম হয়েছিলো, যে দিন তোর আগমনের কথা শুনে, তোর বাবা তিন দিন ঘরে আসেননি'।

আজ বাবাও নেই, মা-ও  নেই। প্রশ্ন জাগে কোত্থেকে এলেম, কেনো বা এলেম? কোন প্রয়োজনে এ মানব জীবন? সবায় চলে যায়, দূর অজানায়। কোথায়? কেনো বা যায়?

আমারও যাত্রা শুরু সেই অজানার পথে...
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৫৮৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/১১/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • চমৎকার হয়েছে।
  • বেশ!
  • অসাধারণ লেখা
 
Quantcast