www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমি খুব ক্লান্ত


বহুদিন ধরে এই বিছানায় শুয়ে আছি। প্রজাপতির মথের মতো। এ একাকীত্ব সয়ে গেছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ডাক্তারের নিষেধ অমান্য করে আকাশের মেঘ দেখি। মেঘের বিচিত্র আকার- কখনো পাখি, কখনো পাহাড়। তা দেখতে খুব ভালো লাগে। ডাক্তার বলেন- বসন্তের বাতাস নাকি শীতের বাতাস থেকেও মন্দ! যত্তোসব! আজগুবি কথা। বাগান পেরিয়ে সদর দরজা, তার পাশে গ্যারাজ। গ্যারাজের উপরের ঘরে ড্রাইভার থাকে।

খলখল করে হাসতে হাসতে আমার যৌবনবতী স্ত্রী ঘরে ঢুকে, ''ও ডার্লিং, তুমি কেমন আছো আজ? কাল রাতে এতো দেরি করে ফিরেছিলেম যে, তোমার সাথে দেখা করার সাহসই পেলাম না। পাছে, তোমার ঘুম ভেঙ্গে যায়?''

শান্তগলায় উত্তরে বলি, '' ঠিক কাজটি করেছ।''

আমার কথা শেষ না হতে না হতেই, সে টেপরেকোর্ডারের মতো বলতে লাগলো- ''তোমাকে না দেখে বিছানায় গিয়ে ঘুম আসছিল না। তাই, তাড়াহুড়োয় একবারে সেজে গুঁজে এসেছি। আমি কিছুক্ষণ সময়ের জন্য বাইরে যাবো। এখন তোমাকে একটা চুমুও দিতে পারছিনা, কি আফসোস!''

কৃত্রিম হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বললাম- '' না, না, ঠিক আছে। যাও, যাও। একটু পরেই নার্স মেয়েটি এসে যাবে। আমার অসুবিধা হবে না।''

- ''আচ্ছা জানু,'' এই বলে দরজা থেকেই আমার স্ত্রী চলে গেলো।

আমার স্ত্রীকে একটু পরিচয় করিয়ে দেই? বড় ভালো মানুষ সে। আমাকে খুব ভালবাসে প্রেম করে আমাদের বিয়ে হয়েছিলো। ঘটনাটি একটু খোলাসা করে বলি- আমার মেয়ে আর ও একসঙ্গে কলেজে পড়তো। ছোট্ট মেয়েটি রেখে স্ত্রী যখন মারা গেলেন, আর বিয়ের কথা ভাবিনি। বর্তমান স্ত্রী আমার জীবনের সবকিছু ওলট-পালট করে দিলো। সে আমাদের বাড়ি এলে, তাকে মেয়ের মতো দেখতাম। মেয়ের মতোই আদর করতাম।

আমার মেয়ের বন্ধু যে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে; সেটা বুঝতে আমার একটু সময় লেগেছিল বটে। যখন থেকে সে একা একা লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়ের অবর্তমানে আসা-যাওয়া শুরু করলো; ঘটনার ধরন বুঝে ফেলার পর তার প্রেমে হাবুডুবু খেতে লাগলাম। কয়েক দিনের মধ্যে এমন হলো যে, তাকে না দেখলে কষ্ট হতো।

নার্স মেয়েটি যখন আসে আমি আগের থেকেই টের পাই। ওর পায়ের শব্দ, আর গলার আওয়াজ দূর থেকে শোনা যায়। মেয়েটি খুবই প্রাণবন্ত। তবে, বড্ডো বদমেজাজি আর চঞ্চল। কিন্ত, ওর মনটা খুবই সুন্দর, ওর নাম নাতাশা। আমি আদর করে 'নেশা' বলে ডাকি। এই ডাক শুনে সে হেসেই খুন! বলে, ''ও বুড়ো! আমাকে দেখলে তোমার বুঝি নেশা হয় বুঝি?'' বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে আমি তেতো হয়ে গেছি। ওর তারুণ্যের উন্মাদনা আমার বড় ভাল লাগে। বৈশাখী ঝড়ের মতো হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকেই বলে- ''কেমন আছো, চাচাজান?" তারপর, কাজে মনোযোগ দেয়।

নেশার আজ মেজাজ খারাপ, সাবধানে কথা বলতে হবে। চেয়ারটা বিছানার পাশে এনে ধপাস করে বসে পড়ল। অন্যদিন, রুটিন কাজটুকু সেরে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে এইভাবে পাশে বসে আমার হাত টিপে দিতো। আর মিষ্টি মিষ্টি গল্প বলতো। তার ধারনা, আমার স্ত্রী খুবই খারাপ মহিলা, যদিও সুন্দরী! অর্থ-লোভের কারণেই সে আমাকে বিয়ে করেছে। নইলে, এমন একটা বুড়ো এক পাও করবে রাখা মানুষকে কেউ বিয়ে করে?

নেশা চুপচাপ বসে আছে, তাকে ঘাটাতে সাহস পাচ্ছিনা। বললাম- ''নেশা, আজ কি মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে?'' সে ক্ষেপল না। বরং, যেন গভীর চিন্তামগ্ন। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো- ''মা'র সঙ্গে তো রোজই ঝগড়া হয়, এই কথা বলছো কেনো?'' বললাম, ''তোমার মন খারাপ, তাই জিজ্ঞেস করলাম।'' নাতাশা বলতে লাগলো- ''না সেই জন্য না। আমার মনটা খারাপ, গতকাল সন্ধ্যা থেকেই, আমার প্রেমিকের সাথে গতকাল মেলায় গিয়েছিলাম। একটা মেয়ে ওমন করে হ্যাংলার মতো তার দিকে তাকাচ্ছিল; আমার সহ্য হলো না। মেয়েটির নাক বরাবর ঘুসি মেরে দিলাম। আমায় ধরে না ফেললে ওকে মেরেই ফেলতাম। আজকালকার মেয়েগুলো ফালতু। খুবই বেহায়া। লজ্জা-শরমের বালাই বলে কিচ্ছুটি নেই। সেই থেকে আমি খাট্টা হয়ে আছি।''

তার প্রেমিকের কথা বলি? ও আমার বাড়ির ড্রাইভার। ছেলেটা দেখতে খুব সুন্দর। মেয়েদেরকে সহজেই আকর্ষণ করতে পারে। নাতাশা ওর প্রেমে পরেছে বেশ কিছুদিন হলো।

এরই মধ্যে আবার আমার স্ত্রী-র আবির্ভাব হলো- ''লক্ষ্মীটি শোন, আমাকে যে আরও কিছু টাকা দিতে হয় যে!'' নিরাসক্ত গলায় বললাম- ''কত টাকা?'' চঞ্চলচোখে হাসি মেখে সে বললো- ''বেশি না, হাজার পঞ্চাশ। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের মেয়ের জন্মদিন। তার উপর তোমার বউকে সবাই খুব বড়লোকের বউ মনে করে! তোমাকে বিয়ে করে আমার হয়েছে যতোসব জ্বালা! কোথাও হাত খুলে খরচ না করলে সবাই ভাবে, আমি বুঝি কিপটে!'' একটু থেমে নিঃশ্বাস নিয়ে, আবার বলতে লাগলো- ''তোমাকে কতদিন বললাম-  তোমার একাউন্টে আমার সিগন্যাচারটি এন্ডোর্স করিয়ে দাও। তা'হলেতো তোমাকে আর এইরকম জ্বালাতন করতে হতো না।''

এরকম সহানুভূতিশীল আমার স্ত্রী! চেকের পাতায় সই করতে আমার কষ্ট হয়; সে তা' অনুভব করে! চেক নিয়ে আমার স্ত্রী হেঁটে চলে গেলো সদর দরজার দিকে।

অনেক দিন হলো পিস্তলখানি পরিষ্কার করা হয় না। বালিশের নিচ থেকে পিস্তলটা বের করে নেশাকে কাছে ডাকলাম। ''নেশা, এই পিস্তলটা নিয়ে এখুনি ড্রাইভারের কাছে যাও।ওকে বলো, যেন ভালোভাবে পরিষ্কার করে দেয়। খুব সাবধান! রিভলবারে গুলি ভরা আছে। এই ট্রিগারে আঙুলের চাপ পড়লে, গুলি বেড়িয়ে যাবে!''

প্রেমিককে দেখার সুযোগ পেয়ে তার চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। হেসে বলল, ''আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।'' মেয়েটি প্রজাপতির মতো পাখনা মেলে উড়ে উড়ে চলে গেলো। জানালা দিয়ে আবার আকাশটা দেখছি। এছাড়া আমার আর কিইবা করার আছে? নেশা লাফিয়ে লাফিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠছে। কিন্তু, এ কি! বসন্তের বাতাসে ড্রাইভারের ঘরের পর্দাটা দুলে দুলে সরে গেলো। মনে হলো, তার কোন মেহমান এসেছে। আকাশের মতো নীল শাড়ি পরিহিতা কেউ। ভাবনায় ছেদ পড়লো গুলির প্রচন্ড শব্দে!

হায়! হায়!! হায়!!! এখন মনে পড়ছে। ওরকম নীল রংয়ের শাড়ি পড়েইতো আমার স্ত্রী চেকে সই করিয়ে নিলো! কি আশ্চর্য! পাঁচ পাঁচটা গুলির আওয়াজ শুনলাম পর পর।মেয়েটা পুরো ম্যাগাজিন এক লহমায় খালি করে দিল?

যাক, এই সব ভেবে আমার কি লাভ! আমি তো শুয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করতে পারি না। এখন একটু চোখ বন্ধ করে থাকি। আমি যে খুব ক্লান্ত!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২৭৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৫/০৮/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • জানবক্স খান ২৮/০৬/২০২০
    বেশ আধুনিক গল্প। আর কিছু লিখুন প্লিজ।
  • এম এম হোসেন ১০/০৬/২০১৮
    চমৎকার লাগলো।
  • সমির প্রামাণিক ০৭/০৮/২০১৭
    গল্প বলার ধরণ খুব সুন্দর। শেষে একটা চমক আছে। শুভেচ্ছা রইলো।
  • আব্দুল হক ০৫/০৮/২০১৭
    smile
 
Quantcast