www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কি ও কী এবং তৈরি ও তৈরী

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। ভাষাটি যে অনেক সুমিষ্ট ভাষা তাতে কোন সন্দেহ নেই। ভাষাটিতে অনেকগুলো বর্ণ, তার সঙ্গে আরও অনেকগুলি সহযোগী চিহ্ন ব্যবহৃত হওয়ায় প্রায় সকল ধরণের উচ্চারণই এ ভাষাতে করা যায়, যা পৃথিবীর অনেক ভাষাতেই সম্ভব হয় না।

বর্ণ ও সহযোগী চিহ্নের আধিক্যের কারণে অনেক সময়ে আবার প্যাঁচও লাগে। এছাড়া আছে সংযুক্ত অক্ষর, শব্দের উৎপত্তিগত বিষয় ইত্যাদি। এগুলোও প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়।

যেমন, ‘কি’ ও ‘কী’ এর সঠিক ব্যবহার একটা প্যাঁচ। প্রমিত বানানরীতি অনুযায়ী-

১. সর্বনাম, বিশেষণ ও ক্রিয়া-বিশেষণ পদরূপে 'কী' লিখতে হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ‘ক’ এর সাথে ই-কার না বসে ঈ-কার বসবে। যেমন:

কী করছ? কী পড়ো?

কী খেলে? কী আর বলব?

কী জানি? কী যে করি!

তোমার কী? এটা কী বই?

কী করে যাব? কী বুদ্ধি নিয়ে এসেছিলে।

কী আনন্দ! কী দুরাশা!

২. অব্যয় পদরূপে ‘কি’ লিখতে হবে। অর্থাৎ অব্যয় পদের ক্ষেত্রে ‘ক’ এর সাথে ঈ-কার না বসে ই-কার বসবে। যেমন:

তুমিও কি যাবে?

সে কি এসেছিল?

কি বাংলা কি ইংরেজি উভয় ভাষায়ই তিনি পারদর্শী।



৩. বিভিন্ন পদরূপে ‘কী’ ব্যবহৃত হয়;

কী আনন্দ! – বিশেষণ

কী সুন্দর! কী অপরূপ! - বিশেষণের বিশেষণ

তুমি কী খাবে? – সর্বনাম

কীভাবে? - ক্রিয়া-বিশেষণ।

(কীভাবে বানানটি নিয়ে মতদ্বৈততা আছে, কেউ বলেন এটা হবে ‘কিভাবে’)



৪. অব্যয় পদরূপে ‘কি’ ব্যবহৃত হয়;  

সংশয়সূচক প্রশ্নবোধক শব্দের ক্ষেত্রে ‘কি’ ব্যবহৃত হয়। যেমন:

তুমি কি যাবে?

কি শীত কি গ্রীষ্ম!



৫. অন্য বর্ণের সাথে একসঙ্গে ‘কি’ এর ব্যবহার হয়। যেমন:  

কিনা- নিভৃত টাকা দেবে কি না জানি না।

নাকি- মরহুম কবি শফিকুল ইসলাম পাগল নাকি?

কিরে- কিরে বাঙ্গাল, ভাত খাবা না?

কিসে- হাহা কিসে কী হল। (‘কি’ ও ‘কী’ একসঙ্গে লেখা।)

৬. ‘কি’ ও ‘কী’ এর ব্যবহার সহজভাবে মনে রাখার জন্য কতোগুলো কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে।

৬.১. একটি কৌশল হল; যেসব প্রশ্নের জবাব 'হ্যাঁ' বা 'না' দ্বারা দেয়া যায়, অথবা মাথা নেড়ে বা সার্বজনীন ইশারায় দেওয়া যায় সেক্ষেত্রে 'কি' ব্যবহৃত হবে। যেমন:

চুপকথা কি আমাকে চেনে?

তোমার নাম কি যুক্তিযুক্ত?

অনিমেষ কি গিয়েছিলে?

মনে রাখা দরকার যে, এভাবে ব্যবহৃত এই 'কি' শব্দটি হচ্ছে অব্যয় পদ।



৬.২. আরেটি কৌশল হল; যেসব প্রশ্নের জবাব 'হ্যাঁ' বা 'না' দ্বারা দেয়া যায় না, অথবা মাথা নেড়ে বা সার্বজনীন ইশারায় দেওয়া যায়না সেক্ষেত্রে 'কী' ব্যবহৃত হবে। যেমন:

তোমার নাম কী?

শামুক কী বলতে চাও, বল?

সত্যজিৎ কী বিষয়ে অনার্স করছ?

কী থেকে তেল হয়?

কী জন্য রেগে গেলে?

মনে রাখা দরকার যে, এভাবে ব্যবহৃত এই 'কী' শব্দটি হচ্ছে সর্বনাম পদ।



‘তৈরি’ এবং ‘তৈরী’

‘তৈরি’ এবং ‘তৈরী’ দুটো বানানই সঠিক। কিন্তু এর মধ্যে মার-প্যাঁচ আছে। ‘বেশি’ এবং ‘বেশী’ দুটো বানান যেমন সব যায়গায়, সবসময়েই ঠিক। ‘তৈরি’ এবং ‘তৈরী’ দুটো বানান কিন্তু সব যায়গায়, সবসময়েই ঠিক না। প্যাঁচটা এখানে।

যদি অতীত ও ভবিষ্যৎকে নির্দেশ করে তবে ‘তৈরী’ অর্থাৎ দীর্ঘিকার ব্যবহৃত হবে আর যদি বর্তমান বা সতত কোন কিছুকে নির্দেশ করে তবে ‘তৈরি’ অর্থাৎ রস্বিকার ব্যবহৃত হবে। যেমন:

লজিক্যাল বাঙ্গালী জেনুইন মসলা দিয়ে ‘তৈরি’ (সতত অর্থে)।

চুপকথার ‘তৈরী’ আয়না (ইতোমধ্যে ক্রিয়াটি সম্পাদিত, অর্থাৎ অতীত)।

চুপকথা কী যে আয়না ‘তৈরী’ করবে কে জানে? (ভবিষ্যৎ)।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এতো প্যাঁচ মনে না থাকলে শুধু  ‘তৈরি’  মনে রাখলেই হবে। বর্তমান বাংলা একাডেমীর অভিধানে ‘তৈরি’ লিখেছে।

(লেখাটি মুক্তচিন্তাব্লগে প্রকশিত।)
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৯০০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/০৮/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast