www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বাঙ্গালী হওয়ার গর্ব

- জয়
ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত যে আমরা বাঙ্গালী হওয়ার গর্ব করি যে কারনে সেটা অবাঙ্গালীদের করা বাঙ্গালী জাতির প্রতি গর্বের থেকে অনেক আলাদা।

বিষয়টা বলা যাক ।নতুন প্রজন্মের একটা ধারনা আছে যে বাঙ্গালী মানেই সঙ্গীত, নাচ, কলা, নাটক । এর বাইরে বাকি ইতিহাস তাদের জানা তো আছে, কিন্তু সেটা প্রখর রোদের আকাশে একটুকরো মেঘের মত । বাঙলার সঙ্গীত মানে রবিন্দ্রনাথ, মান্না দে প্রমুখ, বাঙলার নাচ হল মমতাশঙ্কর, মিঠুন, কলাতে আছে যোগেন চৌধুরী ও গণেশ পাইন, আর নাটক বললে সত্যজিৎ থেকে ইত্যাদি ইত্যাদি ।এটা আমি শুধু প্রবাসী বাঙ্গালীদের কথা বলছি না, বাঙলায় বসবাসরত আমার প্রজন্মের সিংহভাগের অভিব্যাক্তি। তাছাড়া এর বাইরে বাকি যে ইতিহাস আছে সেটা পাঠ্য পুস্তকের জন্যই সীমাবদ্ধ, এর বাইরে আমাদের লাগেও না। তাই সেই পুরানো কাশন্দি ঘেঁটে কি হবে ?

সময়ের সাথে সাথে দক্ষিণ ভারত, পশ্চিম ভারত, আর মধ্য ভারতের কিছু তর্কালঙ্কার অবাঙ্গালী ব্যাক্তিদের সাথে আমার আলাপ হয়েছিলো । আমি ভাবলাম বাঙ্গালী যখন রাজনীতি সংক্রান্ত কথা বলাই ভালো , তাই শুধু কংগ্রেস ও মমতা নিয়েই কথা শুরু করলাম। আমি কি তখন জানতাম যে আমিও কি কি জানতাম না। জাতীয় কংগ্রেস সুরেন্দ্রনাথ ভারতে প্রথম প্রতিষ্ঠা করে, এক বাঙ্গালী, সেই কংগ্রেস স্বাধিনতা উত্তর বেশিরভাগ সময়টাই দেশ পরিচলনা করে গেছে । কিন্তু সেই গর্বের সামান্য রেখাপাতও আমরা ধরে রাখতে পারিনি। শুধু সুভাস চন্দ্র বোস একটু রেখেছিলেন, কিন্তু তার সাথে পরে কংগ্রেসের কি ব্যাবহার সেটা কারও অজানা নয়। শুধু প্রনব মুখোপাধ্যায় প্রথম বাঙ্গালী রাষ্ট্রপতি ।কিন্তু এই গর্বে রাজনীতির গন্ধ থাকার জন্য কতজন নাক ঢাকে বা নাক উচু করে আমার অনিচয়তা আছে।

সারা দেশ যখন মধ্যযুগের পর সুলতান বা বাদশাদের রাজত্বকালে নকল ব্রাম্ভন্যবাদ ও ভাঁড়ামির নিয়মে আবদ্ধ ছিল সেইসময় নারীর শিক্ষা সংস্কার ও অধিকারের সংস্কার প্রথমে যারা করেন তারা হল, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র। তারপর সেটা সারা ভারতে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৩০০ বছর আগে প্রথম বাঙ্গালিরাই মুল্যবান কিছু সন্সকারের প্রতিফলন করেছিলেন যেটা গর্বের তো বটেই কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন বর্তমান বাঙ্গালিরা কি এই গর্ব অনুভব করেন ? বাঙলার বাঙ্গালীদের ৩৫ বছরের গর্ব আর ৫ বছরের গর্বের তুলনাতেই দিন কেটে যায় । এই অবাঙ্গালিদের মুখে সেই গর্বের কথা শুনে স্মৃতি কেচোগন্ডুষ করতে হল, দুঃখ এটাই ।

যদি কেউ প্রশ্ন করে আপনার চোখে সেরা নায়ক কে ? বাঙ্গালিয়ানা রাখতে কেউ কেউ হয়ত উত্তমকুমারের কথা ভাববেন কিন্তু কেউ চট করে বলবেন না সর্বকালের সেরা নায়ক বোধহয় স্বামী বিবেকানন্দ ।নায়ক যাকে অনুকরন করা যায়। নায়ক যার আদর্শে সারা জীবন উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকা যায়। দক্ষিণ ভারতে থাকাকালীন দেখেছি স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ অনুকরনের মাত্রা এতটাই বেশি যে পর্দার যেকোনো নায়কের আদর্শ মেকআপহীন রুপ ।

রবিন্দ্রনাথের গর্ব আমরা সবাই করি কিন্তু ভাষার তারতম্যের জন্য বাঙ্গালী ছাড়া সবাই তার গান,গল্প, কবিতা পড়ে উঠতে পারে না।কিন্তু কি এমন আছে বাঙ্গালীর সাহিত্যে যে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় এনথাম দুই বাঙ্গালিরাই রচনা করেছন? এ প্রশ্ন শুনতে হয়েছিল যখন বন্দেমাতরম আর জন গন মন দুই আলাদা ব্যাক্তির লেখা জেনেছিল এক মারাঠি ব্যাক্তি। কি এমন জাদু আছে দেবদাস গল্পকারের মধ্যে যে তাকে নিয়ে ৩৭টি ভাষাতে চলচিত্র হয়েছে ? সর্বোপরি কি এমন মুগ্ধতা আছে লালন ফকিরের মধ্যে যে পাকিস্থান আর আরবের পল্লীগীতিতে তার নাম উল্লেখ আছে? সাধারন বাঙ্গালীর কয়জন এই নিয়ে গর্ব রাখে বলতে পারেন ?

তাছাড়া বাঙ্গালী হয়ে সুভাস চন্দ্রের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য । ক্ষুদিরাম বসু, আরও কত শহীদ যারা বাঙ্গালীর গর্ব। কিন্তু প্রথম ভারতীয় যিনি ইন্দিয়ান সিভিল সার্ভিস উত্তীর্ণ হন ১৮৬৮ সালে, এক বাঙ্গালী সতেন্দ্রনাথ ঠাকুর । আমি নিজেও কোনদিন এই নিয়ে কাউকে বলিনি বা বলতে শুনিনি এটা আমাদের গর্ব যখন প্রথম এক রাজস্থানি ছাত্রবন্ধু আমাকে গর্ব করে এটা মনে করাল ।

আমি অনুভব করি আমাদের বাঙ্গালী হয়ে যে গর্ববোধ হয় সেটা অনেকগুন বেশি হয় যখন অন্যরা বাঙ্গালীদের নিয়ে গর্ব করে বলে। বর্তমান বাঙলায় দিদি, দাদার গর্ব যেখানে শেষ কথা সেখানে বাঙ্গালী জাতিটাকে যারা টিকিয়ে রেখেছে বৃহৎ কর্মকাণ্ড দিয়ে স্বার্থহীন ভাবে সেই অস্তিত্ব যাতে এই প্রজন্ম ভুলে না যায় তার উদ্দেশে এই নিবেদন। জাতির গর্ব করা ভালো তবে যেন সেটা জাতের উরধে গিয়ে, অলসতা ও কূটনীতিকে ছাপিয়ে, মিথ্যা গর্বের অহঙ্কারকে ভুলে প্রকৃত গর্বকে গর্ব করে বলাটাই বোধহয় আসল গর্ব ।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১১০৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/১২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অভিযান পাল ০৮/০২/২০১৬
    আপনার অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা মিলছে না । লেখাটি খানিকটা অগোছালো বলে আমার মনে হল । কিছু মনে করবেন না । তবে একটা কথা ঠিক আমাদের গর্ববোধের মৌলিক কারণগুলি, অশিক্ষা, অপশিক্ষা, পরানুকরণশীলতা সর্বোপরি আত্মমর্যাদা বোধের অভাবে অবহেলিত । একটা ইংরাজী বানান ভুল হলে লজ্জায় আমাদের মাথা কাটা যায়, কিন্তু সারা পৃথিবীর সমস্ত মানুষ দেখছে এমন একটা সাইটে লেখার সময় আমরা বাংলার তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ট ব্যক্তিত্ব
    রবীন্দ্রনাথের নামটাও বাংলায় সঠিকভাবে না লিখে "রবিন্দ্রনাথ" লিখি । তবে তথ্যের অপ্রতুলতা, অপ্রাসঙ্গিকতা ও বিভ্রান্তি সত্ত্বেও বিষয়টা নিয়ে ভেবেছেন এই জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য ।
  • লেখাটি ভালো ও দেশপ্রেমজারিত। এজন্য প্রশংসনীয়। কিন্তু একটু ভাল করে দেখুন। যে দেশিকতার বইরে বেরিয়ে আন্তর্জাতিকতার কথা বললেন, আপনি সেই ঘেরাটোপ থেকে বের হতে পারলেন না, এটাই দুঃখ। না কিছু মনে করিনি। আপনার এই লেখাটি আমি ঢাকায় বসে পড়ছি এবং মন্তব্য করছি। আপনার লেখায় কোথাও কি আমার নাম-নিশানা-গন্ধ আছে? আমি নিজেকে বাঙ্গালী বলে মনে করি। বাংলাদেশের জাতীয় সংবিধানে জাতীয়তা বাঙালী হিসেবে স্বীকৃত। আপনার লেখায় এই ১৬ কোটি মানুষের কথা কি আছে?
    • জয় ১৩/১২/২০১৫
      প্রথমে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে আমার পরিধিটা বোঝানোর জন্য । বক্ত্যব্যটা ঠিক যে বাংলাদেশের কথা মনে থাকলেও এইখানে ১৬ কোটি মানুষের ছায়াটা একটু উহ্য । কিন্তু কি জানেন আমার পরিবার বাঙ্গালাদেশের প্রাক্তনি হলেও বাঙ্গালাদেশের সাধারন খবর ছিটে ফোটাও রাখতে পারি না , হয়ত এই নিয়ে আমাদের আলোচনা বা উৎসাহটা কম বলে যদিও আন্তর্জাতিক খবর নজরে থাকে। তাই হয়ত জানার পরিসীমার বাইরে এসে লেখার সাহসটা পাইনি । তবে একেবারেই যে ভাবিনি তা নয় , আমি কখনই পশ্চিমবাংলার কথা বলিনি । শুধু বাঙ্গালীদের কথা ভেবেছি , তবে প্রবাসী বাঙ্গালী বলতে গিয়ে শুধু ভারতের মধ্যেই আটকে গেছি , এর পরিস্ফুটনটা ব্যাপ্তি লাভ করেনি, তাই আপনাকে হতাশ হতে হল , পরের কোন এই ধরনের চিন্তা প্রকাশে এটা মাথায় রাখব ।
  • দীপঙ্কর বেরা ১১/১২/২০১৫
    বেশ
  • নির্ঝর ০৯/১২/২০১৫
    জটিল!
  • আপনার লেখাটির ব্যপ্তির তুলনায় তথ্য অপ্রতুল। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা Allan Octavian Hume . উমেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বাঙালী কংগ্রেস সভাপতি। উনি ছাড়াও সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী , আনন্দ মোহন বোস , বিপিন চন্দ্র পাল , রাসবিহারী বোস আরও কত কৃতি পুরুষ রয়েছেন। বাংলার সঙ্গীত মানে শুধু রবীব্দ্রনাথ আর মান্নাদে হবেন কেন ? হেমন্ত মুখোপাধ্যায় , শচীন দেব বর্মন , অনিল বিশ্বাস ,সলিল চৌধুরী , কানন দেবী, পঙ্কজ মল্লিক, কিশোর কুমার (কত নাম বাকি রয়ে গেল ) - সবাই বাংলা থেকেই ভারত বিখ্যাত হয়েছেন। চলচিত্র জগতের নিউ থিয়েটার্স কলকাতায় ছিল। উদয় শংকর, রবিশংকর এদের ভুলে গেলেন ?
    ভারতের ইতিহাসে বাঙালীর অবদান নিয়ে গবেচনা মূলক বই আছে। তাই লিখতে গেলে তথ্য সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে হবে।
    • জয় ০৯/১২/২০১৫
      কি জ্বালা । ভালো করে পড়ে যদি এই মন্তব্য হয় , আমি উদাহরন হিসাবে দিয়েছি কয়েকটা নাম মাত্র আর আশাকরি প্রমুখ কথাটির এর ব্যবহার বোঝার জন্য যথেষ্ট । হিউমের কথা আমরা জানি , কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা হল যে যখন এক অবাঙ্গালী আমাকে মনে করাল যে কংগ্রেসের গঠনের পেছনে বাঙ্গালী কতটা দায়ী সেটা শুধু তথ্যের মধেই আটকে , আমাদের সাধারন জ্যানের মধ্যে আমরাই ভুলে গেছি । আমি নিজে প্রশ্ন করেছিলাম আমার বন্ধুদের ( বাঙ্গালী, প্রবাসে কর্মরত ) , মতামত এসেছিল " হয়ত গান্ধিজি বা মতিলাল নেহেরু করেছিলেন ।" এটা আমার সমৃদ্ধশালী তথ্যভাণ্ডার দেখানোর জন্য লেখা নয় , মৌলিক ভাবনাকে কেচোগন্ডুস করার জন্য । ধ্যন্যবাদ ।
      • চাকরীর সুত্রে আঠাশ বছর বাংলার বাইরে ছিলাম।কিছু অভিজ্ঞতা তো আছে। বিরক্ত না হয়ে নিজের ব্লগটা পড়ে দেখুন। বানান ভুল এবং তথ্যের ভুল সংশোধন করুন। সত্যজিত রায় যে নাট্য ব্যক্তিত্ব নন , সেটা তো বাংলার বাইরের লোকেরাও জানে। দেবদাস ৩৭ টি ভাষায় চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে এমন তথ্য কোথায় পেলেন ?
        জ্ঞান , ধন্যবাদ , কেঁচে গন্ডুষ -> শুদ্ধ করে লিখুন , সেটা খুব প্রয়োজন।
        • জয় ০৯/১২/২০১৫
          আমি যে সফটওয়্যার ব্যবহার করি সেটা এই বানানই আসে , হাতে লিখে এখানে পাঠাতে আসি নি , তাই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিনা । আমি আবার এক কথা বলব , মাধ্যমিকের খাতার মত তথ্য এখানে পরিবেশক নয় , ইত্যাদি ইত্যাদি কথার মাধ্যমে সংক্ষেপে বলার চেষ্টা কিন্তু বিষয়টা এই তথ্যের ভিত্তি নয় । যেটা আমি শুনেছি সেটা বলা হয়েছি , যা শুনে আমার চিন্তা এসেছে যে আমাদের নিজস্ব গর্ব বোধহয় তখন আরও বেশি যখন আমরা এসব ভুলে যাওয়া কথা অবাঙ্গালীদের মুখে শুনি । তথ্য ঘেঁটে ইতিহাস জানানোর জন্য তো গুগল আর বই আছে । প্রয়োজন অতিরিক্ত মন্তব্য চাইছি না । অন্যের প্রয়জনের সাথে নিজেকে মেলাতেও চাইছিনা । ব্যাপারটা বুঝুন আর ভালো থাকবেন ।
 
Quantcast