স্বর্গের কবি দর্শন
আমার হটাৎ মনে হল আমি কোন চিড়িয়াখানায় । কিন্তু চিড়িয়াখানায় শুধু মানুষ থাকবে কেন? এখানের এক দাররক্ষীর কাছ থেকে জানলাম এটা স্বর্গের জাদুঘর । আমাদের পৃথিবীতে একটা জাদুঘর আছে যেখানে নামকরা বিখ্যাত সব মানুষদের অবিকল মোমের মূর্তি করে রাখা আছে । এখানের জাদুঘর আনেকটা তেমনই । তবে পার্থক্য শুধু এইটুকু যে, পৃথিবীর জাদুঘরে মোমের মূর্তি আর এখানের জাদুঘরে মানুষের মূর্তির বদলে মানুষের আত্মা সংরক্ষণ করা হয় ।
এখানে প্রথমে দেখা পেলাম বাঙালিদের । জাদুঘর তবে এমন কেন ? অর্থাৎ এখানে যারা রয়েছে তাদের দেখে মনে হল এরা কোন জেলখানায় বন্দী হয়ে আছে । একজনকে দেখলাম কয়লা দিয়ে দেয়ালে কি একটা লিখছে । ভালো করে দেখে মনে হল এই লোকটা আর কেউ নয় আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম । কিন্তু উনি কি লিখছে ? দেখে যা মনে হল তা আনেকটা এমন ,
“লিখব নাকো কবিতা
গাইবো নাকো গান ,
করব নাকো বিদ্রোহ
বেরিয়ে যাচ্ছে প্রান।..........”
ঠিক তখনি একটি মুখভর্তি সাদা দাড়িওলা বৃদ্ধের কণ্ঠ ভেসে আসল ।
“আহা কি বলছ নজরুল ,
তোমার মত বিদ্রহি যদি এ কথা বলে
তবে কি চলে ?
মম দিকে চাও ।
লিখে চল একাতরে
দেয়াল-ফ্লোর , জামা-কাপড়ে ,
সময়কে করোনা হেলা ফেলা
সময়ের মূল্য দিয়ে যাও।”
অপর দিক হতে তখন কোঁকড়ানো চুলওলা একজন বলে উঠলো ,
“হে কবি গুরু , বল তুমি মোরে এ কথা ,
আর কি যাব দেশে , মনে লাগে যে ব্যাথা ।
কত সুখে ছিনু আমি , মাতৃভূমি কোলে ,
নাইতে ভালো লাগত , কপোতাক্ষ জলে ।
...................................................
...................................................
হে কবি গুরু , বল তুমি মোরে এ কথা ,
আর কি যাব দেশে , মনে লাগে যে ব্যাথা ।”
বাম পাশ হতে ২১ বছরের এক যুবক বলে উঠলো,
“মোর দেশের নিশিতে ,
লাগতো ভালো কাশিতে ।
অকালে আনলে কেন মোরে,
স্বর্গের কারাগারে ।
আমি যদি দেশে থাকিতাম,
কতকিছুই না লিখিতাম ।
তখন সবাই জানতো ,
কবি ছিল সুকান্ত ।”
তার অন্য পাশে বসে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় , জীবনানন্দ এবং আরও কয়একজন কবি মিলে গুনগুন করে গান গাইছে ,
“ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদেরই বসুন্ধরা ;
তাহার মাঝে আছে দেশ এক-সকল দেশের সেরা ;
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা ;
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি ,
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্ম ভুমি ।”
তারপর দেখলাম আমাদের পল্লিকবি জসীমউদ্দিন কাদের যেন নিমন্ত্ররন করে বলছে ,
“তুমি যাবে ভাই , যাবে মোর ছোট গায়.........................................................
..।”
পল্লিকবি জসীমউদ্দিন যাদের নিমন্ত্ররন করছিলেন এরা ছিল বিদেশী কবি । তখন বুঝলাম এরপর থেকে বিদেশী কবিরা । এরপর তাদের মধ্য দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে লক্ষ্য করলাম এদের বাঙালি কবিদের মত কোন প্রতিক্রিয়া নেই ( এই যেমন , বাঙালি কবিদের দেশে ফেরার যে আপ্রাণ চেষ্টা বা দেশকে নিয়ে যে চিন্তা চেতনা ) । এখানে এরা অনেকটা ভালই আছে । একটু পরে লক্ষ্য করলাম সেক্সপিয়ার এর মত কেউ একজন বসে আছে। কাছে গিয়ে দেখলাম সেক্সপিয়ারই কি যেন লিখছে নাটক-নবেল হবে হয়ত । তো আমি তার কাছে অনেকটা কৌতূহল বশতই ( ইংরেজিতে ) জানতে চাইলাম জনাব আপনার কি দেশে যেতে ইচ্ছা করেনা ? তখন তিনি ( ইংরেজিতে ) বললেন ( তার বঙ্গানুবাদ অনেকটা এরকম ) তার যতটুকু করার সে তার দেশে করে এসেছে এবং সে নতুনের জন্য জায়গা করে দিয়ে এসেছে । তিনি এখানেই থাকতে চান কারন তার স্থান এখন এখানেই হওয়া উচিৎ । বাঙালি কবিদের মতবাদ অন্যরকম, তাদের মতে বাংলা মায়ের কোল এতো ছোট নয় যে তার পুরানো সন্তানের জন্য একটু জায়গা হবে না । তাছাড়া মায়ের কাছে তার সন্তান কখনো পুরানো বা বৃদ্ধ হয় না ।
এরপর কতৃপক্ষএর কাছে জানলাম এখানে অনেক গ্রহ-উপগ্রহ এবং বিভিন্ন স্থানের দেব-দেবীরা এই জাদুঘরে এনাদের দেখতে আসে , কারন এনারা পৃথিবী জয় করে এসেছে এনাদের নিজস্ব মেধা এবং ভাষা দ্বারা । তিনি আরও বলেন , অন্যান্য দেশের কবিদের তুলনায় বাংলা দেশের কবিরা একটু বেশি চঞ্চল তাদের দেশে ফেরার জন্য।
হটাৎ মনে হল বৃষ্টি পড়ছে । একটু পরে লক্ষ্য করলাম না বৃষ্টি নয় মা আমার চোখে-মুখে জল ছিটিয়ে দিয়ে বলছে ,অনেক তো হল আর কত ঘুমোবি? এখন ওঠ ।
ঘড়িতে এখন ছয়টা পনেরো বাজে । জালানা খুলে রেখে মা চলে গেল , জালনা দিয়ে দূর দিগন্ত হতে ভোরের লাল টক-টকে সূর্য উকি মারছে । কতো সুন্দর আমাদের দেশ । এটাই প্রকৃতপক্ষে আমাদের সোনার বাংলা , তাইতো দেহ ছেড়ে আত্মা চলে গেলেও মন পড়ে রয় এই রূপসী বাঙলার রূপের মাঝে । মৃত্যু যেন এর সীমারেখা নয় । বার বার বলতে ইচ্ছা করে জীবনানন্দ দাশের মত ,
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়
হয়ত মানুষ নয় – হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে ,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে ।।
- সমাপ্ত -
[ বিদ্র:- এটা আমার লেখা প্রথম গল্প। গল্পের প্রয়োজনে কিছু কবিদের সংলাপে তাদের কবিতার অনুকরনের প্রচেষ্টা করা হয়েছে ( ব্যার্থ প্রচেষ্টা কারন তাদের মত করে লেখা কখনো সম্ভব নয়। তার পরেও সবটুকু প্রচেষ্টা গল্পের প্রয়োজনে। তাদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখে । )]
[ তারিখ:- 12.03 2012 , স্থান:- যশোর (ম্যাচ),খুলনা , বাংলাদেশ । ]
এখানে প্রথমে দেখা পেলাম বাঙালিদের । জাদুঘর তবে এমন কেন ? অর্থাৎ এখানে যারা রয়েছে তাদের দেখে মনে হল এরা কোন জেলখানায় বন্দী হয়ে আছে । একজনকে দেখলাম কয়লা দিয়ে দেয়ালে কি একটা লিখছে । ভালো করে দেখে মনে হল এই লোকটা আর কেউ নয় আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম । কিন্তু উনি কি লিখছে ? দেখে যা মনে হল তা আনেকটা এমন ,
“লিখব নাকো কবিতা
গাইবো নাকো গান ,
করব নাকো বিদ্রোহ
বেরিয়ে যাচ্ছে প্রান।..........”
ঠিক তখনি একটি মুখভর্তি সাদা দাড়িওলা বৃদ্ধের কণ্ঠ ভেসে আসল ।
“আহা কি বলছ নজরুল ,
তোমার মত বিদ্রহি যদি এ কথা বলে
তবে কি চলে ?
মম দিকে চাও ।
লিখে চল একাতরে
দেয়াল-ফ্লোর , জামা-কাপড়ে ,
সময়কে করোনা হেলা ফেলা
সময়ের মূল্য দিয়ে যাও।”
অপর দিক হতে তখন কোঁকড়ানো চুলওলা একজন বলে উঠলো ,
“হে কবি গুরু , বল তুমি মোরে এ কথা ,
আর কি যাব দেশে , মনে লাগে যে ব্যাথা ।
কত সুখে ছিনু আমি , মাতৃভূমি কোলে ,
নাইতে ভালো লাগত , কপোতাক্ষ জলে ।
...................................................
...................................................
হে কবি গুরু , বল তুমি মোরে এ কথা ,
আর কি যাব দেশে , মনে লাগে যে ব্যাথা ।”
বাম পাশ হতে ২১ বছরের এক যুবক বলে উঠলো,
“মোর দেশের নিশিতে ,
লাগতো ভালো কাশিতে ।
অকালে আনলে কেন মোরে,
স্বর্গের কারাগারে ।
আমি যদি দেশে থাকিতাম,
কতকিছুই না লিখিতাম ।
তখন সবাই জানতো ,
কবি ছিল সুকান্ত ।”
তার অন্য পাশে বসে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় , জীবনানন্দ এবং আরও কয়একজন কবি মিলে গুনগুন করে গান গাইছে ,
“ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদেরই বসুন্ধরা ;
তাহার মাঝে আছে দেশ এক-সকল দেশের সেরা ;
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা ;
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি ,
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্ম ভুমি ।”
তারপর দেখলাম আমাদের পল্লিকবি জসীমউদ্দিন কাদের যেন নিমন্ত্ররন করে বলছে ,
“তুমি যাবে ভাই , যাবে মোর ছোট গায়.........................................................
..।”
পল্লিকবি জসীমউদ্দিন যাদের নিমন্ত্ররন করছিলেন এরা ছিল বিদেশী কবি । তখন বুঝলাম এরপর থেকে বিদেশী কবিরা । এরপর তাদের মধ্য দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে লক্ষ্য করলাম এদের বাঙালি কবিদের মত কোন প্রতিক্রিয়া নেই ( এই যেমন , বাঙালি কবিদের দেশে ফেরার যে আপ্রাণ চেষ্টা বা দেশকে নিয়ে যে চিন্তা চেতনা ) । এখানে এরা অনেকটা ভালই আছে । একটু পরে লক্ষ্য করলাম সেক্সপিয়ার এর মত কেউ একজন বসে আছে। কাছে গিয়ে দেখলাম সেক্সপিয়ারই কি যেন লিখছে নাটক-নবেল হবে হয়ত । তো আমি তার কাছে অনেকটা কৌতূহল বশতই ( ইংরেজিতে ) জানতে চাইলাম জনাব আপনার কি দেশে যেতে ইচ্ছা করেনা ? তখন তিনি ( ইংরেজিতে ) বললেন ( তার বঙ্গানুবাদ অনেকটা এরকম ) তার যতটুকু করার সে তার দেশে করে এসেছে এবং সে নতুনের জন্য জায়গা করে দিয়ে এসেছে । তিনি এখানেই থাকতে চান কারন তার স্থান এখন এখানেই হওয়া উচিৎ । বাঙালি কবিদের মতবাদ অন্যরকম, তাদের মতে বাংলা মায়ের কোল এতো ছোট নয় যে তার পুরানো সন্তানের জন্য একটু জায়গা হবে না । তাছাড়া মায়ের কাছে তার সন্তান কখনো পুরানো বা বৃদ্ধ হয় না ।
এরপর কতৃপক্ষএর কাছে জানলাম এখানে অনেক গ্রহ-উপগ্রহ এবং বিভিন্ন স্থানের দেব-দেবীরা এই জাদুঘরে এনাদের দেখতে আসে , কারন এনারা পৃথিবী জয় করে এসেছে এনাদের নিজস্ব মেধা এবং ভাষা দ্বারা । তিনি আরও বলেন , অন্যান্য দেশের কবিদের তুলনায় বাংলা দেশের কবিরা একটু বেশি চঞ্চল তাদের দেশে ফেরার জন্য।
হটাৎ মনে হল বৃষ্টি পড়ছে । একটু পরে লক্ষ্য করলাম না বৃষ্টি নয় মা আমার চোখে-মুখে জল ছিটিয়ে দিয়ে বলছে ,অনেক তো হল আর কত ঘুমোবি? এখন ওঠ ।
ঘড়িতে এখন ছয়টা পনেরো বাজে । জালানা খুলে রেখে মা চলে গেল , জালনা দিয়ে দূর দিগন্ত হতে ভোরের লাল টক-টকে সূর্য উকি মারছে । কতো সুন্দর আমাদের দেশ । এটাই প্রকৃতপক্ষে আমাদের সোনার বাংলা , তাইতো দেহ ছেড়ে আত্মা চলে গেলেও মন পড়ে রয় এই রূপসী বাঙলার রূপের মাঝে । মৃত্যু যেন এর সীমারেখা নয় । বার বার বলতে ইচ্ছা করে জীবনানন্দ দাশের মত ,
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়
হয়ত মানুষ নয় – হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে ,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে ।।
- সমাপ্ত -
[ বিদ্র:- এটা আমার লেখা প্রথম গল্প। গল্পের প্রয়োজনে কিছু কবিদের সংলাপে তাদের কবিতার অনুকরনের প্রচেষ্টা করা হয়েছে ( ব্যার্থ প্রচেষ্টা কারন তাদের মত করে লেখা কখনো সম্ভব নয়। তার পরেও সবটুকু প্রচেষ্টা গল্পের প্রয়োজনে। তাদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখে । )]
[ তারিখ:- 12.03 2012 , স্থান:- যশোর (ম্যাচ),খুলনা , বাংলাদেশ । ]
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সামিন শুভ ০৮/০৮/২০১৮Valo
-
মধু মঙ্গল সিনহা ৩০/০৭/২০১৮ধন্যবাদ আপনাকে খুব ভালো লাগলো।
-
রেজাউল রেজা (নীরব কবি) ২৯/০৭/২০১৮বাহ!
-
এস এম আলমগীর হোসেন ২৯/০৭/২০১৮ভাল
-
জহির রহমান ২৯/০৭/২০১৮যেহেতু প্রথম লেখা গল্প সেহেতু ভালো করে পড়ে মন্তব্য করবো।
-
ন্যান্সি দেওয়ান ২৯/০৭/২০১৮Very Nice.