www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভালোলাগা - ভালোবাসা

শোভাবাজার থেকে রবীন্দ্রসদন । প্রতিদিন অফিস যাবার পথে মেট্রো রেলের কামরায় মেয়েটিকে দেখতে পায় অর্ঘ । মেয়েটি কোন স্টেশন থেকে ওঠে তা সে জানেনা । শোভাবাজার স্টেশনের আগে তিনটে স্টেশন দমদম, বেলগাছিয়া আর শ্যামবাজার । এই তিনটের মধ্যে যে কোন একটা থেকে নিশ্চয়ই ওঠে । পার্ক স্ট্রীটে নেমে যায় । মেয়েটির গায়ের রং একটু চাপা ।টিকালো নাক, টানাটানা দু'টো চোখ । মাথায় একরাশ ঘন কালো চুল, ঘাড় পর্যন্ত ছাঁটা । সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের রকমারি সালোয়ার কামিজ পরে । মাঝে মাঝে শাড়িও পরে । বয়স বড়জোর তেইশ-চব্বিশ । তার চেহারার মধ্যে একটা আকর্ষণীয় ভাব আছে । নিত্য সহযাত্রী বান্ধবীদের সাথে তার কথাবার্তা ও ব্যবহার বেশ কমনীয় । গত ছ'মাস ধরে অর্ঘ মেয়েটিকে দেখছে । মেট্রোর কামরায় স্বল্প সময়ে মনের অগোচরে মেয়েটিকে যে তার ভালো লেগে যাবে তা সে কোনদিন কল্পনাও করেনি । তার সাতাশ বছরের জীবনে এরকম ছন্দ-পতন আগে কখনও ঘটেনি । তাকে সামনে থেকে দেখার জন্য অনেক ঠেলাঠেলি গঞ্জনা সহ্য করে লেডিস-সিটের সামনে সে দাঁড়ায় । পাশে বসা দুই বান্ধবীর সঙ্গে কথপোকথনে সে জেনেছে মেয়েটির নাম শিখা । অর্ঘ ওর দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে শিখা কি জানে - সে তার জীবনের অগ্নিশিখা ? অর্ঘর খুব ইচ্ছে করে শিখার সাথে আলাপ করতে । চোখাচোখি করে তার ইচ্ছেটা প্রকাশ করার চেষ্টাও করেছে সে । কিন্তু এখনও সফল হয়ে উঠতে পারেনি ।

হঠাৎ শিখা অদৃশ্য । প্রায় পনেরো দিন হয়ে গেল শিখার দেখা নেই । অর্ঘ ভাবল হয়তঃ তার শরীর খারাপ আর তা না হলে কোন কারনে কামরা চেঞ্জ করেছে । সে কি করে যে তার খোঁজ পাবে বুঝে উঠতে পারে না । একদিন ছুটি নিয়ে যে খোঁজ-খবর নেবার চেষ্টা করবে সে উপায়ও নেই তার । মাত্র দু'বছরের প্রাইভেট ফার্মের সামান্য চাকরি । একদিনও ছুটি নেই । যাতায়াতের পথে মেট্রোয় চড়বার আগে প্রতিদিনই অর্ঘ ভাবে আজ নিশ্চয়ই শিখাকে সে দেখতে পাবে । কিন্তু প্রতিদিনই তাকে হতাশ হতে হয় । তার মনে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খায় সত্যিই কি তার জীবনের অগ্নিশিখাকে সে আর দেখতে পাবে না ? সে যে ভালোলাগা থেকে তাকে ভালোবেসে ফেলেছে ।

বেশ কয়েকদিন পর হঠাৎ একদিন শিখাকে দেখা গেল । সেদিন শিখা মেট্রোয় উঠল পরের স্টেশন গিরিশ পার্ক থেকে । তার দিকে তাকাতেই অর্ঘ চমকে উঠল । হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি চার গুণ বেড়ে গেল । তার মনে হল তার বুকের মধ্যে কে যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছে । শিখার সিঁথিতে লাল টকটকে চওড়া সিঁদুর । দু'হাতে শাখা-পলা, পরনে দামী শাড়ি । লেডিস সিটের কাছে আসতেই তার অপর দুই বান্ধবী তাকে দেখে তাড়াতাড়ি হাত ধরে টেনে সিটে বসাল । একজন বলল - ' ওঃ কি মিষ্টি দেখাচ্ছে তোকে শিখা ।' অন্য বান্ধবী বলল - 'কিরে, চাকরি ছাড়বি না তো ?' শিখা বলল - ' মাথা খারাপ ? তবে আরও এক সপ্তাহ ছুটি নিতে হবে । সামনের মঙ্গলবার ও অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে কোম্পানির কাজে, ইঞ্জিনিয়ারিং কনফারেন্স অ্যাটেনড করতে ।'

আর স্থির থাকা সম্ভব হল না অর্ঘর । মাথাটা অসম্ভব ধরে গেল । তার অন্তরের ভালোলাগা জ্বলে-পুড়ে শেষ হয়ে গেল । ভালোলাগা ভালোবাসায় আর রূপান্তরিত হ'ল না । চাঁদনিচক স্টেশন আসতেই মাঝপথে সে ট্রেন থেকে নেমে গেল । স্টেশনের ওয়েটিং-সিটে ধপ করে বসে পড়ল । কতক্ষন যে ওয়েটিং-সিটে দগ্ধ হৃদয় নিয়ে সে বসে আছে সে খেয়াল তার নেই । যখন খেয়াল হল তখন অনুভব করল তার চোখ দুটো জলে ভরে গেছে । তার জামার সামনের অংশ ভিজে গেছে ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৩৬০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • valo laglo besh
  • সামসুল ইসলাম ২৮/০৫/২০১৪
    khub valo laglo. Thanks Ray.
  • এস,বি, (পিটুল) ৩০/০৪/২০১৪
    ভালো লাগ্লো আপ্নার গল্প।
  • suman ২৪/০৯/২০১৩
    emotion প্রকাশ এতো সূক্ষ্ভাবে ছুঁয়ে গেলো ...সে তো লেখকেরই লেখার যাদুবলে ...
  • Înšigniã Āvî ২৪/০৯/২০১৩
    অসাধারণ......
    নিত্য সময়ের যাতায়াতে এরকম কত ভালোলাগা... ভালোবাসা তৈরি হয় যা আবার সময়ের আঘাতে থেমেও যায় ।
    • জয়শ্রী রায় ২৪/০৯/২০১৩
      মন্তব্যের মধ্যে আপনি একদম বাস্তব মর্মার্থ তুলে ধরেছেন । আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন ।
  • Shubhajit majumdar ২৪/০৯/২০১৩
    Baro hridoy bidarak but tumi valo likha6o i wish tumi happy thako ami thaki ba na thaki tomay ami khuse dakta chay r sata sotti@jaya
 
Quantcast