বেদনায় প্রিয়তমা
দক্ষিণের জানালাটা খোলা । একটু আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে । আকাশটা এখন বেশ পরিস্কার । পূর্ণিমার চাঁদের সাথে আকাশে তারাগুলো জ্বলজ্বল করছে । প্রখ্যাত গাইনোকোলজিসট ডাঃ সুমন মৈত্রর মনটা আজ ভারাক্রান্ত । তিনি চোখ রাখলেন সামনের টেবিলে রাখা তার প্রিয়তমা পত্নী ডাঃ ইন্দ্রাণীর ল্যামিনেশন করা বড় ছবিটার দিকে । চন্দন রেখায় সুসজ্জিতা, গলায় জুঁই ফুলের মালা । আজ সাতই শ্রাবণ । বারো বছর ধরে এই দিনটির ভয়াবহ স্মৃতি তাকে বেদনায় বিদ্ধ করে চলেছে ।
ইন্দ্রাণী সবে তখন এম,বি,বি,এস, পাশ করেছে । এক কর্মশিবির থেকে দু'জনে বালিগঞ্জের বাড়িতে ফিরছিলেন । অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে তাদের গাড়ি আস্তেই চলছিল । হঠাৎই পিছন থেকে এক চলন্ত ট্রাক তাদের গাড়িকে ধাক্কা মারতেই সব শেষ । সেদিনের বিস্তৃত কথা তার আর মনে নেই । নার্সিংহোমের বিছানায় জ্ঞান ফিরলে শুধু এইটুকুই জানেন যে তার প্রিয়তমা আর নেই । সেদিনের দুর্ঘটনা তাকে তার কাছ থেকে চিরদিনের জন্য ছিনিয়ে নিয়ে গেছে ।
স্বেচ্ছায় কলকাতা ছেড়ে ডাঃ মৈত্র বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম সোনাঝুরির স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিজেকে যুক্ত করেছেন । ইন্দ্রাণীর ভীষণ ইচ্ছা ছিল গ্রামের দুঃস্থ মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করা । একদিকে ইন্দ্রাণী, অন্যদিকে গ্রামের দুঃস্থ মানুষগুলো - তাকে ক্লান্ত করে দিচ্ছে । ইন্দ্রাণীর ছবিটা আবার দেখলেন ডাঃ মৈত্র । টেবিলে রাখা কৌটো থেকে দশটা ঘুমের বড়ি বের করলেন । তার একহাতে বড়িগুলো, অন্যহাতে জলের গ্লাস । অস্ফুটে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল - " আর পারছিনা ইন্দ্রাণী, আমি তোমার কাছেই যাচ্ছি ।" বড়িগুলো মুখে দিতে যাবেন এমন সময় ঘরের বাইরে থেকে কে যেন ডেকে উঠল - "ডাক্তারবাবু ... ডাক্তারবাবু ... আমার বউ-এর অবস্থা খুব খারাপ । আপনি বাঁচান ।" কিংকর্তব্যবিমুঢ় ডাঃ মৈত্র কি করবেন এখন ভেবে পাচ্ছেন না । তার হাতটা কেঁপে উঠল । হাতে ধরা বড়িগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল । ইন্দ্রাণীর ছবিটার দিকে আরেকবার তাকাতেই মনে হল ইন্দ্রাণী যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে । সে বলে উঠল - "কি পাগলামি করছো সুমন ? তুমি না ডাক্তার ? প্রাণ বাঁচানোই তোমার ধর্ম । শেষ হয়ে যাওয়া নয় ! আমাদের শপথ কি তুমি ভুলে গেলে ? তোমার মধ্যেই তো আমি বেঁচে আছি ।" সম্বিত ফিরে পেতেই ডাঃ মৈত্র উচ্চস্বরে বললেন - " হ্যাঁ, শঙ্কর একটু দাঁড়া, আমি এক্ষুনি আসছি ।"
ইন্দ্রাণী সবে তখন এম,বি,বি,এস, পাশ করেছে । এক কর্মশিবির থেকে দু'জনে বালিগঞ্জের বাড়িতে ফিরছিলেন । অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে তাদের গাড়ি আস্তেই চলছিল । হঠাৎই পিছন থেকে এক চলন্ত ট্রাক তাদের গাড়িকে ধাক্কা মারতেই সব শেষ । সেদিনের বিস্তৃত কথা তার আর মনে নেই । নার্সিংহোমের বিছানায় জ্ঞান ফিরলে শুধু এইটুকুই জানেন যে তার প্রিয়তমা আর নেই । সেদিনের দুর্ঘটনা তাকে তার কাছ থেকে চিরদিনের জন্য ছিনিয়ে নিয়ে গেছে ।
স্বেচ্ছায় কলকাতা ছেড়ে ডাঃ মৈত্র বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম সোনাঝুরির স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিজেকে যুক্ত করেছেন । ইন্দ্রাণীর ভীষণ ইচ্ছা ছিল গ্রামের দুঃস্থ মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করা । একদিকে ইন্দ্রাণী, অন্যদিকে গ্রামের দুঃস্থ মানুষগুলো - তাকে ক্লান্ত করে দিচ্ছে । ইন্দ্রাণীর ছবিটা আবার দেখলেন ডাঃ মৈত্র । টেবিলে রাখা কৌটো থেকে দশটা ঘুমের বড়ি বের করলেন । তার একহাতে বড়িগুলো, অন্যহাতে জলের গ্লাস । অস্ফুটে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল - " আর পারছিনা ইন্দ্রাণী, আমি তোমার কাছেই যাচ্ছি ।" বড়িগুলো মুখে দিতে যাবেন এমন সময় ঘরের বাইরে থেকে কে যেন ডেকে উঠল - "ডাক্তারবাবু ... ডাক্তারবাবু ... আমার বউ-এর অবস্থা খুব খারাপ । আপনি বাঁচান ।" কিংকর্তব্যবিমুঢ় ডাঃ মৈত্র কি করবেন এখন ভেবে পাচ্ছেন না । তার হাতটা কেঁপে উঠল । হাতে ধরা বড়িগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল । ইন্দ্রাণীর ছবিটার দিকে আরেকবার তাকাতেই মনে হল ইন্দ্রাণী যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে । সে বলে উঠল - "কি পাগলামি করছো সুমন ? তুমি না ডাক্তার ? প্রাণ বাঁচানোই তোমার ধর্ম । শেষ হয়ে যাওয়া নয় ! আমাদের শপথ কি তুমি ভুলে গেলে ? তোমার মধ্যেই তো আমি বেঁচে আছি ।" সম্বিত ফিরে পেতেই ডাঃ মৈত্র উচ্চস্বরে বললেন - " হ্যাঁ, শঙ্কর একটু দাঁড়া, আমি এক্ষুনি আসছি ।"
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Înšigniã Āvî ২১/০৯/২০১৩খুব ভালো এক গল্প
-
suman ২০/০৯/২০১৩অনেক ভালো একটি লেখা ...ইতিবাচক...
-
ওয়াহিদ ২০/০৯/২০১৩গল্পের অর্থটা খুবই দারূণ ....
ভালো লাগলো ...... -
দেবদাস মৈত্র ২০/০৯/২০১৩ছোট গল্পের এক সুন্দর মনোগ্রাহী পরিবেশনা । মূল বিষয়বস্তু কিন্তু বর্তমান সমাজের কাছে শিক্ষণীয় এবং এক দামি বার্তা বহন করে । এই আসরে এ-রকম লেখা প্রচারিত হলে আমাদের সমাজ যথেষ্ট উপকৃত হবে বলে আশা রাখি ।
-
শুভেন্দু দাস ২০/০৯/২০১৩bristi eto nisthur hoy age bolo ni to?
ami to jantam tumi bristi bilasi. -
Shubhajit majumdar ২০/০৯/২০১৩Khub sundar ato valo lakho @jaya excellent writing skill
-
shubhajit majumdar ২০/০৯/২০১৩Ato sundar lakho tumi monta vora galo excellent writing skill
-
দাদা মুহাইমিন চৌধূরী ১৯/০৯/২০১৩সুন্দর লেখার ভঙ্গি। গল্পটা ও ভালো লেগেছে।
-
সালমান মাহফুজ ১৯/০৯/২০১৩আপনার গল্প বলার ভঙ্গি বেশ চমৎকার । সেইসাথে ঘটনায় নাটকীয়তা সৃষ্টি পড়ার আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয় । দারুণ লিখেছেন দিদি । আরো সুন্দর সুন্দর গল্পের প্রতিক্ষায় রইলাম ।