টেলিপ্যাথি
ডাঃ শুভাশিস সান্যাল । অধ্যাপনার জীবন থেকে কিছুদিন আগেই অবসর নিয়েছেন । এখন তিনি একেবারে একা । স্ত্রী গত হয়েছে অনেক দিন আগেই । একমাত্র পুত্র আমেরিকায় । নিঃসঙ্গ জীবন থেকে মুক্তি পেতে মাঝে মাঝে তাই কলকাতার কাছেপিঠে বেরিয়ে পরেন । এতদিন তিনি বেড়ানোর কথা ভাবতেই পারতেন না । শুধু কলেজ আর কলেজ ।
এখন ডাঃ সান্যাল মালদায়, যেখানে তিনি কাটিয়েছেন তার শৈশব-কৈশোরের বর্ণময় দিনগুলো । সরকারী টুরিস্ট লজে খাওয়া দাওয়া সেরে বারান্দার সোফাটায় গা এলিয়ে দিলেন তিনি । লজের সামনে বাগানে রঙ-বেরঙের কত রকম ফুল । এক ফুল থেকে অন্য ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে কত রঙিন প্রজাপতি । এ-সব রঙিন দৃশ্য দেখতে দেখতে চোখ বন্ধ করে অতীতের দিনগুলিতে ফিরে গেলেন ডাঃ সান্যাল । মনে পড়ে গেল তার শৈশব-কৈশোর-যৌবনের এই মালদার কথা, মনে পড়ে গেল টুম্পাকে । তখন তার কাছে তিনি ছিলেন বাবলাদা । কত রাগিয়েছেন, কত কাঁদিয়েছেন তাকে । একমাথা ঝাঁকড়া চুল, শ্যামলা গায়ের রঙ, কপালে একটা কাটা দাগ - এই আবাল্য খেলার সাথী টুম্পাকে নতুন করে তিনি আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন ভালোলাগায় তথা ভালোবাসায় । তখন তিনি ক্লাস ইলেভেনে আর টুম্পা নাইনে । বুদ্ধ-পূর্ণিমার দিন দীঘির পাড়ে বিরাট মেলা বসত । একবার দু'জনে পালিয়ে মেলা দেখতে গিয়েছিলেন । টুম্পাকে কিনে দিয়েছিলেন দু'গাছি রেশমি চুড়ি । টুম্পা ঝালমুড়ি খেতে চেয়েছিল । কিন্তু সেদিন টুম্পার ঝালমুড়ি খাওয়া আর হয়ে ওঠেনি । পাড়ার অবনি মাষ্টারের মেয়ে অনিমার সাথে দেখা হয়ে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসেছিল টুম্পা । বাড়িতে কপালে যা জোটার তা বেশ ভালোই জুটেছিল । তারপর আর বাবলাদার সাথে দেখা করার সাহস হয়নি টুম্পার । এরপর মাস দুয়েকের মধ্যেই তার বাবা ট্রান্সফার হয়ে গেলেন কলকাতায় । বাবার চাকরির সুবাদে কলকাতায় চলে যেতে হয়েছিল বাবলাকেও ।
স্মৃতির পাতা ওলটাতে ওলটাতে দুপুর গড়িয়ে সময় কখন যে বিকেলকে স্পর্শ করেছে তা ডাঃ সান্যাল খেয়ালই করেন নি । বেয়ারার ডাকে চোখ মেলতেই দেখলেন তার সামনে টি-টেবিলে চায়ের ট্রে । হাত-ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলেন । সাড়ে চারটে । সন্ধ্যা নামতে এখনও বেশ দেরী । চা খেয়ে নিয়ে ঘরে গিয়ে তাড়াতাড়ি জামা-কাপড় পরে রেডি হয়ে গেলেন । এবার তাকে বেরোতে হবে । বুকে আঁকড়ে রাখা মালদাকে দেখতে হবে, ঘ্রাণ নিতে হবে, তার স্বাদ নিতে হবে ।
টুরিস্ট লজ থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ডাঃ সান্যাল চলে গেলেন সেই পুরনো জায়গায়, যেখানকার স্মৃতি এতোগুলো বছর তিনি তার মণিকোঠায় সযত্নে সংরক্ষণ করে রেখেছেন । অনেক কিছুই পাল্টে গেছে । দীঘির চেহারাটাও আর আগের মত নেই । দীঘির পাড়ে রাধাচূড়া গাছটার নিচে বসে স্মৃতি-মেদুর হয়ে পড়লেন ডাঃ সান্যাল । এখানে বসে কতদিন টুম্পার সাথে গল্প করেছেন, খুনসুটি করেছেন । সন্ধ্যা হতে বেশি দেরি নেই আর । আজকের মত উঠতে হবে । উঠে সবে দাঁড়িয়েছেন এমন সময় একটু দূরে চোখ যেতেই চমকে উঠলেন ডাঃ সান্যাল । ও - কে আসছে এদিকে ? একমাথা কাঁচাপাকা চুল । হাতে একটা ছোট ব্যাগ । প্রৌঢ়ত্বের বলিরেখা শরীরকে ছুঁয়ে গেলেও চিনতে এতটুকুও অসুবিধা হয়না তার । একটু কাছে আসতেই তিনি দেখলেন কপালের সেই কাটা দাগটা এখনও জ্বলজ্বল করছে ।
- কে ... ... টুম্পা না ?
চমকে উঠলেন প্রৌঢ়া । বেশ কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন । - আপনি ... মানে তুমি বাবলাদা না ?
- চিনতে পেরেছ টুম্পা ! ওহ... কত যুগ পরে তোমার সাথে দেখা । তোমার সাথে যে এভাবে এই জায়গায় দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি । ঠিক যেন টেলিপ্যাথি । তারপর কেমন আছো বল ?
টুম্পা বলল - ' দীঘির পাড়ে সেই রাধাচূড়া গাছের নীচে এতদিন পর তোমার সাথে দেখা হবে এটা আমি কোন দিন ভাবতেও পারিনি ।'
টুম্পার গল্প যেন আর শেষ হয়না । স্বামীর কথা, ছেলে-মেয়েদের কথা, নাতি-নাতনিদের কথা । এখনও ও যেন ক্লাস নাইনের কিশোরী । সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে । ডাঃ সান্যালকে চমকে দিয়ে টুম্পা বলে উঠল - বাবলাদা চল না ওই শিব বাড়িটার মোড়ে । ওখানে একটা লোক দারুণ ঝালমুড়ি বানায় ।
- মনে পড়ে টুম্পা, সেই মেলা থেকে ঝালমুড়ি না খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা । আজ আমরা দু'জনে নিশ্চিন্তে ঝালমুড়ি খাব ।
ঝালমুড়ি খেতে খেতে গল্প করছে আর খিলখিল করে হেসে উঠছে টুম্পা । এখনও ও কত সাবলিল । যাবার আগে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল টুম্পা । তার হাতের ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট কাগজের টুকরো বের করে পেন দিয়ে খসখস করে কি যেন লিখল । তারপর ডাঃ সান্যালের হাতে সেই চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে ঝড়ের বেগে চলে গেল । ডাঃ সান্যাল দেখলেন চিরকুটে লেখা - " তোমাকে এখনও ভালবাসি । " নীচে মোবাইল নাম্বার ।।
এখন ডাঃ সান্যাল মালদায়, যেখানে তিনি কাটিয়েছেন তার শৈশব-কৈশোরের বর্ণময় দিনগুলো । সরকারী টুরিস্ট লজে খাওয়া দাওয়া সেরে বারান্দার সোফাটায় গা এলিয়ে দিলেন তিনি । লজের সামনে বাগানে রঙ-বেরঙের কত রকম ফুল । এক ফুল থেকে অন্য ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে কত রঙিন প্রজাপতি । এ-সব রঙিন দৃশ্য দেখতে দেখতে চোখ বন্ধ করে অতীতের দিনগুলিতে ফিরে গেলেন ডাঃ সান্যাল । মনে পড়ে গেল তার শৈশব-কৈশোর-যৌবনের এই মালদার কথা, মনে পড়ে গেল টুম্পাকে । তখন তার কাছে তিনি ছিলেন বাবলাদা । কত রাগিয়েছেন, কত কাঁদিয়েছেন তাকে । একমাথা ঝাঁকড়া চুল, শ্যামলা গায়ের রঙ, কপালে একটা কাটা দাগ - এই আবাল্য খেলার সাথী টুম্পাকে নতুন করে তিনি আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন ভালোলাগায় তথা ভালোবাসায় । তখন তিনি ক্লাস ইলেভেনে আর টুম্পা নাইনে । বুদ্ধ-পূর্ণিমার দিন দীঘির পাড়ে বিরাট মেলা বসত । একবার দু'জনে পালিয়ে মেলা দেখতে গিয়েছিলেন । টুম্পাকে কিনে দিয়েছিলেন দু'গাছি রেশমি চুড়ি । টুম্পা ঝালমুড়ি খেতে চেয়েছিল । কিন্তু সেদিন টুম্পার ঝালমুড়ি খাওয়া আর হয়ে ওঠেনি । পাড়ার অবনি মাষ্টারের মেয়ে অনিমার সাথে দেখা হয়ে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসেছিল টুম্পা । বাড়িতে কপালে যা জোটার তা বেশ ভালোই জুটেছিল । তারপর আর বাবলাদার সাথে দেখা করার সাহস হয়নি টুম্পার । এরপর মাস দুয়েকের মধ্যেই তার বাবা ট্রান্সফার হয়ে গেলেন কলকাতায় । বাবার চাকরির সুবাদে কলকাতায় চলে যেতে হয়েছিল বাবলাকেও ।
স্মৃতির পাতা ওলটাতে ওলটাতে দুপুর গড়িয়ে সময় কখন যে বিকেলকে স্পর্শ করেছে তা ডাঃ সান্যাল খেয়ালই করেন নি । বেয়ারার ডাকে চোখ মেলতেই দেখলেন তার সামনে টি-টেবিলে চায়ের ট্রে । হাত-ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলেন । সাড়ে চারটে । সন্ধ্যা নামতে এখনও বেশ দেরী । চা খেয়ে নিয়ে ঘরে গিয়ে তাড়াতাড়ি জামা-কাপড় পরে রেডি হয়ে গেলেন । এবার তাকে বেরোতে হবে । বুকে আঁকড়ে রাখা মালদাকে দেখতে হবে, ঘ্রাণ নিতে হবে, তার স্বাদ নিতে হবে ।
টুরিস্ট লজ থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ডাঃ সান্যাল চলে গেলেন সেই পুরনো জায়গায়, যেখানকার স্মৃতি এতোগুলো বছর তিনি তার মণিকোঠায় সযত্নে সংরক্ষণ করে রেখেছেন । অনেক কিছুই পাল্টে গেছে । দীঘির চেহারাটাও আর আগের মত নেই । দীঘির পাড়ে রাধাচূড়া গাছটার নিচে বসে স্মৃতি-মেদুর হয়ে পড়লেন ডাঃ সান্যাল । এখানে বসে কতদিন টুম্পার সাথে গল্প করেছেন, খুনসুটি করেছেন । সন্ধ্যা হতে বেশি দেরি নেই আর । আজকের মত উঠতে হবে । উঠে সবে দাঁড়িয়েছেন এমন সময় একটু দূরে চোখ যেতেই চমকে উঠলেন ডাঃ সান্যাল । ও - কে আসছে এদিকে ? একমাথা কাঁচাপাকা চুল । হাতে একটা ছোট ব্যাগ । প্রৌঢ়ত্বের বলিরেখা শরীরকে ছুঁয়ে গেলেও চিনতে এতটুকুও অসুবিধা হয়না তার । একটু কাছে আসতেই তিনি দেখলেন কপালের সেই কাটা দাগটা এখনও জ্বলজ্বল করছে ।
- কে ... ... টুম্পা না ?
চমকে উঠলেন প্রৌঢ়া । বেশ কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন । - আপনি ... মানে তুমি বাবলাদা না ?
- চিনতে পেরেছ টুম্পা ! ওহ... কত যুগ পরে তোমার সাথে দেখা । তোমার সাথে যে এভাবে এই জায়গায় দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি । ঠিক যেন টেলিপ্যাথি । তারপর কেমন আছো বল ?
টুম্পা বলল - ' দীঘির পাড়ে সেই রাধাচূড়া গাছের নীচে এতদিন পর তোমার সাথে দেখা হবে এটা আমি কোন দিন ভাবতেও পারিনি ।'
টুম্পার গল্প যেন আর শেষ হয়না । স্বামীর কথা, ছেলে-মেয়েদের কথা, নাতি-নাতনিদের কথা । এখনও ও যেন ক্লাস নাইনের কিশোরী । সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে । ডাঃ সান্যালকে চমকে দিয়ে টুম্পা বলে উঠল - বাবলাদা চল না ওই শিব বাড়িটার মোড়ে । ওখানে একটা লোক দারুণ ঝালমুড়ি বানায় ।
- মনে পড়ে টুম্পা, সেই মেলা থেকে ঝালমুড়ি না খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা । আজ আমরা দু'জনে নিশ্চিন্তে ঝালমুড়ি খাব ।
ঝালমুড়ি খেতে খেতে গল্প করছে আর খিলখিল করে হেসে উঠছে টুম্পা । এখনও ও কত সাবলিল । যাবার আগে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল টুম্পা । তার হাতের ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট কাগজের টুকরো বের করে পেন দিয়ে খসখস করে কি যেন লিখল । তারপর ডাঃ সান্যালের হাতে সেই চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে ঝড়ের বেগে চলে গেল । ডাঃ সান্যাল দেখলেন চিরকুটে লেখা - " তোমাকে এখনও ভালবাসি । " নীচে মোবাইল নাম্বার ।।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Înšigniã Āvî ২১/০৯/২০১৩বাহ..... দারুন
-
Shubhajit majumdar ১৯/০৯/২০১৩Wow excellent realy u can expalin very beautiful of life nd their diffculty, sadness nd happy ness
-
Shubhajit majumdar ১৯/০৯/২০১৩Shubhajitmajumdar
-
সুবীর কাস্মীর পেরেরা ১৯/০৯/২০১৩খুব ভাল লাগল
-
ইব্রাহীম রাসেল ১৮/০৯/২০১৩--দারুণ ছবি আঁকতে পারো তুমি। আরো আরো গল্প চলুক--
-
সালমান মাহফুজ ১৮/০৯/২০১৩পরিবেশ ও চরিত্র চিত্রণ দারুণ হয়েছে জয়শ্রী দিদি । এখানে আপনার নিয়মিত লেখা আশা করি ।
-
দীপঙ্কর বেরা ১৮/০৯/২০১৩Khub bhalo legeche . Amaro jadi emon dekha hoy . Ami tar niyamito jogajog rakhbo . Ekto bananer dike kheyal rakhben .