www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কাকাবাবুর টানে-

এম,বি,এ, পরীক্ষার পর সন্দীপরা চার বন্ধু মিলে ঠিক করল কোথাও একটু বেড়িয়ে আসবে । চার বন্ধু বলতে দেবাঞ্জন, অয়ন, প্রবাল আর সন্দীপ । অনেক কথাবার্তার পর ঠিক হল ওরা দার্জিলিং যাবে । যেমন ভাবা তেমন কাজ । সময় কম থাকায় দার্জিলিং মেলে চারজনের রিজার্ভেশন এক জায়গায় হল না । সন্দীপ আর দেবাঞ্জন এক কামরায়, অয়ন আর প্রবাল অন্য কামরায় । কিছু করারও নেই। কেউ এডজাস্ট করতেও রাজি হল না । অগত্যা কি আর করা যাবে । পরিস্থিতি মেনে নিতেই হল।  ফেরার সময় তিনজন একসঙ্গে ফিরবে । সন্দীপ ওদের সাথে ফিরবে না । ওর কাকা কারশিয়াং-এ থাকেন । তিনি অকৃতদার ।  সেখানে তিনি একটা মিশনারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন । সন্দীপ তার কাকার বাসায় দুদিন কাটিয়ে কোলকাতায় ফিরবে । দার্জিলিং মেল নির্দিষ্ট সময়েই নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌছাল । বাসে করে শিলিগুড়ি এসে একটু ফ্রেস হয়ে ওরা একটা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করল । দার্জিলিং যাবার পথে পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে তারা ভীষণ অভিভূত । হৈ হৈ করতে করতে বেলা প্রায় দুটো নাগাদ ওরা দার্জিলিং-এ পৌঁছালো । একটু খোঁজাখুঁজি করে মোটামুটি সস্তার মধ্যে একটা হোটেলে দুটো ঘরও পেয়ে গেল । ম্যাল থেকে হাঁটা পথে দশ মিনিট। তারপর চার বন্ধু মিলে বেশ মজা করে দার্জিলিং,গ্যাংটক, মিরিখ ইত্যাদি জায়গা ঘুরে আনন্দ উপভোগ করল । সাতদিনের মাথায় এল দার্জিলিংকে বিদায় জানাবার পালা । পাহাড়-রাণী দার্জিলিংকে টা টা বাই বাই করে রওনা দিতে ওদের বেশ দেরিই হয়ে গেল । ওরা যখন কারশিয়াং-এ পৌঁছালো সূর্য তখন পাহাড়ের কোলে ঢলে পড়েছে । কিছুক্ষনের মধ্যেই সন্ধ্যা নামবে । পাহাড়ের গায়ে ঘর-বাড়ি গুলোতে জোনাকির মত ঝিকমিকিয়ে বাতি জ্বলে উঠেছে । দেবাঞ্জন, অয়ন আর প্রবালকে বিদায় জানিয়ে সন্দীপ কারশিয়াং-এ নেমে গেল ।

সন্দীপের কাকা বিকাশ বাবু বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন । প্রায় তিন বছর পর কাকার সাথে দেখা হল সন্দীপের । আগের থেকে কাকাকে অনেক রোগা দেখাচ্ছে । কেমন যেন রুক্ষ রুক্ষ লাগছে । পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে যেতেই সন্দীপকে থামিয়ে বিকাশ বাবু বলে উঠলেন – “থাক বাবা থাক । রাস্তার মধ্যে প্রণাম করতে নেই । কতদিন পর তোকে দেখছি। ভাগ্যিস দার্জিলিং-এ বেড়াতে এসেছিলি তাই দেখা হল”। সন্দীপ বলল – “কাকা তুমি খুব রোগা হয়ে গেছো । আগে তো তুমি এত রোগা ছিলে না”। বিকাশ বাবু তার ভাইপোর কথা শুনে একটু হাসলেন । তারপর বললেন – “হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস । অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য চেহারাটা খারাপ হয়ে গেছে । তবে পরিপূর্ণ বিশ্রাম পেলে আবার ঠিক হয়ে যাবে । চল, এবার বাসায় চল । বেশী দূর নয় । পাঁচ-সাত মিনিটের হাঁটা পথ”। সন্দীপ তার কাকার সাথে পাহাড়ি রাস্তার ঢাল ধরে হাঁটতে লাগল । ঢালের পাশ দিয়ে সরু রাস্তা । দু’পাশে বাংলো প্যাটার্নের ছোট ছোট বাড়ি । ফাঁকে ফাঁকে দেবদারু পাইনের বন । প্রতিটা বাড়িতেই প্রকৃতি যেন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে । ডালিয়া, গোলাপ, হরেক রকম পাহাড়ি ফুলের ডালি সাজিয়ে আলো-আঁধারিতে পবিত্র ভালবাসায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে । সন্ধ্যার কারশিয়াংকে বেশ মোহময়ী লাগছে । পাঁচ মিনিট হাঁটার পর বিকাশ বাবু একটা ছোট বাংলো বাড়ির সামনে এসে থামলেন । বাংলোর দিকে তাকিয়ে বিকাশ বাবু বললেন – “এই হলো আমার বাসা”। সন্দীপ অনেকক্ষণ ধরে বাংলোটা দেখল । বাংলোর সামনের লনে সুন্দর সুন্দর বাহারি ফুলের গাছে প্রচুর বাহারি ফুল ফুটে আছে । বাংলোর সম্পূর্ণ পরিবেশ অদ্ভুত সুন্দর লাগছে । সন্দীপ বলল – “বাঃ, কি সুন্দর । কাকা, তোমার এখানে দেখছি অনেক বাহারি গাছ আর বাহারি ফুল”। বিকাশ বাবু বললেন – “হ্যাঁ, এসবই সুজানের কৃতিত্ব । নেপালি ছেলে । খুবই বিশ্বস্ত । আমার কাছে থাকে । রান্না থেকে শুরু করে ঘর-দোর সবই ও সামলায় । এক কথায় ও আমার এখানকার ছোট্ট অভিভাবক”।

গেট খুলে ছোট্ট লন পেরিয়ে বিকাশ বাবু দরজার কলিং বেলে হাত রাখলেন । মুহূর্তের মধ্যে দরজা খুলে ষোল-সতেরো বছরের একটি নেপালি ছেলে হাসি হাসি মুখে বার হয়ে এল । সন্দীপকে দেখে ছেলেটি সেলাম ঠুকে তার ব্যাগটা টেনে নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল – “আইয়ে সাব, অন্দর মে আইয়ে”। বিকাশ বাবু সন্দীপকে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন । পাশাপাশি দুটো ঘর । একপাশে ছোট্ট রান্নাঘর, অন্যপাশে টয়লেট । বিকাশ বাবু সন্দীপকে বললেন – “সেই কখন বেরিয়েছিস । নিশ্চয়ই খুব খিদে  পেয়েছে । টয়লেট থেকে ফ্রেস হয়ে এসে গরম গরম খাবার খেয়ে নে”। টয়লেটে ঢুকে সন্দীপ দেখল টয়লেট বেশ সাজানো-গোছানো । দেওয়াল, মেঝে ঝকঝক করছে । গিজারের জলে স্নান করে ফ্রেস হয়ে এসে সন্দীপ অবাক । ডাইনিং টেবিলে তার জন্য গরম গরম ফুলকো লুচি, আলু-স্কোয়াশের তরকারি, লাড্ডু আর টি-পটে চা রেডি । সুজানের এত তাড়াতাড়ি খাবার বানানোর দক্ষতা সত্যিই প্রশংসনীয় । ঘরের মধ্যে একটা চেয়ারে বসে কাকা তারই জন্য অপেক্ষা করছে । ডাইনিং টেবিলের একপাশে সুজান হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে । সুজান পাহাড়ি বলেই খুব চটপটে । ঠাণ্ডার মধ্যেও এত খাবার বানিয়ে ফেলেছে । ডাইনিং টেবিলে বর্ধমানের সীতাভোগ দেখে সন্দীপ আরও অবাক । সে তার কাকাকে জিজ্ঞাসা করেই বসল – “সীতাভোগ এখানে কি করে পেলে ?” সন্দীপের কথা শুনে বিকাশ বাবু একটু হেসে বললেন – “তুই সীতাভোগ ভালবাসিস বলেই অনেক চেষ্টা করে আনিয়েছি । তুই খেয়ে নে । সেই কখন বেরিয়েছিস”। কাকাকে সে বলল – “আমি একা কেন ? তুমিও তো খাবে”। বিকাশ বাবু বললেন – “না রে, আমি এখন খাব না । আমি আজ বেশ বেলা করে খেয়েছি। তুই খেয়ে নে”। সন্দীপ আর কথা না বাড়িয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে গেল । পেটে ছুঁচোর ডন মারছে । আর দেরি করা যায় না । ডাইনিং টেবিলে তার জন্য সাজানো সব খাবার সে খেয়ে নিল । বেসিনে মুখ ধুয়ে এসে চেয়ারে বসে সন্দীপ লক্ষ্য করল তার কাকা চুপ করে বসে আছে । মনে হচ্ছে সে গভীর ভাবে কিছু একটা চিন্তা করে চলেছে । সন্দীপ কাকাকে জিজ্ঞাসা করল – “কাকা, তোমার কি শরীর খারাপ ?” বিকাশ বাবু বললেন – না, না, সেরকম কিছু নয় । এখন বয়স হয়েছে । মাঝে মাঝে একটু আধটু শরীর খারাপ তো হতেই পারে । যাই হোক,এর জন্য তুই চিন্তা করিস না । এবার তোর সঙ্গে গল্প করবো । কত দিন পরে তোকে দেখলাম । তবে তার আগে তুই বাড়িতে ফোন কর”। অনেক চেষ্টা করেও সন্দীপ বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারল না । ফোনে ঠিকমত লাইন পাওয়া গেল না । হয় “নট রিচেবল” আর না হয় “আউট অফ রেঞ্জ” । ধৈর্যচ্যুত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে সন্দীপ কাকার সঙ্গে গল্প জুড়ে দিল । কাকাকে সে জিজ্ঞাসা করল – “অনেকদিন হয়ে গেল তুমি কোলকাতায় যাও না । কবে যাবে বল তো ? বাবা-মা প্রায়ই তোমার কথা বলে”। বিকাশ বাবু হাল্কা একটা প্রশ্বাস ছেড়ে বললেন – “দাদা-বৌদিকে কতদিন দেখিনা । দেখতে যেতে খুব ইচ্ছে করে । কিন্তু যাব বললেই তো আর যাওয়া যায় না । টিচিং স্টাফ কমে গেছে । স্কুল থেকে ছাড়া পাচ্ছি না”। সন্দীপ বলল – “কয়েকদিন পরেই তোমাদের স্কুলে শীতের ছুটি পড়ে যাবে, তখন তো যেতে পারো”। বিকাশ বাবু গম্ভীর ভাবে বললেল – “দেখি, চেষ্টা করবো”। সন্দীপ যাবার ব্যাপারে আর পীড়াপীড়ি না করে কাকাকে জিজ্ঞাসা করল – “তোমার স্কুলটা কত দূর গো ?” বিকাশ বাবু বললেন – “ হেঁটে মিনিট দশেকের রাস্তা । মেন রাস্তা থেকে যে রাস্তা দিয়ে এখানে এলি তার উল্টো দিকের রাস্তাটা ধরে একটু নীচে হেঁটে গেলেই আমার প্রিয় স্কুল “মিশন অফ চাইল্ড” । স্কুলের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েগুলো আমায় খুব ভালোবাসে । ওরাও আমার খুব প্রিয় । মাঝে মাঝেই ওরা আমার এখানে আসে । ওদের কলকাকলিতে বাড়িটা ভরে যায় । কাল সকালে হাঁটতে বেরোলেই দেখতে পাবি আমার স্কুল”। সন্দীপ জিজ্ঞাসা করল – “তুমি কাল স্কুলে যাবে তো ?” বিকাশ বাবু বললেল – “না-রে, কাল আমার একটা বিশেষ কাজ আছে । কাল আর স্কুলে যাওয়া হবে না” । এরপর কাকার সঙ্গে সন্দীপ তার ছোটবেলাকার গল্প জুড়ে দিল । কাকাবাবু বললেন – “আর যাই হোক সন্দীপ, তুই তোর বাবার থেকে আমাকেই বেশি ভালবাসতিস । ছোটবেলায় তুই আমার কাছেই ঘুমাতিস” । কাকার সঙ্গে গল্প করতে করতে কখন যে রাত দশটা বেজে গেছে সন্দীপের খেয়ালই নেই । কাকাবাবু বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে পারেন না । তাঁর শোবার সময় হয়ে গিয়েছে । তাই তিনিই বললেন – “রাত অনেক হল । ডিনার করে নিয়ে এবার ভালো করে একটা ঘুম দে”।

সুজান ডাইনিং টেবিলে ডিস সাজিয়ে গরম ভাত আর চিকেন কারি পরিবেশন করে গেল । সুজানের খাবার পরিবেশন করার ক্ষিপ্রতা দেখে সন্দীপ অবাক না হয়ে পারল না । এত তাড়াতাড়ি রেডি করল কি করে ? ছেলেটা যাদু জানে নাকি ? কথা না বাড়িয়ে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়াই শ্রেয় বলে মনে করল সন্দীপ । সারাদিন যা ধকল গেছে । শরীর বেশ ক্লান্ত । কাকার শরীর খারাপ, রাতে খাবে না । তাই সন্দীপকে একাই ডাইনিং টেবিলে বসতে হল । সুজানের সুস্বাদু রান্না সে পরম তৃপ্তিতে খেয়ে নিল । খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে গেলে কাকা পাশের ঘর দেখিয়ে বলল – “সুজান তোর বিছানা ঠিকঠাক করে রেখেছে । তুই শুয়ে পড় । আমি আর সুজান এই ঘরে থাকব । দরকার হলে ডাকিস”। কাকার কথামত সন্দীপ পাশের ঘরে ঢুকে পড়ল । ঘরটা পরিপাটি করে সাজানো । ঘরের মেঝে সুন্দর কার্পেটে মোড়া । ঘরের এক কোনে একটা সিঙ্গল খাট । বিছানায় টানটান করে সুদৃশ্য চাদর পাতা । পায়ের কাছে দুটো কম্বল ভাঁজ করে রাখা । মাথার কাছে ছোট্ট একটা টেবিল । টেবিলের উপর রাখা একটা গরম জলের ফ্লাস্ক । পাশে গ্লাস । সন্দীপ বিছানায় বসল । শোবার আগে বাড়িতে একবার কথা বলার জন্য মোবাইল থেকে আর এক বার  যোগাযোগ করার চেষ্টা করল সে । কিন্তু বারবারই নেটওয়ার্ক ফেলিওর । বন্ধুদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও একই ফল হল । টাওয়ার পাওয়া যাচ্ছে না । সন্দীপ বিরক্ত হয়ে আর দেরী না করে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল ।

পরদিন সন্দীপের ঘুম যখন ভাঙ্গল সামনের দেওয়ালে টাঙ্গানো ঘড়িতে তখন বেলা নটা । ধড়মড়িয়ে উঠে পড়ল সন্দীপ । খুব ভোরে উঠে কুয়াশা ছেঁড়া ঊষার আবিরে ছড়ানো কারশিয়াংকে দেখা হল না । মাথায় উলের টুপি আর গায়ে সোয়েটার চাপিয়ে বিছানা থেকে উঠে সন্দীপ পাশের ঘরে গিয়ে দেখল ঘরে কেউ নেই । রান্না ঘরে সুজানকেও দেখা গেল না । কাকা, সুজান গেল কোথায় ? বাড়ির মেন গেটের দরজায় হাত রাখতেই সন্দীপ দেখল ভেতরের ছিটকিনি খোলা । কিন্তু বাইরে থেকে বন্ধ । এবারে সন্দীপ কিছুটা নিশ্চিত হল । সন্দীপ এখানে নতুন । কাকা অনেক সাবধানী । তাই কাকা তাকে বিরক্ত না করে বাইরে থেকে বন্ধ করে সকাল বেলায় তার বিশেষ কাজে বেরিয়ে গেছে আর সুজান নিশ্চয়ই বাজারে গেছে । কিন্তু সন্দীপ এই ভাবে কতক্ষণ ভেতরে থাকবে ? তার মনটা বাইরে যাবার জন্য ছটফট করতে লাগলো । তার মনে হতে লাগলো কারশিয়াং-এর পাহাড়, মেঘ, ফুল-বাগান তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে । পিছনের দিকের দরজার ছিটকিনি খুলে সে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এল।  সূর্যের রক্তিম আলোয় দুরের পাহাড় তখন ঝকমক করছে । নীচের ঢালু রাস্তা ধরে সন্দীপ ধীরে ধীরে নামতে শুরু করল । পথের দু’পাশের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সে এগিয়ে চলল । পাহাড়ি রাস্তায় দু’একজনকে দেখা যাচ্ছে । বেশ কয়েকটি দোকানও খুলে গেছে । চা-কফির দোকানে কয়েকজন চা-কফি খাচ্ছে । একটা চায়ের দোকান থেকে সন্দীপ এক কাপ গরম চা খেয়ে নিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করল । একদল ফুটফুটে বাচ্চা ছেলে-মেয়ে একসাথে গান করতে করতে সামনের রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছে । তাদের পরনে স্কুলের ইউনিফর্ম আর তাদের প্রত্যেকের হাতে একগোছা গোলাপ ফুল । সঙ্গে তাদের কয়েকজনের অভিবাবকও আছেন । সন্দীপ দেখল বাচ্চাদের চোখমুখ বেশ শুকনো লাগছে । আর তাদের চোখগুলো জলে ভরা । এ-সব দেখে সন্দীপের বেশ কৌতূহল হল । বাচ্চাদের সাথে সেও হাঁটতে শুরু করল । মিনিট দশেক হাঁটার পর ওরা একটা স্কুলের সামনে এসে দাঁড়াল । তারপর স্কুলের বিরাট গেট পেরিয়ে তারা ভিতরে ঢুকল । সামনেই স্কুলের নামটা দেখল “মিশন অফ চাইল্ড”। সন্দীপের মনে পড়ে গেল । এই স্কুলেই তো তার কাকা শিক্ষকতা করেন । তার কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। স্কুলের দারোয়ানকে সে নিজের পরিচয় দিল । শিক্ষক বিকাশ বাবু তার কাকা । সঙ্গে সঙ্গে সে সসন্মানে সন্দীপকে ভিতরে যেতে আপ্যায়ন করল । স্কুলের সামনে বিরাট সবুজ লন । সেখানে রং-বেরঙের বিভিন্ন বাহারি পাতার গাছ, বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছে সুন্দর সুন্দর ফুলের সমারোহ । স্কুলের মাঠ পেরিয়ে ছেলেমেয়েদের একটা হলঘরে ঢুকতে দেখে সন্দীপও ওদের পিছন পিছন ঢুকে পড়ল । কিন্তু স্কুলের ঐ ঘরে তার জন্য যে বিস্ময়-ঘটনা অপেক্ষা করছিল সেটা ছিল তার কল্পনাতীত । হলঘরের স্টেজের মাঝখানে সাদা কাপড়ে মোড়া একটা বড় টেবিল । তার উপর ফুলমালা দিয়ে সাজানো বেশ বড় মাপের একটা ছবি । সামনে ধুপদানিতে ধূপ জ্বলছে । দূর থেকে ছবিটা তার চেনা চেনা লাগছিল । কৌতুহল বশতঃ স্টেজের কাছে আসতেই সন্দীপ হতবাক । এ কী ? সামনের টেবিলে রাখা ছবিটা তো তার কাকার । সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না তার কাকার ছবিটা এখানে এভাবে কেন ? সে আর স্থির থাকতে পারল না । হলঘরে উপস্থিত অনেক ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা । তাদের প্রত্যেকের চোখে জল । সম্পূর্ণ থমথমে পরিবেশ । কৌতুহলী সন্দীপ এক শিক্ষকের কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল – “ স্যার, কি ব্যাপার বলুন তো ? কি হচ্ছে এখানে ? ফুলমালা দিয়ে টেবিলে সাজানো ছবিটা আমার খুবই চেনা” । শিক্ষক-ভদ্রলোক অবাক দৃষ্টিতে সন্দীপের দিকে তাকালেন । কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকার পর বললেন – “খুবই দুঃখজনক ঘটনা । বিকাশ বাবু আমাদের সহকর্মী ছিলেন । স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের খুবই প্রিয় ছিলেন । গত পরশুদিন এক দুর্ঘটনা ঘটে । উনি এবং ওনার পরিচারক যখন বাজার থেকে ফিরছিলেন সেই সময়ে পিছন থেকে আসা এক জিপের ধাক্কায় ওঁরা দু’জনেই গভীর খাদে পড়ে গিয়ে মারা যান । অনেক চেষ্টা করে সেনাবাহিনী তাঁদের দেহ উদ্ধার করে । পোস্টমর্টেম হয়ে গেছে । একটু পরেই ডেডবডি এসে পৌঁছবে । তাঁরই স্মরনে আজ এই সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে”।

শিক্ষক ভদ্রলোকের কথা শুনে সন্দীপের মাথাটা ঘুরতে শুরু করলো । সে বাস্তবে না স্বপ্নে বুঝে উঠতে পারলো না । গতকালই তো তার কাকা তাকে বাসস্ট্যান্ড থেকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেলেন এবং যত্ন করলেন । এটা কি করে সম্ভব ? কিন্তু আজকের এই অনুষ্ঠান কি করে মিথ্যে হতে পারে ? সন্দীপ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না । অজ্ঞান হয়ে গিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল ।।


********
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৮৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩১/০৫/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • এম,এ,মতিন ০৭/০৬/২০১৭
    অসাধারণ শিক্ষণীয়! খুব ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে।

    অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।
    • দেবদাস ০৯/০৬/২০১৭
      এত সুন্দর...! আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল ।
 
Quantcast