অনুভব
আজও যথারীতি ছেলেকে স্কুলে পৌঁছতে এসেছিল সুনিতা । ছেলে দীপকে স্কুলে ঢুকিয়ে
দিয়ে সে ধীর পায়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে গেল । বুকের ভেতর একটা চাপা ব্যথা । পিছন থেকে এক মোটর বাইকের আওয়াজে সে চমকে উঠল । দুটো ছেলে তার পাশ দিয়ে বাইকে করে হুঁশ করে বেরিয়ে গেল । না,আজ আর শোভন বাবু আসবেন না । ছেলে অরিত্রকে নিয়ে সে এখন দিল্লির পথে । বছর খানেক হল বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে অরিত্র ভর্তি হয়েছে । তার ছেলের সাথেই ক্লাস ফাইভে পড়ে । ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার পথেই তাদের দুজনের আলাপ । অনেকদিন বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে অথবা রাস্তার পাশে কোন বাড়ির বাইরের বারান্দায় বসে কিছুটা সময় তারা দুজনে গল্পে বিভোর হয়ে উঠত । গল্পে গল্পে সুনিতা জেনেছে ছেলের যখন মাত্র তিন বছর বয়স তখন শোভন বাবুর স্ত্রী-বিয়োগ ঘটে । তখন থেকেই ছেলের বাবা ও মায়ের দায়িত্ব তারই । শোভন বাবু অফিস যাবার আগে ছেলেকে রোজ স্কুলে পৌঁছে দেন । কিন্তু শোভন বাবু এখন ভীষণ সমস্যায় পড়েছেন । তাদের এতদিনের কলকাতার অফিস দিল্লীতে চলে গেছে । তাই ছেলেকে নিয়ে দিল্লী পাড়ি । একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে সুনিতার ।
সুনিতার স্বামী প্রশান্ত বাবুর কাপড়ের ব্যবসা । তিনি ব্যবসার কাজে এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে সুমিতা আর দীপকে ঠিক মত সময় দিতে পারেন না । এক একাকীত্বের জ্বালায় ভোগে সুনিতা । প্রথম আলাপের পর থেকেই শোভন বাবুর সঙ্গে সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । দুজন দুজনকে নিজেদের পারিবারিক সুখ-দুঃখের কথা আদান-প্রদান করে মনের ভার হাল্কা করত । প্রতিদিন বড় জোর আধ ঘণ্টা কথা হত । তারপর যে যার গন্তব্যে । কিন্তু প্রতিটি দিনের এই আধ ঘণ্টাই সুনিতার জীবনের একাকীত্বের জ্বালা আংশিক মিটিয়ে দিত । কয়েকদিন পর থেকে সুনিতা অনুভব করল শোভন বাবু বন্ধুত্ব থেকে ক্রমশঃ তার মনের গভীরে বাসা বেঁধেছে । কিন্তু অচিরেই তার অনুভব কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হয়ে পড়ল । অপ্রকাশিত হয়ে মনের গভীরেই থেকে গেল । গত পরশু শোভন বাবুই সংবাদটা দিলেন ঃ “সুনিতা দেবী, আর হয়তঃ আমাদের দেখা হবে না”। শোভন বাবুর কথায় চমকে উঠেছিল সুনিতা – “কেন?” শোভন বাবু গম্ভীর স্বরে বলেছিলেন – “আমাদের অফিস দিল্লীতে চলে গেছে । অরিত্রর টি,সি, হয়ে গেলেই দু-এক দিনের মধ্যেই চলে যাব”। সুনিতার মুখে তখন কোন কথা সরছিল না । শুধু মুখ মণ্ডলে এক বিষাদের ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছিল । শোভন বাবুর এ কথা বলার পর আর কি বলার থাকতে পারে তার? ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে সে শোভন বাবুর মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিল । চোখ-দুটোও ছলছল করে উঠেছিল । এক অব্যক্ত যন্ত্রণা বুকের ভেতর দলা পাকাচ্ছিল । শোভন বাবুই ফের মুখ খুলেছিলেন – “সুনিতা দেবী, মন খারাপ করবেন না । আমি দিল্লী চলে গেলেও আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব অটুট থাকবে । ওখানে গিয়ে আমি আপনাকে ফোন করব । আবার আমাদের সুখ-দুঃখ শেয়ার করব”। উত্তর দিতে গিয়ে সুনিতার গলা কিছুটা কেঁপে উঠেছিল । বেশী কথা বলতে পারেনি । শুধু বলেছিল – “ঠিক আছে”।
বাসস্ট্যান্ডে একটা বাস এসে ঢুকছে । বাসের হর্নে সুনিতার হুঁশ এল । হাতের ঘড়িটা ভাল করে দেখল । বারোটা বেজে গেছে । সুনিতা তাড়াতাড়ি হাঁটতে শুরু করল বাড়ির পথে । বাড়িতে অনেক কাজ বাকী । সে গুলো সেরে স্নান-খাওয়া করে আবার ছেলেকে নিতে আসতে হবে স্কুলে ।
-
দিয়ে সে ধীর পায়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে গেল । বুকের ভেতর একটা চাপা ব্যথা । পিছন থেকে এক মোটর বাইকের আওয়াজে সে চমকে উঠল । দুটো ছেলে তার পাশ দিয়ে বাইকে করে হুঁশ করে বেরিয়ে গেল । না,আজ আর শোভন বাবু আসবেন না । ছেলে অরিত্রকে নিয়ে সে এখন দিল্লির পথে । বছর খানেক হল বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে অরিত্র ভর্তি হয়েছে । তার ছেলের সাথেই ক্লাস ফাইভে পড়ে । ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার পথেই তাদের দুজনের আলাপ । অনেকদিন বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে অথবা রাস্তার পাশে কোন বাড়ির বাইরের বারান্দায় বসে কিছুটা সময় তারা দুজনে গল্পে বিভোর হয়ে উঠত । গল্পে গল্পে সুনিতা জেনেছে ছেলের যখন মাত্র তিন বছর বয়স তখন শোভন বাবুর স্ত্রী-বিয়োগ ঘটে । তখন থেকেই ছেলের বাবা ও মায়ের দায়িত্ব তারই । শোভন বাবু অফিস যাবার আগে ছেলেকে রোজ স্কুলে পৌঁছে দেন । কিন্তু শোভন বাবু এখন ভীষণ সমস্যায় পড়েছেন । তাদের এতদিনের কলকাতার অফিস দিল্লীতে চলে গেছে । তাই ছেলেকে নিয়ে দিল্লী পাড়ি । একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে সুনিতার ।
সুনিতার স্বামী প্রশান্ত বাবুর কাপড়ের ব্যবসা । তিনি ব্যবসার কাজে এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে সুমিতা আর দীপকে ঠিক মত সময় দিতে পারেন না । এক একাকীত্বের জ্বালায় ভোগে সুনিতা । প্রথম আলাপের পর থেকেই শোভন বাবুর সঙ্গে সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । দুজন দুজনকে নিজেদের পারিবারিক সুখ-দুঃখের কথা আদান-প্রদান করে মনের ভার হাল্কা করত । প্রতিদিন বড় জোর আধ ঘণ্টা কথা হত । তারপর যে যার গন্তব্যে । কিন্তু প্রতিটি দিনের এই আধ ঘণ্টাই সুনিতার জীবনের একাকীত্বের জ্বালা আংশিক মিটিয়ে দিত । কয়েকদিন পর থেকে সুনিতা অনুভব করল শোভন বাবু বন্ধুত্ব থেকে ক্রমশঃ তার মনের গভীরে বাসা বেঁধেছে । কিন্তু অচিরেই তার অনুভব কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হয়ে পড়ল । অপ্রকাশিত হয়ে মনের গভীরেই থেকে গেল । গত পরশু শোভন বাবুই সংবাদটা দিলেন ঃ “সুনিতা দেবী, আর হয়তঃ আমাদের দেখা হবে না”। শোভন বাবুর কথায় চমকে উঠেছিল সুনিতা – “কেন?” শোভন বাবু গম্ভীর স্বরে বলেছিলেন – “আমাদের অফিস দিল্লীতে চলে গেছে । অরিত্রর টি,সি, হয়ে গেলেই দু-এক দিনের মধ্যেই চলে যাব”। সুনিতার মুখে তখন কোন কথা সরছিল না । শুধু মুখ মণ্ডলে এক বিষাদের ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছিল । শোভন বাবুর এ কথা বলার পর আর কি বলার থাকতে পারে তার? ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে সে শোভন বাবুর মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিল । চোখ-দুটোও ছলছল করে উঠেছিল । এক অব্যক্ত যন্ত্রণা বুকের ভেতর দলা পাকাচ্ছিল । শোভন বাবুই ফের মুখ খুলেছিলেন – “সুনিতা দেবী, মন খারাপ করবেন না । আমি দিল্লী চলে গেলেও আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব অটুট থাকবে । ওখানে গিয়ে আমি আপনাকে ফোন করব । আবার আমাদের সুখ-দুঃখ শেয়ার করব”। উত্তর দিতে গিয়ে সুনিতার গলা কিছুটা কেঁপে উঠেছিল । বেশী কথা বলতে পারেনি । শুধু বলেছিল – “ঠিক আছে”।
বাসস্ট্যান্ডে একটা বাস এসে ঢুকছে । বাসের হর্নে সুনিতার হুঁশ এল । হাতের ঘড়িটা ভাল করে দেখল । বারোটা বেজে গেছে । সুনিতা তাড়াতাড়ি হাঁটতে শুরু করল বাড়ির পথে । বাড়িতে অনেক কাজ বাকী । সে গুলো সেরে স্নান-খাওয়া করে আবার ছেলেকে নিতে আসতে হবে স্কুলে ।
-
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সুব্রত সামন্ত (বুবাই) ০৬/০৬/২০১৬কিছুটা হলেও অন্য রকম লাগল।
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ১১/০৫/২০১৬''-------শত সহস্র রাশি, প্রত্যহ যেতেছে ভাসি, তারই দু' চারটি-----''
একটি স্বার্থক ছোট গল্প, ধন্যবাদ। -
হাসান কাবীর ২৩/১১/২০১৫ভাল লেগেছে
-
নীল অপরাজিতা ০৩/১১/২০১৫খুব ভাল লাগল । অনেক অনেক শুভ কামনা রইল ।
-
মৃণ্ময় আলম ২০/১০/২০১৫চমৎকার
-
এস এম সাব্বির ১৬/১০/২০১৫বহত সুন্দর
-
নির্ঝর ১২/১০/২০১৫ভাল লাগল
-
তরীকুল ইসলাম সৈকত ১২/১০/২০১৫দেবব্রতদার সাথে একমত!!!
-
দেবব্রত সান্যাল ১২/১০/২০১৫তারুন্যে স্বাগত। গল্পটাকে আরেকটু গভীরে নিয়ে যেতে পারতেন।