অপারেশন পৃথিবী
০১
চোখ খুলেই চোখের যন্ত্রণা অনুভব করতে পারলেন ইকুচু পিকু । বেশ তীব্র ব্যথা । চোখের দু কোণ গলে পানি পড়ছে । কিন্তু যন্ত্রণার কোন কারণ বুঝতে পারছে না । তাকাতে কষ্ট হচ্ছে । মনে হয় আলোর সাথে এডজাস্ট হচ্ছে না । ইকুচু কতক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকল । মানুষের মত ওর দুটি চোখ নয় । একটি । ঠিক কপালের মাঝখানে । অদ্ভুত ব্যাপার । কিন্তু ওদের গ্রহে এটাই স্বাভাবিক ।
আসলে ইকুচু মানুষ নয় ; ভিন গ্রহের প্রাণী । খুব বুদ্ধিমান । আই কিউ ৭৮০ র উপরে । ওর গ্রহের অন্যান্যদের তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি । বয়স ৫৫৫ বছর । পৃথিবীর হিসাবে নয় ; ওদের হিসাবে । ছোট খাট গড়নের । দাঁড়ি - গোঁফ নেই । একদম লোমহীন শরীর ।
শিশু সুলভ চপলতা আছে ; কিন্তু ধীর স্থির ও সাবধানী ! তাই ওকে বাছাই করা হয়েছে । ওকে যে উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে --- তার নাম আপাকু পিথ্রী ! মানে অপারেশন পৃথিবী !
ওদের দেশের বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ দিন যাবত পৃথিবীর উপর নজর রাখছে । এই গ্রহের প্রাণীদের বিভিন্ন আচরণ তাদের ব্যাপক কৌতূহলী করে তুলেছে । তাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৃথিবীর একজন বুদ্ধিমান বালককে তুলে আনতে হবে । তার উপর গবেষণা করতে হবে । তাদের উন্নতি ও রহস্যের জাল ভেদ করতে হবে । যেই কথা সেই কাজ । ইকুচু পিকুর উপর পড়েছে সেই মহান কাজের দায়িত্ব । নেপচুনের বিজ্ঞানীরা মনে করেন উপযুক্ত পাত্রেই গুরু দায়িত্ব বর্তানো হয়েছে । কারণ এর আগেও এই ধরণের মিশনে আরও দুজনকে পাঠানো হয়েছিল ; কিন্তু তারা ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে তবেই হাল ছেড়েছে । তাই কর্তৃপক্ষ আশা করছে এবারের মিশন অবশ্যই সাকসেসফুল হবে ।
গরু হচ্ছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও চালাক প্রাণী । যাদের দিয়ে মানুষেরা হাল চাষ করায়, গাড়ী টানায়, দুধ দোহন করে , ঘোড়ার মত পিঠে চড়ে এবং কোরবানি করে মাংস খায় । এতকিছুর পরও গরুর শান্তি নাই । মানুষেরা গরুর চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করে, ব্যাগ বানায় । আমার মতে, সেই গরুকে যে রাখাল বালক মাঠে তাড়িয়ে নিয়ে যায়, লাঠি দিয়ে বেদম পেটায়, অতি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করেন ; সেই রাখালই হল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান । সুতরাং রাখালের উপর গবেষণা করলেই মানুষের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে । এই কথা বলে নেপচুনের মহাবিজ্ঞানী ইকলু পিচু মহা আনন্দে হি হি হি করে হেসে উঠলেন । উপস্থিত অন্যান্য বিজ্ঞানী ও গণ্য মান্য ব্যক্তিগণ করতালির মাধ্যমে অভিবাদন ও তাদের সমর্থন ব্যক্ত করলেন ।
০২
প্রতিদিনের মতই হাওড়ে গরু নিয়ে যায় আলু । মোটামুটি বড় হাওড় । বেশ দূরে গ্রাম দেখা যায় । ভর দুপুর । আশেপাশে ধানের ক্ষেত । কয়েকজন কৃষক কাজ করছে । আলু গরু গুলোকে মাঠে ছেড়ে দেয় । প্রচুর ঘাস দেখে আলুর মন ভরে যায় । তারপর মাথার উপর ভাঙা ছাতাটি উড়িয়ে ঘাসের বিছানায় শুয়ে পড়ে । আর বুক থেকে বেরিয়ে আসে একটি তৃপ্তির নিঃশ্বাস । ঘাড় ঘুরিয়ে একবার গরু গুলোকে দেখে নেয় আলু । না, ঠিক আছে । এবার ঘুম পরীর কথা ভাবতে থাকে । প্রতিদিনই গরু ছেড়ে দিয়ে আলু নিদ্রার কোলে ঢলে পড়ে । আহা কি সুখের নিদ !
ইকুচু পিকু অনেকটা স্বাভাবিক । চোখের ব্যথাটা আগের মত আর নেই । আলু যে মাঠে গরু চরাচ্ছে ; সেই মাঠের ঠিক মাঝখানে ইকুচু দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে । মনে মনে বলল , সবই ঠিক আছে ! কোন সমস্যাই নেই । শিকার সামনে ঘুমাচ্ছে । এই সময় হেড অফিস থেকে ইকলু পিচুর কণ্ঠ ভেসে আসে --
ইকুচু পিচু শুনতে পাচ্ছ ?
জী বস, শুনতে পাচ্ছি ।
কোন সমস্যা আছে ?
জী না বস ।
শুন, বেশি দেরি করা যাবে না । আশেপাশে কিছু মানুষ আছে । দেরী হলে তারা টের পেয়ে যেতে পারে । আলু ঘুমাচ্ছে আমি দেখতে পাচ্ছি । তুমি আর দেরি না করে ঘুমন্ত অবস্থায়ই ওকে তুলে নিয়ে আস । সাবধান কেউ যেন বুঝতে না পারে !
ইকুচু পিকু বলল, জী বস !
সাথে সাথে ওপাশ থেকে শুনা গেল , ওকে ; ওভার !
ইকুচু পিকু আলুর মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে । কী অদ্ভুত ! মাথায় ঘন কালো চুল । বড় বড় দুটি চোখ । কী সুন্দর ভ্রু ! আলুর নাকের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া নিঃশ্বাসের শব্দ শুনা যাচ্ছে । আলুর মুখের মায়া আর হাওড়ের বিশালতা ও সবুজের সমারোহ ইকুচু পিকুর মনে গভীর ভাবে রেখাপাত করে । মুহূর্তের জন্য আনমনা হয়ে যায় ইকুচু ।
সাথে সাথে হেড অফিস থেকে ইকলু পিচুর কণ্ঠ শুনা যায়, বেশ রাগত স্বরে, ইকুচু দেরি করছ কেন ? তোমার সামান্য ভুলে সমস্ত পরিকল্পনাটা ভেস্তে যেতে পারে ! হারি আপ ! তাড়াতাড়ি কর , ওভার ।
ইকুচু পিকু আমতা আমতা করে কোন রকমে বলল, জী বস, ওভার !
০৩
চোখ খুলেই আলু গরু খুঁজতে লাগলো । কিন্তু কোথাও গরুর গ ও দেখতে পেল না । আলু বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে গেল । গরু গুলো সব গেল কোথায় ? আসলে আলু জানেই না সে এখন কোথায় ! তার ঘুম ভেঙেছে নেপচুনের বিখ্যাত ল্যাবরেটরি কামাচু পাতিয়াগাতে । আলু শুধু এতটুকু বুঝতে পারল সে পরাণ পুরের মাঠে নেই । আলু কিছুটা চিন্তিত হল । মনে মনে ভাবতে লাগলো নিজের অবস্থান । কোন কূল কিনারা পেল না । তীব্র আলোর ঝলকানি । চারপাশে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির মেলা । ঘরের দরজা জানালা আছে বলে মনে হল না । আলু উঠে বসল । দু হাঁটুর মাঝখানে মাথা রেখে ভাবতে লাগলো কি ঘটেছে ? কিছুই মনে করতে পারল না ।
ইকুচু পিকুর সহকারী ইচুচু হন্ত দন্ত হয়ে ইকুচু পিকুর কাছে ছুটে গেল ।
কি ব্যাপার ইচুচু ?
বস, দারুণ ব্যাপার ! পৃথিবীর লোকটার ঘুম ভেঙ্গেছে ।
তাই নাকি !
জী বস !
চল, চল, তাড়াতাড়ি চল !
আপনা আপনি দরজা খুলে গেল । কোন শব্দ হয়নি । তারা দুজন সোজা আলুর সামনে দাঁড়াল । আলু তখনও মাথা নিচু করে আকাশ - পাতাল ভাবছে । কোন কথা না বলেই আলুকে তারা ধরে নিয়ে গেল নেপচুনের মহাবিজ্ঞানী ইকলু পিচুর কাছে । তিনি তখন আলুর ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সাথে মত বিনিময় করছেন । আলুকে দেখা মাত্র সবাই আচানক নীরব হয়ে গেলেন । মহাবিজ্ঞানী ইকলু পিচু ইশারায় আলুকে তার পাশে বসতে ইংগিত করলেন ।
আলু বসল না । তার কোন ভাবান্তর নেই । তবে এটুকু বুঝতে পারছে তাকে অপহরণ করা হয়েছে । এরা পৃথিবীর কোন মানুষ নয় । ভুত- প্রেত, দেও - দানো কিংবা জিন পরী জাতীয় কিছু একটা । তবে আলু মোটেই ভেঙে পড়েনি । ভেঙে পড়ার মত ছেলে সে নয় । শুধু তিনটি বিষয়ে সে কিছুটা চিন্তিত:
এক । মা
দুই । গরু
তিন । রাহেলা ( যার সাথে একটু একটু মন দেয়া নেয়া চলছে )
অকস্মাৎ মহাবিজ্ঞানী ইকলু পিচু নীরবতা ভেঙ্গে আলুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন -
আপনার নাম কি ?
জানি না --- আলু নির্ভীক কন্ঠে উত্তর দেয় ।
আমরা তো জানি আপনার নাম আলু । আপনি জানি না বলছেন কেন ? আপনার নামই কি জানি না ?
আলু আবার বলল, জানি না ।
মহাবিজ্ঞানী ধরে নিলেন, জানি না আলুর প্রকৃত নাম । নিক নেইম আলু ।
আচ্ছা আপনি কোথায় আছেন, সেটা কি আপনি জানেন ?
জানি না
আপনি বারবার আপনার নাম বলছেন কেন ?
আলু আবার বলল, জানিনা ।
গরু কিভাবে ডাকে ?
আলু উত্তরে বলল, জানি না ।
আচ্ছা আপনি কিভাবে গরুর মত বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান প্রাণীকে নিয়ন্ত্রণ করেন ?
জানি না ।
দয়া করে গরুর আচার আচরণ সম্পর্কে কিছু বলবেন কি ?
জানি না ।
মহাবিজ্ঞানী ইকলু কিছুমাত্র বিরক্ত না হয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন --- আচ্ছা আপনাদের মানুষদের এত উন্নতি ও সমৃদ্ধির রহস্য কি ?
জানি না ।
এবার মহাবিজ্ঞানী ইকলু ধীর স্থির অথচ কঠিন কণ্ঠে বললেন, উনাকে ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যান । পৃথিবী থেকে একটি গরু তুলে নিয়ে আসুন । গরু এবং মিঃ জানি না উনাদের দু জনকেই গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করে আমার কাছে রিপোর্ট উপস্থাপন করুন ।
জী বস, এই বলে আলুকে নিয়ে ইকুচু পিকু বেরিয়ে গেল ।
০৪
এদিকে একটি সংবাদ সারা পৃথিবী জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে । চীনা মহাকাশ সংস্থার বিজ্ঞানীদের রাডারে ধরা পড়েছে যে, বাংলাদেশ থেকে একটি ছেলেকে ভিনগ্রহের প্রাণীরা ধরে নিয়ে গেছে । তাদেরকে নেপচুনের দিকে যেতে দেখা গেছে । তারা সে ছবির ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে । ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া সহ সকল গণ মাধ্যম বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সংগে প্রচার করছে । সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের ঘুম হারাম । এ উপলক্ষে ঢাকায় আন্তঃমহাদেশীয় বিজ্ঞানীদের জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে ।
আলুর মা ও রাহেলার চোখে ঘুম নেই । আলুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । তাহলে কি আলুকেই ! আলুর মা আর ভাবতে পারে না । দু চোখ বেঁয়ে জল গড়িয়ে পড়ে । হায় আলু ! বাপ মরা ছেলে আমার । রাহেলা আলুর মাকে নিয়ে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থার অফিসে যায় এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে নিজের ছেলেকে শনাক্ত করে । বাংলাদেশ সরকার আলুর মায়ের দেখাশুনা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন । তাবৎ পৃথিবী থেকে সাংবাদিক ও বিজ্ঞানীরা আলুর মায়ের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য ছুটে আসছেন । আলুর জীবন আচরণ সম্পর্কে জানতে চাইছেন । রাহেলাও সাংবাদিকদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ।
বিজ্ঞানীরা এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন । কিন্তু কোন কারণ বের করতে পারেননি । কেউ কেউ এই বলে চীনা বিজ্ঞানীদের দোষারূপ করছেন যে, তারা যেহেতু বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন, তখন সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেয়ার দরকার ছিল । অবশ্য চীনাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, আমরা জানতে পারলেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি ।
০৫
নেপচুনের কামাচু পাতিয়াগা সংলগ্ন হল রুমে আজ গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন । এই সম্মেলনে বিজ্ঞানী ইকুচু পিকু আলু এবং গরু সম্পর্কে তাঁর মহামূল্যবান রিপোর্ট উপস্থাপন করবেন । ইতিমধ্যে সমস্ত বিজ্ঞানী ও নেপচুনের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গ সকলেই উপস্থিত হয়েছেন । ইকুচু পিকু সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শুরু করলেনঃ
আমি আপনাদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে আমার মত একজন নগণ্য বিজ্ঞানীর উপর আপনারা এত বড় গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছেন । আমি মিঃ জানি না ওরফে আলু এবং গরুকে নিয়ে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সহিত আমার গবেষণা সম্পন্ন করেছি । যার ফলাফল হলঃ
মিঃ জানি না ওরফে আলুঃ
লিঙ্গঃ পুরুষ
সেক্সP: QQQ3
IQ: 7800
ক্ষমতাঃ AAA+++
সততাঃ p1
দক্ষতাঃ NM2311
মিঃ গরুঃ
লিঙ্গঃ পুরুষ
সেক্সP: Q1
IQ: 240
ক্ষমতাঃ A
সততাঃ p1
দক্ষতাঃ NM231
উপস্থিত বিজ্ঞানীগণ, শুধু মাত্র সততা ইভেন্টে আলু এবং গরুর মধ্যে মিল পাওয়া গেছে । অন্যান্য ক্ষেত্রে মানুষ আমাদের তুলনায় অনেক অনেক বেশি বুদ্ধি ও ক্ষমতা সম্পন্ন । আমি মনে করি গরু সম্পর্কে আমাদের অতীতের ধারণা সম্পূর্ণরূপে ভুল । আমি আরও মনে করি মানুষই হল মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিচক্ষণ, ক্ষমতাবান ও বুদ্ধিমান প্রাণী । মিঃ জানি না ওরফে আলুকে আজই পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো উচিত । সকলকে ধন্যবাদ ।
উপস্থিত সকলেই করতালির মাধ্যমে এই বক্তব্যের সহিত ঐক্যমত পোষণ করলেন ।
০৬
আজ ঢাকায় আন্তঃমহাদেশীয় বিজ্ঞানীদের মহাসম্মেলন । এই সম্মেলনে নেপচুন অভিযানের খুঁটিনাটি বিষয় চূড়ান্ত হবে । যে করেই হোক আলুকে উদ্ধার করতে হবে । ভিনগ্রহবাসীদের অপতৎপরতার সমুচিত জবাব দিতে হবে । প্রয়োজনে নেপচুনসহ অন্যান্য গ্রহ দখল করতে হবে । মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে ।
সম্মেলন শুরু হয়ে গেছে । আলুর মা প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেছেন । রাহেলাকেও বিশেষ অতিথির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে । জাপানের একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মূল্যবান বক্তৃতা রাখছেন । এমন সময় বাইরে শোরগোল শুনা গেল । কয়েকজন হন্ত দন্ত হয়ে সম্মেলন কক্ষে ঢুকে পড়লেন । তাদের কাছ থেকে জানা গেল, এইমাত্র আলুকে সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে । সাথে রয়েছে একটি গরু । ভিনগ্রহ বাসীকে ধরা যায়নি, সে পালিয়ে গেছে ।
প্রধান অতিথির চেয়ার ছেড়ে আলুর মা দৌড়ে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন । রাহেলার চোখে মুখে মহাকাশ বিজয়ের হাসি ।
*****
চোখ খুলেই চোখের যন্ত্রণা অনুভব করতে পারলেন ইকুচু পিকু । বেশ তীব্র ব্যথা । চোখের দু কোণ গলে পানি পড়ছে । কিন্তু যন্ত্রণার কোন কারণ বুঝতে পারছে না । তাকাতে কষ্ট হচ্ছে । মনে হয় আলোর সাথে এডজাস্ট হচ্ছে না । ইকুচু কতক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকল । মানুষের মত ওর দুটি চোখ নয় । একটি । ঠিক কপালের মাঝখানে । অদ্ভুত ব্যাপার । কিন্তু ওদের গ্রহে এটাই স্বাভাবিক ।
আসলে ইকুচু মানুষ নয় ; ভিন গ্রহের প্রাণী । খুব বুদ্ধিমান । আই কিউ ৭৮০ র উপরে । ওর গ্রহের অন্যান্যদের তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি । বয়স ৫৫৫ বছর । পৃথিবীর হিসাবে নয় ; ওদের হিসাবে । ছোট খাট গড়নের । দাঁড়ি - গোঁফ নেই । একদম লোমহীন শরীর ।
শিশু সুলভ চপলতা আছে ; কিন্তু ধীর স্থির ও সাবধানী ! তাই ওকে বাছাই করা হয়েছে । ওকে যে উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে --- তার নাম আপাকু পিথ্রী ! মানে অপারেশন পৃথিবী !
ওদের দেশের বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ দিন যাবত পৃথিবীর উপর নজর রাখছে । এই গ্রহের প্রাণীদের বিভিন্ন আচরণ তাদের ব্যাপক কৌতূহলী করে তুলেছে । তাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৃথিবীর একজন বুদ্ধিমান বালককে তুলে আনতে হবে । তার উপর গবেষণা করতে হবে । তাদের উন্নতি ও রহস্যের জাল ভেদ করতে হবে । যেই কথা সেই কাজ । ইকুচু পিকুর উপর পড়েছে সেই মহান কাজের দায়িত্ব । নেপচুনের বিজ্ঞানীরা মনে করেন উপযুক্ত পাত্রেই গুরু দায়িত্ব বর্তানো হয়েছে । কারণ এর আগেও এই ধরণের মিশনে আরও দুজনকে পাঠানো হয়েছিল ; কিন্তু তারা ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে তবেই হাল ছেড়েছে । তাই কর্তৃপক্ষ আশা করছে এবারের মিশন অবশ্যই সাকসেসফুল হবে ।
গরু হচ্ছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও চালাক প্রাণী । যাদের দিয়ে মানুষেরা হাল চাষ করায়, গাড়ী টানায়, দুধ দোহন করে , ঘোড়ার মত পিঠে চড়ে এবং কোরবানি করে মাংস খায় । এতকিছুর পরও গরুর শান্তি নাই । মানুষেরা গরুর চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করে, ব্যাগ বানায় । আমার মতে, সেই গরুকে যে রাখাল বালক মাঠে তাড়িয়ে নিয়ে যায়, লাঠি দিয়ে বেদম পেটায়, অতি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করেন ; সেই রাখালই হল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান । সুতরাং রাখালের উপর গবেষণা করলেই মানুষের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে । এই কথা বলে নেপচুনের মহাবিজ্ঞানী ইকলু পিচু মহা আনন্দে হি হি হি করে হেসে উঠলেন । উপস্থিত অন্যান্য বিজ্ঞানী ও গণ্য মান্য ব্যক্তিগণ করতালির মাধ্যমে অভিবাদন ও তাদের সমর্থন ব্যক্ত করলেন ।
০২
প্রতিদিনের মতই হাওড়ে গরু নিয়ে যায় আলু । মোটামুটি বড় হাওড় । বেশ দূরে গ্রাম দেখা যায় । ভর দুপুর । আশেপাশে ধানের ক্ষেত । কয়েকজন কৃষক কাজ করছে । আলু গরু গুলোকে মাঠে ছেড়ে দেয় । প্রচুর ঘাস দেখে আলুর মন ভরে যায় । তারপর মাথার উপর ভাঙা ছাতাটি উড়িয়ে ঘাসের বিছানায় শুয়ে পড়ে । আর বুক থেকে বেরিয়ে আসে একটি তৃপ্তির নিঃশ্বাস । ঘাড় ঘুরিয়ে একবার গরু গুলোকে দেখে নেয় আলু । না, ঠিক আছে । এবার ঘুম পরীর কথা ভাবতে থাকে । প্রতিদিনই গরু ছেড়ে দিয়ে আলু নিদ্রার কোলে ঢলে পড়ে । আহা কি সুখের নিদ !
ইকুচু পিকু অনেকটা স্বাভাবিক । চোখের ব্যথাটা আগের মত আর নেই । আলু যে মাঠে গরু চরাচ্ছে ; সেই মাঠের ঠিক মাঝখানে ইকুচু দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে । মনে মনে বলল , সবই ঠিক আছে ! কোন সমস্যাই নেই । শিকার সামনে ঘুমাচ্ছে । এই সময় হেড অফিস থেকে ইকলু পিচুর কণ্ঠ ভেসে আসে --
ইকুচু পিচু শুনতে পাচ্ছ ?
জী বস, শুনতে পাচ্ছি ।
কোন সমস্যা আছে ?
জী না বস ।
শুন, বেশি দেরি করা যাবে না । আশেপাশে কিছু মানুষ আছে । দেরী হলে তারা টের পেয়ে যেতে পারে । আলু ঘুমাচ্ছে আমি দেখতে পাচ্ছি । তুমি আর দেরি না করে ঘুমন্ত অবস্থায়ই ওকে তুলে নিয়ে আস । সাবধান কেউ যেন বুঝতে না পারে !
ইকুচু পিকু বলল, জী বস !
সাথে সাথে ওপাশ থেকে শুনা গেল , ওকে ; ওভার !
ইকুচু পিকু আলুর মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে । কী অদ্ভুত ! মাথায় ঘন কালো চুল । বড় বড় দুটি চোখ । কী সুন্দর ভ্রু ! আলুর নাকের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া নিঃশ্বাসের শব্দ শুনা যাচ্ছে । আলুর মুখের মায়া আর হাওড়ের বিশালতা ও সবুজের সমারোহ ইকুচু পিকুর মনে গভীর ভাবে রেখাপাত করে । মুহূর্তের জন্য আনমনা হয়ে যায় ইকুচু ।
সাথে সাথে হেড অফিস থেকে ইকলু পিচুর কণ্ঠ শুনা যায়, বেশ রাগত স্বরে, ইকুচু দেরি করছ কেন ? তোমার সামান্য ভুলে সমস্ত পরিকল্পনাটা ভেস্তে যেতে পারে ! হারি আপ ! তাড়াতাড়ি কর , ওভার ।
ইকুচু পিকু আমতা আমতা করে কোন রকমে বলল, জী বস, ওভার !
০৩
চোখ খুলেই আলু গরু খুঁজতে লাগলো । কিন্তু কোথাও গরুর গ ও দেখতে পেল না । আলু বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে গেল । গরু গুলো সব গেল কোথায় ? আসলে আলু জানেই না সে এখন কোথায় ! তার ঘুম ভেঙেছে নেপচুনের বিখ্যাত ল্যাবরেটরি কামাচু পাতিয়াগাতে । আলু শুধু এতটুকু বুঝতে পারল সে পরাণ পুরের মাঠে নেই । আলু কিছুটা চিন্তিত হল । মনে মনে ভাবতে লাগলো নিজের অবস্থান । কোন কূল কিনারা পেল না । তীব্র আলোর ঝলকানি । চারপাশে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির মেলা । ঘরের দরজা জানালা আছে বলে মনে হল না । আলু উঠে বসল । দু হাঁটুর মাঝখানে মাথা রেখে ভাবতে লাগলো কি ঘটেছে ? কিছুই মনে করতে পারল না ।
ইকুচু পিকুর সহকারী ইচুচু হন্ত দন্ত হয়ে ইকুচু পিকুর কাছে ছুটে গেল ।
কি ব্যাপার ইচুচু ?
বস, দারুণ ব্যাপার ! পৃথিবীর লোকটার ঘুম ভেঙ্গেছে ।
তাই নাকি !
জী বস !
চল, চল, তাড়াতাড়ি চল !
আপনা আপনি দরজা খুলে গেল । কোন শব্দ হয়নি । তারা দুজন সোজা আলুর সামনে দাঁড়াল । আলু তখনও মাথা নিচু করে আকাশ - পাতাল ভাবছে । কোন কথা না বলেই আলুকে তারা ধরে নিয়ে গেল নেপচুনের মহাবিজ্ঞানী ইকলু পিচুর কাছে । তিনি তখন আলুর ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সাথে মত বিনিময় করছেন । আলুকে দেখা মাত্র সবাই আচানক নীরব হয়ে গেলেন । মহাবিজ্ঞানী ইকলু পিচু ইশারায় আলুকে তার পাশে বসতে ইংগিত করলেন ।
আলু বসল না । তার কোন ভাবান্তর নেই । তবে এটুকু বুঝতে পারছে তাকে অপহরণ করা হয়েছে । এরা পৃথিবীর কোন মানুষ নয় । ভুত- প্রেত, দেও - দানো কিংবা জিন পরী জাতীয় কিছু একটা । তবে আলু মোটেই ভেঙে পড়েনি । ভেঙে পড়ার মত ছেলে সে নয় । শুধু তিনটি বিষয়ে সে কিছুটা চিন্তিত:
এক । মা
দুই । গরু
তিন । রাহেলা ( যার সাথে একটু একটু মন দেয়া নেয়া চলছে )
অকস্মাৎ মহাবিজ্ঞানী ইকলু পিচু নীরবতা ভেঙ্গে আলুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন -
আপনার নাম কি ?
জানি না --- আলু নির্ভীক কন্ঠে উত্তর দেয় ।
আমরা তো জানি আপনার নাম আলু । আপনি জানি না বলছেন কেন ? আপনার নামই কি জানি না ?
আলু আবার বলল, জানি না ।
মহাবিজ্ঞানী ধরে নিলেন, জানি না আলুর প্রকৃত নাম । নিক নেইম আলু ।
আচ্ছা আপনি কোথায় আছেন, সেটা কি আপনি জানেন ?
জানি না
আপনি বারবার আপনার নাম বলছেন কেন ?
আলু আবার বলল, জানিনা ।
গরু কিভাবে ডাকে ?
আলু উত্তরে বলল, জানি না ।
আচ্ছা আপনি কিভাবে গরুর মত বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান প্রাণীকে নিয়ন্ত্রণ করেন ?
জানি না ।
দয়া করে গরুর আচার আচরণ সম্পর্কে কিছু বলবেন কি ?
জানি না ।
মহাবিজ্ঞানী ইকলু কিছুমাত্র বিরক্ত না হয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন --- আচ্ছা আপনাদের মানুষদের এত উন্নতি ও সমৃদ্ধির রহস্য কি ?
জানি না ।
এবার মহাবিজ্ঞানী ইকলু ধীর স্থির অথচ কঠিন কণ্ঠে বললেন, উনাকে ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যান । পৃথিবী থেকে একটি গরু তুলে নিয়ে আসুন । গরু এবং মিঃ জানি না উনাদের দু জনকেই গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করে আমার কাছে রিপোর্ট উপস্থাপন করুন ।
জী বস, এই বলে আলুকে নিয়ে ইকুচু পিকু বেরিয়ে গেল ।
০৪
এদিকে একটি সংবাদ সারা পৃথিবী জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে । চীনা মহাকাশ সংস্থার বিজ্ঞানীদের রাডারে ধরা পড়েছে যে, বাংলাদেশ থেকে একটি ছেলেকে ভিনগ্রহের প্রাণীরা ধরে নিয়ে গেছে । তাদেরকে নেপচুনের দিকে যেতে দেখা গেছে । তারা সে ছবির ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে । ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া সহ সকল গণ মাধ্যম বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সংগে প্রচার করছে । সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের ঘুম হারাম । এ উপলক্ষে ঢাকায় আন্তঃমহাদেশীয় বিজ্ঞানীদের জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে ।
আলুর মা ও রাহেলার চোখে ঘুম নেই । আলুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । তাহলে কি আলুকেই ! আলুর মা আর ভাবতে পারে না । দু চোখ বেঁয়ে জল গড়িয়ে পড়ে । হায় আলু ! বাপ মরা ছেলে আমার । রাহেলা আলুর মাকে নিয়ে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থার অফিসে যায় এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে নিজের ছেলেকে শনাক্ত করে । বাংলাদেশ সরকার আলুর মায়ের দেখাশুনা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন । তাবৎ পৃথিবী থেকে সাংবাদিক ও বিজ্ঞানীরা আলুর মায়ের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য ছুটে আসছেন । আলুর জীবন আচরণ সম্পর্কে জানতে চাইছেন । রাহেলাও সাংবাদিকদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ।
বিজ্ঞানীরা এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন । কিন্তু কোন কারণ বের করতে পারেননি । কেউ কেউ এই বলে চীনা বিজ্ঞানীদের দোষারূপ করছেন যে, তারা যেহেতু বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন, তখন সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেয়ার দরকার ছিল । অবশ্য চীনাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, আমরা জানতে পারলেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি ।
০৫
নেপচুনের কামাচু পাতিয়াগা সংলগ্ন হল রুমে আজ গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন । এই সম্মেলনে বিজ্ঞানী ইকুচু পিকু আলু এবং গরু সম্পর্কে তাঁর মহামূল্যবান রিপোর্ট উপস্থাপন করবেন । ইতিমধ্যে সমস্ত বিজ্ঞানী ও নেপচুনের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গ সকলেই উপস্থিত হয়েছেন । ইকুচু পিকু সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শুরু করলেনঃ
আমি আপনাদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে আমার মত একজন নগণ্য বিজ্ঞানীর উপর আপনারা এত বড় গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছেন । আমি মিঃ জানি না ওরফে আলু এবং গরুকে নিয়ে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সহিত আমার গবেষণা সম্পন্ন করেছি । যার ফলাফল হলঃ
মিঃ জানি না ওরফে আলুঃ
লিঙ্গঃ পুরুষ
সেক্সP: QQQ3
IQ: 7800
ক্ষমতাঃ AAA+++
সততাঃ p1
দক্ষতাঃ NM2311
মিঃ গরুঃ
লিঙ্গঃ পুরুষ
সেক্সP: Q1
IQ: 240
ক্ষমতাঃ A
সততাঃ p1
দক্ষতাঃ NM231
উপস্থিত বিজ্ঞানীগণ, শুধু মাত্র সততা ইভেন্টে আলু এবং গরুর মধ্যে মিল পাওয়া গেছে । অন্যান্য ক্ষেত্রে মানুষ আমাদের তুলনায় অনেক অনেক বেশি বুদ্ধি ও ক্ষমতা সম্পন্ন । আমি মনে করি গরু সম্পর্কে আমাদের অতীতের ধারণা সম্পূর্ণরূপে ভুল । আমি আরও মনে করি মানুষই হল মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিচক্ষণ, ক্ষমতাবান ও বুদ্ধিমান প্রাণী । মিঃ জানি না ওরফে আলুকে আজই পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো উচিত । সকলকে ধন্যবাদ ।
উপস্থিত সকলেই করতালির মাধ্যমে এই বক্তব্যের সহিত ঐক্যমত পোষণ করলেন ।
০৬
আজ ঢাকায় আন্তঃমহাদেশীয় বিজ্ঞানীদের মহাসম্মেলন । এই সম্মেলনে নেপচুন অভিযানের খুঁটিনাটি বিষয় চূড়ান্ত হবে । যে করেই হোক আলুকে উদ্ধার করতে হবে । ভিনগ্রহবাসীদের অপতৎপরতার সমুচিত জবাব দিতে হবে । প্রয়োজনে নেপচুনসহ অন্যান্য গ্রহ দখল করতে হবে । মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে ।
সম্মেলন শুরু হয়ে গেছে । আলুর মা প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেছেন । রাহেলাকেও বিশেষ অতিথির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে । জাপানের একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মূল্যবান বক্তৃতা রাখছেন । এমন সময় বাইরে শোরগোল শুনা গেল । কয়েকজন হন্ত দন্ত হয়ে সম্মেলন কক্ষে ঢুকে পড়লেন । তাদের কাছ থেকে জানা গেল, এইমাত্র আলুকে সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে । সাথে রয়েছে একটি গরু । ভিনগ্রহ বাসীকে ধরা যায়নি, সে পালিয়ে গেছে ।
প্রধান অতিথির চেয়ার ছেড়ে আলুর মা দৌড়ে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন । রাহেলার চোখে মুখে মহাকাশ বিজয়ের হাসি ।
*****
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কবি মোঃ ইকবাল ০৪/০৭/২০১৪বাহ্! দারুন লাগলো জসীম ভাই। অনন্য ভাবনায় লিখেছেন। খুব ভালো হয়েছে। শুভেচ্ছা রইলো।
-
সফিউল্লাহ আনসারী ০৪/০৭/২০১৪ভাল ! প্রকাশ...
-
Mahfuza Sultana ০৪/০৭/২০১৪অসাধারণ । অবশ্যই গরুর চেয়ে মিঃ জানিনা (মানুষ) অনেক
বেশি বুদ্ধিমান!!!
http://www.tarunyo.com/mahfuza30/blog/post20140529110248/
এই লিখাটি পড়ে , আমাকে আপনার মন্তব্য জানালে খুশি হব ।