পাহাড়ি কলেজ লাইফ (ঘটনা সূত্রপাত)
(৫)
কলেজে ক্লাশ শুরু হয়েছে তিন-চার মাস হয়ে গেল। বাংলা ও ইংলিশ ক্লাশ করতে হয় মানবিক, ব্যবসায় ও বিজ্ঞান বিভাগের সকল স্টুডেন্ট এক সাথে। এই ক্লাশ গুলোতে বেশী ভিড় হয়। বেঞ্চ পাওয়া যায় না। এদিকে স্যার বা ম্যাডামদের আওয়াজ মনে হয় ক্ষীন। পেছন দিকের ছাত্র-ছাত্রীরা মোটেই বুঝতে পারে না। অনেকে মোবাইল সাইলেন্ট মুডে রেখে গেইম খেলতে থাকে। কিন্তু তারা অনেক চেষ্টা করেন সবার মনোযোগ আর্কষন করতে। যদিও তা সব সময় হয়ে উঠে না ।
একদিন পরানী ম্যাডাম একটি নোটিশ নিয়ে এলেন। কলেজে নবীনবরন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে এক সপ্তাহ পরে। নবীন সকল ছাত্র-ছাত্রীকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য উক্ত অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, চট্টগ্রাম শিক্ষা র্বোডের একজন সহকারী পরিচালক ও স্থানীয় গুনীজন উপস্থিত থাকবেন।
অনন্যা দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, এতদিন পর কেন নবীনবরন, ম্যাম?
ম্যাডাম বলেন, এটা কলেজের সংস্কৃতি! যত দেরীতেই এই অনুষ্ঠান হোক না কেন, আমরা সবসময় তোমাদের একটি উন্নত আর আধুনিক শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করছি। তোমরা সবাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে। আর অন্য বন্ধুরা যারা আজ আসেনি তাদেরকেও জানিয়ে দেবে।
কিশোর ভাবে মন্দ কি, স্কুলেতো এমন অনুষ্ঠান হয়নি। সে জানতে চায়, এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য কি?
ম্যডাম বলেন,তোমরা যারা ফার্স্ট ইয়ারে পড়তে এসছো, এখানে তাদের ফরমালি বরন করা হবে। মানে শিক্ষকমন্ডলী তোমাদের সাথে পরিচিত হবেন, কলেজের পরিচিতি তোমাদের কাছে তুলে ধরবেন। পুরোনো ছাত্র-ছাত্রীরা তোমাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন ইত্যাদি। অতিথি হিসেবে আসবেন তারা তোমাদের উদ্দেশ্য প্রেরনামূলক বা উপদেশমূলক কিছু কথা বলবেন, যা তোমাদের কলেজ জীবন তথা ভবিষৎ জীবনে কাজে লাগবে। তিনি আরো বললেন, অনুষ্ঠানে আমাদের নবীনদেরও কিছু কাজ করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যারা কাজ করতে চাও, কলেজ শেষে আমাকে শিক্ষক মিলনায়তনে যোগাযোগ করবে।
কলেজ শেষে সব ছাত্র-ছাত্রীরা যার যার কাজে বা বাড়ির দিকে ফিরে গেল। থেকে গেল শুধু বর্ষা, অনন্যাদের গ্রুপটা । তারা ৬/৭ জন ম্যাডামের সাথে দেখা করল। ম্যাডাম বললেন, আমাদের কয়েক জন স্বেচ্ছাসেবক লাগবে যারা অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কাজে সাহায্যে করবে। তোমরা একটি কাগজে তোমাদের মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা লিখে দাও। আর একজন ছাত্র ও একজন ছাত্রী লাগবে যারা অনুষ্ঠানে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করবে।
অনন্যা বলল, ম্যাডাম বর্ষা স্কুলোত বির্তক গচ্ছে। তে পারিবো বক্তৃতা দি! কিন্তু বর্ষার মুখে জড়তা সে বলে, মুই ন’পারিম!
ম্যাডম বলেন, স্কুলোত বির্তক গরিলে তুই পারিবে। বেচ নয়, বানা দি-তিন মিনিট। তারা কথা বলার সময় আরো কয়েকজন আসল। হোসেন, রাফি, সুলতানা, বিধান মুৎসুদ্দি, জ্যাকসন রোয়াজা, আর অন্যরা। ওরা বলে, ম্যাম আমাদেরও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে রাখেন। এর মধ্যে হোসেন কিছু বলার জন্য তার নাম লিখতে বলে।
বর্ষারা কথা শেষ করে কলেজের বাইরে আসে। অনন্যার একটু বাজারে কাজ ছিল, সে বলে, যেই এক্কা বাজারে ঘুরি যেই। অনন্যার বাবা বেঁচে নেই, তার মাই একা সব কিছু সামলান। আজ মা বলেছে কলেজ শেষে একটু বাজার ঘুরে আসতে। কলেজ থেকে বাজার বেশি দূরে নয়।হাঁটতে হাটতেঁ ওরা বাজারে পৌছে গেল। প্রতি সপ্তাহে দুইবার এই বাজার বসে। স্থায়ী দোকান গুলোর বেশির ভাগ অপাহাড়িদের কিন্তু বাজার দিনে পাহাড়ি লোকের সমাগম বেড়ে যায়। দূর গ্রাম থেকেও চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরারা বাজারে নিজেদের জমির মাল বিক্রি করতে বা মুদি দ্রব্য কিনতে আসে। কিছু ব্যাপারী দেখা যায়, যারা জমিতেই কম দামে মাল কিনে বাজারে নিয়ে আসে। কিছু লাভ থাকে। এই সবজি ব্যাপারীদের মধ্যে পাহাড়ি বাঙালী সবাই মিলে মিশে বেচা কেনা করে। বাজার দিনে জুমের কিছু সবজি পাওয়া যায়, যেগুলো খুবই সুস্বাদু যেমন দুমুরসুমি, সুগুরিগুলো, কুমড়ো, সিমেই আলু, বেগোলবিজি, আমিলেগুলো ইত্যাদি। পাহাড়িদের সাধারনত প্রিয় সবজিগুলোর মধ্যে আছে ভাচ্চুরি, সাবারাং, এহরাকুজুবোল্লে, ধিঙিশাক প্রভৃতি। বাজারে ব্যপক ভিড়। দর কষাকষি আর বেচা কেনা চলছে সমানে।
অনন্যা বাচ্চুরি বিক্রেতা এক ত্রিপুরা মহিলাকে জিজ্ঞেস করল, কি দর?
জবাবা এল, ৩০ তাকা।
কেজি না বনা?
বন্দা ৩০ তাকা।
সে এক বনা হাতে তুলে নিল। অনেকে ঝাড়ের সবজি বিক্রি করতে আসে চুক্তি ভিত্তিতে। মানে ওজন বা পরিমাপ ছাড়া দরাদরী করা হয়। কেননা এদের ওজন করার পাল্লা নেই। তাই ত্রিপুরা মহিলারা আনুমানিক ১ কেজি পরিমান করে কলাগাছের রশি দিয়ে বেঁধে বাজারে নিয়ে আসে। কিছু কম বা বেশী হয়, তাতেও কাজ চলে যায়। তবে সব কিছ তারতাজা ফ্রেস। গড়বাজারে ব্যবসায়িদের কাছ থেকে সবজি কিনলে কেবল বাসি সবজি কিনতে হয়। অনন্যার ভাচ্চুরি কেনা হলে ওরা ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেল গুতগুত্তে বিক্রেতার দিকে। টক এই ফলটি লাল মরিচ ও চিদোল পুচ্চেলোই ওর ভালো লাগে। সে আরো গুড়ি মরিচ, পুজোক শাক, বিগুলবিজি আর সাবারাং কিনলো। কিশোর বলল, যেই এক্কা চা’ খেই, বলে সবাইকে একটি চা দোকানে আকর্ষন করল। মেয়েদের দোকানে বসে আড্ডা দেয়া বা চা খাওয়ার চর্চা তেমন নেই। তাই বর্ষা-অনন্যা অসম্মতি জানাল। কিশোর অনেকটা জোড় করে ওদের একটি ছোট্ট দোকানে নিয়ে গেল। মাঝে মাঝে সে ক্ষুধা লাগলে সেই দোকানে চা আর রুটি আর পানি খেয়ে নেয়। দোকানী তার পরিচিত গ্রামের এক দূর সর্ম্পকের দাদা। দোকানের এক পাশে কেরাম খেলছিল দুজন । ওরা চা খাবে এমন সময় এক জন কেরাম খেলোয়ার এগিয়ে এল।
বাহ্ কিশোর! ভালোই দ’ চলের! বলে তার কাধ ঝাঁকিয়ে দিল। কিশোর বলে-
এই দ’ ভাই গম। কি হবর?
ত’ সমাচ্চেউনদোই পরিচয় ন’গরেবে? ছেলেটির মুখে হাসি-কৌতুকে উজ্জল।
অনন্যা হাত তুলে বলে মুই অনন্যা, তে বর্ষা। বর্ষার মুখে মিষ্টি হাসি।
ছেলেটি কিছু বলার আগে কিশোর বলে ম’ সিনিয়র বাট বন্ধু, গৌরব।
গৌরব বলে মুই বিরাজচন্দ্র কলেজত। তে কী বাজার গল্লে অনন্যা?
এ মুহূর্তে অনন্যার মুঠোফোন বেজে ওঠে। সে ফোনে মাকে বলে এজঙর! এজঙর!
ওরা আর বেশিক্ষন আড্ডা চালিয়ে নিতে পারে না।
বর্ষা-অনন্যা টমটমে উঠে পড়ে। কিশোরও বাড়ির দিকে রওনা দেয় আজ আর তার টিউশনি নেই।
(৬)
বিরাজচন্দ্র কলেজটি করা হয়েছে পাচ বছর হলো বড় রাস্তার ধারে। বিদ্যানুরাগী বিরাজচন্দ্র চাকমা কোন স্কুলে পড়াশুনা করেননি, তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। পাচঁ ছেলেকে পড়ালেখা শিখেয়েছিলেন শুধুমাত্র কৃষিকাজ করে। তার ছেলেরাই অর্থ দিয়ে, জমি দিয়ে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিশোরের বন্ধু গৌরব এই কলেজের ছাত্র । আসলে সে ছিল এক ক্লাশ বড় কিন্তু নানা খেলাধুলার সাথী, তাই বন্ধুও বটে। স্কুলে ফুটবল খেলার সময় একদিন দুজনের বেশ বড় রকমের মারামারি লেগে গেছিল যে স্কুলের স্যারদের মধ্যস্ততা করতে হয়েছিল ঝগড়া থামাতে। তখন হাত মিলালেও কিশোরের মনে এখনো তার প্রতি কোন ভালোলাগা নেই। দেখা হলে তাই সে এরিয়ে চলতে চায়। গৌরবের মনে কি আছে সে জানে না তবে সে যেন একটু বিদ্রুপের সুরে কথা বলতে চায় সবসময়। চায়ের দোকানে সে গৌরবরকে দেখেও না দেখার ভাব করেছিল। তবুও সে যেহেতেু কাছে এগিয়ে এল তাই কথা বলতে হল। আর বন্ধুরা ছিল, কিভাবেই বা কথা না বলে থাকা যাবে? তবে জোড় করে তার বন্ধুদের সাথে পরিচিত হওয়াটা কিশোরের বিশেষ পছন্দ হয়নি। একদিন সন্ধ্যায় কিশোরের ফোনে গৌরবের গলা-
কি ভাই, চিন্নোচ নি?
কন্না? কিশোর বলে।
মুই, মুই!
কন্না তুই ? কিশোর বুঝতে পারে।
ও..মগদা …নচিনত্তে? গৌরবের গলায় বিদ্রুপ খিস্তি !
ক্ষোভে কিশোরও বলে, আন্দাজে কারে কি কচ?
ও রাধা! …বর্ষা লম্বরবো এক্কা দেনা?
বর্ষার নাম্বার চাচ্ছে শুনে মাথা গরম হয়ে গেল কিশোরের। নিজের অজান্তেই বলে উঠল-
মগদামো.. ন’চিন্যে ন’বুল্যে কাত্তুন কি মাগচ !?.. আরো কিছু গালি দিতে যেয়ে কিশোরের মুখ বন্ধ হয়ে গেল।
ফোনের অপর পাশ থেকেও নানা অশ্রাব্য ভেসে আসল। রাগে আর কিছুই বলতে না পেরে লাইন কেটে দিল কিশোর।
টিউশনি শেষে বাড়ি ফিরে কিছুক্ষন বিশ্রাম করে পড়তে বসেছিল সে। এমনি সময়ে ফোনটা এল। বর্ষার নাম্বার থাকলেও কোনদিন সে ফোন করেনি। বেয়াদপটা একদিন দেখা না হতেই ফোনে খাতির করতে চায়। মেয়েটা সবার সাথে ফ্রি মেলামেশা করে টিক আছে কিন্তু কোন বদ ছেলের পাল্লায় পড়ুক কিশোর কোন দিন তা হতে দেবে না।
দেশ-দুনিয়ার বেশি খবর না রাখলেও কিছু খবর কিশোর নিশ্চই জানে। কিছুদিন আগেই পঞ্চম শ্রেণীর একটি ত্রিপুরা বালিকাকে পাহাড়ের পাদদেশে রেপ করে মেরে ফেলা হয়েছে। বহু বছর আগে কল্পনা চাকমা নামে একটি মেয়ে অপহরন হয়েছিল যার খোঁজ আর কোনদিন পাওয়া যায়নি। এসব খবর সে তার দাদা তরুনের কাছ থেকে শুনেছে। পাহাড়ি মেয়েদের অপমান সে কোন দিন সহ্য করতে পাবে না। আর তার বন্ধুদেরও কোন বাজে ছেলের পাল্লায় পড়তে দিতে পারবে না সে। বর্ষাকে তার ভালোলাগে মিথ্যে নয় কিন্তু বর্ষার কাছ থেকে কোন সাড়া না পেলে কি আর তাকে কিছু বলা যায়? তাছাড়া মা বলে দিয়েছেন-“মিলেউনো পাগত নপুরিচ পুত! তরে এম এ পাশ গরেবঙ আমি। ত দা’ ছান চাজ গরি ন’পাচ পারা।“
তার দাদা তরুন রাঙামাটি কলেজে পড়তে গিয়েছিল এসএসসি পাস করার পর। ওখানে কাকার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করছিল ভালোই। এইচএসসিও সেকেন্ড ডিভিসনে পাস করেছিল। বিএসসি পড়াকালিন একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক হলে পড়াশুনা আর মন দিয়ে করতে পারে নি। তাই দুই বার পরীক্ষা ফেল করেছিল। সেই নিয়ে বাবা-কাকাদের মাঝেও মনোমালিন্যে দেখা দেয়। পরে বাবা বলেছিল আর পড়াশুনা করতে হবে না বাড়িতে এস। সেই থেকেই বাড়িতেই রয়েছে কোন চাকরি-বাকরি আর ধরতে পারেনি। কেই বা চাকরি দেবে ডিগ্রী ফেল একজনকে। জেলা পরিষদের এমএলএসএস চাকরির প্রস্তাব এসেছিল একজন দালালের কাছ থেকে। বলা হয়েছিল ২লাখ টাকা দিতে হবে নিয়োগ বোর্ডকে খুশি করার জন্য। দেওয়ান বাড়ির ছেলে ঝাড়ুমুছা করবে ! তাতে আবার ২ লাখ টাকা লাগবে! এক কথায় তিনি না বলে দিলেও তাদের মা চেষ্টা তদবির করার চেষ্টা করেছিলেন। পুরোনো দিনের গয়না বেচে লাখ খানিক টাকাও জোগার হয়েছিল। কিন্তু চাকরি আর হয়নি। তারপর থেকে দাদা চাষাবাদ, পশুপালন, বাগান সৃজন ইত্যাদি কাজ করছেন। তার বিয়েরও কথা বার্তা হচ্ছে।
কিশোরের হুট করে মনে হল বর্ষাকে একটু ফোন করে দেখি। ফোন রিং হলো, এক সময় কাটাও গেল। বর্ষা ফোন তুলল না। কিশোর ভাবল আজানা নাম্বার তাই হয়তো ফোন তুলছে না। সে ভাবল এসএমএস লিখি। লিখল- Hi, this is Kishor. R u busy? মোবাইলে বাংলা কিভাবে লেখে তার জানা নেই। কিছুক্ষন পর বর্ষা কল বেক করল।
হি হবর কিশোর?
এই দ’, তুই কি গরর?
বই পরঙর ! তার হাতে মোবাইল ফোন। সে পড়ছিল মুখবই!
সরি, ডিষ্টার্ব গল্লুং নাহি?
না না! ক’ না!... তততুন facebook account আগেদে নয়?
না, নেই!
বেক আগে, মরে ন’ক’ত্তে অহনি?
নাদে, নাদে । ঘিচ্চেকগুরি নেইদ’।
আচ্ছা শুননা, নবিনবরন অনুষ্ঠানত কি কোম এক্কা বুদ্ধি দেনা!
কিশোরের কোন অভিজ্ঞতা নেই তবু সে বলে- কি কবে লিঘি নেযেচ। মাইক ধরিলে কিচ্ছু ভেলে মনত ন’ উদে।
আচ্ছা মরে এক্কা স্পিচ লিঘি দিবে নাহি? বর্ষার অনুরোধ।
বাহ্ মরে কিত্তে, তুই না বেচ কাবিল!
প্লিজ, প্লিজ, বর্ষার গলায় আবদারের সুর। পরশু কলেজত আনিচ! বাই…
আচ্ছা আচছা চাং।
পাশের রুম থেকে বর্ষার মা বলে উঠে। বর্ষা! কদক্খন ফোনে কধা কবে। তার আওয়াজে বিরক্তি। বাজখাই গলায় তিনি আবার হাক দেন, বর্ষা !
কিশোর কি যেন বলতে বর্ষাকে ফোন দিয়েছিল তা বলতেই পারল না। যা হোক মেয়েটার জন্য একটা স্পিচ লিখে দিতে হবে। তার কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও স্কুলে ১ম পুরষ্কার নেয়া উপলক্ষে সে সব স্যারদের একবার ধন্যবাদ জানিয়েছিল। মাইকের কেমন যেন বিশ্রি আওয়াজ বেরিয়েছিল। সবাই কেমন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ছিল। তার মনে আছে মাইকের সামনে সে ছিল নার্ভাস আর হাত-পা কেপেঁছিল অনেকক্ষন। স্কুলে ভালো রেজাল্ট করার সুবাদে সে কিছু বই পুরষ্কার পেয়েছিল যার মধ্যে একটি বই আছে ‘কিভাবে ভালো বক্তা হওয়া যায়’ নামে একটি বই। সে ঠিক করল বর্ষার জন্য সেই বইটিই নিয়ে যাবে।
কলেজে ক্লাশ শুরু হয়েছে তিন-চার মাস হয়ে গেল। বাংলা ও ইংলিশ ক্লাশ করতে হয় মানবিক, ব্যবসায় ও বিজ্ঞান বিভাগের সকল স্টুডেন্ট এক সাথে। এই ক্লাশ গুলোতে বেশী ভিড় হয়। বেঞ্চ পাওয়া যায় না। এদিকে স্যার বা ম্যাডামদের আওয়াজ মনে হয় ক্ষীন। পেছন দিকের ছাত্র-ছাত্রীরা মোটেই বুঝতে পারে না। অনেকে মোবাইল সাইলেন্ট মুডে রেখে গেইম খেলতে থাকে। কিন্তু তারা অনেক চেষ্টা করেন সবার মনোযোগ আর্কষন করতে। যদিও তা সব সময় হয়ে উঠে না ।
একদিন পরানী ম্যাডাম একটি নোটিশ নিয়ে এলেন। কলেজে নবীনবরন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে এক সপ্তাহ পরে। নবীন সকল ছাত্র-ছাত্রীকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য উক্ত অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, চট্টগ্রাম শিক্ষা র্বোডের একজন সহকারী পরিচালক ও স্থানীয় গুনীজন উপস্থিত থাকবেন।
অনন্যা দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, এতদিন পর কেন নবীনবরন, ম্যাম?
ম্যাডাম বলেন, এটা কলেজের সংস্কৃতি! যত দেরীতেই এই অনুষ্ঠান হোক না কেন, আমরা সবসময় তোমাদের একটি উন্নত আর আধুনিক শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করছি। তোমরা সবাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে। আর অন্য বন্ধুরা যারা আজ আসেনি তাদেরকেও জানিয়ে দেবে।
কিশোর ভাবে মন্দ কি, স্কুলেতো এমন অনুষ্ঠান হয়নি। সে জানতে চায়, এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য কি?
ম্যডাম বলেন,তোমরা যারা ফার্স্ট ইয়ারে পড়তে এসছো, এখানে তাদের ফরমালি বরন করা হবে। মানে শিক্ষকমন্ডলী তোমাদের সাথে পরিচিত হবেন, কলেজের পরিচিতি তোমাদের কাছে তুলে ধরবেন। পুরোনো ছাত্র-ছাত্রীরা তোমাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন ইত্যাদি। অতিথি হিসেবে আসবেন তারা তোমাদের উদ্দেশ্য প্রেরনামূলক বা উপদেশমূলক কিছু কথা বলবেন, যা তোমাদের কলেজ জীবন তথা ভবিষৎ জীবনে কাজে লাগবে। তিনি আরো বললেন, অনুষ্ঠানে আমাদের নবীনদেরও কিছু কাজ করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যারা কাজ করতে চাও, কলেজ শেষে আমাকে শিক্ষক মিলনায়তনে যোগাযোগ করবে।
কলেজ শেষে সব ছাত্র-ছাত্রীরা যার যার কাজে বা বাড়ির দিকে ফিরে গেল। থেকে গেল শুধু বর্ষা, অনন্যাদের গ্রুপটা । তারা ৬/৭ জন ম্যাডামের সাথে দেখা করল। ম্যাডাম বললেন, আমাদের কয়েক জন স্বেচ্ছাসেবক লাগবে যারা অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কাজে সাহায্যে করবে। তোমরা একটি কাগজে তোমাদের মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা লিখে দাও। আর একজন ছাত্র ও একজন ছাত্রী লাগবে যারা অনুষ্ঠানে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করবে।
অনন্যা বলল, ম্যাডাম বর্ষা স্কুলোত বির্তক গচ্ছে। তে পারিবো বক্তৃতা দি! কিন্তু বর্ষার মুখে জড়তা সে বলে, মুই ন’পারিম!
ম্যাডম বলেন, স্কুলোত বির্তক গরিলে তুই পারিবে। বেচ নয়, বানা দি-তিন মিনিট। তারা কথা বলার সময় আরো কয়েকজন আসল। হোসেন, রাফি, সুলতানা, বিধান মুৎসুদ্দি, জ্যাকসন রোয়াজা, আর অন্যরা। ওরা বলে, ম্যাম আমাদেরও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে রাখেন। এর মধ্যে হোসেন কিছু বলার জন্য তার নাম লিখতে বলে।
বর্ষারা কথা শেষ করে কলেজের বাইরে আসে। অনন্যার একটু বাজারে কাজ ছিল, সে বলে, যেই এক্কা বাজারে ঘুরি যেই। অনন্যার বাবা বেঁচে নেই, তার মাই একা সব কিছু সামলান। আজ মা বলেছে কলেজ শেষে একটু বাজার ঘুরে আসতে। কলেজ থেকে বাজার বেশি দূরে নয়।হাঁটতে হাটতেঁ ওরা বাজারে পৌছে গেল। প্রতি সপ্তাহে দুইবার এই বাজার বসে। স্থায়ী দোকান গুলোর বেশির ভাগ অপাহাড়িদের কিন্তু বাজার দিনে পাহাড়ি লোকের সমাগম বেড়ে যায়। দূর গ্রাম থেকেও চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরারা বাজারে নিজেদের জমির মাল বিক্রি করতে বা মুদি দ্রব্য কিনতে আসে। কিছু ব্যাপারী দেখা যায়, যারা জমিতেই কম দামে মাল কিনে বাজারে নিয়ে আসে। কিছু লাভ থাকে। এই সবজি ব্যাপারীদের মধ্যে পাহাড়ি বাঙালী সবাই মিলে মিশে বেচা কেনা করে। বাজার দিনে জুমের কিছু সবজি পাওয়া যায়, যেগুলো খুবই সুস্বাদু যেমন দুমুরসুমি, সুগুরিগুলো, কুমড়ো, সিমেই আলু, বেগোলবিজি, আমিলেগুলো ইত্যাদি। পাহাড়িদের সাধারনত প্রিয় সবজিগুলোর মধ্যে আছে ভাচ্চুরি, সাবারাং, এহরাকুজুবোল্লে, ধিঙিশাক প্রভৃতি। বাজারে ব্যপক ভিড়। দর কষাকষি আর বেচা কেনা চলছে সমানে।
অনন্যা বাচ্চুরি বিক্রেতা এক ত্রিপুরা মহিলাকে জিজ্ঞেস করল, কি দর?
জবাবা এল, ৩০ তাকা।
কেজি না বনা?
বন্দা ৩০ তাকা।
সে এক বনা হাতে তুলে নিল। অনেকে ঝাড়ের সবজি বিক্রি করতে আসে চুক্তি ভিত্তিতে। মানে ওজন বা পরিমাপ ছাড়া দরাদরী করা হয়। কেননা এদের ওজন করার পাল্লা নেই। তাই ত্রিপুরা মহিলারা আনুমানিক ১ কেজি পরিমান করে কলাগাছের রশি দিয়ে বেঁধে বাজারে নিয়ে আসে। কিছু কম বা বেশী হয়, তাতেও কাজ চলে যায়। তবে সব কিছ তারতাজা ফ্রেস। গড়বাজারে ব্যবসায়িদের কাছ থেকে সবজি কিনলে কেবল বাসি সবজি কিনতে হয়। অনন্যার ভাচ্চুরি কেনা হলে ওরা ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেল গুতগুত্তে বিক্রেতার দিকে। টক এই ফলটি লাল মরিচ ও চিদোল পুচ্চেলোই ওর ভালো লাগে। সে আরো গুড়ি মরিচ, পুজোক শাক, বিগুলবিজি আর সাবারাং কিনলো। কিশোর বলল, যেই এক্কা চা’ খেই, বলে সবাইকে একটি চা দোকানে আকর্ষন করল। মেয়েদের দোকানে বসে আড্ডা দেয়া বা চা খাওয়ার চর্চা তেমন নেই। তাই বর্ষা-অনন্যা অসম্মতি জানাল। কিশোর অনেকটা জোড় করে ওদের একটি ছোট্ট দোকানে নিয়ে গেল। মাঝে মাঝে সে ক্ষুধা লাগলে সেই দোকানে চা আর রুটি আর পানি খেয়ে নেয়। দোকানী তার পরিচিত গ্রামের এক দূর সর্ম্পকের দাদা। দোকানের এক পাশে কেরাম খেলছিল দুজন । ওরা চা খাবে এমন সময় এক জন কেরাম খেলোয়ার এগিয়ে এল।
বাহ্ কিশোর! ভালোই দ’ চলের! বলে তার কাধ ঝাঁকিয়ে দিল। কিশোর বলে-
এই দ’ ভাই গম। কি হবর?
ত’ সমাচ্চেউনদোই পরিচয় ন’গরেবে? ছেলেটির মুখে হাসি-কৌতুকে উজ্জল।
অনন্যা হাত তুলে বলে মুই অনন্যা, তে বর্ষা। বর্ষার মুখে মিষ্টি হাসি।
ছেলেটি কিছু বলার আগে কিশোর বলে ম’ সিনিয়র বাট বন্ধু, গৌরব।
গৌরব বলে মুই বিরাজচন্দ্র কলেজত। তে কী বাজার গল্লে অনন্যা?
এ মুহূর্তে অনন্যার মুঠোফোন বেজে ওঠে। সে ফোনে মাকে বলে এজঙর! এজঙর!
ওরা আর বেশিক্ষন আড্ডা চালিয়ে নিতে পারে না।
বর্ষা-অনন্যা টমটমে উঠে পড়ে। কিশোরও বাড়ির দিকে রওনা দেয় আজ আর তার টিউশনি নেই।
(৬)
বিরাজচন্দ্র কলেজটি করা হয়েছে পাচ বছর হলো বড় রাস্তার ধারে। বিদ্যানুরাগী বিরাজচন্দ্র চাকমা কোন স্কুলে পড়াশুনা করেননি, তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। পাচঁ ছেলেকে পড়ালেখা শিখেয়েছিলেন শুধুমাত্র কৃষিকাজ করে। তার ছেলেরাই অর্থ দিয়ে, জমি দিয়ে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিশোরের বন্ধু গৌরব এই কলেজের ছাত্র । আসলে সে ছিল এক ক্লাশ বড় কিন্তু নানা খেলাধুলার সাথী, তাই বন্ধুও বটে। স্কুলে ফুটবল খেলার সময় একদিন দুজনের বেশ বড় রকমের মারামারি লেগে গেছিল যে স্কুলের স্যারদের মধ্যস্ততা করতে হয়েছিল ঝগড়া থামাতে। তখন হাত মিলালেও কিশোরের মনে এখনো তার প্রতি কোন ভালোলাগা নেই। দেখা হলে তাই সে এরিয়ে চলতে চায়। গৌরবের মনে কি আছে সে জানে না তবে সে যেন একটু বিদ্রুপের সুরে কথা বলতে চায় সবসময়। চায়ের দোকানে সে গৌরবরকে দেখেও না দেখার ভাব করেছিল। তবুও সে যেহেতেু কাছে এগিয়ে এল তাই কথা বলতে হল। আর বন্ধুরা ছিল, কিভাবেই বা কথা না বলে থাকা যাবে? তবে জোড় করে তার বন্ধুদের সাথে পরিচিত হওয়াটা কিশোরের বিশেষ পছন্দ হয়নি। একদিন সন্ধ্যায় কিশোরের ফোনে গৌরবের গলা-
কি ভাই, চিন্নোচ নি?
কন্না? কিশোর বলে।
মুই, মুই!
কন্না তুই ? কিশোর বুঝতে পারে।
ও..মগদা …নচিনত্তে? গৌরবের গলায় বিদ্রুপ খিস্তি !
ক্ষোভে কিশোরও বলে, আন্দাজে কারে কি কচ?
ও রাধা! …বর্ষা লম্বরবো এক্কা দেনা?
বর্ষার নাম্বার চাচ্ছে শুনে মাথা গরম হয়ে গেল কিশোরের। নিজের অজান্তেই বলে উঠল-
মগদামো.. ন’চিন্যে ন’বুল্যে কাত্তুন কি মাগচ !?.. আরো কিছু গালি দিতে যেয়ে কিশোরের মুখ বন্ধ হয়ে গেল।
ফোনের অপর পাশ থেকেও নানা অশ্রাব্য ভেসে আসল। রাগে আর কিছুই বলতে না পেরে লাইন কেটে দিল কিশোর।
টিউশনি শেষে বাড়ি ফিরে কিছুক্ষন বিশ্রাম করে পড়তে বসেছিল সে। এমনি সময়ে ফোনটা এল। বর্ষার নাম্বার থাকলেও কোনদিন সে ফোন করেনি। বেয়াদপটা একদিন দেখা না হতেই ফোনে খাতির করতে চায়। মেয়েটা সবার সাথে ফ্রি মেলামেশা করে টিক আছে কিন্তু কোন বদ ছেলের পাল্লায় পড়ুক কিশোর কোন দিন তা হতে দেবে না।
দেশ-দুনিয়ার বেশি খবর না রাখলেও কিছু খবর কিশোর নিশ্চই জানে। কিছুদিন আগেই পঞ্চম শ্রেণীর একটি ত্রিপুরা বালিকাকে পাহাড়ের পাদদেশে রেপ করে মেরে ফেলা হয়েছে। বহু বছর আগে কল্পনা চাকমা নামে একটি মেয়ে অপহরন হয়েছিল যার খোঁজ আর কোনদিন পাওয়া যায়নি। এসব খবর সে তার দাদা তরুনের কাছ থেকে শুনেছে। পাহাড়ি মেয়েদের অপমান সে কোন দিন সহ্য করতে পাবে না। আর তার বন্ধুদেরও কোন বাজে ছেলের পাল্লায় পড়তে দিতে পারবে না সে। বর্ষাকে তার ভালোলাগে মিথ্যে নয় কিন্তু বর্ষার কাছ থেকে কোন সাড়া না পেলে কি আর তাকে কিছু বলা যায়? তাছাড়া মা বলে দিয়েছেন-“মিলেউনো পাগত নপুরিচ পুত! তরে এম এ পাশ গরেবঙ আমি। ত দা’ ছান চাজ গরি ন’পাচ পারা।“
তার দাদা তরুন রাঙামাটি কলেজে পড়তে গিয়েছিল এসএসসি পাস করার পর। ওখানে কাকার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করছিল ভালোই। এইচএসসিও সেকেন্ড ডিভিসনে পাস করেছিল। বিএসসি পড়াকালিন একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক হলে পড়াশুনা আর মন দিয়ে করতে পারে নি। তাই দুই বার পরীক্ষা ফেল করেছিল। সেই নিয়ে বাবা-কাকাদের মাঝেও মনোমালিন্যে দেখা দেয়। পরে বাবা বলেছিল আর পড়াশুনা করতে হবে না বাড়িতে এস। সেই থেকেই বাড়িতেই রয়েছে কোন চাকরি-বাকরি আর ধরতে পারেনি। কেই বা চাকরি দেবে ডিগ্রী ফেল একজনকে। জেলা পরিষদের এমএলএসএস চাকরির প্রস্তাব এসেছিল একজন দালালের কাছ থেকে। বলা হয়েছিল ২লাখ টাকা দিতে হবে নিয়োগ বোর্ডকে খুশি করার জন্য। দেওয়ান বাড়ির ছেলে ঝাড়ুমুছা করবে ! তাতে আবার ২ লাখ টাকা লাগবে! এক কথায় তিনি না বলে দিলেও তাদের মা চেষ্টা তদবির করার চেষ্টা করেছিলেন। পুরোনো দিনের গয়না বেচে লাখ খানিক টাকাও জোগার হয়েছিল। কিন্তু চাকরি আর হয়নি। তারপর থেকে দাদা চাষাবাদ, পশুপালন, বাগান সৃজন ইত্যাদি কাজ করছেন। তার বিয়েরও কথা বার্তা হচ্ছে।
কিশোরের হুট করে মনে হল বর্ষাকে একটু ফোন করে দেখি। ফোন রিং হলো, এক সময় কাটাও গেল। বর্ষা ফোন তুলল না। কিশোর ভাবল আজানা নাম্বার তাই হয়তো ফোন তুলছে না। সে ভাবল এসএমএস লিখি। লিখল- Hi, this is Kishor. R u busy? মোবাইলে বাংলা কিভাবে লেখে তার জানা নেই। কিছুক্ষন পর বর্ষা কল বেক করল।
হি হবর কিশোর?
এই দ’, তুই কি গরর?
বই পরঙর ! তার হাতে মোবাইল ফোন। সে পড়ছিল মুখবই!
সরি, ডিষ্টার্ব গল্লুং নাহি?
না না! ক’ না!... তততুন facebook account আগেদে নয়?
না, নেই!
বেক আগে, মরে ন’ক’ত্তে অহনি?
নাদে, নাদে । ঘিচ্চেকগুরি নেইদ’।
আচ্ছা শুননা, নবিনবরন অনুষ্ঠানত কি কোম এক্কা বুদ্ধি দেনা!
কিশোরের কোন অভিজ্ঞতা নেই তবু সে বলে- কি কবে লিঘি নেযেচ। মাইক ধরিলে কিচ্ছু ভেলে মনত ন’ উদে।
আচ্ছা মরে এক্কা স্পিচ লিঘি দিবে নাহি? বর্ষার অনুরোধ।
বাহ্ মরে কিত্তে, তুই না বেচ কাবিল!
প্লিজ, প্লিজ, বর্ষার গলায় আবদারের সুর। পরশু কলেজত আনিচ! বাই…
আচ্ছা আচছা চাং।
পাশের রুম থেকে বর্ষার মা বলে উঠে। বর্ষা! কদক্খন ফোনে কধা কবে। তার আওয়াজে বিরক্তি। বাজখাই গলায় তিনি আবার হাক দেন, বর্ষা !
কিশোর কি যেন বলতে বর্ষাকে ফোন দিয়েছিল তা বলতেই পারল না। যা হোক মেয়েটার জন্য একটা স্পিচ লিখে দিতে হবে। তার কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও স্কুলে ১ম পুরষ্কার নেয়া উপলক্ষে সে সব স্যারদের একবার ধন্যবাদ জানিয়েছিল। মাইকের কেমন যেন বিশ্রি আওয়াজ বেরিয়েছিল। সবাই কেমন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ছিল। তার মনে আছে মাইকের সামনে সে ছিল নার্ভাস আর হাত-পা কেপেঁছিল অনেকক্ষন। স্কুলে ভালো রেজাল্ট করার সুবাদে সে কিছু বই পুরষ্কার পেয়েছিল যার মধ্যে একটি বই আছে ‘কিভাবে ভালো বক্তা হওয়া যায়’ নামে একটি বই। সে ঠিক করল বর্ষার জন্য সেই বইটিই নিয়ে যাবে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দীপঙ্কর বেরা ১৭/০৯/২০২০
-
কুমারেশ সরদার ০২/০৯/২০২০বাহ্!
-
ফয়জুল মহী ০২/০৯/২০২০অনন্যসাধারণ .
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০১/০৯/২০২০ভালো।
ভাল বিষয়