শিলঙে গরমে হিমেল পরশ আর বর্ষায় ঝর্নার গান (৩)
এলিফ্যন্ট ফলস
আমাদের ২য় গন্তব্য ছিল শিলং পিক। যেখান থেকে পুরো শিলং সিটির ভিউ দেখা যায়। আঁকা বাঁকা পথ ধরে আবার চলতে শুরু করল আমাদের ইনোভা। গাড়িতে উঠার আগে টয়লেট সেরে নিলাম আমরা ৫টাকার বিনিময়ে। এটা একটা ভালো দিক যে সব বেড়ানোর জায়গাতেই এখানে টয়লেটের ব্যবস্থা থাকে। তাই বিশেষ করে মেয়ে বা মহিলাদের জন্য ইন্ডিয়া অনেক কর্ম্ফোটেবল। কুড়ি বা ত্রিশ মিনিটের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম পিক-এ বা উঁচুতে। রাস্তায় দেখলাম কিছু চাষের জমি যেখানে সবজি চাষ করেছে স্থানীয় আদিবাসীরা। রাস্তার পাশেই আবার খুপড়ি দোকানে সেগুলো বিক্রিও চলছে। আমাদের ভাগ্য ছিল খারাপ, তাই দিনটি ছিল বুধবার, বন্ধের দিন। আমাদের মতো অনেক গাড়ি ফেরত চলে আসছিল। ড্রাইভার বলছিল যে, সে নিশ্চিত নয় খোলা পাবো কিনা। আসলে পিক পয়েন্ট যেতে হলে সরকারী একটি অফিসের ক্যাম্পাস দিয়ে যেতে হয়। অফিসটি বিমান বাহিনীর, ফলে পরিচয় পত্র চেক করে তবে প্রবেশ করতে দেয়। সে বিষয়ে লিখবো আরো পরে আমার ২য় বার ভ্রমনের সময়। যা হোক আমরা ব্যর্থ মনোরথে ফিরতে মনে হলো কিছু সবজি নিয়ে নিই। আমরা সে দিন সন্ধ্যায় আবার গৌহাটি এয়ারপোর্ট থেকে প্লেন ধরার কথা কলকাতার উদ্দেশ্যে। শীতকালিন কিছু সবজি কেনার পর দেখলাম একটি ব্যতিক্রমী জিনিস, ওরা বলে ওটা লোকাল ফল। কালো রংয়ের জামের মতো দেখতে। ১০ রুপিতে পাওয়া গেল ১০টির মতো। খেয়ে দেখলাম, টক-মিষ্টি, মন্দ নয়। ভেতরে বিচি বা বীজের আকারটি বড় হওয়ায় মাংস কম। যা হোক নতুন জায়গায় নতুন অদেখা ফল, ভালোই লাগল।
গরমকালে শীতের সবজি
উচু পাহাড় থেকে নেমে আমরা চলে এলাম শহরের মাঝখানে ওয়ার্ডস লেক-এ। এত উচুতেও প্রাকৃতিক লেক বেশ দারুন। খুব সুন্দর করে সাজানো। টিকেট কেটে প্রবেশ করতে হয় নির্দিষ্ট সময়ে। শীত কাল/ গরম কাল ভেদে খোলা দিন দেখে যেতে হবে। লোকালদের মেমবারশীপও দেয়া হয় তাদের জন্য আলাদা সুবিধা আছে। বিশেষ করে সকালের মনিং ওয়ার্ক সময়ে টুরিস্টদের প্রবেশ নিষেধ। যা হোক আমরা ভেতর প্রবেশ করলাম। লম্বাটে লেকটির মাঝখানে কাঠের ব্রিজ দিয়ে ভাগ করা। শান বাধানো পায়ে হাঁটার ফুটপাথ। বাহারি ফুল পাতার বাগান মন জুরিয়ে যায়। প্যাডেল বোট কিছু জলে ভাসছে। কিন্তু ওগুলো চালানো যাবে বিকালে। সবকিছু মিলিয়ে স্বর্গোদ্বানের মতোই মনে হলো।
এর মধ্যেই খাবারের সময় হয়েছে। আমরা চলে গেলাম পুলিশবাজার। ওখানে বাঙালী হোটেল সুরুচী আগে থেকেই একজনের পরিচিত ছিল। একটু খুঁজে পাওয়া গেল। ৮০০ রুপির মধ্যেই ৪ জনের পেটপুরো খাবার হয়ে গেল। সাদাভাত, চিকেন, সবজি, ডাল, সালাত। ইন্ডিয়ার সকল জায়গায় বাংলাদেশীদের খাবার খেতে একটু সমস্যা বোধ হতে পারে। কেননা গরুর মাংস মিলবে না কোথাও। মাছও সকল জায়গায় সবসময় পাওয়া যায় না। তবে ভাত-ডাল খাওয়া যায় ফ্রি, যত খুশি। ভাতের সাথে পাপর ও বুটের বা চনার ডাল খুব কমন।
শিলঙের পুলিশ বাজার হচ্ছে ঢাকার গুলিস্থান। তবে গুলমারার স্থান নয়। হোটেল, সপিং ও যোগাযোগের কেন্দ্র। এখানে আছে মেঘালয়া ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (এমটিসি) ছোট্ট বাস স্টেশন। প্রতিদিন গৌহটি, শিলচর, শিলিগুড়ি বা কাছাকাছি অন্য শহরে যাবার গাড়ি পাওয়া যায় এখানে। পুলিশ বাজারের কাছেই পাহাড়ের একটু নিচে পলো বড় বাস স্টেশন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চারদিক, বৃষ্টি হলেই সব ময়লা ধুয়ে নিয়ে যায়।
শিলং শহর প্রায় ৫০০০ ফুট উচু। ৫০০ তলা বিল্ডিংএর সমান। পৃথিবী সর্ব্বোচ্চ বুর্জ খলিফা ১৬৪ তলা। পাশের গৌহাটিতে ৩৮ ডিগ্রী গরম হলে এখানে ২০-২২ ডিগ্রী মানে আরামের পরশ। শীতে ৮-১০ ডিগ্রী। গরম বা বর্ষা কালে এখানে ফুলকপি, বাধাকপি ইত্যাদি বাঙলাদেশের শীতের সবজি চাষ হয়। কেননা বৃষ্টি থাকে মাটিতে ফলন হয় ভালো। শীতে শুকনো,পানি নেই ফলনও হয় না।
মেঘালয়ায় মোটামুটি ৩০ লাখে লোকের মধ্যে ৮৫ ভাগই সিডিউল ট্রাইব। তার মধ্যে খাসিয়া, জয়ন্তিয়া ও গারোরা সংখ্যা গড়িষ্ট। সবাই খাসিয়াদের বলে খাসি! বাংলাদেশীদের খাসি শুনলে প্রথমে খাসির গোস্তর কথা মনে হয় ! খাসিয়া, জয়ন্তিয়া ও গারোদের আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকলেও বোঝার উপায় নেই। তবে ডোরাকাটা কাপড় এক কাঁধ ও বুকের উপর আড়াআড়ি ড্রেসপরা খাসিয়া মেয়েদের দেখা যায় সহজেই। তাদের নিজেদের আলাদা ভাষা থাকলেও বাকিদের সাথে কথা বলে হিন্দিতে। ইংলিশটাও মোটামুটি সবাই চালিয়ে নিতে পারে।
বিকাল ৬টায় গৌহাটি থেকে কলকাতা ফ্লাইট ধরতে কমপক্ষে এক-দেড় ঘন্টা আগে এয়ারপোর্ট পৌছতে হবে। আড়াইটার দিকে রওনা হলাম গৌহাটি। শিলং শহর ছেড়ে ইনোভা পাহাড় নামতে লাগল তীব্র গতিতে। এখন নিচের দিকে ঢালু রাস্তা। মনে মনে শিলংকে বলে এলাম আমি আবার আসবো। আরো অনেক রয়েছে বাকি। গাড়িতে বাজতে লাগল আসামী বিখ্যাত গান —
…ট্যাক্সি গাড়িলোই যাম শিলঙত…
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জ্যোতি রমণ বিশ্বাস ১১/০৭/২০২০সুন্দর বর্নণা
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ০৬/০৭/২০২০সুন্দর হয়েছে।