রি-ইউনিয়ন
একেক দিন কি যে সব স্বপ্ন দেখি মাথা মুণ্ড থাকে না। ভোরের দিকেই হবে বোধ হয়, দেখলাম পরানচক শিক্ষা নিকেতনের রি-ইউনিয়ন। সব বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে স্কুলে গিয়ে হাজির এমনকি ছেলেমেয়েরাও সঙ্গে আছে। ওরা কিন্তু বেশ মজা পেয়েছে!
স্কুলে পৌঁছে সটান খেলার মাঠে। মাঠে তখন ফুটবল খেলা চলছে, এনুয়াল স্পোর্টস! স্যারেদের সঙ্গে সিক্স- বি! দারুণ উত্তেজনা পূর্ণ খেলা! সিক্স- বি র গোলকিপার আমাদের রাধাকৃষ্ণ বাবু। একটু বয়স হয়েছে তাই স্যারেদের টিমে ব্রাত্য, তবে ওনার দুরন্ত ফুটবল প্রেম ওনাকে দূরে থাকতে দেয়নি, তাই সিক্স- বি র হয়ে নেমে পড়েছেন।
ও দিকে সুব্রত বাবু দুরন্ত ড্রিবলিঙে বারবার সবাই কে টপকে একের পর এক গোল করতে চলে আসছেন কিন্তু রাধাকৃষ্ণ বাবু চীনের প্রাচীরের মতো সব প্রয়াস আটকে দিচ্ছেন। এসব দেখে পার্থ বাবু রেগে টং! মাঝ মাঠে দাঁড়িয়ে হুংকার ছাড়ছেন “এই বুড়োদের নিয়ে হয়েছে এক জ্বালা! কোথায় ছেলে ছোকরাদের মতো এদিক সেদিক ডাইভ দেবে! দু-একটা বল এদিক ওদিক থেকে গলে গোল হয়ে যাবে! তা নয়! ঠুঁটো জগন্নাথের মত বলের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছে! কোন মানে হয়!
সুস্মিতার মেয়ে মিঠির সঙ্গে আমার মেয়ে রূপকথার খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেছে! আমার সঙ্গে আমার শালা বাবুর ছেলে সৌম্য কেউ নিয়ে এসেছি। এরা তিনজনে চুটিয়ে ফুটবল দেখছে। এমন সময় সুস্মিতা চোখ পাকিয়ে মেয়েকে বলল “এখানে বসে বসে খেলা দেখছিস স্কুলে যেতে হবে না”? মেয়ে ততোধিক চোখ পাকিয়ে বলল “তোমায় বেশি বকবক করতে হবে না, ওদিকে তোমার ভূগোলের ক্লাস শুরু হবে, ক্লাস করোগে যাও।
রি-ইউনিয়নে এসে সুমনা ম্যাডামের ভূগোলের ক্লাস করতে হবে এটা একেবারেই মাথায় ছিল না। এই অতনিমা টা হচ্ছে সবথেকে শয়তান! ও আগে থেকে সব কিছুই জানত, অথচ একবারও বলেনি। আরে বললে তো প্রিপারেশন নিয়ে আসা যেত! যাইহোক, আমি ভাবলাম একটু দেরি করে ক্লাসে যাবো, পেছনের দরজা থেকে ঢুকে টুক করে পেছনের বেঞ্চে বসে পড়ব। যথা ভাবনা তথা কাজ, বেশ কিছু ক্ষণ পরে ক্লাসে গিয়ে দেখি ম্যাডাম অলরে্ডি পেছনের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। অগত্যা সামনের দরজা দিয়ে ঢোকা ছাড়া উপায় নেই।
ওরেব্বাবা ক্লাসে গিয়ে দেখি, একদম উলট পুরান, সব্বাই আগে ভাগে পেছনের বেঞ্চে বসে পড়েছে শুধু সামনের বেঞ্চে টা আমার জন্য খালি! মনে মনে ভীষণই রেগে গেছি! ভাবছি ক্লাসের পরে সবকটাকে কিলিয়ে মাথায় ক্যাকটাস বানিয়ে দেব! যাই হোক পেছেন বেঞ্চে বসার চমৎকারী চালাকিটা ম্যাডাম প্রথমেই ধরে ফেলেছেন। তাই পেছনের বেঞ্চ থেকে পড়া ধরা শুরু করলেন।
প্রথম প্রশ্নঃ তারা কাকে বলে? যথারীতি কেউ জানেনা। এক এক করে সবাই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে থাকে। আমি অবশ্য আমার উত্তর প্রথমেই ঠিক করে নিয়েছি “আমরা যারা এদিকের বেঞ্চে বসে, সেই আমরা ছাড়া বাকি যারা, ওরা সবাই তারা।“
দুই সোমনাথ আর শুভঙ্কর মাঝের বেঞ্চে বসে এদিক ওদিক ঝুঁকে নিজেদের লুকিয়ে ফেলতে ব্যাস্ত, প্রতাপ, পূর্ণেন্দু আর রবিন শত চেষ্টা করেও নিজেদের লুকাতে পারছেনা! মাঝখান থেকে ব্যাটা সুদিপ্ত রবিনের পেছনে ঢাকা পড়ে বিন্দাস লুকিয়ে গেছে। সরূপ, কৌশিক, সঞ্জীব আর সাগর! এরা লুকাবে কোথায়? ম্যাডামের প্রিয় ছাত্র এরা! বেঞ্চের তলায় লুকিয়ে পড়লেও ম্যাডাম ঠিক খুঁজে বের করবেন! আর শামিম এর ফরসা মুখ একদম টকটকে লাল!
এদিকে সুস্মিতা দোলনের দিকে আগুন চোখে চেয়ে! ওর বোধহয় আসার একদম ইচ্ছে ছিলনা, দোলন জবরদস্তি ধরে এনেছে! শ্রাবনি গজগজ করছে, এ বাবাঃ রি-উনিয়ানে ক্লাস নেওয়ার কোণ মানে হয়? অনিন্দিতা আবার দীপঙ্করের উপর ক্ষেপে কাঁই! সারাদিন ঘুরে বেড়াও, একটু পড়াশোনা করলে তো হয় নাকি হ্যাঁ!
এই সব দেখতে দেখতে আর এক এক করে দাঁড়াতে দাঁড়াতে প্রশ্ন আমার কাছে এসে হাজির! তো আমার স্টক আনসার দিতে যাব, এমন সময় ম্যাডাম এর মোবাইল বেজে উঠল, রিং টোনঃ ...... ঝিকি মিকি তারা এই মাধবি রাত......"
ইউরেকা! I got the answer!
মোবাইলে খুট খুট করতে করতে ম্যাডাম বললেন বসে পড় সবাই! আমি জানি উত্তরটা তোদের সবার জানা! শুধু তোদের ছেলেবেলাটা মনে করিয়ে দিতে সব্বাই মিলে দাঁড়িয়ে পড়লি! তাই না!
পেছনে তাকিয়ে দেখি লাইন দিয়ে সবাই দাঁড়িয়ে! একবার ভাবলাম জন গন মন গেয়ে উঠব কি না! সব্বাই মিটমিটিয়ে হাসছে! শুধু ম্যাডাম মুখ ঘুরিয়ে আবেগ আড়াল করছেন!
স্কুলে পৌঁছে সটান খেলার মাঠে। মাঠে তখন ফুটবল খেলা চলছে, এনুয়াল স্পোর্টস! স্যারেদের সঙ্গে সিক্স- বি! দারুণ উত্তেজনা পূর্ণ খেলা! সিক্স- বি র গোলকিপার আমাদের রাধাকৃষ্ণ বাবু। একটু বয়স হয়েছে তাই স্যারেদের টিমে ব্রাত্য, তবে ওনার দুরন্ত ফুটবল প্রেম ওনাকে দূরে থাকতে দেয়নি, তাই সিক্স- বি র হয়ে নেমে পড়েছেন।
ও দিকে সুব্রত বাবু দুরন্ত ড্রিবলিঙে বারবার সবাই কে টপকে একের পর এক গোল করতে চলে আসছেন কিন্তু রাধাকৃষ্ণ বাবু চীনের প্রাচীরের মতো সব প্রয়াস আটকে দিচ্ছেন। এসব দেখে পার্থ বাবু রেগে টং! মাঝ মাঠে দাঁড়িয়ে হুংকার ছাড়ছেন “এই বুড়োদের নিয়ে হয়েছে এক জ্বালা! কোথায় ছেলে ছোকরাদের মতো এদিক সেদিক ডাইভ দেবে! দু-একটা বল এদিক ওদিক থেকে গলে গোল হয়ে যাবে! তা নয়! ঠুঁটো জগন্নাথের মত বলের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছে! কোন মানে হয়!
সুস্মিতার মেয়ে মিঠির সঙ্গে আমার মেয়ে রূপকথার খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেছে! আমার সঙ্গে আমার শালা বাবুর ছেলে সৌম্য কেউ নিয়ে এসেছি। এরা তিনজনে চুটিয়ে ফুটবল দেখছে। এমন সময় সুস্মিতা চোখ পাকিয়ে মেয়েকে বলল “এখানে বসে বসে খেলা দেখছিস স্কুলে যেতে হবে না”? মেয়ে ততোধিক চোখ পাকিয়ে বলল “তোমায় বেশি বকবক করতে হবে না, ওদিকে তোমার ভূগোলের ক্লাস শুরু হবে, ক্লাস করোগে যাও।
রি-ইউনিয়নে এসে সুমনা ম্যাডামের ভূগোলের ক্লাস করতে হবে এটা একেবারেই মাথায় ছিল না। এই অতনিমা টা হচ্ছে সবথেকে শয়তান! ও আগে থেকে সব কিছুই জানত, অথচ একবারও বলেনি। আরে বললে তো প্রিপারেশন নিয়ে আসা যেত! যাইহোক, আমি ভাবলাম একটু দেরি করে ক্লাসে যাবো, পেছনের দরজা থেকে ঢুকে টুক করে পেছনের বেঞ্চে বসে পড়ব। যথা ভাবনা তথা কাজ, বেশ কিছু ক্ষণ পরে ক্লাসে গিয়ে দেখি ম্যাডাম অলরে্ডি পেছনের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। অগত্যা সামনের দরজা দিয়ে ঢোকা ছাড়া উপায় নেই।
ওরেব্বাবা ক্লাসে গিয়ে দেখি, একদম উলট পুরান, সব্বাই আগে ভাগে পেছনের বেঞ্চে বসে পড়েছে শুধু সামনের বেঞ্চে টা আমার জন্য খালি! মনে মনে ভীষণই রেগে গেছি! ভাবছি ক্লাসের পরে সবকটাকে কিলিয়ে মাথায় ক্যাকটাস বানিয়ে দেব! যাই হোক পেছেন বেঞ্চে বসার চমৎকারী চালাকিটা ম্যাডাম প্রথমেই ধরে ফেলেছেন। তাই পেছনের বেঞ্চ থেকে পড়া ধরা শুরু করলেন।
প্রথম প্রশ্নঃ তারা কাকে বলে? যথারীতি কেউ জানেনা। এক এক করে সবাই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে থাকে। আমি অবশ্য আমার উত্তর প্রথমেই ঠিক করে নিয়েছি “আমরা যারা এদিকের বেঞ্চে বসে, সেই আমরা ছাড়া বাকি যারা, ওরা সবাই তারা।“
দুই সোমনাথ আর শুভঙ্কর মাঝের বেঞ্চে বসে এদিক ওদিক ঝুঁকে নিজেদের লুকিয়ে ফেলতে ব্যাস্ত, প্রতাপ, পূর্ণেন্দু আর রবিন শত চেষ্টা করেও নিজেদের লুকাতে পারছেনা! মাঝখান থেকে ব্যাটা সুদিপ্ত রবিনের পেছনে ঢাকা পড়ে বিন্দাস লুকিয়ে গেছে। সরূপ, কৌশিক, সঞ্জীব আর সাগর! এরা লুকাবে কোথায়? ম্যাডামের প্রিয় ছাত্র এরা! বেঞ্চের তলায় লুকিয়ে পড়লেও ম্যাডাম ঠিক খুঁজে বের করবেন! আর শামিম এর ফরসা মুখ একদম টকটকে লাল!
এদিকে সুস্মিতা দোলনের দিকে আগুন চোখে চেয়ে! ওর বোধহয় আসার একদম ইচ্ছে ছিলনা, দোলন জবরদস্তি ধরে এনেছে! শ্রাবনি গজগজ করছে, এ বাবাঃ রি-উনিয়ানে ক্লাস নেওয়ার কোণ মানে হয়? অনিন্দিতা আবার দীপঙ্করের উপর ক্ষেপে কাঁই! সারাদিন ঘুরে বেড়াও, একটু পড়াশোনা করলে তো হয় নাকি হ্যাঁ!
এই সব দেখতে দেখতে আর এক এক করে দাঁড়াতে দাঁড়াতে প্রশ্ন আমার কাছে এসে হাজির! তো আমার স্টক আনসার দিতে যাব, এমন সময় ম্যাডাম এর মোবাইল বেজে উঠল, রিং টোনঃ ...... ঝিকি মিকি তারা এই মাধবি রাত......"
ইউরেকা! I got the answer!
মোবাইলে খুট খুট করতে করতে ম্যাডাম বললেন বসে পড় সবাই! আমি জানি উত্তরটা তোদের সবার জানা! শুধু তোদের ছেলেবেলাটা মনে করিয়ে দিতে সব্বাই মিলে দাঁড়িয়ে পড়লি! তাই না!
পেছনে তাকিয়ে দেখি লাইন দিয়ে সবাই দাঁড়িয়ে! একবার ভাবলাম জন গন মন গেয়ে উঠব কি না! সব্বাই মিটমিটিয়ে হাসছে! শুধু ম্যাডাম মুখ ঘুরিয়ে আবেগ আড়াল করছেন!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জানবক্স খান ০৪/০৮/২০২০স্মৃতিময় স্কুল জীবন। দারুন হয়েছে।
-
মোঃ আমানুল্লাহ ফকির ০৩/০৮/২০২০খুব সুন্দর
-
কুমারেশ সরদার ৩১/০৭/২০২০বাহ্!
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ৩১/০৭/২০২০ছোট্ট গল্প!
-
ফয়জুল মহী ৩১/০৭/২০২০অতুলীয় ভাবনায় নান্দনিক লেখনী ।
-
আব্দুর রহমান আনসারী ৩১/০৭/২০২০অনিন্দ্য সুন্দর