বোকামি
--------------------------------------------------------------
রৌদ্রে দৌড়াইও না, দৌড়াইলে জ্বর হইবে।
রৌদ্রে দৌড়াইও, না দৌড়াইলে জ্বর হইবে।
শুধুমাত্র একটি যতি চিহ্নের এক ঘর এদিক ওদিক হওয়াতেই বাক্য দুটির অর্থ সম্পূর্ণ বিপরীত হয়ে গেল। এখন যদি ইচ্ছে করে যতি চিহ্ন প্রয়োগ না করি, তাহলে পাঠকের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে তার ইচ্ছে মতো জায়গায় থমকে যাওয়ার, আর তার ইচ্ছেমতো অর্থ বুঝে নেওয়ার।
একটা গল্প বলি। তখন কলেজে পড়ার সময়, তমলুকে মেসে থাকি। তমলুক মোটামুটি ছোট খাটো শহর। খুব একটা গোছানো নয়। আসলে অনেক পুরনো শহর, নিজের মতো করে গড়ে উঠেছে, তাকে খুব একটা সাজিয়ে গুছিয়ে কেউ নেয়নি। এ শহরের খুব একটা জৌলুস হয়তো নেই তবুও বেশ জমজমাট। যে কোন সন্ধেই ঝলমলে আলোক মালায় সেজে রূপসী পরীর মত হাতছানি দেয়। যেকোন সন্ধেয় শহরের ফুটপাত বিকি-কিনির পসরাতে নিদারুণ ভরে যায়।
যাই হোক, কোন একদিন টাউনের ফুটপাতের দোকান থেকে মাত্র তিরিশ টাকার বিনিময়ে একটি হাত ঘড়ি কিনে আনি। ঘড়ি তিরিশ টাকার হলেও দেখতে-শুনতে নেহাত মন্দ নয়, তার ওপরে ডায়ালে টাইমেক্স লেখা! মেসে ফিরে সবাইকে বললাম ঘড়ি টা কেমন হয়েছে? সবার প্রশংসা উপচে পড়লো। জানতে চাইল দাম কত? বলিনি! বলেছি ক্রমশ প্রকাশ্য।
যে যেমন পারে আন্দাজে বুঝে নিল। দু-চারশো, পাঁচশো বা সাতশো ও হতে পারে! হুঁ হুঁ বাবা টাইমেক্স বলে কথা! দামি হবে অবশ্য।
পরদিন সকালে হঠাৎ ঘোষণা, জরুরী টাকার দরকার, বেচে দিতে চাই ঘড়ি। যে যেমন পারো কর প্রস্তাব, যদি কারো থাকে ঘড়ির দরকার! আমাদের সে সময় এমন নয়, যে প্রায়শই কিছু টাকা উদ্বৃত্ত থাকতো কারো কাছে। সমস্ত টাকাই ভীষণ ভাবে মাপা, সমস্ত খরচ নির্ধারিত, অবশ্যম্ভাবী এবং পাকা। তবুও এ প্রস্তাব হাবুলের কাছে লোভনীয় ছিল। সটান তিনশো টাকার অফার! বেচে দিলাম ঘড়ি, তিনশো টাকা আমার পকেটে পাচার।
তারপর, যতবার বলি তিনশত নয়, মাত্র তিরিশ টাকা দাম! সে কথা বিশ্বাস করে কে? সে কথার নেই কোন দাম! আসলে তার মনে দৃঢ়তর বিশ্বাস এই- সফল সওদা হয়েছে, সস্তায় মিলেছে মহার্ঘ ঘড়ি! যতই বল না কেন সে নকল জিনিস, এক কথায় তা কি করে ছাড়ি?
যদিও অনেক বুঝিয়ে সে যাত্রায় তার তিনশো টাকা ফেরত দিতে পেরেছিলাম। অনেক কষ্টে সে মেনে নিয়েছিল যে শুধুমাত্র ব্র্যান্ডেড নাম টাইমেক্স দেখে এতগুলো টাকা ক্ষতির ঝুঁকি নিয়েছিল।
আসলে প্রতিদিনের জীবনে এরকমই নানান ঝুঁকি নিই। নিপাট ভদ্রলোকের ভাষায় প্রতিশ্রুতির ঝিলিক যখন চোখের সামনে একটা ঝলমলে পর্দা টেনে দেয়, একটা নতুন দিনের মায়াবী স্বপ্ন দেখায়, তখন নিজের চোখ বন্ধ করে পর্দার ওপার দেখার ইচ্ছের ওপর জবরদস্তি যবনিকা টেনে দিই।আমার প্রিয়তম, তাঁর অদম্য বাগ্মিতায় প্রতিশ্রুতির ব্র্যান্ডেড পসরা সাজিয়ে দেয়, আর অবশ্যই সচেতন ভাবে এড়িয়ে যায় যতি চিহ্নের প্রয়োগ। যতি চিহ্ন! সে উপভোক্তার স্বাধীনতা! যেমন খুশি লাগাও, বোকা বনে যাওয়া তোমার পূর্বনির্ধারিত!
একবার বোকামি করি, কিন্তু মানিনা!,
নিজেকে ঠিক প্রতিষ্ঠা করার তাড়ণায় আরেক বার বোকামি করি!
তবুও ঠিক কোনটা ঠিক? ঠিকঠাক জানিনা!
আসলে ঠিক, যে ঠিক কি? তা জানতেই চাই না-
আসলে আমি যে বোকা, আমি তা কিছুতেই মানিনা!!
রৌদ্রে দৌড়াইও না, দৌড়াইলে জ্বর হইবে।
রৌদ্রে দৌড়াইও, না দৌড়াইলে জ্বর হইবে।
শুধুমাত্র একটি যতি চিহ্নের এক ঘর এদিক ওদিক হওয়াতেই বাক্য দুটির অর্থ সম্পূর্ণ বিপরীত হয়ে গেল। এখন যদি ইচ্ছে করে যতি চিহ্ন প্রয়োগ না করি, তাহলে পাঠকের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে তার ইচ্ছে মতো জায়গায় থমকে যাওয়ার, আর তার ইচ্ছেমতো অর্থ বুঝে নেওয়ার।
একটা গল্প বলি। তখন কলেজে পড়ার সময়, তমলুকে মেসে থাকি। তমলুক মোটামুটি ছোট খাটো শহর। খুব একটা গোছানো নয়। আসলে অনেক পুরনো শহর, নিজের মতো করে গড়ে উঠেছে, তাকে খুব একটা সাজিয়ে গুছিয়ে কেউ নেয়নি। এ শহরের খুব একটা জৌলুস হয়তো নেই তবুও বেশ জমজমাট। যে কোন সন্ধেই ঝলমলে আলোক মালায় সেজে রূপসী পরীর মত হাতছানি দেয়। যেকোন সন্ধেয় শহরের ফুটপাত বিকি-কিনির পসরাতে নিদারুণ ভরে যায়।
যাই হোক, কোন একদিন টাউনের ফুটপাতের দোকান থেকে মাত্র তিরিশ টাকার বিনিময়ে একটি হাত ঘড়ি কিনে আনি। ঘড়ি তিরিশ টাকার হলেও দেখতে-শুনতে নেহাত মন্দ নয়, তার ওপরে ডায়ালে টাইমেক্স লেখা! মেসে ফিরে সবাইকে বললাম ঘড়ি টা কেমন হয়েছে? সবার প্রশংসা উপচে পড়লো। জানতে চাইল দাম কত? বলিনি! বলেছি ক্রমশ প্রকাশ্য।
যে যেমন পারে আন্দাজে বুঝে নিল। দু-চারশো, পাঁচশো বা সাতশো ও হতে পারে! হুঁ হুঁ বাবা টাইমেক্স বলে কথা! দামি হবে অবশ্য।
পরদিন সকালে হঠাৎ ঘোষণা, জরুরী টাকার দরকার, বেচে দিতে চাই ঘড়ি। যে যেমন পারো কর প্রস্তাব, যদি কারো থাকে ঘড়ির দরকার! আমাদের সে সময় এমন নয়, যে প্রায়শই কিছু টাকা উদ্বৃত্ত থাকতো কারো কাছে। সমস্ত টাকাই ভীষণ ভাবে মাপা, সমস্ত খরচ নির্ধারিত, অবশ্যম্ভাবী এবং পাকা। তবুও এ প্রস্তাব হাবুলের কাছে লোভনীয় ছিল। সটান তিনশো টাকার অফার! বেচে দিলাম ঘড়ি, তিনশো টাকা আমার পকেটে পাচার।
তারপর, যতবার বলি তিনশত নয়, মাত্র তিরিশ টাকা দাম! সে কথা বিশ্বাস করে কে? সে কথার নেই কোন দাম! আসলে তার মনে দৃঢ়তর বিশ্বাস এই- সফল সওদা হয়েছে, সস্তায় মিলেছে মহার্ঘ ঘড়ি! যতই বল না কেন সে নকল জিনিস, এক কথায় তা কি করে ছাড়ি?
যদিও অনেক বুঝিয়ে সে যাত্রায় তার তিনশো টাকা ফেরত দিতে পেরেছিলাম। অনেক কষ্টে সে মেনে নিয়েছিল যে শুধুমাত্র ব্র্যান্ডেড নাম টাইমেক্স দেখে এতগুলো টাকা ক্ষতির ঝুঁকি নিয়েছিল।
আসলে প্রতিদিনের জীবনে এরকমই নানান ঝুঁকি নিই। নিপাট ভদ্রলোকের ভাষায় প্রতিশ্রুতির ঝিলিক যখন চোখের সামনে একটা ঝলমলে পর্দা টেনে দেয়, একটা নতুন দিনের মায়াবী স্বপ্ন দেখায়, তখন নিজের চোখ বন্ধ করে পর্দার ওপার দেখার ইচ্ছের ওপর জবরদস্তি যবনিকা টেনে দিই।আমার প্রিয়তম, তাঁর অদম্য বাগ্মিতায় প্রতিশ্রুতির ব্র্যান্ডেড পসরা সাজিয়ে দেয়, আর অবশ্যই সচেতন ভাবে এড়িয়ে যায় যতি চিহ্নের প্রয়োগ। যতি চিহ্ন! সে উপভোক্তার স্বাধীনতা! যেমন খুশি লাগাও, বোকা বনে যাওয়া তোমার পূর্বনির্ধারিত!
একবার বোকামি করি, কিন্তু মানিনা!,
নিজেকে ঠিক প্রতিষ্ঠা করার তাড়ণায় আরেক বার বোকামি করি!
তবুও ঠিক কোনটা ঠিক? ঠিকঠাক জানিনা!
আসলে ঠিক, যে ঠিক কি? তা জানতেই চাই না-
আসলে আমি যে বোকা, আমি তা কিছুতেই মানিনা!!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
হাবিবা বেগম ১০/০৭/২০২০
-
পি পি আলী আকবর ০৭/০৭/২০২০দারুণ
-
ন্যান্সি দেওয়ান ০৬/০৭/২০২০Darun
-
ফয়জুল মহী ০৬/০৭/২০২০অত্যন্ত চমৎকার লেখনী । মুগ্ধ হলাম ।
ভালো থাকুন।