যেখানে ভূতের ভয়
বাংলা কিশোর সাহিত্যে ভূতেদের অবাধ যাতায়াত। ভূতের গল্প পড়ার অনেক আগেই তাদের সঙ্গে আমার পরিচয় খুব ছোটবেলায়, দাদুর কাছে শোনা তার নিজের দেখা ভূতের গল্পে। ভুতেরা এমনি ভালোই, নিরীহ গোবেচারা, কারো সাতে পাঁচে থাকেনা। তবে সমস্যা হল বলা নেই কওয়া নেই আচমকা মনের ভেতরে এসে, আসা তো নয় যেন আবির্ভাব! অনেক চেষ্টায় জমা করা সাহসের শেষ বিন্দুটুকুও হাওয়ায় মিলিয়ে দেয়।
গ্রামের বাড়ি, তখনও ইলেকট্রিসিটি এসে পৌঁছায় নি, সূর্য ডুবলেই একরাশ অন্ধকার বাড়ি বয়ে এসে ভয় দেখিয়ে যায়। কেরোসিনের আলোয় অন্ধকার মোটেই কাটে না বরং আরও জমাট হয়ে আসে। পুরনো দিনের বেশ বড় মাটির বাড়ি, শোবার ঘর থেকে রান্নাঘর অনেকটা দূরে, মাঝখানে লম্বা গোলাঘর (যেখানে ধান রাখা থাকে)…. এমনকি দিনের আলোয় ওই জায়গাটুকু পেরিয়ে যেতে বুক দুরু দুরু করে….. সন্ধ্যে হলে তো কথাই নেই…. ভূত পিশাচ দত্যি দানো রাক্ষস খোক্ষস সব যেন হাঁ করে বসে আছে!
বাড়ির বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটা ছোট্ট জানালা আমার সবথেকে প্রিয় জায়গা, তার সামনেই একটা বিরাট অশ্বথ্থ গাছ, এই গাছ নিয়ে অজস্র গল্প শুনেছি দাদুর কাছে। গাছটা এখনো তেমনি ওখানে আছে, জানালাটা নেই। ছোটবেলায় নাওয়া খাওয়ার সময়টুকু ছাড়া প্রায় সারাদিনই ঐ জানালায় বসে কাটিয়ে দিতাম। বর্ষাকালে, যখন মুষলধারায় বৃষ্টি হত, অশ্বথ্থ গাছের পাতা থেকে টপটপ করে ঝরে পড়তো জলের ফোঁটা নিচে বয়ে যাওয়া জলের ধরার উপর, তৈরি হতো ছোট-বড় নানা মাপের বুদবুদ… তারা শুধু ভেসে বেড়ায়, তাদের কোথাও যাওয়ার কোন তাড়া নেই, কোন বাধা নেই, তারা যেন আমারই মত, যেন আমিই অনেক আমি হয়ে সারা মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে। কখন যে ঝুপ করে সন্ধ্যে নেমে গেছে বুঝিনি, হঠাৎ পেঁচার ডাকে ছ্যঁৎ করে উঠে বুক…. এক ছুট্টে মায়ের কোলের পরম নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে।
পল্লেক (দেব বাড়ির) বাড়ির দুর্গাপূজা বেশ পুরনো। ঠাকুরের মাটি ওঠা থেকে বিজয়ার দিন পর্যন্ত অনাবিল আনন্দের আখড়া। কোন একবার পুজোতে ওরা পুতনা রাক্ষসী বানালো, এমনিতে ঠিকই ছিল কিন্তু রাক্ষসীর দুচোখ আর মুখে কেন যে লাল আলো লাগাতে গেল কে জানে! উঃ অমন পিলে চমকানো রাক্ষসীর ভয়ে কত রাত যে বাবার বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়েছি!
স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষ, তখন তমলুকের মেসে থাকি। পুজোর পরে পরেই তাড়াহুড়ো করে মেসে ফিরে গেলাম। সেদিন থেকেই শুরু হলো প্রবল বৃষ্টি সে আর থামতেই চায় না। টানা প্রায় 4-5 দিন বৃষ্টি এমনই চলেছিল, মেসে আমি একা। আমাদের নতুন মেস, নিজেদের রান্নার আয়োজন নেই, খাওয়ার ব্যবস্থা একটু দূরে অন্য একটি মেসে। সেদিন রাতের খাবার পরে প্রবল বৃষ্টি চলছে আর চলছে অদ্ভুত সব ভুতের গল্প। রাত প্রায় বারোটা বাজে বৃষ্টি একটু ধরে এসেছে, এবার নিজের মেসে ফিরবো। প্রবীরদা বললো “কচি, তোদের পাড়ায় খুব ভূতের উপদ্রব, আজ আর যাসনা আমার কাছেই শুয়ে পড়”। বুকের মধ্যে আঠারোর দুর্বার সাহস, বললাম “দুর! তিন দিন একা আছি ভুতেরা এলে বরং একটু গল্প করা যাবে”! সবেমাত্র মশারি টাঙিয়ে শোয়ার আয়োজন করছি, ব্যাস লোডশেডিং! সবিস্ময়ে দেখলাম ঘরের মধ্যে বিশাল কালো ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। আত্মারাম খাঁচাছাড়া, নিজের হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি লবডব, গলা শুকিয়ে কাঠ… হৃদয়ের শেষ সাহস বিন্দু দিয়ে উপরে তাকিয়ে দেখি লোডশেডিংয়ের পরে সিলিং ফ্যান তখনো আলতো ঘুরছে আর তার পেছনে একটা জোনাক পোকার অল্প আলো! খুব অদ্ভুতুড়ে না!
একটা সময়ের পর ভূতের ভয় কমে আসে, ভয়ের ভূতে তাড়াকরে! না পাওয়ার, না দেখার, না বোঝার, আর সবথেকে বেশি লোকের ভয়, কি বলবে! কি ভাববে! কিভাবে নেবে! একেবারে ঘেঁটে ঘ অবস্থা!
ভুতু বাবুর অ্শথ তলায় ভিতু ভূতের কারখানা….
দিন দুপুরে ভয়ের ভূতে কার মাথাতে মারছে ঢেলা?
ভূতের ওঝা ভূতকে দেখে ভয় পেয়ে যায়…..
ভয়ের ভূতের ভীষণ ভীতি ভুতুম পেঁচার মুন্ডু চেবায়!
গ্রামের বাড়ি, তখনও ইলেকট্রিসিটি এসে পৌঁছায় নি, সূর্য ডুবলেই একরাশ অন্ধকার বাড়ি বয়ে এসে ভয় দেখিয়ে যায়। কেরোসিনের আলোয় অন্ধকার মোটেই কাটে না বরং আরও জমাট হয়ে আসে। পুরনো দিনের বেশ বড় মাটির বাড়ি, শোবার ঘর থেকে রান্নাঘর অনেকটা দূরে, মাঝখানে লম্বা গোলাঘর (যেখানে ধান রাখা থাকে)…. এমনকি দিনের আলোয় ওই জায়গাটুকু পেরিয়ে যেতে বুক দুরু দুরু করে….. সন্ধ্যে হলে তো কথাই নেই…. ভূত পিশাচ দত্যি দানো রাক্ষস খোক্ষস সব যেন হাঁ করে বসে আছে!
বাড়ির বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটা ছোট্ট জানালা আমার সবথেকে প্রিয় জায়গা, তার সামনেই একটা বিরাট অশ্বথ্থ গাছ, এই গাছ নিয়ে অজস্র গল্প শুনেছি দাদুর কাছে। গাছটা এখনো তেমনি ওখানে আছে, জানালাটা নেই। ছোটবেলায় নাওয়া খাওয়ার সময়টুকু ছাড়া প্রায় সারাদিনই ঐ জানালায় বসে কাটিয়ে দিতাম। বর্ষাকালে, যখন মুষলধারায় বৃষ্টি হত, অশ্বথ্থ গাছের পাতা থেকে টপটপ করে ঝরে পড়তো জলের ফোঁটা নিচে বয়ে যাওয়া জলের ধরার উপর, তৈরি হতো ছোট-বড় নানা মাপের বুদবুদ… তারা শুধু ভেসে বেড়ায়, তাদের কোথাও যাওয়ার কোন তাড়া নেই, কোন বাধা নেই, তারা যেন আমারই মত, যেন আমিই অনেক আমি হয়ে সারা মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে। কখন যে ঝুপ করে সন্ধ্যে নেমে গেছে বুঝিনি, হঠাৎ পেঁচার ডাকে ছ্যঁৎ করে উঠে বুক…. এক ছুট্টে মায়ের কোলের পরম নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে।
পল্লেক (দেব বাড়ির) বাড়ির দুর্গাপূজা বেশ পুরনো। ঠাকুরের মাটি ওঠা থেকে বিজয়ার দিন পর্যন্ত অনাবিল আনন্দের আখড়া। কোন একবার পুজোতে ওরা পুতনা রাক্ষসী বানালো, এমনিতে ঠিকই ছিল কিন্তু রাক্ষসীর দুচোখ আর মুখে কেন যে লাল আলো লাগাতে গেল কে জানে! উঃ অমন পিলে চমকানো রাক্ষসীর ভয়ে কত রাত যে বাবার বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়েছি!
স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষ, তখন তমলুকের মেসে থাকি। পুজোর পরে পরেই তাড়াহুড়ো করে মেসে ফিরে গেলাম। সেদিন থেকেই শুরু হলো প্রবল বৃষ্টি সে আর থামতেই চায় না। টানা প্রায় 4-5 দিন বৃষ্টি এমনই চলেছিল, মেসে আমি একা। আমাদের নতুন মেস, নিজেদের রান্নার আয়োজন নেই, খাওয়ার ব্যবস্থা একটু দূরে অন্য একটি মেসে। সেদিন রাতের খাবার পরে প্রবল বৃষ্টি চলছে আর চলছে অদ্ভুত সব ভুতের গল্প। রাত প্রায় বারোটা বাজে বৃষ্টি একটু ধরে এসেছে, এবার নিজের মেসে ফিরবো। প্রবীরদা বললো “কচি, তোদের পাড়ায় খুব ভূতের উপদ্রব, আজ আর যাসনা আমার কাছেই শুয়ে পড়”। বুকের মধ্যে আঠারোর দুর্বার সাহস, বললাম “দুর! তিন দিন একা আছি ভুতেরা এলে বরং একটু গল্প করা যাবে”! সবেমাত্র মশারি টাঙিয়ে শোয়ার আয়োজন করছি, ব্যাস লোডশেডিং! সবিস্ময়ে দেখলাম ঘরের মধ্যে বিশাল কালো ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। আত্মারাম খাঁচাছাড়া, নিজের হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি লবডব, গলা শুকিয়ে কাঠ… হৃদয়ের শেষ সাহস বিন্দু দিয়ে উপরে তাকিয়ে দেখি লোডশেডিংয়ের পরে সিলিং ফ্যান তখনো আলতো ঘুরছে আর তার পেছনে একটা জোনাক পোকার অল্প আলো! খুব অদ্ভুতুড়ে না!
একটা সময়ের পর ভূতের ভয় কমে আসে, ভয়ের ভূতে তাড়াকরে! না পাওয়ার, না দেখার, না বোঝার, আর সবথেকে বেশি লোকের ভয়, কি বলবে! কি ভাববে! কিভাবে নেবে! একেবারে ঘেঁটে ঘ অবস্থা!
ভুতু বাবুর অ্শথ তলায় ভিতু ভূতের কারখানা….
দিন দুপুরে ভয়ের ভূতে কার মাথাতে মারছে ঢেলা?
ভূতের ওঝা ভূতকে দেখে ভয় পেয়ে যায়…..
ভয়ের ভূতের ভীষণ ভীতি ভুতুম পেঁচার মুন্ডু চেবায়!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কুমারেশ সরদার ৩০/০৬/২০২০খুব ভালো
-
কে এম শাহ্ রিয়ার ২৯/০৬/২০২০চমৎকার লেখনী!
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২৯/০৬/২০২০ভূতচিন্তা।
-
ফয়জুল মহী ২৯/০৬/২০২০কমনীয় ভাবনায় সৃজনশীল লেখা।