www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

চারমূর্তি

চারমূর্তি:
প্যালারাম, গোবর্ধন, হাবুল আর টেনিদা,না না পটলডাঙ্গার চারমূর্তি নয়| এই চার মূর্তি বাংলার চার জায়গা থেকে জড় হয়েছিল তমলুকের মেসে।এরা সবাই তমলুক কলেজে পড়ে তখন। সেই প্রথম মা-বাবার আদরের দুলালদের ঘরের নিশ্চয়তা কাটিয়ে বাইরের জগতে একা একা পা রাখার দুঃসাহসীক বিচরণ। হঠাৎ করে অনেকটা দায়িত্ববোধ, অনেকটা সহযোগিতা, অনেক কিছু বুঝে নেওয়ার, মানিয়ে নেওয়ার বাড়তি তাগিদ|অনেক প্রতিযোগিতা অনেক বেশিরকম প্রতিদ্বন্দ্বীতা অথচ ভীষণ রকম আত্মিক বন্ধুত্ব! কলেজের ওই দিনগুলো আঠারোর সদ্য কৈশোর ফেলে আসা উঠতি যুবা দের যেন অনেকটা পরিণতি এনে দিল।



কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ, হঠাৎ ছন্দপতন, এক ভীষণ দুর্যোগ নেমে এলো টেনিদার জীবনে, আচমকা পিতৃবিয়োগ। পড়াশোনার পাট মোটামুটি প্রায় চুকিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেল টেনিদা। সময় তার কিছুতেই কাটতে চায় না। পড়ার কোনো তাড়া নেই, কাজের নিশ্চয়তা নেই, মাথার উপরে রাখার মত কোন হাত নেই – ভীষণ একা, ভীষণই একা। নিঃসঙ্গ দুপুরে অথবা নির্জন বিকেলের সকল নিস্তব্ধতা যেন হাঁকরে গিলে নিতে আসে। বুভুক্ষু সময় সমস্ত রাত্রি জুড়ে নিস্তরঙ্গ দীঘির মত বুকের ওপরে অবিচল বসে থাকে।
এরই মাঝে কোন এক সকালে গোবরার ফোন এল টেনিদার কাছে। স্মার্ট ফোনতো দূরঅস্ত, তখনো মুঠোয় ধরা ক্যাবলা ফোন এসে পৌঁছায়নি। ফোন এলো বাড়িতে বসে থাকা শালগ্রাম শিলার মত মিশকালো সাক্ষীগোপাল টেলিফোনে। টেনিদার নিজের বাড়িতে টেলিফোন নেই। গ্রামের এক বাড়িতে এলো সে জরুরী টেলিফোন! জরুরী তলব! টেনিদাকে তমলুক যেতে হবে। জানার কোন উপায় নেই কিসের সেই জরুরি তলব! তমলুক পৌঁছতেই পরিকল্পনা পরিষ্কার। জানা গেল সবাই মিলে দীঘা যাওয়ার পরিকল্পনা! আর টেনিদা ছাড়া চারমূর্তির অভিযান অসম্পূর্ণ। মুশকিল হল টেনিদা তো এক পোশাকে হাজির, যা সমুদ্র যাত্রায় মোটেই উপযুক্ত নয়। মুশকিল আসান গোবরা আছে! ওর জামা কাপড় মোটামুটিভাবে টেনিদার ফিট হয়ে যাবে। অতএব চারমূর্তি সহ মোট আট জনের দল কোন এক শনিবারের সকাল বেলায় দীঘায় গিয়ে হাজির। সেই প্রথমবার সমুদ্র দেখা! ভীষণ সুন্দর! ভয়াল সুন্দর! ছলকে ওঠা সফেদ ফেনায় আর ঘন কুয়াশায় মোড়া আদিগন্ত বিস্তৃত অখন্ড জলরাশির সুবিপুল সমুদ্রের সেএক অপার্থিব, অবর্ণনীয় সৌন্দর্য! অগণিত মানুষের অকল্পনীয় হুটোপুটি, অযাচিত উল্লাস আর শিশুসুলভ আহ্লাদে ঢেউয়ের কানায় কানায় ভেসে বেড়ানোর আদুরে আবদার!
মনের ক্লান্তি, দীর্ঘ পথ যাত্রার ধকল, বহু দিনের জমে থাকা অব্যক্ত যন্ত্রণা সব যেন মোমের মতো গলে গলে ঝরে পড়তে থাকে। মধ্যরাতের সমুদ্র চড়ায় সে এক মায়াবী জ্যোৎস্না রাত! প্যালা, তার গলায় আসমুদ্র বিষাদ ঢেলে গাইছে স্বর্ণযুগের বিরহের গান, গোবরার ভাবনায় প্রেমের গভীর ও গুঢ় তত্ত্ব, টেনিদার দুঃখ বিলাস আর হাবুলের নিরন্তর টিপ্পনী ………. ঘন্টার পর ঘন্টা কি করে কেটে গেল কেউ বোঝেনি। সমস্ত দুঃখ, সন্তাপ, সব মন খারাপ ভাসিয়ে দিয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ে, হাতের উপরে হাত রেখে নিল শপথ
আবারো আসিবে ফিরে এই সফেদ সমুদ্র সদনে।
কত কাল কেটে গেছে, কেউ কথা রাখেনি!
আজ চার মূর্তি ছড়িয়ে চারদিকে!
কখনো দূরাভাসে ভেসে আসে কণ্ঠস্বর,
কখনো ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে লেখা হয় দু-একটা অক্ষর….
কেউ কথা রাখেনি!
দীঘার সমুদ্র সাক্ষী! অনেকবার একলা এসেছে চারমূর্তি!
আর--কখনো একত্রে আসেনি!
কেউ কথা রাখেনি!


বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫০৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০৬/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • রমা চৌধুরী ২৬/০৬/২০২০
    কথা না রাখুক, স্মৃতি তো থাকেই। সে আর মুছে ফেলা যায় না কারও মন থেকেই। বেশ লেখা।
    • অভিজিৎ জানা ২৯/০৬/২০২০
      জীবনের সোপান বেয়ে উঠতে উঠতে এমন অনেক কিছুই এভাবে পিছনে ছেড়ে আসতে হয় । তবে মনের মণিকোঠায় যাদের স্থান তারা এভাবেই ফিরে আসে বারাবার; যেন সে সময়টাকেই প্রানভোমরার মত আজীবন ধরে রাখা বুকের গভীরে......
  • কুমারেশ সরদার ২৪/০৬/২০২০
    বেশ
  • টেনিদা মজার গল্প।
  • Md. Rayhan Kazi ২৩/০৬/২০২০
    ভাবনাগুলো দারুন
  • ফয়জুল মহী ২৩/০৬/২০২০
    কমনীয় ভাবনা
 
Quantcast