www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পদাতিক

দুই মাসের ওপর হয়ে গেল লকডাউন চলছে, যান চলাচল সবই বন্ধ। বোঝাই যাচ্ছে সাধারণ মানুষ খুবই অসুবিধার মধ্যে আছে। যদিও অনেকেই পরিস্থিতির সঙ্গে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু যাদের মানিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ নেই তারা সত্যিই অসহায়। খবরের কাগজে আর ফেসবুকের পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যায় হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক শুধু নিজের উপর ভরসা রেখে মাইলের পর মাইল হেঁটে চলেছে।
এই বিষয়ের উপর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক বিতর্ক হয়েছে। কে দায়ী, কেন দায়ী, কতটা দায়ী ইত্যাদি ইত্যাদি। রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে যথেষ্ট আলোকপাত করেছেন তাই এ ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার ধৃষ্ঠতা আমার নেই।
আমার ছোটবেলার একটা বিশেষ ঘটনা মনে পড়ে যাওয়ায় মনটা ভীষণ ভারী হয়ে এল। তখন বেশ ছোট, হয়তো ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়ি, মামার বাড়ি গিয়েছি। আমার মামার বাড়ি চৈতন্যপুর থেকে ব্রজলালচক হাইরোড যাওয়ার পথে সাহুদের বাজার নামে একটি বাস্ স্টপ আছে ওখানেই। আমার বাড়ি সুতাহাটা থেকে একটু ভেতরে। মামা বাড়ি যেতে হলে সুতাহাটা থেকে বাসে করে চৈতন্যপুর আর চৈতন্যপুর থেকে রিক্সা করে সাহুদের বাজার। ভাড়া লাগে যথাক্রমে এক টাকা ও দেড় টাকা। তার মানে যাতায়াতে লাগে পাঁচ টাকা। ওই পাঁচ টাকা নিয়েই সে বার মামা বাড়ি গিয়েছিলাম। এটাই আমার প্রথমবার একা একা কোথাও যাওয়া। যাওয়ার সময় আড়াই টাকা খরচা হলো ফেরার সময় সাহু বাজার থেকে চৈতন্যপুর আরো দেড় টাকা, পকেটে মাত্র এক টাকা পড়ে।
সেটা কোন এক নির্বাচনের দুদিন আগের ঘটনা। নির্বাচনের কাজে লাগবে বলে প্রশাসন থেকে বেশিরভাগ বাস তুলে নিয়েছে। চৈতন্যপুরে পৌঁছে বহুক্ষণ অপেক্ষার পরেও কোন বাস নেই, রিক্সা বলল সুতাহাটা যেতে দেড় টাকা নেবে। অতএব অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। বহুক্ষণ অপেক্ষার পরে যদিওবা একটা বাস এলো তাতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই, স্বভাবতই আমার জায়গা হল না।
সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি! পকেটে মাত্র এক টাকা! বাসের দেখা নেই! ঠিক কিভাবে ফিরব কোন ধারণা নেই, শুধু দেখলাম হলদিয়া যাওয়ার ভিড়ে ঠাসা বাস হুস করে সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেল। আর কোন উপায় নেই তাই যে দিকে বাস গেলো সে দিকে হাঁটতে লাগলাম। ঠিক ধারণা নেই সুতাহাটা কতটা দূর। কতটা সময় হেঁটেছি ঠিক মনে নেই। একটা সময় সুতাহাটা পৌঁছালাম, তখনো হাঁটার শেষ হয়নি, এখনো অনেকটা পথ হাঁটতে হবে তবে না বাড়ি পৌঁছাব। বাড়ি পৌঁছে ভীষণ কেঁদেছিলাম। কাউকে কোনদিন বলিনি কাঁদার কারণ!
না, হেঁটে খুব কষ্ট হয়েছিল এজন্য কাঁদিনি! আমার কাছে যথেষ্ট পয়সা ছিল না, না এজন্যও কাঁদিনি! সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি, ভীষণ খিদে পেয়েছিল! না এজন্যও কাঁদিনি!
কেঁদেছিলাম! আমার বিশ্বাস আমার ভরসা ভেঙ্গে যাওয়ার দুঃসহ দুঃখে! অগাধ ভরসা ছিল ওই পাঁচ টাকার ওপর! ওই পাঁচ টাকার ভরসাতেই প্রথমবার আমার একাকী সফর। পকেটের এক কোণে ভারী হয়ে পড়েছিল অবশিষ্ট এক টাকা, ওর আর কোন মূল্য নেই! ওর উপর কোন ভরসা নেই! কোন প্রয়োজন নেই!
আজ যারা খালি পেটে, খালি গায়ে, খালি পায়ে মাইলের পর মাইল হাঁটছে তাদের ভরসার জায়গাটা আজ হয়তো অটুট নেই! রাজনীতি নয়, ভরসা ছিল দেশ নামক এক মায়াবী উপত্যকায়! ভরসার ভিত রোজ ভাঙছে! এমনতো হতে পারে কোন এক গভীর নিঃসঙ্গতায় তার মনে হল এ নিরম্বু উপত্যকার আমার কী প্রয়োজন!!!
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৫৬২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০৬/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast