রেডিও
গত কয়েকদিন ধরে পুরোনো দিনের বাংলা গান শুনছিলাম। যে গানগুলো প্রায় পঁচিশ ত্রিশ বছর আগে রেডিওতে শুনেছি। সে সময় রেডিও ছিল বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। টেলিভিশন এলেও আজকের মত এতটা জাঁকিয়ে বসেনি, গ্রামের দু-একজনের বাড়িতেই টেলিভিশন ছিল, আমাদের বাড়িতে তো ছিলই না। আর টেলিভিশন ব্যাপারটা মূলত বড়দের ব্যাপার ছিল, ছোটদের ওখানে খুব একটা এন্ট্রি ছিল না। বড়জোর রবিবারের মহাভারত না হলে শ্রীকৃষ্ণ এইটুকু দেখার ছাড়পত্র ছিল। রবিবারের ছায়াছবি তো ছিল একেবারে নিষিদ্ধ বিষয়।
দুএকবার এমন হয়েছে রবিবারের ছায়াছবি দেখার পরে মা হয়তো বাড়িতে ঢুকতেই দেয়নি। যাইহোক রেডিওতে গান শোনার কথা বলছিলাম। আমার ছোটবেলায় রেডিও ছিল একটা বিস্ময়কর জগৎ। আমাদের বাড়িতে অনেক পুরনো একটা মেসেঞ্জার কোম্পানির কাঠের তৈরি রেডিও ছিল। রেডিওর কাঠামোয় বয়সের ছাপ পড়লেও তার আওয়াজে সুরের ঝলক ছিল। আমি সকাল থেকে অপেক্ষা করতাম বাবা কখন অফিসে যাবে আর তার পরেই রেডিও আমার দখলে চলে আসবে।
সকাল সাড়ে সাতটায় রেডিওতে খবর শুনার পর বাবা অফিসে চলে যেত। আর আমাকে পায় কে? শুরু হতো রেডিও নিয়ে আমার নিরন্তর গবেষণা। আমাদের রেডিওটাতে চারটে ব্যাটারি লাগতো। দুটো ব্যাটারি বাবার টর্চলাইট থেকে জোগাড় হত আর দুটো ব্যাটারি টর্চ এর ব্যাটারি কিন্তু ওগুলো পুরনো। সে সময় এভারেডি কোম্পানির সাদা রঙের ব্যাটারি পাওয়া যেত। জানিনা আজও সেরকম ব্যাটারি পাওয়া যায়কিনা। যাই হোক, বাবা আমার কীর্তিকলাপ জানতো তাই টর্চটা লুকিয়ে রাখত যাতে করে আমি রেডিও শুনে শুনে ব্যাটারি ডাউন না করে দেই। কিন্তু পুরনো দিনের যৌথ পরিবার, আমাদের একটামাত্র বেডরুম, ওখানে কোথায় আর টর্চ লুকিয়ে রাখবে। তো বাবা বেরিয়ে যাওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যেই টর্চ আমার হস্তগত আর রেডিও চালু।
যে দুটো পুরনো ব্যাটারির কথা বলছিলাম সেগুলো বেশ নরম হয়ে যেত আর তাদের যথেষ্ট যত্ন নিতে হতো, যেমন রোদে দিয়ে শুকিয়ে নিতে হতো না হলে পুরনো কোন কাপড় দিয়ে ভালকরে মুছে নিতে হতো না হলে ব্যাটারি থেকে তরল বেরিয়ে এসে নতুন দুটো ব্যাটারি কে খারাপ করে দিতে পারত। কিন্তু বর্ষাকালে খুব সমস্যা হতো, রোদের দেখা মিলতনা। তবে পুজোর সময় হলে খুব মজা হতো। মহালয়ার আগের দিন চারটি নতুন ব্যাটারি লাগানো হত রেডিওয়। পুজোতে নতুন পোশাক-আশাক তো হতোই তার আনন্দও ছিল আলাদা, তবে আমার কাছে পুজোর শুরু ছিল যেদিন রেডিওতে নতুন ব্যাটারি লাগানো হত। শারদীয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় মহিষাসুরমর্দিনী, তার পর আগমনী গান, পুজোর নতুন গান, গল্প দাদুর আসর পেরিয়ে সানডে সাসপেন্সর রোমাঞ্চ, মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ম্যাচের কমেন্ট্রি, ৯৬ এর বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গের তীব্র বেদনা, নিরানব্বইয়ের সাধারণ নির্বাচনে অটল বিহারি বাজপেয়ির ভারত বিজয়ের ধারাবিবরণী আর ২০০১ এর কলকাতা টেস্টে দুর্জয় অস্ট্রেলিয়াকে ভারতের হারিয়ে দেওয়ার রূপকথা... আমার সমস্ত কৈশোর জুড়ে রেডিও.... রেডিও তুমি অসম্ভব রোমান্টিক।
একটা ছবি হাজারটা কথা বলে।
টেলিভিশন আমাদের নিয়ে এলো ছবি দেখানোর দুনিয়ায়....
রেডিও হল অপসৃয়মান।
এতগুলো বছর পরে ওই পুরনো দিনের গান শুনতে শুনতে মনে হল
রেডিও তো আমাদের ছবি দেখায় নি শুধু শুনিয়েছে কথা......
ছবি তো আমরা এঁকেছি আমাদের মনে হাজারে হাজারে......
সে ছবির লাখ লাখ কথা রয়েছে হৃদয়ে জমে।।
দুএকবার এমন হয়েছে রবিবারের ছায়াছবি দেখার পরে মা হয়তো বাড়িতে ঢুকতেই দেয়নি। যাইহোক রেডিওতে গান শোনার কথা বলছিলাম। আমার ছোটবেলায় রেডিও ছিল একটা বিস্ময়কর জগৎ। আমাদের বাড়িতে অনেক পুরনো একটা মেসেঞ্জার কোম্পানির কাঠের তৈরি রেডিও ছিল। রেডিওর কাঠামোয় বয়সের ছাপ পড়লেও তার আওয়াজে সুরের ঝলক ছিল। আমি সকাল থেকে অপেক্ষা করতাম বাবা কখন অফিসে যাবে আর তার পরেই রেডিও আমার দখলে চলে আসবে।
সকাল সাড়ে সাতটায় রেডিওতে খবর শুনার পর বাবা অফিসে চলে যেত। আর আমাকে পায় কে? শুরু হতো রেডিও নিয়ে আমার নিরন্তর গবেষণা। আমাদের রেডিওটাতে চারটে ব্যাটারি লাগতো। দুটো ব্যাটারি বাবার টর্চলাইট থেকে জোগাড় হত আর দুটো ব্যাটারি টর্চ এর ব্যাটারি কিন্তু ওগুলো পুরনো। সে সময় এভারেডি কোম্পানির সাদা রঙের ব্যাটারি পাওয়া যেত। জানিনা আজও সেরকম ব্যাটারি পাওয়া যায়কিনা। যাই হোক, বাবা আমার কীর্তিকলাপ জানতো তাই টর্চটা লুকিয়ে রাখত যাতে করে আমি রেডিও শুনে শুনে ব্যাটারি ডাউন না করে দেই। কিন্তু পুরনো দিনের যৌথ পরিবার, আমাদের একটামাত্র বেডরুম, ওখানে কোথায় আর টর্চ লুকিয়ে রাখবে। তো বাবা বেরিয়ে যাওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যেই টর্চ আমার হস্তগত আর রেডিও চালু।
যে দুটো পুরনো ব্যাটারির কথা বলছিলাম সেগুলো বেশ নরম হয়ে যেত আর তাদের যথেষ্ট যত্ন নিতে হতো, যেমন রোদে দিয়ে শুকিয়ে নিতে হতো না হলে পুরনো কোন কাপড় দিয়ে ভালকরে মুছে নিতে হতো না হলে ব্যাটারি থেকে তরল বেরিয়ে এসে নতুন দুটো ব্যাটারি কে খারাপ করে দিতে পারত। কিন্তু বর্ষাকালে খুব সমস্যা হতো, রোদের দেখা মিলতনা। তবে পুজোর সময় হলে খুব মজা হতো। মহালয়ার আগের দিন চারটি নতুন ব্যাটারি লাগানো হত রেডিওয়। পুজোতে নতুন পোশাক-আশাক তো হতোই তার আনন্দও ছিল আলাদা, তবে আমার কাছে পুজোর শুরু ছিল যেদিন রেডিওতে নতুন ব্যাটারি লাগানো হত। শারদীয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় মহিষাসুরমর্দিনী, তার পর আগমনী গান, পুজোর নতুন গান, গল্প দাদুর আসর পেরিয়ে সানডে সাসপেন্সর রোমাঞ্চ, মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ম্যাচের কমেন্ট্রি, ৯৬ এর বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গের তীব্র বেদনা, নিরানব্বইয়ের সাধারণ নির্বাচনে অটল বিহারি বাজপেয়ির ভারত বিজয়ের ধারাবিবরণী আর ২০০১ এর কলকাতা টেস্টে দুর্জয় অস্ট্রেলিয়াকে ভারতের হারিয়ে দেওয়ার রূপকথা... আমার সমস্ত কৈশোর জুড়ে রেডিও.... রেডিও তুমি অসম্ভব রোমান্টিক।
একটা ছবি হাজারটা কথা বলে।
টেলিভিশন আমাদের নিয়ে এলো ছবি দেখানোর দুনিয়ায়....
রেডিও হল অপসৃয়মান।
এতগুলো বছর পরে ওই পুরনো দিনের গান শুনতে শুনতে মনে হল
রেডিও তো আমাদের ছবি দেখায় নি শুধু শুনিয়েছে কথা......
ছবি তো আমরা এঁকেছি আমাদের মনে হাজারে হাজারে......
সে ছবির লাখ লাখ কথা রয়েছে হৃদয়ে জমে।।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Md. Rayhan Kazi ২১/০৬/২০২০অনেক ভালো লাগলো
-
জানবক্স খান ১৯/০৬/২০২০ভীষণ ভালো লাগল। রেডিও প্রীতি আমারও ছিল এক সময়।
-
দীপঙ্কর বেরা ১৬/০৬/২০২০ঠিক কথা
-
কে এম শাহ্ রিয়ার ১১/০৬/২০২০চমৎকার লাগলো!
-
মু,সায়েম আহমাদ। ১১/০৬/২০২০এই সেই রেডিও,যে রেডিওতে স্বাধীন বাংলার মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষজন খবরাখবর শুনতে পারতো।কিন্তু বর্তমানে এই ঐতিহ্যগত জিনিসটি বিলুপ্তির পথে।😒
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ১১/০৬/২০২০রেডিও এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।
-
সঞ্জয় শর্মা ১১/০৬/২০২০দারুণ স্মৃতিচারণ।