www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্বপ্ন পথে হেঁটে যাওয়া

গতকাল প্রিয় বন্ধু জিজ্ঞেস করল, সুখের ক্ষণগুলো এত অল্প কেন? বলতে গেলে এখন আমি দুঃখবোধের মাঝ নদীতে হাবু ডুবু খাচ্ছি। তবুও ভালো লাগার ক্ষণিক পলকা হাওয়া এসে আমায় নাড়িয়ে দেয়, সুখে থাকার ঠিকানা দেখায়। মুহুর্তেই স্বাপ্নিক হয়ে উঠি। ভাবি, এইতো আরেকটু হলেই পার পেয়ে যাবো দুঃখ নদীর।

বন্ধুটির প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো কিছু আমি পাই নি তখন। এখন মনে হচ্ছে, যারা সারাক্ষণ সুখের সাথে বাস করে তাদের ভেতরে এক ধরনের দুঃখ বিলাস জন্মে, তাই তাদের অমনটা হয়। তাদের প্রাচুর্য আর বিলাসিতায় বসবাস করতে করতে সুখের অসুখ করে। অথচ কাউকে দুঃখের সাগরে বাস করেও সুখের অভিনয় করে যেতে হয়।

"সাগরে পেতেছি শয্যা শিশিরে কী ভয়"। তাই আমার জন্য দুঃখের চেয়ে সুখের মুহুর্তগুলো একটা দীর্ঘ। চারিদিকের নানান অপ্রাপ্তি, আর অপাংক্তেয় চাওয়াগুলোর ভেতরে আমার বাস, যেখানে নিত্য হয় দুঃখের চাষ। দিনের পুরোটা সময় যার দুশ্চিন্তা, হতাশার গ্যাড়াকলে বন্দী, তার কাছে সুখের মুহুর্ত গুলো খানিকটা দীঘলই হবে বৈকি!

২,
প্রথম আলো'র ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত "আমাদের নায়কেরা" ক্রোড়পত্রে যেসব মনীষীদের সফলতার গল্প ওঠে এসেছে; সেখানে শুধু সফল স্বর্ণযুগের কথা আসে নি; এসেছে এই সফলতার পেছনে ছুটতে গিয়ে কন্টকময়, প্রস্তরাস্তীর্ণ রুক্ষ পথে হাঁটতে গিয়ে রক্তাক্ত হওয়ার কথা, আহত হওয়ার কথা। এসব সফল নায়কের সাফল্যের পেছনের গল্পে থাকে তরুণ স্বাপ্নিকের স্বপ্ন সফলের অনুপ্রেরণা। যা ব্যগ্রভরে শুধু হাতছানি দেয় সামনে এগুবার। তখনই সাহস হয়, এগিয়ে যাবার হাওয়া এসে গায়ে লাগে। ওই যে, যে পলকা হাওয়া মুহুর্তেই ছুঁয়ে দেয় সুখানুভবে!

প্রায় ষাট বছর ধরে পায়ে হেঁটে বই বিলিয়ে আলোক বর্তিকা জ্বালিয়ে আসা মানুষটিই আমাদের প্রিয় পলান সরকার। এই মানুষটির ন্যুব্জ দেহের ভেতরকার প্রাণ ভোমরাটা যে কত সচল ও ধীশক্তি সম্পন্ন তা জীর্ণ শরীর ভেদ করে এসে চোখে পড়ে ঠিক ঠিকরে পড়া সূর্য কিরণের মতো। আর কাব্য- গদ্যের মিশেলে কী অপার এক উপস্থাপনা! সরেস বর্ণনার মধ্য দিয়ে ওঠে এসেছে সৈয়দ শামসুল হক এঁর সব্যসাচী হওয়ার গল্প। তখনই বুকে উজিয়ে কিছু একটা বলার সাহস জুটে এই বুকে যখন তাঁর মুখে শুনি, হ্যাঁ লেখকই হবো। সেদিনকার সেই দৃঢ় প্রত্যয় এর কাছে কি তাঁর বাবার ভীতি প্রদর্শন- তুই লেখক হলে যক্ষায় মরবি, মদ গিলে ভেতরটা পচাবি, অনাহারে মরবি; এসব ধোপ টিকতে পেরছিল! আর এই দুঃসাহস দেখাতে না পারলে কি তিনি হতে পারতেন আজকের সৈয়দ শামসুল হক!

৩,
এই জীবনে অনেক পেয়েছি, অনেক হারিয়েছি কিংবা ফসকেও গেছে অনেক সুযোগ। সেই ক্লাস ফোর থেকে নাইন অবধি টানা প্রথম হয়ে আসাতে নিজের ভেতর তো ছিলই, এমনকি এলাকাবাসীও আশা পোষণ করতো এসএসসি তে সর্বোচ্চ সফলতার। সেই থেকে এক হতাশার অধ্যায়। তারপর নানা বাঁক ঘুরে, ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।

কাগজের উপর খসখস করে কলম চালানোর সময়টা আমরা পেরিয়ে এসেছি। পেরিয়ে এসেছি বললেও সঠিক হবে না। বলতে হবে, সে যুগের পরে আমাদের পদার্পণ। কী- বোর্ড, কী প্যাড যুগের সময়ে আমাদের দশ আঙুল পুরু সক্রিয়। অথচ আমাদের পূর্বসূরীরা দুই আঙুলে কলম চালিয়েছেন; কেউ বিদ্রোহী, জাতীয় কবি, এমনকি নোবেল পর্যন্ত জয় করেছেন দুই আঙুল চালিয়ে।

আমার ক্ষুদ্র জীবনে, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রয়াসগুলোকে দেখে অনেকে "চালিয়ে যাও" বলে বাহ্বা দেয়। কেউ বা ব্যঙ্গভরে বলে "চা লিয়ে যাও।" এই "চা লিয়ে যাও" ধাঁচের কথাগুলো আমাকে অনেকের কাছ থেকেই শুনতে হয়। ক্লাসের ফাঁকে আড্ডায়, ফোনালাপে ঝগড়ায়- অনেক বারই শুনতে হয়, তুই যে লেখালেখি ছাইপাশ শুরু করেছিস তাতে পেটে ভাত জুটবে নারে। ওই চা, বিস্কিট বিক্রি করেই চলতে হবে। আমার কম্পিউটার নেই, কীবোর্ড নেই। হাতে সেলফোন; তার বুকে আঙুলের লাঙল চষার বাতিককে আমার এক সহপাঠী বন্ধু বলে "ঘোড়ারোগ"। সেই ঘোড়ারোগে কবে প্রথম আক্রান্ত হয়েছি জানি না। শুধু মনে পড়ে যেদিন, ফেইসবুকের এক আঁকিবুঁকি দেখে প্রিয় কবি ও বড় ভাই বলেছিলেন, চালিয়ে যা, তোকে দিয়ে হবে। আমার মনে হয়, উনি "চা লিয়ে যা" ই বলেছিলেন। হয়ত ভুল শুনে এখনও চালিয়ে যাচ্ছি।

ইন্টারনেটের বদৌলতে ফেইসবুক, ব্লগ এখন সৃজনশীলতা প্রকাশের জাদুকরী প্লাটফর্ম। সেখানে লেখকই পাঠক, পাঠকই লেখক। আগে যে বলেছিলাম, আমাদের পূর্বসূরীদের কথা, যাদের মধ্যে এমন কমিউনিটি ছিল না যেখানে মুহুর্তেই পেয়ে যাবে তার সৃজনশীলতার ভুল, ত্রুটি বা বাহ্বা পাওয়ার সুবিধা। কিন্তু এটা আমরা পেয়েছি। এটা কাজেও লাগাচ্ছি। একে অপরের সাথে পরিচিত হচ্ছি। সেই সাথে মনের অজান্তেই, রচনা করে যাচ্ছি স্বপ্নের। এখানে আমরা সবাই স্বাপ্নিক, স্বপ্নের পথে যাচ্ছি হেঁটে।

পাওয়ার গল্পে এটুকু অস্বীকার করলে অকৃতজ্ঞতা হবে, যে আমি মানুষের ভালোবাসা পাই নি। মাঝেমধ্যেই অনেকেই ফেইসবুকে নক করেন, নম্বর চেয়ে নেন। আমিও তাই করি, ভালো লাগলে ফোন করি। ভার্চুয়াল জগতের গন্ডি পেরিয়ে হয়ে ওঠি বাস্তবিক জগতের প্রিয়। এই পাওয়াটুকু আদৌ অস্বীকার করতে পারব কি? যখন কোন ব্লগে যাই, অন্যের লেখা পড়ি, মতামত দেই, একমত না হলে ভ্রু কুঁচকাই- তখন আমাদের এই যে অনুভূতি বিনিময় ঘটে তার মাধ্যমে হয়ে উঠি একে অপরের আত্মার আত্মীয়। বাহ্যিক দুরত্বটাকে ছাড়িয়ে হয়ে যাই অন্তর্লীন সম্বন্ধের সম্বন্ধি। এই প্রিয় মানুষগুলোর সংস্পর্শে এলে ভুলে যাই যে, আমি এক দুঃখবোধের মাঝ নদীতে ভাসতে থাকা টোপাপানা।

নিজেই তখন হয়ে উঠি দুঃখগুলোর হন্তারক, জ্বল জ্বল চোখের স্বপ্ন সৈনিক। এভাবেই আমার স্বপ্ন পথে হাঁটা।

০৭নভেম্বর২০১৪।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১০৫৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/১১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অনিরুদ্ধ বুলবুল ১৯/১১/২০১৪
    অবশ্যই আপনাকে দিয়ে হবে।
    "চা-লিয়ে" নয় "চালিয়ে' যান - সফল হবেন সুনিশ্চয়।

    শুভেচ্ছা অফুরন্ত কবি।
  • খুব আমার মনের কথাগুলো পড়ে ফেলেছেন। আমার মনে এমন কথা সাজানো ছিল তবে আপনার মতো গুছিয়ে লেখার শক্তি হয়তো আমার নেই। অনেক ভালো লাগলো "চা লিয়ে নয়" এগিয়ে যান...।
    • মনের সাথে মন, হয়তো মিলে গেছে! তাই বোধহয়।

      আসলে আমরা সবাই স্বাপ্নিকের দলে। সো, স্বপ্ন দেখতে মানা কই?

      দেখা হবে জয়ে, যদি স্বপ্ন থাকে অটুঁট।

      ভাল থাকবেন।
  • একটা কথা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে কোনো কারনে আপনি কি হতাশ?
    না এটাই বা সিউর হই কি করে। যা লিখেছেন সত্যি বলতে এ যেনো ১০০% সত্যিই লিখেছেন। ভাই লেখাটা কতটি সুন্দর হয়েছে তা আমি মন্তব্যে বোঝাতে পারবো না। তবে এই টুকু বলি য এত ভালো লেগেছে যে প্রিয়তে রেখে দিলাম যখন মন খারাপ থাকবে আবারো বারবার পড়বো।
    • প্রিয় ইমাম,
      সুখ অসুখ আর আশা হতাশার মাঝেই আছি।

      ওই যে রবি বাবু বলেন না,
      মাঝে মাঝে তব দেখা পাই...

      প্রিয় হয়ে না ওঠার আক্ষেপ থাকে না যখন জানতে পারি আপনারা আমায় প্রিয় করে নিয়েছেন।

      শুকরিয়া। শুভ কামনা।
  • অনিরুদ্ধ বুলবুল ০৮/১১/২০১৪
    "গুরুজনে কয় -
    অতি সুখে থেকেই না কি সুখের অসুখ হয়!

    ভাল লেগেছে কবি। ধন্যবাদ।
  • রেনেসাঁ সাহা ০৮/১১/২০১৪
    খুব ভালো লাগল।
  • ইসমাত ইয়াসমিন ০৮/১১/২০১৪
    valo laglo.
 
Quantcast