জলছাপ
বালিকা লিখেছে, ভাগ্যিস আগেই বুঝতে পেরেছিলাম- আমি একটা গাধা।
আমি বললেম, গাধা না হয়ে ছাগল, দুম্বা উট কিংবা গরু হলেও পারতে।
আবার লিখেছে, ও কথা বলছো কেন?
আমি উত্তর দিলেম, ভালোই তো বলেছি, গাধা না হয়ে গরু হলেই ভালো হতে!
উকেন? কেন?? লিখে অফলাইন।
জবাব দিলাম, অন্তত জবাই করা যেত, কুরবানিতে কাজে লাগত।
(দুইদিন পর)
:আমাকে আর ফোন দিবা না।
:আচ্ছা দিব না।
:দিবা না মানে?
:তুমিই তো বললে…
:আমি বললাম আর তুমিও তাই করবে?
:তো…
:গাধা!!
:ভাগ্যিস, আমি আগেই বুঝে…
ঠাশ করে ফোনের লাইন কেটে দিল। আচ্ছা আমার কী দোষ!
প্লিজ লক্ষী শোনো,
আমি গাধা, তুমি গাধা- আমরা গাধা
দাদা গাধা, নানা গাধা- চৌদ্দ গোষ্ঠী গাধা।
(আমার এসএমএস)
(খানিকবাদে ফিরতি এসএমএস)
শিয়াল, কুত্তা, বিলাই, ভেড়া, মহিষ, ব্লা ব্লা……
আর কী চাই???
২,
এই ধরনের বালখিল্যতা সব সময় আমি মেনে নিতে পারতাম না। মাঝেমধ্যে রেগে যেতাম, বিরক্ত হতাম। রাত দুপুরে ফোন করে ঘুম ভাঙিয়ে বলবে, ছাদে ওঠো। দেখ কী সুন্দর চাঁদ! ঝুম বৃষ্টিতে আমায় নিয়ে চলে যাবে আইসক্রিম খেতে- এসব আদিক্যেতা প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও একটা সময় আমার আর ভালো লাগত না। আমি অজুহাত দেখাই, অফিস আছে, বস আছে। মিটিং, শিডিউল, অ্যাসাইনমেন্ট- এ রকম ছল করে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করি।
এর মানে এই না যে, তার প্রতি আমার ভালোবাসার টান পড়েছে, আমি তাকে ভেতরে ভেতরে সরিয়ে দিচ্ছি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল, আমার একটু একাকি থাকা দরকার্। ফোন করা মাত্রই ওর ক্যাম্পাসে চলে আসা, ফাস্টফুডের দোকানে ঢু মারা, চটপটি- ফুসকার প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে পড়া- আমার কাছে বড্ড একগেয়ে লাগছিল।
সেবার অফিসের এক কাজে চট্টগ্রামে যাচ্ছি। জানতে পেরে বায়না ধরেছে, ঝিনুকের মালা, প্রবাল, মুক্তো ইত্যাদি আনতে হবে। আর যাওয়ার পথে ঘন্টায় ঘন্টায় আপডেট দিতে কোথায় কখন আছি ইত্যাদি। অফিসের কর্তা সাহেব সঙ্গী হওয়ায় ইচ্ছা সত্বেও বারবার তাকে ফোন করা কিংবা ফোন রিসিভ করে তাকে প্রতি মুহুর্তের আপডেট দেওয়া সম্ভব ছিল না। পরবর্তীতে ক্লায়েন্ট, শিডিউল, ঢাকা ফেরার তাড়ায় মার্কেটে বের হওয়া সম্ভব হল না। প্রবাল, ঝিনুকের জন্য অন্তত পতেঙ্গা পর্যন্ত যেতে হতো কিন্তু এতো সময় হাতে ছিল না।
তার আবদার মেটাতে পারি নি বলে তখন তার কী রাগ! প্রায় তিন দিন আমার সাথে কথা বলা বন্ধ। ক্ষুদে বার্তায় শুধু লিখেছিল, তোমার সাথে আড়ি! আড়ি!! আড়ি!!!
৩,
এরপর বহুবার আমাদের আড়ি ভেঙেছে, আড়ি হয়েছে। তবে আমাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে, এই আশংকা আমি কখনও করি নি। এরকম একটা ঠুনকো ঘটনায় সে বেঁকে বসবে, তা আমার কল্পনার বাইরে। অফিস টাইমে কোন একদিন তার ফোন। ডেস্কে বারবার সেলফোন বেজে ওঠায়, পাশের ডেস্কের সহকর্মী নার্গিস এসে ফোনটা তুলেছিল। নারী কন্ঠের আওয়াজ শুনেই লাইন কেটে দিয়ে ফোন অফ করে দিল।
সেদিন রাতে আমি অনেকবার বুঝাতে চেষ্টা করেছি, ফোনটা তুলেছিল আমার সহকর্মী। দিনে দিনে আমার প্রতি তার অমূলক এক সন্দেহ বেড়েই চলছিল। দেখা হলেই আমার সেলফোন এর ইনবক্স, কল লিস্ট চেক করত। এই বিষয়গুলো আমাকে খুব মারাত্মকভাবেই আহত করত। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেতাম যখন মাঝেমধ্যেই আমার পাসওয়ার্ড চেয়ে বসত। ও এতটা অবিশ্বাসী হয় কী করে? অনুভূতির শীত বড়ই শীতল! সেদিনের ফোন রিসিভের ব্যাপারটা অনেক দূর গড়ালে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম, সম্পর্কটা ভেস্তে দিতে। সবচে বেশি অবাক হয়েছিলাম, প্রায় পাঁচ বছরের সম্পর্কটা ভেঙে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তার স্বাভাবিক এবং চুপ থাকাতে। সেই থেকে দুজন আর এক পথে পা মাড়াই নি।
৪,
হঠাৎ করেই অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন। কন্ঠটা পরিচিত, তানিশা। ওর জড়ানো গলা। বুঝতে পারলাম, কোন সমস্যা হয়েছে। আমি এই ধরনের খবরের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।
সে এখন অপারেশন থিয়েটারে। এক ব্রেইন টিউমার তাকে এলোমেলো করে দিয়েছে। যেমনিভাবে এলোমেলো করে দিয়েছে ভালোবাসাময় সম্পর্কের। ওর আম্মাকে হাত উঁচু করে দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই ঠোঁটে আঙুল চেপে ইশারা করলেন চুপ থাকতে। উনি ইঙ্গিতে বললেন, প্রার্থনা কর। আমি তানিশার পাশে বসলাম। ডান হাতের কনুই উরুর উপর রেখে কপাল চেপে ধরে আছি। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হচ্ছে, পেইন রিলিভার থাকলে ভালো হতো। মনে মনে আল্লাহর নাম জপছি। প্রায় আধা ঘন্টা পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হতেই ছুটে যাই, ডাক্তার! পেশেন্ট এর অবস্থা কী? আল্লাহকে ডাকুন, বলেই পাশ কেটে চলে গেলেন তিনি।
৫,
আমার কাছে তার খুব বেশি স্মৃতিচিহ্ন নেই। শুধু কক্সবাজারে তোলা কিছু ছবি। ফোল্ডার অপেন করতেই চোখে পড়ল। সাগরের আছড়ে পড়া ঢেউ এসে পড়ছে তার হাঁটু অবধি, প্রচন্ড বাতাসে উড়ছে তার চুল। আমি ক্যামেরা নিয়ে ক্লিক ক্লিক করেই যাচ্ছি। বুঝতে পারছি না কোন ছবিটা দেয়ালে ঝুলানো যায়! সব ছবিই জীবন্ত, কথা বলে- স্পর্শ পাই, গন্ধ লাগে। যে গন্ধ লেগেছিল, তার বুকে নাক ঘষাতে। স্পর্শ পাই, প্রথম রাতের। থাক ছবি গুলো ওভাবেই থাক। কী দরকার প্রিন্ট দেওয়ার। যে ছবি সেঁটে আছে হৃদয় দেয়ালে, সেগুলো নাহয়...
আমি বললেম, গাধা না হয়ে ছাগল, দুম্বা উট কিংবা গরু হলেও পারতে।
আবার লিখেছে, ও কথা বলছো কেন?
আমি উত্তর দিলেম, ভালোই তো বলেছি, গাধা না হয়ে গরু হলেই ভালো হতে!
উকেন? কেন?? লিখে অফলাইন।
জবাব দিলাম, অন্তত জবাই করা যেত, কুরবানিতে কাজে লাগত।
(দুইদিন পর)
:আমাকে আর ফোন দিবা না।
:আচ্ছা দিব না।
:দিবা না মানে?
:তুমিই তো বললে…
:আমি বললাম আর তুমিও তাই করবে?
:তো…
:গাধা!!
:ভাগ্যিস, আমি আগেই বুঝে…
ঠাশ করে ফোনের লাইন কেটে দিল। আচ্ছা আমার কী দোষ!
প্লিজ লক্ষী শোনো,
আমি গাধা, তুমি গাধা- আমরা গাধা
দাদা গাধা, নানা গাধা- চৌদ্দ গোষ্ঠী গাধা।
(আমার এসএমএস)
(খানিকবাদে ফিরতি এসএমএস)
শিয়াল, কুত্তা, বিলাই, ভেড়া, মহিষ, ব্লা ব্লা……
আর কী চাই???
২,
এই ধরনের বালখিল্যতা সব সময় আমি মেনে নিতে পারতাম না। মাঝেমধ্যে রেগে যেতাম, বিরক্ত হতাম। রাত দুপুরে ফোন করে ঘুম ভাঙিয়ে বলবে, ছাদে ওঠো। দেখ কী সুন্দর চাঁদ! ঝুম বৃষ্টিতে আমায় নিয়ে চলে যাবে আইসক্রিম খেতে- এসব আদিক্যেতা প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও একটা সময় আমার আর ভালো লাগত না। আমি অজুহাত দেখাই, অফিস আছে, বস আছে। মিটিং, শিডিউল, অ্যাসাইনমেন্ট- এ রকম ছল করে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করি।
এর মানে এই না যে, তার প্রতি আমার ভালোবাসার টান পড়েছে, আমি তাকে ভেতরে ভেতরে সরিয়ে দিচ্ছি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল, আমার একটু একাকি থাকা দরকার্। ফোন করা মাত্রই ওর ক্যাম্পাসে চলে আসা, ফাস্টফুডের দোকানে ঢু মারা, চটপটি- ফুসকার প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে পড়া- আমার কাছে বড্ড একগেয়ে লাগছিল।
সেবার অফিসের এক কাজে চট্টগ্রামে যাচ্ছি। জানতে পেরে বায়না ধরেছে, ঝিনুকের মালা, প্রবাল, মুক্তো ইত্যাদি আনতে হবে। আর যাওয়ার পথে ঘন্টায় ঘন্টায় আপডেট দিতে কোথায় কখন আছি ইত্যাদি। অফিসের কর্তা সাহেব সঙ্গী হওয়ায় ইচ্ছা সত্বেও বারবার তাকে ফোন করা কিংবা ফোন রিসিভ করে তাকে প্রতি মুহুর্তের আপডেট দেওয়া সম্ভব ছিল না। পরবর্তীতে ক্লায়েন্ট, শিডিউল, ঢাকা ফেরার তাড়ায় মার্কেটে বের হওয়া সম্ভব হল না। প্রবাল, ঝিনুকের জন্য অন্তত পতেঙ্গা পর্যন্ত যেতে হতো কিন্তু এতো সময় হাতে ছিল না।
তার আবদার মেটাতে পারি নি বলে তখন তার কী রাগ! প্রায় তিন দিন আমার সাথে কথা বলা বন্ধ। ক্ষুদে বার্তায় শুধু লিখেছিল, তোমার সাথে আড়ি! আড়ি!! আড়ি!!!
৩,
এরপর বহুবার আমাদের আড়ি ভেঙেছে, আড়ি হয়েছে। তবে আমাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে, এই আশংকা আমি কখনও করি নি। এরকম একটা ঠুনকো ঘটনায় সে বেঁকে বসবে, তা আমার কল্পনার বাইরে। অফিস টাইমে কোন একদিন তার ফোন। ডেস্কে বারবার সেলফোন বেজে ওঠায়, পাশের ডেস্কের সহকর্মী নার্গিস এসে ফোনটা তুলেছিল। নারী কন্ঠের আওয়াজ শুনেই লাইন কেটে দিয়ে ফোন অফ করে দিল।
সেদিন রাতে আমি অনেকবার বুঝাতে চেষ্টা করেছি, ফোনটা তুলেছিল আমার সহকর্মী। দিনে দিনে আমার প্রতি তার অমূলক এক সন্দেহ বেড়েই চলছিল। দেখা হলেই আমার সেলফোন এর ইনবক্স, কল লিস্ট চেক করত। এই বিষয়গুলো আমাকে খুব মারাত্মকভাবেই আহত করত। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেতাম যখন মাঝেমধ্যেই আমার পাসওয়ার্ড চেয়ে বসত। ও এতটা অবিশ্বাসী হয় কী করে? অনুভূতির শীত বড়ই শীতল! সেদিনের ফোন রিসিভের ব্যাপারটা অনেক দূর গড়ালে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম, সম্পর্কটা ভেস্তে দিতে। সবচে বেশি অবাক হয়েছিলাম, প্রায় পাঁচ বছরের সম্পর্কটা ভেঙে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তার স্বাভাবিক এবং চুপ থাকাতে। সেই থেকে দুজন আর এক পথে পা মাড়াই নি।
৪,
হঠাৎ করেই অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন। কন্ঠটা পরিচিত, তানিশা। ওর জড়ানো গলা। বুঝতে পারলাম, কোন সমস্যা হয়েছে। আমি এই ধরনের খবরের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।
সে এখন অপারেশন থিয়েটারে। এক ব্রেইন টিউমার তাকে এলোমেলো করে দিয়েছে। যেমনিভাবে এলোমেলো করে দিয়েছে ভালোবাসাময় সম্পর্কের। ওর আম্মাকে হাত উঁচু করে দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই ঠোঁটে আঙুল চেপে ইশারা করলেন চুপ থাকতে। উনি ইঙ্গিতে বললেন, প্রার্থনা কর। আমি তানিশার পাশে বসলাম। ডান হাতের কনুই উরুর উপর রেখে কপাল চেপে ধরে আছি। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হচ্ছে, পেইন রিলিভার থাকলে ভালো হতো। মনে মনে আল্লাহর নাম জপছি। প্রায় আধা ঘন্টা পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হতেই ছুটে যাই, ডাক্তার! পেশেন্ট এর অবস্থা কী? আল্লাহকে ডাকুন, বলেই পাশ কেটে চলে গেলেন তিনি।
৫,
আমার কাছে তার খুব বেশি স্মৃতিচিহ্ন নেই। শুধু কক্সবাজারে তোলা কিছু ছবি। ফোল্ডার অপেন করতেই চোখে পড়ল। সাগরের আছড়ে পড়া ঢেউ এসে পড়ছে তার হাঁটু অবধি, প্রচন্ড বাতাসে উড়ছে তার চুল। আমি ক্যামেরা নিয়ে ক্লিক ক্লিক করেই যাচ্ছি। বুঝতে পারছি না কোন ছবিটা দেয়ালে ঝুলানো যায়! সব ছবিই জীবন্ত, কথা বলে- স্পর্শ পাই, গন্ধ লাগে। যে গন্ধ লেগেছিল, তার বুকে নাক ঘষাতে। স্পর্শ পাই, প্রথম রাতের। থাক ছবি গুলো ওভাবেই থাক। কী দরকার প্রিন্ট দেওয়ার। যে ছবি সেঁটে আছে হৃদয় দেয়ালে, সেগুলো নাহয়...
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
উদ্বাস্তু নিশাচর ২১/১০/২০১৪প্রেম সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো বরাবরই আমার মাথার ওপর দিয়ে যায়
-
অনিরুদ্ধ বুলবুল ২০/১০/২০১৪হৃদয়ের কোথায় যেন চিন্-চিন্ ব্যাথা অনুভব করছি।
মনটা বিষাদে ভরে উঠল।
শাশ্বত প্রেমের এক নিটোল পদাবলী।
বড় ভাল লাগল। শুভেচ্ছা বন্ধু। -
মেহেদী হাসান (নয়ন) ২০/১০/২০১৪ভাল লাগলো
-
আবু সাহেদ সরকার ১৯/১০/২০১৪দারুন একটি প্রকাশ কবি বন্ধু।
-
রূপক বিধৌত সাধু ১৯/১০/২০১৪সুন্দর!
-
মো: হাবিবুর রহমান বাবলু ১৯/১০/২০১৪ভাল লাগল।
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ১৯/১০/২০১৪এতটা আবেগী হবেন না। সত্যি অনেক আবেগময় একটা লেখা ভালো লাগলো।