www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমার জয়ী হওয়া না হওয়া

আমার জীবনে জয়ের কোন ইতিহাস নেই। সেই ছোট্টবেলা থেকেই- যখন মার্বেল খেলতে যেতাম বেশীরভাগ সময় দেউলিয়া হয়ে ফিরতাম। এমনটা অনেকবার হয়েছে- চাচাতো ভাইয়ের সাথে খেলতে গিয়ে নি:স্ব হয়ে ফিরতাম, হেরে যাওয়া, হারানোর গ্লানি আমাকে কাঁদাতো। যদি কোন দিন কান্না লুকাতে না পারতাম, সেদিন ভাইটি আমার হেরে যাওয়া মার্বেল ফিরিয়ে দিয়ে খুশি করত। বাহ্যিকভাবে আমাকে কিছুটা খুশি দেখালেও  ভেতরে ভেতরে ঠিকই হেরে যাওয়ার যন্ত্রণা টের পেতাম।

তারপর মার্বেল খেলার বয়স পার করে আরেকটু বড় হলাম। বন্ধুরা যখন ক্রিকেট, ফুটবল নিয়ে মাঠময় দৌড়াদৌড়ি করত তখন শীর্ণ শরীর নিয়ে নির্বাক দর্শক হয়ে বসে থাকতাম। খেলায় যে বন্ধুটি সবচে ভালো করত, তার স্তাবক হয়ে নিজের ব্যর্থতাকে চাপিয়ে আত্মসন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করতাম। আউটডোর খেলায় ভালো করতে না পারলেও দাবা খেলায় ভালো করতে পারতাম। একবার স্কুলে দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান হয়েও সেই স্বীকৃতি এবং ট্রফি হাতে ওঠে নি। তা যদি হতো, অন্তত সেই ট্রফিটা হাতে নিয়ে খেলুড়ে বন্ধুদের দেখাতে পারতাম, না আমিও ফেলনা নয়।

এতসব ব্যর্থতা আর না পারার মধ্যে একটা কৃতিত্বই ছিল ক্লাস ফোর থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত ফার্স্ট বয় ছিলাম। জীবনের প্রথম ভালো লাগা বা ভালোবাসা সেই ক্লাস সেভেনেই। ক্লাস সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত যেই মেয়েটি সেকেন্ড হতো, কেন জানি তার উপরই ঝরে পড়ত আমার সব ভালোবাসা! কতোবার নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে রিহার্সেল করেছি- তার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করবো বলে। তা কখনও আর হয়ে ওঠে নি।

আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতাম, বন্ধুরা প্রেম করছে, ডেট করছে, চিঠি লিখছে। ভাগ্যের পরিহাসময় ব্যাপার হলো যে, বন্ধুদের কতোবার কত প্রেমে মাখা রসালো চিঠি লিখে দিয়েছি। শুধুই নিজের বেলায় জুটে নি কাউকে ভালোবাসি বলে কাগজ কলম হাতে নেওয়ার সৌভাগ্য।

স্কুল, কলেজ লাইফ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে ওঠে যতবার যত বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছি, এ পর্যন্ত কয়টি প্রেমের সম্পর্ক জড়িয়েছিস? প্রায় সবার উত্তরই আমাকে ঈর্ষান্বিত করে তোলে। আমার লেভেলে বা আমার সাথে পড়ুয়া সব বন্ধুদের একাধিক প্রেম ভালোবাসার অভিজ্ঞতা রয়েছে। খোদ, আমারই কোন অভিজ্ঞতা নেই।

কোন ধরনের খেলায় যেমন আমার কোন পারদর্শীতা ছিল না তেমনিভাবে কোন কিশোরী বা তরুণীর হৃদয় জয়েও সক্ষম হয়ে ওঠতে পারি নি। বাংলা সিনেমায় যখন দেখতাম- নায়িকা নায়কের উপর ক্রাশ খেয়ে মাথা ঘুরিয়ে ফেলেছে, আমি আত্মশ্লাঘায় মুখ ফিরায়ে নিতাম। আর মনে মনে বলতাম, আচ্ছা আমাকে কি কেউ এমনভাবে ভালোবাসতে পারে না? আমার কপালে সে সুখময় স্মৃতিও এখন পর্যন্ত জমা হয় নি।

জনৈক এক কবি বলেন, যারা ঘর পায় তারা নাকি কবিতা হারায়। আমি কখনই নিজেকে কবি(!) বা লেখক(!) বলে স্বীকার করি না। আমি জানি সে যোগ্যতা আমার নেই বা সে দৃষ্টতা দেখানোও আমার পক্ষে মানানসই না। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা, দর্শন- যা কিছু এ পর্যন্ত দেখেছি বা আবিষ্কার করেছি তা ই খাতা কলমে বা মোবাইলের বুকে আঙুল চালিয়ে তৈরি করি বর্ণ শব্দের ব্যঞ্জন। কেউ কেউ বলেন, ভালো লিখো তো। কেউ বলেন, যত্তোসব! আমি কবি হতে আসি নি। তবে ভালো মানুষ হতে এসেছি। ভালো মানুষ হয়ে মানুষকে ভালোবাসতে এসেছি, বিনিময়ে ভালোবাসা পেলেই আমি নিজেকে ধন্য মনে করব। জানি না এক্ষেত্রেও আমি কতটা সফল হতে পারব! ঐ যে বললাম না, আমার জীবনে কোন সাফল্যের বা জয়ের ইতিহাস নেই।

আজ সহপাঠী, বন্ধুদের সাথে স্রেফ লুডু খেলায় পরপর দুই গেইম হজম করতে হয়েছে। আমার সহ খেলোয়াড় বন্ধুরাও মন থেকে চায় নি যে, দ্বিতীয় গেইমেও আমি হারি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস জীবনের সাপলুডুর মতো, কাগজ আর ঘুটির লুডুতেও হেরেছি। তখন fuck the fate বলে আত্মদহন আর পরাজয়ের স্বাদ নেওয়া ছাড়া আর কী ই বা থাকে!
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১০০৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০৯/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • রেনেসাঁ সাহা ৩০/১০/২০১৪
    বেশিরভাগ দুঃখের কবিই একসুই সুখের জন্য বিলিয়ে দিতে পারেন তার সম্পূর্ণ কবিত্ব। ভাল লেখা। ভীষণ ভালো লেগেছে।
  • আমি জয় থেকে যতটা না শিখেছি তার চেয়ে বেশি শিখেছি পরাজয় থেকে। এটি আমার কথা না। জনৈক জ্ঞানী ব্যাক্তির। সো...............
  • একনিষ্ঠ অনুগত ২১/০৯/২০১৪
    এটাই জীবন।
  • তাইবুল ইসলাম ১৯/০৯/২০১৪
    নিজের সম্পর্কে খুব কম মানুষই এভাবে ভাবতে পারে
    আপনাকে অভিনন্দন
  • ১৯/০৯/২০১৪
    আপনার হেরে যাওয়া মানে আরেকজনের জিতে যাওয়া । এইটা ভেবে সুখী হতে পারেন যে নিজে জিততে না পারলাম আরেকজনকে তো জিতাতে পেরেছি ।
    ভালো লাগল পড়ে । ধন্যবাদ ।
 
Quantcast