www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অর্বাচীনের ডায়েরি

কতদিন হলো কোন চিঠি লিখ না। এতদিনে কত কী হয়ে গেছে, তা তুমি জানো? আচ্ছা তাহলে তোমাকে সব বলেই ফেলি। কী বলো?

আমাদের বাসার পাশের যে তিনটা রুমের আরেকটা বাসা ছিল, সেই বাসা। সেই বাসায় কারা থাকতো, তা তোমার মনে আছে? মনে নেই? আচ্ছা বলছি- আসাদ কাকু ছিলেন। ঐযে যার দাঁড়ি ছিল না গোঁফ ছিল। মাথায় প্রতি শুক্রবারে চুলে কলপ লাগিয়ে ফ্যানের নিচে বসে থাকতো!  রেহেনা কাকী, যিনি তোমাকে আমাকে সন্দেশ, গোল্লা, রসমলাই খাওয়াতো! ও, এতক্ষণে তোমার মনে পড়েছে? কী? রাজিয়া? হ্যাঁ ওর কথাইতো বলতে তোমাকে লিখেছি। তুমিতো সেই মাস দুয়েক থেকেই উধাও হয়ে গেলে! তা আগে বলব কখন, কী করে! আচ্ছা বাবা অধৈর্য্য হয়ো না, শোনো।

তুমি চলে যাওয়ার পর একা একা বসে থাকা ভালো লাগতো না। তখন থেকে বাসার পেছনে যে ঘুঘুর বাসাটা ছিল সেখানেও যেতাম না। ঐযে পিঁপড়ে গুলোর বাসার কাছেও যেতাম, যাদের মুখে সাদা সাদা কী যেন ছিল! তুমি তাকে বলতে পিঁপড়ের ডিম। হি হি। রেহেনা কাকীর কাছেও যেতাম না। সেদিন আব্বু- আম্মুর বিয়ে বার্ষিকী ছিল। আসাদ কাকু, রেহেনা কাকী, রাজিয়া, রওনক- ওরা সবাই এসেছিল। আমার খুব ভাল লেগেছিল সেদিন। আসাদ কাকু চকচকে কাগজে আব্বু- আম্মুর জন্য উপহার এনেছিলো। উপহারটা কী ছিলো জানো? রবীন্দ্রনাথের "গল্পগুচ্ছ"! হা হা। রেহেনা কাকী আমার জন্য এক প্যাকেট চকলেট এনেছিল।
ও রাজিয়া? দেখো দেখি ওর কথাই বলতে ভুলে গেছি। আব্বু- আম্মু, কাকা- কাকী যখন কথা বলছিল তখন রওনক কাকীর কোলে বসে বসে ডায়াপার চুষছিল! মজার না বিষয়টা! তখন রাজিয়া আমার কাছে এসে বসল। আমার রেলগাড়িটার প্রতি ওর লোভ হল। তারপর কী বলল জানো? জানবে কেমনে! তুমি তো তখন ঢাকা। তোমার আব্বুর প্রমোশন হয়ে গেছে। ও বলল, "তোমার গাড়িটা বেশতো! আমি এট্টু চালাই?" তুমি কী ভাবছো- ওকে দিয়েছিলা গাড়িটা? হা হা! না দেইনি। মনে আছে তোমার আমি আর তুমি মিলে যেদিন ওদের বাসায় গিয়েছিলাম, সেদিন ওর সুন্দর পুতুলে চাবি ঘুরিয়ে নাচ দেখে ছিলাম! আর তাতে ও আচ্ছা মত বকা দিয়েছিল! সেজন্য আর ওকে গাড়ি চালাতে দেই নি। ও কী করেছিল তখন জানো? ও আম্মুর কাছে গেয়ে কেঁদে দিয়ে বলেছিল, "কাকিমা, ওকে বলো না ওর গাড়িটা দিতে, আমি চালিয়ে দেখবো, ওটা কেমন করে চলে" এতোক্ষণে গাড়ি নিয়ে আমি লাপাত্তা! শোধ বাদ, যাকে বলে।

পর সমাচার এই যে, এবার তো  রাজিয়াও চলে গেলো।  জানো? ঐ দিনের পর থেকে ও আর বারান্দা ছেড়ে বের হয় নি। সারাদিন বাসায় বসে কার্টুন দেখত, আর স্কুলে যেত। ওকে কিন্তু আমার সাথে ভর্তি করিয়েছিল কাকী। হলে কী, ও আমার সাথে যেত ও না, কোন কথাও বলত না। আমি একদিন সেধে সেধে বলেছিলাম, "চলো না, আজকে আমার খেলনা গাড়ি চালাবে" ও কিন্তু আমার সাথে যায় নি। ও নাক ফুলিয়ে সেদিন বলেছিল, "না বাবা! তোমার গাড়ি আমি ছোঁব না। আর তোমার সাথে কোন কথাও বলব না।" আমার সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল। তারপরও তো অনেকদিন আমার সাথে পড়েছে। কিন্তু কোন কথা বলেনি। তবে মাঝে মধ্যে হতো কী, আমার স্কুল ব্যাগে সন্দেশ, লটকন, বাদাম ইত্যাদি কে যেনো রেখে যেতো। আমি তো একদিন ভয়ই পেয়ে গেলাম। ভাবলাম, ঘুঘু যে জাম্বুরা গাছে বাসা বেঁধে ছিল সেই গাছের ভূত বুঝি! ভূতটার কথা তোমার মনে পড়ে? ঐযে বুয়া প্রত্যেক দিন এসে আমাদের ভূতের গল্প শোনাত। পরে জানতে পারলাম- না ভূত না। পেত্নী! আহা, চিনতে পার নি এখনও! রাজিয়া! আচ্ছা আমি না ওকে ভয় পাওয়া শুরু করলাম, ওকে কিছু বলতে পারতাম  না। শুধু শফিক একদিন জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা আনন্দ, তোর ব্যাগ থেকে কিছু চুরি যায়?" "কেনো বলতো?" ও বিড়বিড় করে বলল, "না! ইয়ে মানে, একদিন টিফিনে রাজিয়া তোর ব্যাগের জিপার ধরে টানছিল। আমি দেখে ফেলতেই চলে আসলো!" তারপর বুঝতে পারলাম আসল ঘটনা কী!

ধ্যাৎ, ভুলেই গেছি কেন তোমাকে লিখছি। রাজিয়াদের ফ্যামিলি চলে গেছে কাল। যাবার সময় রাজিয়া আমার জন্য কী রেখে গেছে জানো? সেই নাচনেওয়াল পুতুলটা! আমার হাতে দিয়ে যায় নি। সেদিন বিকেলে স্যার পড়াতে আসে নি, তাই ঘুমুচ্ছিলাম। এই ফাঁকে ও আম্মুর কাছে দিয়ে নাকি বলেছিল, "ওটা আনন্দের জন্য…" আমি তখন থেকেই তোমাকে লিখবো বলে ভাবছি। এই ফাঁকে রাজিয়া, রওনক, আসাদ কাকু, রেহেনা কাকী- সবাই চলে গেলো। ঘুমুতে যাওয়ার আগে চেয়ে দেখি ওদের বাসায় কোন আলো নেই। সব অন্ধকার্।

আরেকটা কথা কী জানো, জীবন? আমি ওর পুতুলটা নিয়ে খেলি না। যদি নষ্ট হয়ে যায়। এটাকে পড়ার টেবিলে রেখে দিয়েছি। অন্তুকে ওটা ধরার জন্য দেই না। ও আরেকটা কথা, অন্তু এখন কথা বলতে শিখে গেছে। সেদিন স্কুল থেকে আসার পর আমাকে দেখে "বা, বা, বাইয়া" বলে চিৎকার দিয়ে ওঠল। আমিতো কেঁদে ফেললাম। ও আমাকে "ভাইয়া" বলতে শিখে গেছে!

২,
হঠাৎ করেই আব্বুর পুরোনো কাগজের ফাইল ঘাঁটতে গিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া চিঠিটা চোখে পড়ল। "আরে, এটা তো আনন্দের চিঠি!" আমার স্কুল বন্ধুর চিঠি। যার সাথে ক্লাস থ্রীতে আমি কয়েকমাস পড়েছিলাম। তারপর আব্বুর প্রমোশন ঢাকায় চলে এলাম। ওরা, মফস্বলেই রয়ে গেল। অবাক করেই আনন্দের বাবা আব্বুর ঠিকানায় চিঠিটা সেদিন পোস্ট করেছিলেন। আচ্ছা ভালো কথা, আনন্দ, রাজিয়া- ওরা তো শৈশব বন্ধু, খেলার সাথী! অথচ সময়, বয়স, পড়াশুনা, আব্বুর ট্রান্সফারে সবাই মনের আড়ালে চলে গেছে। এখন বন্ধু মানেই মধুর ক্যান্টিন, ফেইসবুক, এমএসএন, স্কাইপ! ওরা কি আমার সাড়ে চার হাজার বন্ধু তালিকায় আছে! নাকি নেই! আচ্ছা একটু সার্চ দিয়ে দেখে নিই।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৪১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/০৮/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • রেনেসাঁ সাহা,

    ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। নিছক আঙুলের চাপে আপনার মূল্যবান মন্তব্য মুছে গেছে।

    এ যেন নিজ হাতে নিজের হৃদয়কে রক্তাক্ত করেছি।
  • অনিরুদ্ধ বুলবুল ০৫/১১/২০১৪
    আপনার ভাবনাগুলো ভারি সুন্দর, প্রকাশটাও বেশ!
    নিয়মিত ডায়েরী লিখেন মনে হয়। বেশ ভাল লাগে - ছোটখাটো বিষয়গুলোকে ছোট ছোট আঁচড়ে কেমন শিল্পীত করে তোলেন! অভিনন্দন রইলো।
    • প্রিয়,
      ডায়েরি বয়ান দিয়েছি, যুগের ভ্রান্তিতে।

      সে যাই হোক, আপনি পাঠক হিসেবেই নন, লেখক হিসেবেও ধন্য।

      আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
  • ফ্যান্টাস্টিক। সত্যি অনেক ভালো লাগলো লেখাটা। আবেগপূর্ন লেখা।
  • বেশ ভাল উপস্থাপন করেছেন। ভাল বিষয়বস্তু
  • Shopnil Shishir(MD.Shariful Hasan) ২৪/০৮/২০১৪
    valo laglo doya kore sobar pata gure aseun kobi vai valo lagbe!
  • আবু সাহেদ সরকার ২৪/০৮/২০১৪
    সুন্দর একটি প্রকাশ কবি বন্ধু। আশাকরি আমার পাতায় আসবেন।
  • একনিষ্ঠ অনুগত ২৪/০৮/২০১৪
    দারুণ লিখেছেন...।।

    একই বাক্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরুষ আনতে হলে প্রথমে তৃতীয় পুরুষ, তারপরে দ্বিতীয় এবং শেষে প্রথম পুরুষ উল্লেখ করা ভালো।

    যেমনঃ আসাদ কাকু, তুমি আর আমি। তুমি আর আমি।

    শুভ কামনা রইল ভাই।
    • অনিরুদ্ধ বুলবুল ০৫/১১/২০১৪
      সত্যি! ভাল বলেছেন তো!
      এটা তো এমনভাবে আমরা খেয়ালে রাখি না!

      ধনবাদ কবিবর পরাগ।
    • মূল্যবান মতামত ও পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ
 
Quantcast