www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ময়না কাটার বুকে চর পর্ব ০৬

উপন্যাস ময়না কাটার বুকে চর পর্ব ০৬
জামাল উদ্দিন জীবন

ছনিয়া অনেক সময় হলো স্কুল হতে ফেরেনি ছানি তার দাদার সাথে কথা বল ছিলো তখনি হাফিজ এসে খবর দেয় ছনিয়া বাড়িতে ফেরার পথে পানিতে পরে যায়। তার অবস্থা খারাপ দেখে নিরাঞ্জন ও সিদাম মিলে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। তাড়া তাড়ি যেতে বলেছে। সবার সব কথা বন্ধ হয়ে যায় ছনিয়ার খবরটা শুনে সকলে হাসপাতালের দিক চলে। আমির খাঁ ও মবিন খাঁ খাবার শেষ করে মাঝি কে বলে পেট শান্তিতো দুনিয়া শান্তি চলো এবার নল গোড়া শিব চরে চলো তার পরে একে একে অন্য দিকে যাওয়া যাবে। কালাচান বলে ভাই জান একটা কথা কইতাম চাই? কি কথা কইয়া ফেলো শুনি। যাবার সময় বৈকালে একটু কাদীরপুর হয়ে যেতে চাই। ছোট কালে বাজান মরণের পর ছোট বইনডারে বিয়া দিছি তেমন নাইয়র নিতে পারি নাই। আমার অবস্থা আপনে জানেন যদি একবার বইন ডারে নাইয়র নিতে দিতেন। আচ্ছা দেখা যাইবো অহন জলদি নৌকা চালাতো। সব দিক হয়ে কি এক দিনে কাজ শেষ করা যায় দশ বারোটা গ্রাম দুই দিন সময় নিয়া বেড় হলেই হয় না তা হবে না শালারা জন্মের কিপটে হাতের ফাঁকা দিয়া পানি পরে না।

কইলাম বোইনডারে নায়র নিমু সেই দিকে কোন খেয়াল আছে কান পাইতা শুনলো মুখ দিয়া একটা কথাও কইলো না খাঁর পো খাঁরা। জমির ব্যপারি গঞ্জের কাজ শেষ করে বাড়ির দিকে ফিরছে মাঝ পথে মবিন খাঁয়ের সাথে দেখা কি ব্যপারী সাব কোথায় গেছিলেন ভালো আছেন? খাাঁরপো ভালো আছি কাজে গিছিলাম বাড়িতে যামু। তোমরা কই যাও? আর কইয়েন না কিছু মাল লাগবো তাই মিস্ত্রী ও সুতার বাড়ি ঘোরা ঘুড়ি করছি সাথে বর্ষাটাও দেখছি। বর্ষার জ্বল কিছুটা কমেছে চারিদিকে মাছ ধরার হিড়িক পরেছে নদী নালা খাল বিল পুকুর সব জায়গায় বেশ মাছ পরেছে এবার। জেলেদের মনে আনন্দ আর ধরে না। পাট চাষীরাও বেশ খুশি অনেক বছর পরে ভালো ফলন পেয়েছে বর্গা চাষীরা ভাবছে এবার মহাজনের ধারের টাকা শোধ করতে পারবে। থানার বড় বাবু আজ আবার এসেছেন এলাকার বন্যা পরবর্তী অবস্থা দেখ ভাল করতে। যারা অনেক কিছু হারিয়েছে তাদের কিছু টাকা ও উপযুক্ত পুরুষ মানুষ পরিবারে থাকলে তাদের কাজের ব্যবস্থা করে দিবেন।

এলাকার যুবকদের ভুঁয়শি প্রশংসা করেছেন। গরিব গ্রাম বাসিকে টিন ও কাপুড় দিবে তাই চেয়ারম্যান মনির খাঁর বাড়িতে আজ বেশ লোকজনের আগমন ঘটেছে। তুহিন সহ অন্য সকলে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের নামের তালিকা করছে। কালাচান সেদিন বইনডারে আনতে যাইতে পারে নাই। মনটা তার ভীশন খারাপ ‘’ খোদা তুমি আমারে কেন পাঠাইছে এই দুনিয়ায় গরীব বলে কেউ দাম দেয় না আমার মন বলতে কিছু নাই। মবিন খাঁ কইরে কালাচান চল মাঝির হাটে যামু। কালাচান কয় আমি যাইতে পারমু না অন্য কেউ রে কন আমার শরীরটা ভালা না। মবিন খাঁ রেগে গিয়ে আমার মুখের উপর কথা বলিস তোর সাহসতো কম না। এখানে সাহসের কি দেখলেন? যাইতে পারমু না খালি হেইডা কইছি। আমর এসে দেখে দুজনার মধ্যে তর্ক বিতর্ক হচ্ছে কিরে কালা কি হইছে? কিছু না আমি আর আপনেগো লগে কাম করুম না আমার টাকা পয়সা দিয়া দেন। মবিন তোর আবার কিসের টাকা প্রতি দিন খাওয়ন আসে কই থেকে বাড়িতে থাকো যাও যাও তোমার মত মানুষ না অইলে কি কাম করন যাইবে না। কি আমার গুণধর মানুষরে। বিরদ যখন চরমে উঠেছে আবুল বাজার করে ফিরছে ও কাকা গরীব মানুষের সাথে ঝগড়া করে কি লাভ ও কাজ করতে চায় না ভালো কথা ওরে পাওনা টাকা দিয়ে বিদায় করে দাও। বেশ লোক জন জড় হয়েছে বিষয়টা খুব খারাপ হবে অল্প কয়টা টাকার জন্য মান সম্মান নিয়ে পরে টানা ছেঁচড়া করবেনে। তোর আর কোন লেন দেন থাকলে বল পরে কিন্তু বলে লাভ নেই।

টাকা নিয়ে নৌকা হতে নেমে আসে কালাচান এখনতো সন্ধ্যা হইয়া গেছে আর জাওয়া হইলো না রাতে কোথায় থাকবে আগেতো নৌকায় থাকতো। মোহর আলী গঞ্জের থেকে বাড়ি যাবে রাতটাও হয়ে গেছে সাথে অনেক মালা মাল নৌকা ভর্তি রাহি মালের ব্যবসা করেন। মাঝি দুই জন ছিলো এক জন বৈকালে আসার কথা ছিলো খবর দিছে আসতে পারবো না। এখন বন্দর খোলা যেতে সকাল হয়ে যাবে বিহানে হাট বসবে কি কোন উপায় দেখছ না। গোঁসাইকে বলে কিরে লোক কি পাওয়া যাবে পাইতে পারেন এটাই শেষ মোকাম কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। কালাচান মুখ ভার করে বিড়ি ফুঁকছে গয়ানা ভিড়েয়ে তারা কিছু নাস্তা করবে বলে হোস্টেলে গিয়ে বসে। হরিপদ বলে দাদা কি নাস্তা করবেন না চা খাবেন। গোঁসাই বলে নাস্তা দেন দুজনের। খাবারের মাঝ পথে এসে কালাচান প্রবেশ করে বলে হরি দা চারটা ভাত ভর্তা ডাল দাও। গোঁসাই প্রথমে দেখে চিনতে পারেনি পরে বলে কালা দা না হুম গোঁসাই আছ কেমন এই রাতে কোথা হতে আইলা। মোহর আলী বলে কিরে কার সাথে আলাপ করস? বাড়িতে কেমনে যাবি কিছু চিন্তা করছো কিছুই বুঝতে পারতেছি না কেমনে কি করি।

হরি বলে কালচান কি হইছে এই দূর দিনে কামডা ছাইরা দিলা মিয়া কি কমু দুঃখের কথা কও? গরীব বলে আমরা কি মানুষ না আমারগো কি সাধ আল্লাদ থাকতে নাই। বুঝতে পারছি দেহ কাম কাইজ কবে পাও। গোঁসাই তুমি কাম ছাড়ছো কবে আজই বৈকালে আচ্ছা দেহি কিছু করন যায়নি। আলীকে গিয়ে বলে আলী গয়নায় বসে আয়াস করে হুক্কা টানছে। আচ্ছা ডাকো দেহি কথা বলে মানুষ চড়াইয়া খাই দুই চারটা কথা কইলেই বুঝতে পারবো কেমন লোক।কালাচান আসে গয়নায় মেহের আলী জানতে চায় কি মিয়া বাড়ি কই জি ঠাকুর বাজার সংসারে কে কে আছে ছোট একটা বোইন আছিলো বিয়া দিয়া দিছি মা বাব ছোট কালে মইরা গেছে এহন তিন কূলে কেউ নাই। কি কাম করতে পারো সব কাম করতে পারি যখন যেইডা পাই। গরীবের পোলার কামের বাজ বিচার করলে চলেনি মিয়া ছাব। গয়না চালাইতে পারোনি কালাচান খুব পারি সেই কাম করতাম বাবনা তলার আমির খাঁ/ মবিন খাঁ গো লগে আজই বাদ দিছি। আমার গয়নায় কাম করবানি জি আপনে দিলে করমু কতো দিতে অইবো গোসাইরে যা দেই তাই পাবা মাসে বিশ টাকা দিমু খাওয়া পরা সব গয়নায় দেহ মিয়া ভাইবা চিন্তা কও। গোঁসাইয়ের কাছে গিয়া জিগায় মানুষটা কেমন বলে তুমি চিন্তা কইরো না আমি আছি আমারে দেহ তুমি ছোট বেলা হতে ভালো হবে রাজি হইয়া যাও। ঠিক আছে মিয়া সাব কহন থন কাম করতে হইবো কন।দেরি করনের কাম নাই চলো গয় নায় লগ্নি মারো বন্দর খোলা পৌঁছাতে হবে সকালে উতরাইলের মোকামে ধরমু। কালাচান গয়নায় বসে গান ধরে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৬৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/০৯/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফয়জুল মহী ২২/০৯/২০২১
    Beautiful writen
  • সরল গদ্য।
  • সুন্দর।
  • মাহতাব বাঙ্গালী ২২/০৯/২০২১
    গরীব-দুঃখীদের জীবনালেখ্য! ভালোই লিখেছেন
 
Quantcast