তাওসিফের ভাগ্য
‘তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না’ এ ব্যাপারটা এতদিনে বেশ ভালভাবে বুঝে গেছে তাওসিফ। বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে নিয়মিত। নিজকে বদলাতে চায় সে। বদলায়ও। কিন্তু সে পরিবর্তন ধরে রাখতে পারে না। টানা কয়েকদিন ঠিক থাকার পর হঠাৎ সামনে একটা সমস্যা দাঁড়িয়ে যায় ফলে রুটিনের পরিবর্তন করতে হয়। আর এই পরিবর্তনের কারণেই সব কিছু এলো মেলো হয়ে যায় তাওসিফের। তার প্রত্যেকটি কাজ শিডিউল করা। শিডিউল একবার ডাউন হলেই তাকে আবার শিডিউল ঠিক করতে বেশ খাটতে হয়। এমনিতে বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ সে। ডাক্তারে কাছে যেতেও এখন আর তার ভালো লাগে না। শুধু এখন নয়- কখনো ভালো লাগেনি তার। এজন্য কত বকা যে সে শুনেছে তার যোগফল তার জানা নেই। নিজের উপর এখন নিজেই বিরক্ত।
দুই.
ভাবতে ভাবতে রুমের মধ্যে চটপট করছে তাওসিফ। একটা চায়ের প্রচন্ড নেশা জাগছে মাথায়। ইলেকট্রিক ফ্লাস্ক আছে। টি-প্যাক আর চিনি দুটোই শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। আদা পঁচে গেছে আর এলাচি সহ অন্যান্য মশলাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিশ্চয়ই ইঁদুর চুরি করেছে এগুলো। এবার চিনি আর টি-প্যাক শেষ হবার পরে আর একটিও কিনেনি তাওসিফ। চা খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছে অনেকটা।একটা সময় ছিল যখন দিনে ৫-৮ কাপের মত খাওয়া হতো। এখন অনেকটা কমিয়ে ফেলছে সে। অবশ্য তিশাও চেয়েছে যেন কমিয়ে ফেলে। এখন দিনে সর্বোচ্চ দুই কাপ খাওয়া হয়, আবার কখনো এক কাপও না। এই পরিবর্তনটা ধরে রাখতে পারছে তাওসিফ। একটা সময় চা না খেলে প্রচন্ড নেশা জাগতো, এখন জাগে না। কিন্তু আজ হঠাৎ করে কেন যেন মাথাটা ধরে আছে একটা চা-য়ের জন্য। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ লাগছে তার। এই ঠান্ডায় বাহিরে যেতেও ইচ্ছে করছে না। এমনিতে সর্দি গলা বেশ জড়িয়ে ধরে আছে তাকে। কেন যে এগুলো এনে রাখলো না! না, বাহিরে থেকেই খেয়ে আসি। দেখি সারাদিন মেঘে ঢেকে থাকা আকাশটা থেকে মেঘকে কাটানো যায় কিনা। এমন সময় দরজায় কেউ ঠক্ ঠক্ শব্দ করছে। কে এল এ সময়ে! দরজা খুলে দেখে রতন। সামনের চায়ের দোকানদার। হয়তোবা চায়ের বিলের জন্য আসছে।
– দোকান বন্ধ করে ফেলছেন ?
– হ্যাঁ।
– একটা চায়ের প্রচন্ড নেশা জাগছে।
– একটা কিছু দেন হোটেল থেকে এনে দিচ্ছি।
– ওকে, দেখছি। এদিক সেদিক খুঁজে কিছু পাওয়া যাচ্ছে না চা আনার মত। ব্যাচেলরদের কি অবস্থা এমনই হয়? সব কিছু হারিয়ে যায়? বড় দুইটা গ্লাস খুঁজে পাচ্ছে না। একটা ছোট ফ্লাস্ক ছিল সেটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ইলেকট্রিক ফ্লাস্কটিই ধরিয়ে দিলো তাকে। রতন ফ্লাস্কটি নিয়ে বেরিয়ে গেল চা আনার জন্য।
তিন.
ভাবনটা মাথা থেকে কিছুতেই সরছে না তাওসিফের। তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। কাউকে দেওয়া কথাও রাখতে পারছে না। মানুষের প্রত্যাশাগুলোও পূরণ করতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। নিজের প্রতি এতদিনের আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কি করবে তাওসিফ বুঝতে পারছে না। তিশার সমর্থন পেলে সবকিছু জয় করতে পারার মানসিকতাও মাঝে মাঝে হতাশায় পরিণত হয়ে যায় যখন তিশা কোন কারণে অভিমান করে। জীবনের এতটি বসন্ত পার করে এসেও আজ অবধি নিজের জন্য কিছুই করতে পারেনি সে। যখন যা আয় করেছে তাই ব্যয় করে দিয়েছে। নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেনি কখনো। কিন্তু তিশা তার জীবনে আসার পর তাকে সংশোধন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে অনবরত। অন্তত কম করে হলেও কিছু সঞ্চয়ের জন্য উদ্ভুদ্ধ করছে তাকে। আর তাওসিফও কিছু জমানোর চেষ্টা করছে। তাওসিফের প্রতিটি অসংগতি ধরিয়ে দিচ্ছে তিশা। আর তাওসিফও চাচ্ছে নিজকে সংশোধন করে একটা পর্যায়ে আসতে। একটা অবস্থানে আসতে। যেখান থেকে তিশাকে নিজের করে পাওয়াটা অনেকটা সহজ হবে। কিন্তু ভাগ্য কখনো তাওসিফের সহায় হয়নি। ভাগ্যটাকে বার বার চেষ্টা করেও পারছে না পরিবর্তন করতে। তবে কে তারা একে-অন্যের ভাগ্যে নেই?
চার.
ভাগ্যটাকে চিনিয়ে আনারও চেষ্টা করে যাচ্ছে দু’জন অনবরত। একটা স্বপ্ন। ছোট্ট একটা সংসার।মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি, আদরের সন্তান। এসব স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে? কেন ভাগ্য সহায় হচ্ছে না? চেষ্টার ক্রুটিগুলোওতো ধরা পড়ছে না। বার বার পদ্ধতি পাল্টিয়েও লাভ হচ্ছে না। তাওসিফ আর তিশার সম্পর্কের চুড়ান্ত পর্বটি এখন ভাগ্যের হাতে বন্দি, যা কখনো তাদের পক্ষে আসেনি।
পাঁচ.
তাওসিফ আর তিশার বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসায় রূপ নেয় অনেক আগেই। আর এখন প্রণয়ের জন্য অপেক্ষা। তাদের সম্পর্কের মাঝে সবচেয়ে সুদৃঢ় যে বন্ধন তা হলো বিশ্বাস। একে অন্যকে বিশ্বাস করে ততটাই, যতটা করলে একের জন্য অন্যে সব কিছু দিয়ে দিতে প্রস্তুত। একজনের আনন্দে যেমন অন্য জন আনন্দিত হয় তেমনি একজনের দুঃখে অন্যজন অংশীদার হয়। এভাবেই চলে আসছে। আবার সামান্য মান অভিমানেও অন্যের মন খারাপ হয়ে যায়। যেমন- আজ সকাল থেকেই তাওসিফের মন বেশ খারাপ। বার বার চেষ্টা করেও মনটাকে ভালো করতে পারছে না সে। কয়েকবার একা একা কেঁদেছেও। কেন কাঁদবে না! সে যে বড় অসহায়! কিছুই করতে পারছে না তিশার জন্য। কিসের আশায় তিশা তার জন্য বসে থাকবে? বার বার সুযোগ দিচ্ছে তাওসিফকে। কিন্তু পোড়া কপালের তাওসিফ কিছুই করতে পারছে না ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে। তবে কি তাওসিফ পারবে না ভাগ্যের শিকল ভাঙতে? ভাগ্যকে নিজের মত করে নিতে? নাকি মরা নদীর মত একটা সময়ে শুকিয়ে ফেটে যাবে বুকের জমিন গুলো? কেন তার সাথে এমন হচ্ছে বার বার!
ছয়.
কখনযে দু’ফোটা জল আবারো কপল বেড়ে গড়িয়ে পড়ছে খেয়াল করেনি তাওসিফ। এলোমেলো বিছানায় হেলিয়ে দিল ক্লান্ত শরীরটা।
দুই.
ভাবতে ভাবতে রুমের মধ্যে চটপট করছে তাওসিফ। একটা চায়ের প্রচন্ড নেশা জাগছে মাথায়। ইলেকট্রিক ফ্লাস্ক আছে। টি-প্যাক আর চিনি দুটোই শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। আদা পঁচে গেছে আর এলাচি সহ অন্যান্য মশলাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিশ্চয়ই ইঁদুর চুরি করেছে এগুলো। এবার চিনি আর টি-প্যাক শেষ হবার পরে আর একটিও কিনেনি তাওসিফ। চা খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছে অনেকটা।একটা সময় ছিল যখন দিনে ৫-৮ কাপের মত খাওয়া হতো। এখন অনেকটা কমিয়ে ফেলছে সে। অবশ্য তিশাও চেয়েছে যেন কমিয়ে ফেলে। এখন দিনে সর্বোচ্চ দুই কাপ খাওয়া হয়, আবার কখনো এক কাপও না। এই পরিবর্তনটা ধরে রাখতে পারছে তাওসিফ। একটা সময় চা না খেলে প্রচন্ড নেশা জাগতো, এখন জাগে না। কিন্তু আজ হঠাৎ করে কেন যেন মাথাটা ধরে আছে একটা চা-য়ের জন্য। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ লাগছে তার। এই ঠান্ডায় বাহিরে যেতেও ইচ্ছে করছে না। এমনিতে সর্দি গলা বেশ জড়িয়ে ধরে আছে তাকে। কেন যে এগুলো এনে রাখলো না! না, বাহিরে থেকেই খেয়ে আসি। দেখি সারাদিন মেঘে ঢেকে থাকা আকাশটা থেকে মেঘকে কাটানো যায় কিনা। এমন সময় দরজায় কেউ ঠক্ ঠক্ শব্দ করছে। কে এল এ সময়ে! দরজা খুলে দেখে রতন। সামনের চায়ের দোকানদার। হয়তোবা চায়ের বিলের জন্য আসছে।
– দোকান বন্ধ করে ফেলছেন ?
– হ্যাঁ।
– একটা চায়ের প্রচন্ড নেশা জাগছে।
– একটা কিছু দেন হোটেল থেকে এনে দিচ্ছি।
– ওকে, দেখছি। এদিক সেদিক খুঁজে কিছু পাওয়া যাচ্ছে না চা আনার মত। ব্যাচেলরদের কি অবস্থা এমনই হয়? সব কিছু হারিয়ে যায়? বড় দুইটা গ্লাস খুঁজে পাচ্ছে না। একটা ছোট ফ্লাস্ক ছিল সেটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ইলেকট্রিক ফ্লাস্কটিই ধরিয়ে দিলো তাকে। রতন ফ্লাস্কটি নিয়ে বেরিয়ে গেল চা আনার জন্য।
তিন.
ভাবনটা মাথা থেকে কিছুতেই সরছে না তাওসিফের। তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। কাউকে দেওয়া কথাও রাখতে পারছে না। মানুষের প্রত্যাশাগুলোও পূরণ করতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। নিজের প্রতি এতদিনের আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কি করবে তাওসিফ বুঝতে পারছে না। তিশার সমর্থন পেলে সবকিছু জয় করতে পারার মানসিকতাও মাঝে মাঝে হতাশায় পরিণত হয়ে যায় যখন তিশা কোন কারণে অভিমান করে। জীবনের এতটি বসন্ত পার করে এসেও আজ অবধি নিজের জন্য কিছুই করতে পারেনি সে। যখন যা আয় করেছে তাই ব্যয় করে দিয়েছে। নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেনি কখনো। কিন্তু তিশা তার জীবনে আসার পর তাকে সংশোধন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে অনবরত। অন্তত কম করে হলেও কিছু সঞ্চয়ের জন্য উদ্ভুদ্ধ করছে তাকে। আর তাওসিফও কিছু জমানোর চেষ্টা করছে। তাওসিফের প্রতিটি অসংগতি ধরিয়ে দিচ্ছে তিশা। আর তাওসিফও চাচ্ছে নিজকে সংশোধন করে একটা পর্যায়ে আসতে। একটা অবস্থানে আসতে। যেখান থেকে তিশাকে নিজের করে পাওয়াটা অনেকটা সহজ হবে। কিন্তু ভাগ্য কখনো তাওসিফের সহায় হয়নি। ভাগ্যটাকে বার বার চেষ্টা করেও পারছে না পরিবর্তন করতে। তবে কে তারা একে-অন্যের ভাগ্যে নেই?
চার.
ভাগ্যটাকে চিনিয়ে আনারও চেষ্টা করে যাচ্ছে দু’জন অনবরত। একটা স্বপ্ন। ছোট্ট একটা সংসার।মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি, আদরের সন্তান। এসব স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে? কেন ভাগ্য সহায় হচ্ছে না? চেষ্টার ক্রুটিগুলোওতো ধরা পড়ছে না। বার বার পদ্ধতি পাল্টিয়েও লাভ হচ্ছে না। তাওসিফ আর তিশার সম্পর্কের চুড়ান্ত পর্বটি এখন ভাগ্যের হাতে বন্দি, যা কখনো তাদের পক্ষে আসেনি।
পাঁচ.
তাওসিফ আর তিশার বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসায় রূপ নেয় অনেক আগেই। আর এখন প্রণয়ের জন্য অপেক্ষা। তাদের সম্পর্কের মাঝে সবচেয়ে সুদৃঢ় যে বন্ধন তা হলো বিশ্বাস। একে অন্যকে বিশ্বাস করে ততটাই, যতটা করলে একের জন্য অন্যে সব কিছু দিয়ে দিতে প্রস্তুত। একজনের আনন্দে যেমন অন্য জন আনন্দিত হয় তেমনি একজনের দুঃখে অন্যজন অংশীদার হয়। এভাবেই চলে আসছে। আবার সামান্য মান অভিমানেও অন্যের মন খারাপ হয়ে যায়। যেমন- আজ সকাল থেকেই তাওসিফের মন বেশ খারাপ। বার বার চেষ্টা করেও মনটাকে ভালো করতে পারছে না সে। কয়েকবার একা একা কেঁদেছেও। কেন কাঁদবে না! সে যে বড় অসহায়! কিছুই করতে পারছে না তিশার জন্য। কিসের আশায় তিশা তার জন্য বসে থাকবে? বার বার সুযোগ দিচ্ছে তাওসিফকে। কিন্তু পোড়া কপালের তাওসিফ কিছুই করতে পারছে না ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে। তবে কি তাওসিফ পারবে না ভাগ্যের শিকল ভাঙতে? ভাগ্যকে নিজের মত করে নিতে? নাকি মরা নদীর মত একটা সময়ে শুকিয়ে ফেটে যাবে বুকের জমিন গুলো? কেন তার সাথে এমন হচ্ছে বার বার!
ছয়.
কখনযে দু’ফোটা জল আবারো কপল বেড়ে গড়িয়ে পড়ছে খেয়াল করেনি তাওসিফ। এলোমেলো বিছানায় হেলিয়ে দিল ক্লান্ত শরীরটা।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সুজিত মান্না ১৭/১১/২০১৬ভালো
-
স্বপ্নীল মিহান ০৫/০৩/২০১৫জহির ভাই ভালো লিখেছেন।
-
মোঃ সাইফুল ইসলাম ০৪/০৩/২০১৫সুন্দর গল্প পরিবেশনে জন্য ধারাবাহিকতা এবং সাবলীলতা খুবই অপরিহার্য্য যা আপনার লেখায় বরাবরই থাকে। ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার জহির ভাই।
-
সবুজ আহমেদ কক্স ০৩/০৩/২০১৫দারুন গল্প
-
আগামির রাষ্ট্রপতি ০২/০৩/২০১৫ভালো লেগেছে গল্পটি, মনে হচ্ছে জীবন্ত গল্প। এক জীবনের কয়েকটি দিন উঠে এসেছে গল্পটিতে।
-
অ ০২/০৩/২০১৫পড়লাম ।
সুন্দর ।