www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

চোর ধরা

কথাটা মুরুব্বীদের কানে যেতেই ক্ষেপে গিয়ে তারা আমাকে কোরাস শোনাতে শুরু করে দিল। সবার এক কথা- আমি কাউকে কিছু না জানিয়েই সুপারি চোর ধরে ছেড়ে দিয়েছি। আমি তাদের সাথে খাতির করে মাসতুতো ভাই বনে গেছি। তাদের দাবী আমরা সুপারির বাগানে কাউকে দেখলে তাদের কিছু বলিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনিতেই আমি অসুস্থ, তার ওপর বকাবকিতে মাথাটা খারাপ করে দিল। নিজের মাঝে যে চোর ধরার যে একটা মুড কাজ করছিল নিমেষেই তা মিলিয়ে গেল!
আমাদের বাড়ির পাশাপাশি একটা নারকেল- সুপারির বাগান বাড়ি আছে। সেই বাড়িতে কেহ থাকেনা, যার কারণে ভাল (!) মানুষদের আনাগোনা সহ কাকের মত ইয়ে করার জায়গায় পরিণত হয়ে গেছে। সুপারির দিনে সেই বাগান বাড়িতে সর্ব সাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। সেই বাড়িতেই চুরি করা চোরদের আমি ধরেছি। আমি তাদের বুঝাতে পারছিনা আমি যাদের ধরেছি তারা নিরীহ চোর। ডাকলেই চলে আসবে। কিন্তু তাদের দিয়ে যে এই চুরির কাজ করিয়েছে তাকে ধরা দরকার। আমি তাকে ধরে ও ধরতে পারিনি একা হওয়ার কারণে। এখন মুরুব্বীদের সামনে তাকে চোর প্রমাণ করার জন্য ধরা খাওয়া নিরীহ চোরগুলোই স্বাী। শেষে আসল চোরকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল।
এর কিছুদিন পরের ঘটনা। আমার ছোট ভাই রাসেল গেল সুপারির বাগান বাড়িতে সুপারি পাকছে কিনা দেখতে। বাগানে গিয়ে দেখে একজন বসে বসে সিগারেট টানছে। বাড়িতে ফোন করল চোর ধরেছি- আসেন। খবর পেয়ে চাচাতো ভাই রাফি, কামরুল, মেহেদী আর তারেক ছুটে গেল। একজন তাকে জড়িয়ে ধরে ফেলল। বাকিরা উত্তম মধ্যম দিতে বেশি সময় লাগায়নি। কামরুল এক টানে একটি জঙ্গল গাছ তুলে লাগালো পিঠে কয়েক ঘা। চোরকে ধরে বাড়ির দিকে আনা দরকার কিন্তু তাকে নড়ানো যাচ্ছেনা। এ সময় বাড়িতেও কোন মুরুব্বী ছিল না। যারা চোর ধরেছে তারা পড়ল মহা মুশকিলে। চোরকে তারা কোন দিকে নিতে পারছেনা। চোরটি যতই বলছে আমি চোর নই, আমি চোর নই, কে শোনে কার কথা! শেষে খবর পেয়ে জেটু গিয়ে চোরকে ছেড়ে দিল। তারপর তাদের আবার সেই কোরাস শুরু। ভুঁইয়া চাচ্চু বলল- তোরা কি চোর ধরলি? তোদের মধ্যে একজনও গাছে ওঠে সুপারি পেয়ে তাকে ভাল করে চোর বানাতে পারলিনা! এবার চোর আমরা ছাড়িনি, কিন্তু তারপরও বড়দের কথা শুনতে হচ্ছে। মেজাজ আবারো খারাপ করে দিল। ঠিক করলাম এবার যাকেই পাবো তাকেই চোর বানিয়ে দেব। বুদ্ধিটা অবশ্য আমারই। আমাদের কোরামের সবার পছন্দ হল। পরের দিন থেকে আমরা চোর বানানোর সুযোগ খুঁজতে লাগলাম।
একদিন ঠিক সকাল বেলায় সুপারি বাগান থেকে চোর চোর বলে একজন চিৎকার শুরু করল। আমরা দৌড়ে কাছে গিয়ে দেখি কামরুল একজনকে জড়িয়ে ধরে আছে আর চোর চোর বলে আমাদের ডাকছে। বাকিরাও জড়িয়ে ধরলো তাকে। আর উত্তম মধ্যমতো আছেই! এরই মাঝে রাছেল গাছে ওঠে সুপারি পেরে তাকে ধরিয়ে দিয়েছে। এবার আর যায় কোথায়? হাতে নাতে চোর ধরেছি। যেখানে আমরা সবাই স্বাী সেখানে চোর একা বললেতো হবেনা সে সুপারি চুরি করেনি। আমরা চোর ধরার আনন্দে নাচতে নাচতে চোরকে ধরে বাড়িতে নিয়ে এলাম। এরই মধ্যে আমাদের চোর ধরার কথা বাড়ির বড়দের কানে গেল। একজন উপস্থিত হয়ে চোরকে দেখে বলল- এ কাকে ধরেছিস? এ তো তোদের ভুঁইয়া চাচার শালা! আমরা কি বলব ভেবে পাইনি। আমাদের মুখ থেকে কোন কথা বেরুচ্ছে না। পরে জানতে পারলাম উনি মালয়েশিয়া থাকেন আর গতকালই প্রথম আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১১৩৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সমসাময়িক ঘটনার অসাধারণ একটা ইঙ্গিত ছিল। লেখক বন্ধু হয়তো ভূইয়া চাচার শালাকে জনগনের আসনে বসিয়ে আম জনতার দুর্ভোগের একটা ধারণা দিতে চাইছে। আর চোর পাকরাওকারীরা পুলিশের অসাধু সদস্য। ভাল লাগল।ভাল থাকবেন।
  • হাহাহহা। বেচারা......................
  • সজল ১৩/০২/২০১৫
    চরম
  • ১৩/০২/২০১৫
    মজার গল্প ।
  • ফিরোজ মানিক ১২/০২/২০১৫
    পড়লাম, অনেক ভাল লাগলো। গল্পের শুরুটা চমক দিয়েছে হঠাৎ শুরু হয়ে।
  • ভানু ভাস্কর ১২/০২/২০১৫
    সুপারির বাগানটা কোথায়?
    বীর (যারা ধরেছে) চোর (চাচার শালা) এর চেয়ে বেশি বিব্রত
    • জহির রহমান ১২/০২/২০১৫
      আমাদের গ্রামের বাড়ির পূর্বে একটা বিল রয়েছে, বিলের পরেই বাগান।
      লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা।
  • সাইদুর রহমান ১২/০২/২০১৫
    বাহ চমৎকার গল্প।
    শুভেচ্ছা নিবেন।
  • সবুজ আহমেদ কক্স ১২/০২/২০১৫
    darun golpo darun @@@@@
 
Quantcast