আমার প্রথম গ্রন্থালোচনা ।। শিকল ভাঙার ছড়া
গ্রন্থালোচনা : শিকল ভাঙার ছড়া
লেখক : আমিনুল ইসলাম মামুন
আলোচনায় : জহির রহমান
এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় টিপাইমুখ বাঁধ। শুধু বাংলাদেশেই নয়; ভারতেও এটি আলোচিত বিষয়। এই বাঁধের প্রভাব সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি। অবগত হয়েছে বিশ্বের মানুষও। এ বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা থেকে ওঠে এসেছে এর নানা দিক। এর প্রভাবে ভারতের কিছু অংশসহ বাংলাদেশের বিরাট একটি অংশ; বিশেষ করে সিলেট মরুভূমিতে পরিণত হবে বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই জনগণকে স্পষ্ট করেছেন। তারা বলেছেন, এই বাঁধের ফলে ধ্বংশ হবে এ অঞ্চলের পরিবেশ, জীব বৈচিত্র্য, কৃষি উৎপাদনসহ অর্থনীতি। মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা হুমকির মুখে পড়বে। প্রতিবেশি বন্ধু দেশ বলছে এতে নাকি বাংলাদেশের কোন তিই হবে না। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীমাতৃক এ দেশের পদ্মাসহ ছোট-বড় অনেক নদ-নদী বিলুপ্ত হয়েছে, আর কিছু এখন মৃত প্রায়।
এই ভয়াবহ তির মোকাবেলার জন্য আমাদের করণীয় কি? করণীয় হচ্ছে এই বাঁধের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো। কয়েকটি রাজনৈতিক দল আনুষ্ঠানিকভাবে টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করেছে এবং করে যাচ্ছে। তাদের সাথে বসে নেই কবি-লেখকগণও। ছড়া-কবিতা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে তারা প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। তাদেরই মধ্যে একজন, সময়ের সাহসী ছড়াকার আমিনুল ইসলাম মামুন। টিপাইমুখ বাঁধের প্রতিবাদে তিনি লিখেছেন অগ্নিঝরা ছড়া। সেই ছড়াগুলোরই গ্রন্থিত রূপ- ‘শিকল ভাঙার ছড়া’ নামক বইটি। ইতিমধ্যে এই গ্রন্থটি টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী আন্দোলনের ‘গোলা-বারুদ’ হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, টিপাইমুখ বাঁধের প্রতিবাদে লিখিত (বাংলাদেশ ও ভারতে) এটিই প্রথম ছড়ার বই। বইটিতে ােভ আর প্রতিবাদের সুরে ছড়াকার আমিনুল ইসলাম মামুন লিখেছেন-
“নদীর বুকে বাঁধ দিলে
দেশের বুকে হাত দিলে
হাতও নিবো পা-ও নিবো
মুণ্ডু কেটে তা-ও নিবো।”
আবার ‘আমরা তিতুমীর’ শিরোনামের ছড়ায় লিখেছেন-
“করবি কি ভুল খুব?
চুপ হয়ে যা চুপ
নইলে তোদের দেখতে হবে
আগুন ঝরা রূপ।
রূপটা কেমন, বুঝতে পারিস?
বারুদ মাখা তীর
বাঁধ ঠেকাতে তৈরি আছি
আমরা তিতুমীর।”
ভারতের সমালোচনা করে ছড়াকার লিখেছেন-
“বন্ধু সেজে আজও তারা
চলছে এঁটে ফন্দি
করবে এবার টিপাইমুখের
জালের ফাঁকে বন্দি?
এই আমাদের চায় যে ওরা
রাখতে করে বান্দী
তা হবে না, আয় সকলে
দা'য়ের বুকে শান্ দি।’’
এই দেশেরই কিছু নেতা-বুদ্ধিজীবি বাঁধের পে সুর তুলেছেন। তাদেরকে তিনি সবুজ প্রাকৃতিক দেশের কথা স্বরণ করিয়ে দিয়ে বলেন-
‘‘নেতার কী-যে নীতি
গান যে বাঁধের গীতি
বাঁধ হলে আজ ‘হেন’ হবে
ভবিষ্যতে ‘তেন’ হবে
ভাবেন নেতা একটুও কি
সবুজ হবে ইতি?”
কয়েকটি রাজনৈতিক দল কয়েকদিন বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি দিলেও এখন অনেকটা নীরব হয়ে গেছে। ছড়াকার তাদের ল্য করে ‘কথামালার রাজনীতি’ ছড়ায় লিখেছেন-
“কথামালার রাজনীতিতে
আমরা সবে হয়রান
হিসাব করুন আসল মাঠে
কে করেছি কয় রান।
রানের খাতা শূন্য দেখি
বোলার ওরা শক্ত!
আসলে কি তলে তলে
সবাই ওদের ভক্ত!’’
প্রতিবেশি দেশের উদ্দেশ্যে ‘আমরা বাংলাদেশী’ ছড়ায় সাহসী উচ্চারণ করেছেন-
“শোন্রে প্রতিবেশী
দেখাস্নে আর পেশী
একাত্তরে লড়াই করা
আমরা বাংলাদেশী।”
টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধে সকলকে উদ্দেশ্য করে ছড়াকার লিখেছেন-
“প্রতিরোধের
প্রাচীর গড়
নদীর ধারা
রা কর।”
আরো লিখেছেন-
“রণাঙ্গনে
লড়তে হবে
দেশ রা
করতে হবে।”
এরকম অনেকগুলো ছড়া নিয়ে তরুণ মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মনিরুল ইসলামকে উৎসর্গ করে প্রকাশিত ‘শিকল ভাঙার ছড়া’ বইটিতে প্রতিটি ছড়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে চিত্র অলংকরণ করা হয়েছে। অলংকরণ করেছেন- আরিফুর রহমান। নিয়াজ চৌধুরী তুলি’র প্রচ্ছদে বইটি প্রকাশ করেছেন মঈন মুরসালিন। ‘প্রতিভা প্রকাশ’ এর প্রকাশনায় বইটির দাম রাখা হয়েছে পঞ্চাশ টাকা। বইটি প্রথম প্রকাশ করা হয়েছে ১ জানুয়ারি ২০১০-এ। বইটিতে যেমনি রয়েছে ছন্দের চমৎকার কাজ, তেমনি উঠে এসেছে টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে ােভ আর প্রতিবাদের সুর। বইটি এদেশের রাজনীতি-সাহিত্যে একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমি গ্রন্থটির আরো প্রচার ও প্রসার কামনা করছি।
লেখক : আমিনুল ইসলাম মামুন
আলোচনায় : জহির রহমান
এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় টিপাইমুখ বাঁধ। শুধু বাংলাদেশেই নয়; ভারতেও এটি আলোচিত বিষয়। এই বাঁধের প্রভাব সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি। অবগত হয়েছে বিশ্বের মানুষও। এ বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা থেকে ওঠে এসেছে এর নানা দিক। এর প্রভাবে ভারতের কিছু অংশসহ বাংলাদেশের বিরাট একটি অংশ; বিশেষ করে সিলেট মরুভূমিতে পরিণত হবে বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই জনগণকে স্পষ্ট করেছেন। তারা বলেছেন, এই বাঁধের ফলে ধ্বংশ হবে এ অঞ্চলের পরিবেশ, জীব বৈচিত্র্য, কৃষি উৎপাদনসহ অর্থনীতি। মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা হুমকির মুখে পড়বে। প্রতিবেশি বন্ধু দেশ বলছে এতে নাকি বাংলাদেশের কোন তিই হবে না। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীমাতৃক এ দেশের পদ্মাসহ ছোট-বড় অনেক নদ-নদী বিলুপ্ত হয়েছে, আর কিছু এখন মৃত প্রায়।
এই ভয়াবহ তির মোকাবেলার জন্য আমাদের করণীয় কি? করণীয় হচ্ছে এই বাঁধের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো। কয়েকটি রাজনৈতিক দল আনুষ্ঠানিকভাবে টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করেছে এবং করে যাচ্ছে। তাদের সাথে বসে নেই কবি-লেখকগণও। ছড়া-কবিতা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে তারা প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। তাদেরই মধ্যে একজন, সময়ের সাহসী ছড়াকার আমিনুল ইসলাম মামুন। টিপাইমুখ বাঁধের প্রতিবাদে তিনি লিখেছেন অগ্নিঝরা ছড়া। সেই ছড়াগুলোরই গ্রন্থিত রূপ- ‘শিকল ভাঙার ছড়া’ নামক বইটি। ইতিমধ্যে এই গ্রন্থটি টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী আন্দোলনের ‘গোলা-বারুদ’ হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, টিপাইমুখ বাঁধের প্রতিবাদে লিখিত (বাংলাদেশ ও ভারতে) এটিই প্রথম ছড়ার বই। বইটিতে ােভ আর প্রতিবাদের সুরে ছড়াকার আমিনুল ইসলাম মামুন লিখেছেন-
“নদীর বুকে বাঁধ দিলে
দেশের বুকে হাত দিলে
হাতও নিবো পা-ও নিবো
মুণ্ডু কেটে তা-ও নিবো।”
আবার ‘আমরা তিতুমীর’ শিরোনামের ছড়ায় লিখেছেন-
“করবি কি ভুল খুব?
চুপ হয়ে যা চুপ
নইলে তোদের দেখতে হবে
আগুন ঝরা রূপ।
রূপটা কেমন, বুঝতে পারিস?
বারুদ মাখা তীর
বাঁধ ঠেকাতে তৈরি আছি
আমরা তিতুমীর।”
ভারতের সমালোচনা করে ছড়াকার লিখেছেন-
“বন্ধু সেজে আজও তারা
চলছে এঁটে ফন্দি
করবে এবার টিপাইমুখের
জালের ফাঁকে বন্দি?
এই আমাদের চায় যে ওরা
রাখতে করে বান্দী
তা হবে না, আয় সকলে
দা'য়ের বুকে শান্ দি।’’
এই দেশেরই কিছু নেতা-বুদ্ধিজীবি বাঁধের পে সুর তুলেছেন। তাদেরকে তিনি সবুজ প্রাকৃতিক দেশের কথা স্বরণ করিয়ে দিয়ে বলেন-
‘‘নেতার কী-যে নীতি
গান যে বাঁধের গীতি
বাঁধ হলে আজ ‘হেন’ হবে
ভবিষ্যতে ‘তেন’ হবে
ভাবেন নেতা একটুও কি
সবুজ হবে ইতি?”
কয়েকটি রাজনৈতিক দল কয়েকদিন বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি দিলেও এখন অনেকটা নীরব হয়ে গেছে। ছড়াকার তাদের ল্য করে ‘কথামালার রাজনীতি’ ছড়ায় লিখেছেন-
“কথামালার রাজনীতিতে
আমরা সবে হয়রান
হিসাব করুন আসল মাঠে
কে করেছি কয় রান।
রানের খাতা শূন্য দেখি
বোলার ওরা শক্ত!
আসলে কি তলে তলে
সবাই ওদের ভক্ত!’’
প্রতিবেশি দেশের উদ্দেশ্যে ‘আমরা বাংলাদেশী’ ছড়ায় সাহসী উচ্চারণ করেছেন-
“শোন্রে প্রতিবেশী
দেখাস্নে আর পেশী
একাত্তরে লড়াই করা
আমরা বাংলাদেশী।”
টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধে সকলকে উদ্দেশ্য করে ছড়াকার লিখেছেন-
“প্রতিরোধের
প্রাচীর গড়
নদীর ধারা
রা কর।”
আরো লিখেছেন-
“রণাঙ্গনে
লড়তে হবে
দেশ রা
করতে হবে।”
এরকম অনেকগুলো ছড়া নিয়ে তরুণ মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মনিরুল ইসলামকে উৎসর্গ করে প্রকাশিত ‘শিকল ভাঙার ছড়া’ বইটিতে প্রতিটি ছড়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে চিত্র অলংকরণ করা হয়েছে। অলংকরণ করেছেন- আরিফুর রহমান। নিয়াজ চৌধুরী তুলি’র প্রচ্ছদে বইটি প্রকাশ করেছেন মঈন মুরসালিন। ‘প্রতিভা প্রকাশ’ এর প্রকাশনায় বইটির দাম রাখা হয়েছে পঞ্চাশ টাকা। বইটি প্রথম প্রকাশ করা হয়েছে ১ জানুয়ারি ২০১০-এ। বইটিতে যেমনি রয়েছে ছন্দের চমৎকার কাজ, তেমনি উঠে এসেছে টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে ােভ আর প্রতিবাদের সুর। বইটি এদেশের রাজনীতি-সাহিত্যে একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমি গ্রন্থটির আরো প্রচার ও প্রসার কামনা করছি।
জোনাকি । অনলাইন লাইব্রেরী
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ১৭/০২/২০১৫ভাই আপনার বড় মাপের মানুষ গ্রহ্থ লিখবেন আলোচনা করবেন। আমরা শুধু পড়ে যাবো।
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ০৭/১১/২০১৩কবি আমিনুলের এই প্রতিবাদী গ্রন্থ সাড়া ফেলুক সবার হৃদয়ে।খুব ভালো লাগলো।যেমন সব ছড়া সেই সাথে আপনার সুনিপুণ উপস্থাপন।দারুণ হয়েছে।
-
দাদা মুহাইমিন চৌধূরী ০৭/১১/২০১৩খুব সুন্দর ছড়াগুলো আর আপনার সমালোচনা ও খুব ভালো লেগেছে