সন্তানের কাছে পিতার খোলা চিঠি l বৃদ্ধাশ্রম থেকে
প্রিয় রুদ্র,
চিঠির শুরুতে ভালোবাসা নিস, কেমনআছিস বাবা? নিশ্চয়ই ভালো? আমার দিনগুলো যে, কিভাবে কাটছে তা বলে বোঝাতে পারবোনা, তবে তোদের সাথে কাটানো্ শেষ কয়েকটা বছরের চেয়ে বেশ ভালো আছি!!নোমান এখন কেমন আছে? অনেক বড় হয়ে গেছে না??ও কি আমার
কথা জিজ্ঞেস করে? আসলে অলস বসে থাকতে থাকতে স্মৃতি শক্তি অনেকটাই লোপ পেয়েছে!!মাঝে মাঝে আমার তোর ছোট বেলার কথাগুলো খুব মনে পড়ে, তোকে তোর মা ১০বছর বয়স পর্যন্ত তোকে নিজ হাতে ভাত তুলে খাইয়েছে, এক দন্ড তুই তোর মাকে ছাড়া থাকতে পারতিসনা!! তোর কি মনে আছে, তোর যখন ৬বছর বয়স একদিন বায়না ধরলি তোকে গাছের
পাঁকা আমটা পেড়ে দিতে হবে, তোর জন্য গাছের ওই উঁচু ডালটা থেকে পাঁকা আমটা পাড়তে গিয়ে আমার পা ভেঙে ১মাস হাসপাতালে ছিলাম??তোর কি মনে আছে আমরা দু’জনে ফজরের
নামাজ পড়ে একসাথে হাঁটতে বের হ’তাম?তোর কি মনে আছে, ঘরে ভালো রান্না হ’লে আমরা না খেয়ে আমি আর তোর মা তোর জন্য খাবার রেখে দিতাম, আমরা মাটিতে শুয়ে তোকে বিছানায়
শুতে দিতাম?? আমি ছোট চাকরী করতাম শুধু তোর বায়না রক্ষা করার জন্য আমার
পুরো মাসের বেতন দিয়ে তোকে ১টা গীটার কিনে দিয়েছিলাম, নতুন মডেলের কম্পিউটার, বাজারের সবচেয়ে দামী সাইকেলটা তোর চাই..ই চাই, তোর এসব চাহিদা পূরণ করার সামর্থ্য কোনদিনও আমাদের ছিলোনা, তারপরেও শত কষ্ট সহ্য করে শুধু তোর মুখে হাসি দেখার জন্য
আমরা তোর প্রায় সব চাহিদা পূরণ করেছি। সেসব দিন যে, ক’তোটা কষ্ট করে কাটিয়েছি তা আমি আর তোর মা-ই জানতাম!!অনেক কষ্ট করে তোর পড়া-লেখার খরচ চালিয়েছি। তোর
পড়ালেখার খরচ চালাতে কোনদিন না শব্দটি বলিনি। তোর কি এখন এসব কথা মনে পড়ে??
তোর মন খারাপ হবে বলে তোর নিজের পছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে অমত করিনি আমরা, কিন্তু আমি অবসর নেবার পর থেকেই তোর/তোদের রূপ পুরোপুরি পাল্টাতে লাগলো!! সংসারে আমরা ২টো প্রাণীই বেশী হয়ে গেলাম তোদের জন্য, কাজের মেয়েকে বিদায় করে তোর মাকেই সংসারের সব কাজের দায়িত্ব দিয়ে দিলো বউমা, তাতে করে বোধকরি তোদের একটু খরচ কমলো!! কাজের চাপে তোর মার শরীর দিন দিন খারপ হ’তে হ’তে একদিন প্রায় বিনা চিকিৎসায় আমাদের ছেড়ে চলে গেলো!!তার জন্য একটা টাকাও তুই আমাকে সাহায্য করলিনা এমনকি ধার হিসেবেও চেয়েছিলাম তোর কাছে কিছু টাকা!!! তোর জন্য কি আমরা কোনদিন কিছুই করিনি?? এতোটাই কি মূল্যহীন ছিলাম তোর কাছে আমরা?? তোর মা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর তুই আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেলি!! এখন সারাদিন-সারারাত শুধুই অবসর। অতীতের সব কথাগুলো খুব মনে পড়ে, খুব কষ্ট লাগে যখন শত চেষ্টা করেও জীবনের অংক
মেলাতে পারিনা, দোয়া করি তোর শেষ জীবনটা যেন আমার মত না হয়।
ইতি,
তোর বাবা
চিঠির শুরুতে ভালোবাসা নিস, কেমনআছিস বাবা? নিশ্চয়ই ভালো? আমার দিনগুলো যে, কিভাবে কাটছে তা বলে বোঝাতে পারবোনা, তবে তোদের সাথে কাটানো্ শেষ কয়েকটা বছরের চেয়ে বেশ ভালো আছি!!নোমান এখন কেমন আছে? অনেক বড় হয়ে গেছে না??ও কি আমার
কথা জিজ্ঞেস করে? আসলে অলস বসে থাকতে থাকতে স্মৃতি শক্তি অনেকটাই লোপ পেয়েছে!!মাঝে মাঝে আমার তোর ছোট বেলার কথাগুলো খুব মনে পড়ে, তোকে তোর মা ১০বছর বয়স পর্যন্ত তোকে নিজ হাতে ভাত তুলে খাইয়েছে, এক দন্ড তুই তোর মাকে ছাড়া থাকতে পারতিসনা!! তোর কি মনে আছে, তোর যখন ৬বছর বয়স একদিন বায়না ধরলি তোকে গাছের
পাঁকা আমটা পেড়ে দিতে হবে, তোর জন্য গাছের ওই উঁচু ডালটা থেকে পাঁকা আমটা পাড়তে গিয়ে আমার পা ভেঙে ১মাস হাসপাতালে ছিলাম??তোর কি মনে আছে আমরা দু’জনে ফজরের
নামাজ পড়ে একসাথে হাঁটতে বের হ’তাম?তোর কি মনে আছে, ঘরে ভালো রান্না হ’লে আমরা না খেয়ে আমি আর তোর মা তোর জন্য খাবার রেখে দিতাম, আমরা মাটিতে শুয়ে তোকে বিছানায়
শুতে দিতাম?? আমি ছোট চাকরী করতাম শুধু তোর বায়না রক্ষা করার জন্য আমার
পুরো মাসের বেতন দিয়ে তোকে ১টা গীটার কিনে দিয়েছিলাম, নতুন মডেলের কম্পিউটার, বাজারের সবচেয়ে দামী সাইকেলটা তোর চাই..ই চাই, তোর এসব চাহিদা পূরণ করার সামর্থ্য কোনদিনও আমাদের ছিলোনা, তারপরেও শত কষ্ট সহ্য করে শুধু তোর মুখে হাসি দেখার জন্য
আমরা তোর প্রায় সব চাহিদা পূরণ করেছি। সেসব দিন যে, ক’তোটা কষ্ট করে কাটিয়েছি তা আমি আর তোর মা-ই জানতাম!!অনেক কষ্ট করে তোর পড়া-লেখার খরচ চালিয়েছি। তোর
পড়ালেখার খরচ চালাতে কোনদিন না শব্দটি বলিনি। তোর কি এখন এসব কথা মনে পড়ে??
তোর মন খারাপ হবে বলে তোর নিজের পছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে অমত করিনি আমরা, কিন্তু আমি অবসর নেবার পর থেকেই তোর/তোদের রূপ পুরোপুরি পাল্টাতে লাগলো!! সংসারে আমরা ২টো প্রাণীই বেশী হয়ে গেলাম তোদের জন্য, কাজের মেয়েকে বিদায় করে তোর মাকেই সংসারের সব কাজের দায়িত্ব দিয়ে দিলো বউমা, তাতে করে বোধকরি তোদের একটু খরচ কমলো!! কাজের চাপে তোর মার শরীর দিন দিন খারপ হ’তে হ’তে একদিন প্রায় বিনা চিকিৎসায় আমাদের ছেড়ে চলে গেলো!!তার জন্য একটা টাকাও তুই আমাকে সাহায্য করলিনা এমনকি ধার হিসেবেও চেয়েছিলাম তোর কাছে কিছু টাকা!!! তোর জন্য কি আমরা কোনদিন কিছুই করিনি?? এতোটাই কি মূল্যহীন ছিলাম তোর কাছে আমরা?? তোর মা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর তুই আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেলি!! এখন সারাদিন-সারারাত শুধুই অবসর। অতীতের সব কথাগুলো খুব মনে পড়ে, খুব কষ্ট লাগে যখন শত চেষ্টা করেও জীবনের অংক
মেলাতে পারিনা, দোয়া করি তোর শেষ জীবনটা যেন আমার মত না হয়।
ইতি,
তোর বাবা
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ১৭/০২/২০১৫শুধুই একটা নিশ্বাষ আর কিছু বলার নাই।
-
নোমান হাসান ১৬/১১/২০১৩ভাবতেই আমার অবাক লাগে মানুষ এতোটা নিষ্ঠুর জহির...... এ বিষয়টা ফুটিয়ে তোলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
-
আরজু নাসরিন পনি ১২/১১/২০১৩পড়তে পড়তে চোখে পানি চলে এলো ...
এখনও এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারিনি ।
অনেক শুভকামনা রইল জহির...
এমন বড় মনের মানুষ হয়েই সচেতন করার কাজটি চালিয়ে যান । -
রাখাল ১০/১১/২০১৩স্তব্দ!
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ১০/১১/২০১৩কতটুকু কষ্ট হলে একজন বাবার কলমে এমন করুন আকুতি ফুটে উঠতে পারে। কতটুকু হৃদয় ভেঙে গেলে একজন পিতা এমন স্মৃতি রোমান্থন করতে পারে। কত আঘাতে হৃদয় বিচূর্ণ হলে এমন আর্তনাদ আমরা শুনতে পাই একজন পিতার কাছ থেকে। আমরা এমন সন্তান হতে চাই না। আল্লাহ্ এমন সন্তান হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করুন।