www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পন্যস্ত্রীর অন্তরাল

বাসটা স্টেশনে পোঁছানোর ঠিক কিছুক্ষণ আগেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হলো।অসময়ে বৃষ্টি সঙ্গে ছাতাও নেই। সঙ্গে ছাতা নেবার মানুষ আমি না।
ব্যাগটা মাথার'পর দিয়ে মাথা বাঁচিয়ে কোনো ভাবে বাসটার্মিনালে ঢুকব সাথে সাথে দেবদূতের মত এক রিক্সা এসে হাজির সবুজবাগ যাবে? যাবো ৩০টাকা লাগবে। আমিও কোনো কথা না পেঁচিয়ে সোজা উঠে পরলাম। আমি অবশ্য রিক্সাওয়ালাদের সাথে কৌতুক না করে উঠি না। এবার বৃষ্টি নিয়ম বদলালো।

একবার কি হলো আমি মিরপুর ১০ থেকে মিরপুর ২এ যাবো বেশকিছু রিক্সা আমায় ডেকে বলে কই যাবেন মামা। আমিও ঠিকানা বলি ভাড়া জিজ্ঞাস করি। কেউ বলে ৩০টাকা, কেউ চাইলো ২৫টাকা, কেউ বলে ২০টাকা। আমি ২০টাকার জনকে নিয়ে গন্তব্যে পৌছাই। আর তাকে সর্বোচ্চ ভাড়াটা ৩০টাকা দেই। এতে সে খুশি হয়ে মনখোলা দোয়া করে দেয়।

জ্যাঠামশাইয়ের বাড়িতে বিশেষ কারণে নিমন্ত্রণ। দুই ছেলে তার। নানান কাজে ব্যস্ত থাকে। শহরের বাহিরে থাকে। জ্যাঠা হাঁপানী রুগী। সামান্য ঠান্ডায় হাসপাতালে ছুটতে হয়। অতএব পাহারা দেবে কে? বাড়ির ব্যাচেলর ছেলে।তাই পাহারাদারি আমাকেই করতে হবে।

বাসে ৩ঘন্টার পথ। ফেরীর কারণে ৪ঘন্টা লাগলো।পৌঁছাতে প্রায় ২টা বেজে গেলো

রিক্সা গন্তব্যে,জ্যাঠি বারান্দায় পায়চারি করছে।
আয় আয় মুখখানা শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে। গামছা রাখা আছে হাতমুখ ধুয়ে খেতে বোস তো।

প্রায় গলা অব্ধি খেয়ে নড়তে পারছি না। রাতে খাবো কি করে।
জ্যাটামশাইকে দেখে এসেই রিমোট হাতে সটান বিছনায় মিলে গেলাম।

পরদিন ভোরে বারান্দায় বসে জ্যাঠির সাথে চা খেতেখেতে গল্প করছি হটাৎ দেখি চেনা অচেনা এক মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। জ্যাঠি দেখেই বলে উঠল..

- এই মধু কই যাচ্ছিস? আজ তো কলেজ নেই,টিউশনি করাতে?
- না গো মাসী বাজার করতে।
জ্যাঠি কে মেয়েটা? প্রশ্ন করে বসলাম।
জগদীশের মেয়ে মধুমিতা,তুই ছোটো বেলায় দেখছিস। বাপটা ক্যান্সারে মারা যায়। যা ছিলো সবটাই বাপের অসুখে শেষ করছে।কি করে ওদের চলে, কি খায় কে জানে।টিউশনি করে কয় টাকাই আর পায়।

জ্যাঠি রান্না ঘরের দিকে হেঁটে গেলেন। মনটা ভার হয়ে রইল।
পরদিন বাজারের রাস্তায় আবার দেখা।কেন জানিনা কথা বলতে ইচ্ছে হলো।
- কেমন আছেন?
- ভালো
- কই যান?
- কলেজে
- আমি অজিত দাস
- জানি, মা বলেছে; আচ্ছা ভালো থাকবেন, আমি আসছি।

অদ্ভুত কাণ্ড ছোট যায়গায় সব খবর দ্রুত ছড়িয়ে যায়।

হটাৎ মেয়েটাকে ভালো লাগতে শুরু করলো।
এক্ষুনি বিয়ে না করার ইচ্ছেটা মাটিচাপা দিতে হবে।আমার জন্য একটা পরিবার ভালো থাকলে ক্ষতি কই। মনের গম্ভীর ভাবটা কেটে ফুরফুরে হয়ে গেছে।

বিকেলে গল্পের ছলে জ্যাঠির থেকে আরো তথ্য পাওয়া গেলো।নতুনবাজারের কাছেই মধুমিতার কলেজ। ৯.৪৫টায় কলেজে যায় টিউশনি সেরে ৬টায় বাড়ি ফেরে।

পরদিন সকালে পাড়ার মোরে অপেক্ষারত। আর মাথায় নানান প্লান। মুখোমুখি কথা বলতেই হবে।আর বাড়ি ফিরে মাকে জানাতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে সে আসছে।ভোরের স্নিগ্ধতায় তাকে বেশ পবিত্র ও মায়াবী লাগছে।
- সু-প্রভাত।
- আপনি,কোথায় যান এই ভোরবেলা?
এবার অপ্রস্তুত ভাবে বলে ফেললাম - এই একটু ঘুরতে বের হলাম।
অসস্তি কাটিয়ে ফের প্রশ্ন করলাম - ফিরবেন কখন?
- কেন?
বলেই মেয়েটা রিক্সায় উঠে রওয়ানা দিলো।মেয়েটার গায়ে না পরা ভাবটা আমায় মুগ্ধ করল।

দুপুরে খেয়ে আর ঘুমালাম না।সোজা বেরিয়ে পরলাম নতুনবাজার মধুমিতার কলেজের সামনে যাবার উদ্দেশ্যে। ফেরার সময় একসঙ্গে ফিরবো। কথাটা বলতেই হবে।
- ভাই কলেজটা কোনদিকে?
- এই পথ দিয়ে বাজারের মধ্যে ডান দিকে।এই সোজা পথেও যেতে পারেন ঘুরপথ হবে।
বাজারের পথে হাটতে শুরু করলাম। দোকানপাট কিছু খোলা কিছু বন্ধ।
এখন ঠিক মধুমিতার কলেজের পাশে অপেক্ষা করছি।
সময় কাটাই কি করে??

চায়ের দোকানে বসে সিগারেট ধরিয়ে দোকানীর সাথে বকবক করে সময় কাটাতে চাইছিলাম। হটাৎ রাস্তার ওপারে তাকিয়ে দেখি দোতলা বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছে সে। আমি সিগারেটের বিল মিটিয়ে। তার কাছে যাবার জন্য উঠে দাঁড়াই। এর মধ্যে বাইক থেকে নেমে মেয়েটাকে কি জেন বললো আর মেয়েটিও তার সাথে দোতলা ভবনে একটি কক্ষে ঢুকে গেলো।
বুকের ভিতরটায় চিনচিন ব্যথা অনুভব করলাম।হনহন করে চলতে শুরু করলাম।
কিছু দূরে গিয়ে মন ঠিক শাই দিচ্ছেনা ফের দাঁড়িয়ে পরলাম। অপেক্ষা করতে থাকলাম বিপরীত দিকের চায়ের দোকানে। প্রায় ১ঘন্টা পর সে বেড় হলো।

স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তার কাছে গিয়ে তাকে ডাকলাম
- এই শোনে! ভেতরে তখনো সুনামি বইছিল।
- ওহ, আপনি? প্রতিবাদী না শান্ত ভঙ্গিতে বলছিল।
তবুও মাথা গরম হয়ে গেলো। নিজের অধিকারের বাহিরে চলে গেলাম।
- কলেজের নামে বয়ফ্রেন্ডের সাথে নোংরামি।
- কিছুক্ষণ নিশ্চুপ ; আপনি সব জেনে গেলেন।
জামার ভেতর হাত ঢুকিয়ে বের করে আনে কতগুলা ১০০টাকা নোট।পার্সে রাখতে রাখতে বলল দেড় ঘন্টা ছিঁড়ে খেয়ে ১০০০টাকা দিলো। মায়ের হার্টের ঔষধ লাগবে ৪০০টাকার বাকি টাকায় কয়েকদিন চলা যাবে।
কি করব মাকে তো বাঁচানো লাগবে বলেই হাঁটে যাচ্ছে মধু।

কানের কাছে প্রচণ্ড শব্দে বেজে যাচ্ছে মধুদের আর্তনাদ। আমি বধির হয়ে যাচ্ছি।আমি চিৎকার করে বলতে লাগলাম মধুরা পতিতা না, দারিদ্র তাদেরকে পতিতা বানিয়েছে। কোনো শব্দ হচ্ছিল না সমাজের সহস্র হাত আমার কণ্ঠরোধ করেছে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৩৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০৮/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • লেখার ধরণটা ভাল লেগেছে।
    • মুক্তপুরুষ ০৪/০৯/২০১৭
      ধন্যবাদ কবি!☺
      • সম্মানিত ব্লগার,

        আপনার এই লেখাটা একদম অন্যরকম লেগেছে।তবে গল্পের শেষটাতে রোমাঞ্চ রাখতে পারতেন...ভাল লাগতো।
        • মুক্তপুরুষ ০৫/০৯/২০১৭
          ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামত প্রকাশের জন্য।পরবর্তিতে চেষ্টা করবো তেমন কিছু দিতে।
          শুভেচ্ছা রইল🌹
  • আবু সাইদ লিপু ৩১/০৮/২০১৭
    পতিতা শব্দটি কেমন নেগেটিভ
    • মুক্তপুরুষ ০১/০৯/২০১৭
      প্রিয় নেগেটিভ কিছুই না আমরা যেমন সেন্সে নিব শব্দ তেমন হবে।
      ধরুন কোনো মেয়েকে 'বেটি বা ঝি' বললে তার মুখ বাংলার পাঁচ হয়ে যায় আর তাকে-ই যদি কন্যা কিংবা মেয়ে বলে সম্বোধন করলে খুশিতে গদগদ করবে।
  • ভালো লিখেছেন। চলতে থাকুক।।
  • সমির প্রামাণিক ৩০/০৮/২০১৭
    একদম শেষে অন্তরালের উন্মোচন হল- চমৎকার।
  • মোনালিসা ৩০/০৮/২০১৭
    ভাল
  • আব্দুল হক ৩০/০৮/২০১৭
    অনেক সুন্দর! ভালোবাসা রইল!!
  • সাঁঝের তারা ৩০/০৮/২০১৭
    অনবদ্য!!!
 
Quantcast