www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অবেলায় মেঘবতী

উৎসর্গঃ মেঘবতী

দাঁড়িয়ে আছি ঠিক আব্দুল্লাহ পুর ফুটওভার ব্রিজের নিচে ফুটপাতের দোকানের সামনে। অনেক্ষন ধরে চিৎকার করে বলছিল
-মামা নিয়া নেন নিয়া নেন ১০০টাকার জিনিস ৮০টাকা, ১০০টাকার জিনিস ৮০ টাকা।আগ্রহ নিয়া ভ্যানের টিশার্ট গুলো উল্টেপাল্টে দেখছি।

হটাৎ পেছন থেকে কেউ বলল
এক্সকিউজ মি...
আপনি নীল আই মিন নীল দত্ত?
আমি এদিকওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলাম ততক্ষণ মেয়েটা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমি তারদিকে তাকিয়ে মুগ্ধনয়নে খানিকক্ষণ দেখি।পরনে লাল থ্রি-পিছ।বেশ সুন্দরী,লম্বা আমার-ই মত,বয়সটা আমার মতই মনে হল। মনে মনে অনুভব করতে লাগলাম নীল হওয়াটা আমার জরুরী ছিল।

হটাৎ বলে উঠল  -ওই মশাই কেবলার মত এদিকওদিক কি দেখছেন আমি আপনাকেই বলছি।

দ্বিতীয় আঘাতটা আচমকা-ই করে বসলো। এরকম হবে বুঝতে পারিনি। সামান্য রাগ হলো, অতিকষ্টে তা সামলে নিলাম নিজের মধ্যে।
- দেখুন আপনার মনে হয় ভুল হচ্ছে কোথাও আমি নীল দত্ত নই।মেয়েটা বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে, বলে উঠল
কি বলেন দেখতে ত একদম-ই আপনার মত।এমনকি আপনার পরনের শার্টও তার মত।
এবার সত্যি-ই হাসি পেয়ে গেলো। হেসে হেসে বলতে লাগলাম দেখুন ফুটপাত থেকে কেনা শার্ট, যে কেউ-ই কিনি পরতে পারে। তাছাড়া এখানকার শার্ট এক পিচ হয়না। এ শহরে গাদাগাদা পাবেন এমন শার্ট।বলেই আমি কেটে পরি..
এসব গায়ে পরা মেয়েদের পাশ কাটিয়ে চলাই উত্তম।আমি পেছনে না তাকিয়ে সোজা হেঁটে গেলাম।

সন্ধ্যা নেমেছে। দোকান থেকে সিগারেট কিনে মুখে সিগারেট নিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দিয়াশলাই বের করতে যাবো হটাৎ মুখ থাকে সিগারেটে হাতে নিয়ে সাবধানের বাণী  "ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর" তাকিয়েই দেখি সেই মেয়েটি। মুখে হাসি।
সামান্য বিরক্ত হয়ে বলে বসলাম
- আপনি? কি চাইছেন বলুন তো?

মেয়েটি জড়সড়ভাবে বলতে লাগলো আপনার কাছে মিনিট দশেক সময় হবে।
- কেন?
- তাইলে কোথাও বসা যেত।
মেয়েটি এমন করে বলল যেন পাঁচ হাজার টাকা ধার চাইছে। যেটা আমার কাছে নেই। তা না চেয়ে যা চাইল তা অফুরন্ত। তাছাড়া আমি ম্যানেজার অফ টোটোকোম্পানি। একটু বসা যেতেই পারে। চলুন...

মেয়েটার মুখে খুশির হাসি দেখা গেল। হাসিতে রাতের চাঁদেরকণা ঝরেঝরে পরছে। রাস্তার নিয়ন বাতিতে মুখে মায়া জ্বলজ্বল করছে।

হাসিহাসি মুখে বলে উঠল থ্যাংকইউ এন্ড সরি।
- প্রথমটা বুঝলাম দ্বিতীয়টা ঠিক কি জন্য  বুঝতে পারলাম না?
- সেই সময় ক্যাবলা বলার জন্য।
এবার সত্যিই আবাক হয়ে গেলাম। বলে কি এই অচেনা মেয়েটা।
মেয়েটার মধ্যে রহস্য লুকিয়ে আছে। আমায় কি সত্যি সত্যি চেনে? ভালো করে আরো একবার তাকিয়ে দেখি।
পরনে লাল পোশাকে ভালোই মানিয়েছে।দেখে একদম অভিজাত পরিবারের মেয়ে মনে হচ্ছে। একদম-ই বাজে টাইপ লাগছে না। তবুও মনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে কে এই অচেনা মেয়েটা? কি চায় আমার কাছে?
কি জানি হয়তো ভুলটা ওর-ই একটু পরেই হয়তো বুঝতে পারবে।

কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টএ গিয়ে বসা হলো।
বলল কি খাবেন।
- না না থাক।
থাকবে কেন? শুধুশুধু বসে থাকা যায় নাকি? তাছাড়া আমার প্রচণ্ড ক্ষুধা পাইছে।
- আচ্ছা আপনার যা পছন্দ অর্ডার করেন।
দু প্লেট বিরায়নি অর্ডার দিল। আর বলল বিরিয়ানি আমার পছন্দ নয় তবুও আপনার জন্য অর্ডার দেওয়া আপনার বিরিয়ানি পছন্দ তাই।
গলায় পরিষ্কার চেনাজানা সুর। হ্যাঁ কথাটা সত্যি তবে কি করে জানল? তাছাড়া বলার ধরণ দেখে মনে হল আমায় খুব ভালো ভাবে চেনে।
কে মেয়েটা? আমার আত্মীয়  কিংবা চেনা জানা কেউ নয় তো? না, হলে তো চিনতাম। তবে সোশাল মিডিয়ার কেউ কি?

ফট করে পকেট থেকে ফোন তুলেই ম্যাসেঞ্জারে চলে গেলাম কয়েকজন মেয়ে বন্ধু আছে তাদের সকলকেই চিনি এবং জানি। একজন আছে অচেনা। মেঘবতী। তাকে দেখা বাদে সবটাই চেনা। ফেসবুকে-ই পরিচয় বছর খানেকর মত। খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড। মনে মনে চাইতাম দেখা করি তবে সাহস করে বলা হয়নি কখন। আর দেখা হলেই তো সবটা জানাশোনা হবে তাই দেখা করা হলো না।

কনভারসেশন অন করেই দেখলাম এক্টিভ থ্রি আওয়ার এগো।
প্রোফাইলে ছবি দেয়া নেই শুধু একজোড়া চোখ অপলক তাকিয়ে আছে। সামনে বসা অপরিচিতার চোখের সাথে কি মোটেই মিল আছে? তাকাতেই দেখি অপরিচিতা আমার দিকে সামান্য হাসছে। ঠিক কিসের হাসি বুঝতে পারছি না। তাইলে কি সামনে বসা অপরিচিতা-ই মেঘবতী। না এই অবেলায় মেঘবতী আসবে কোথেকে। ও তো বগুড়ায় থাকে। আর বড় কথা হল আমায় যদি চিনতেই পারে নাম ভুল বলবে কেন?
ও আবার আমাকে ভড়কে দিতে চাচ্ছে না তো।কিংবা বাজিয়ে দেখছে না তো। ধুর কি সব ভাবছি। তবে এ কি কেবল-ই আমার ভুল ধারনা। হয়তো! না ব্যাপারটা এবার ব্যক্তিগত হয়ে যাচ্চে। জিজ্ঞেস করা দরকার।

- আপনি জানলেন কি করে বিরিয়ানি আমার প্রিয় খাবার?
কিছু বলার আগেই খাবার নিয়ে হাজির।কিছু-ই বলতে পারলো না। ভীড়ও বাড়ছে তাই আর কিছু বলা হলো না।

- জানেন তো আরো একজন বিরিয়ানি অপছন্দ করত।
- কে?
- মেঘবতী। এই নিয়ে একবার কথা হইছিল। ঝগড়াও হইছিল। ওর কি কি পছন্দ অপছন্দ সবটাই জানাশোনা হয়ে গেছিল। মনে মনে ভীষণ ভাবে ওকে চাইতাম। টুকরাটাকরা কথা শেয়ার হতো আমাদের। এমন হতো কখন কি করি সবটাই যেন ওর মুখস্থ হয়ে গেছিল। সকালে ঘুম ভেঙে-ই আমাকে শুভ সকাল বলা থেকে শুরুকরে গুডনাইট না বললে তার ঘুম-ই হয় না। সবথেকে আশ্চর্যকথা কি জানেন সে প্রথমে আমাকে না দেখেই আমার ওজন ও উচ্চতা বলে দিছিল।তাও একদম ঠিকঠাক।  উচ্চতা বলা সম্ভব হলেও হতে পারত। কিন্তু ওজন নিখুঁত বলা কি সম্ভব? এজন্য তাকে মাপনী ডাকতাম।

- আরে খাবেনা না কি বসে থাকবেন?
আমি লজ্জিত হয়ে বললাম
- হ্যাঁ এই তো খাচ্ছি।
কেন আমাকে ডাকল? কি চাচ্ছে?  এসবের উত্তর সময়-ই হয়ত পাব।এই ভেবে খেতে শুরু করি।

আরে ওর নামটাই তো জানা হলো না। আর ধৈর্য ধরতে পারছি না। প্রশ্ন করে বসি।
- তুমি মেঘবতী?
হটাৎ বিষম খেয়ে গেলে।আমি নির্বিকার ভাঙিতে জলের গ্লাস আগিয়ে দিলাম। এক চুমুক জল খেলো। কাশিটাও কমে গেলে। আর জিজ্ঞাস করার সাহস হলো না।
হটাৎ গায়ের শার্টের কথা মনে পরে গেলো। এই শার্ট পরা একটা ছবি আমার প্রোফাইলে দেয়া ছিল। সেখানে হয়'ত দেখছে।
ততক্ষণে আমাদের খাওয়া শেষ হল।আর ও যে কখন বিলটা মিটিয়ে দিল টের-ই পেলাম না। যখন বলল দশ মিনিট হয়ে গেছে তখন মনে পরল।

আমরা বেড়িয়ে গেলাম। ও বলল আমার অনেক দেড়ি হয়ে গেছে আমি আসছি। আমি কিছুই জানতে পারলাম না। দেখতে দেখতে হারিয়ে যাচ্ছে দুর থেকে বহুদূরে। এক আকাশ প্রশ্নের বোঝা চাপিয়ে।আমি দাঁড়িয়ে আছি।
হটাৎ ম্যাসেঞ্জারের টুইং শব্দ। খুলেই দেখি মেঘবতীর ম্যাসেজ। নেক্সট ফ্রাইডে বিলটা তোমার। ক্যাবলার মত দাঁড়িয়ে না থেকে এখন বাসায় যাও। পাগল একটা।

ও আমায় ঠিক চিনতে পারছিল আমি পারিনি।

আমি দাঁড়িয়ে রইলাম ল্যাম্পপোস্টের মত আচল,অনড়।  
অপেক্ষায় রইলাম নেক্সট ফ্রাইডের...
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৫৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০৯/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • মধু মঙ্গল সিনহা ২৩/০৮/২০১৮
    সুন্দর প্রকাশ
  • রূপম আহমেদ ০২/১০/২০১৭
    খুবই সুন্দর লেখনি আপনার।
  • ফয়জুল মহী ২৭/০৯/২০১৭
    মনোরম ও প্রাণচঁচল উপস্থাপন,
  • নির্মল রায় ২৪/০৯/২০১৭
    চমৎকার গল্প।
  • সমির প্রামাণিক ২৪/০৯/২০১৭
    বাহ! চমৎকার কথন। গল্প বলার ধরনটি খুব সুন্দর। শেষ পর্যন্ত পাঠক অপেক্ষা করে থাকে।শুভেচ্ছা রইলো।
    • মুক্তপুরুষ ২৪/০৯/২০১৭
      ধন্যবাদ জানাই অনুপ্রেরণা যোগানো মন্তব্য প্রকাশের জন্য।
      ভালোবাসা রইল কবির প্রতি।💜
  • maghboti ২৪/০৯/২০১৭
    মেঘবতী তো নীলের একটা অবিছেদ্দ অংশ
    • মুক্তপুরুষ ২৪/০৯/২০১৭
      আমি যে আকাশ; ধূসরটাও যে আমার প্রিয়,
      দু'জনকেই আপন করে নিও।
      সমান ভাবে-ই ভালোবাসা দিও।
  • আজাদ আলী ২৪/০৯/২০১৭
    Beautiful story, I liked it. Thanks
 
Quantcast