চিঠি
কারো কাছ থেকে চিঠি পেতে যে কি আনন্দ লাগেতা আমি প্রথম অনুধাবন করি রোকেয়া হলে এসে।তার আগে বাড়ির বাইরে যাইনি তাই কারো সাথে কোনদিন চিঠি আদান প্রদান ও করিনি।
আমাদের হলে প্রতিদিন রুমে রুমে চিঠি বিলি করতেন মোবারক দাদু আর তাজুল দাদু।
মোবারক দাদুর চিঠি বিলি করার ধরন ছিল আলাদা।জোড়ে জোড়ে রুম নাম্বার বলতেন আর চিঠি রুমের ভেতরে দিয়ে দিতেন, দেখা যেত আমরা ঘুমিয়ে আছি কিন্তু যেই না মোবারক দাদুর গলা শুনতাম অমনি ঊঠে গিয়ে রুমের দরজায় দাড়িয়ে থাকতাম , যদি একটা চিঠি আসে।যদি না থাকত দাদু বলতেন আপা আজকে নেই কালকে এনে দিমু।কি যে ভাল লাগত সে দৃশ্য দেখতে। মেইন বিল্ডিং এ চিঠি বিলি করলে নিউ বিল্ডিং থেকে দাদুর গলা শুনা যেত।
তখন তো আর এরকম হাতে হাতে মোবাইল ছিল না।চিঠি ছিল ভরসা। বাবা, মা, ভাই, বোন, বন্ধু বান্ধব, প্রেমিক, প্রেমিকা যাই হোক হোক না কেন যোগাযোগের মাধ্যম ছিল চিঠি।
আর তাজুল দাদু চিঠি বিলি করতেন অনেকটা চুপিচুপি। বারান্দা দিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে হেটে দরজার নীচে ফাঁকা দিয়ে চিঠি দিত।এতে ও অনেক মজা হত। রুমের হয়ত সবাই ঘুমিয়ে রয়েছে হঠাত ঘুম থেকে উঠেই দরজার নীচে চোখ দিত যেইনা দেখত চিঠি ধড়মড় করে উঠে চিঠি নিয়ে আসত। আর যদি বাইরে থাকত তাহলে দরজা খুললেই দেখা যেত রুমের ভেতরে চিঠিপড়ে আছে।আহা কি আনন্দ!!
চিঠি পাওয়ার আনন্দই আসলে আলাদা। আমার জীবনে আমি অনেক অনেক চিঠি পেয়েছি।কোনদিন দুইটা,আবার এমন ও হত প্রতিদিন একটা করে। আবার যখন ৫/ ৬ দিনে একটা ও পেতাম না তখন শুধু চিন্তায় থাকতাম চিঠি পাইনা কেনো? আসলে সে অনুভুতি কারো সাথে শেয়ার করার মত না। আর কি সুন্দর সে সব চিঠির ভাষা।
সেই সব চিঠি পড়ে ভাবতাম আহা জীবন কত মধুর!!!যদি ও এখন ও মধুর!!
“ কতটা আপন হলে সবুজ মেহেদী পাতার মত লাল হয়ে যায় তুমি বোঝনি।
জীবন তো অকুপন জানি প্রিয়তমা , তবে তুমি এমনকেন,
আমি যে মেহেদী পাতার মত লাল হয়ে গেছি”!!!!!!কত কথা, কত কাব্য, কত গান থাকত সেই চিঠিতে।
রুনা লায়লার সেই গান
“ যখন থামবে কোলাহল, ঘুমে নিঝুম চারিদিকে,
আকাশের উজ্জ্বল তারাটা মিট মিট করে শুধু জল্বছে
বুঝে নিও তোমাকে আমি ভাবছি, তোমাকে কাছে ডাকছি!!
ঘুমিয়ে পড়না বন্ধু আমার, জেগে থেকো সেই রাতে!!
এমন সুন্দর চিঠি হাতে পাওয়ার পর কি ঘুমিয়ে পড়তাম নাকি পড়তাম না , আকাশের উজ্জ্বল তারাটার দিকে মনে হয় তাকিয়ে থাকতাম। রোকেয়া হলের বিরাট মাঠে তারা দেখতে মনে হয় কোন অসুবিধা হতনা। দেখতাম কি তারা মনে নেই? নাকি দেখতাম ?তবে হলের সামনের ওই বিশাল মাঠে গিয়ে বসে থাকতাম। কত রাত যে বসে থেকেছি তার কোন ঠিক নেই।
জীবনের সব কিছুতেই তখন কেমন যেন আনন্দময় ছিল।লেখা থাকতো, কেমন আছ তুমি? জানতে চাইলেই তো আর জানার উপায় নেই” এটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে হবে আরো ৪/৫ দিন।
কি না লেখা থাকতো সেখানে “ কি যে দেখেছি তোমার ওই মুখে, এরপর কত শত শত মুখ দেখলাম, কিন্তু কোন মুখই আমার চুম্বকের মত আকর্ষন করে না” । তাছাড়া অপেক্ষার দীর্ঘতা ও ছিল অনেক বেশী।
আমার মনে হয় সেই সময় যারা চিঠি লিখত তারা সবাই মনে হয় এই রকম সুন্দর সুন্দর কথা লিখত।আমাদের সময়ে এক এক চিঠি যেন বয়ে আনত একরাশ ভাললাগা আর আনন্দ।
খুব জানতে ইচ্ছা করে এখন এই টেকনোলোজির যুগের ছেলে মেয়েরা কি ইমেইল আর মেসেজ এর মাধ্যমে চিঠি পাওয়ার সেই অনাবিল সুখ পাই কিনা?
কেন জানি খুব চিঠি পেতে ইচ্ছা করে। নাকি পুরনো সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে?
আজকে সারাদিন ধরে গুন গুন করে শুধু গাইছি,
“ পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে আয় ও সেই চোখের দেখায় প্রানের কথায়, সেই কি ভুলা যায়”??????
আমাদের হলে প্রতিদিন রুমে রুমে চিঠি বিলি করতেন মোবারক দাদু আর তাজুল দাদু।
মোবারক দাদুর চিঠি বিলি করার ধরন ছিল আলাদা।জোড়ে জোড়ে রুম নাম্বার বলতেন আর চিঠি রুমের ভেতরে দিয়ে দিতেন, দেখা যেত আমরা ঘুমিয়ে আছি কিন্তু যেই না মোবারক দাদুর গলা শুনতাম অমনি ঊঠে গিয়ে রুমের দরজায় দাড়িয়ে থাকতাম , যদি একটা চিঠি আসে।যদি না থাকত দাদু বলতেন আপা আজকে নেই কালকে এনে দিমু।কি যে ভাল লাগত সে দৃশ্য দেখতে। মেইন বিল্ডিং এ চিঠি বিলি করলে নিউ বিল্ডিং থেকে দাদুর গলা শুনা যেত।
তখন তো আর এরকম হাতে হাতে মোবাইল ছিল না।চিঠি ছিল ভরসা। বাবা, মা, ভাই, বোন, বন্ধু বান্ধব, প্রেমিক, প্রেমিকা যাই হোক হোক না কেন যোগাযোগের মাধ্যম ছিল চিঠি।
আর তাজুল দাদু চিঠি বিলি করতেন অনেকটা চুপিচুপি। বারান্দা দিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে হেটে দরজার নীচে ফাঁকা দিয়ে চিঠি দিত।এতে ও অনেক মজা হত। রুমের হয়ত সবাই ঘুমিয়ে রয়েছে হঠাত ঘুম থেকে উঠেই দরজার নীচে চোখ দিত যেইনা দেখত চিঠি ধড়মড় করে উঠে চিঠি নিয়ে আসত। আর যদি বাইরে থাকত তাহলে দরজা খুললেই দেখা যেত রুমের ভেতরে চিঠিপড়ে আছে।আহা কি আনন্দ!!
চিঠি পাওয়ার আনন্দই আসলে আলাদা। আমার জীবনে আমি অনেক অনেক চিঠি পেয়েছি।কোনদিন দুইটা,আবার এমন ও হত প্রতিদিন একটা করে। আবার যখন ৫/ ৬ দিনে একটা ও পেতাম না তখন শুধু চিন্তায় থাকতাম চিঠি পাইনা কেনো? আসলে সে অনুভুতি কারো সাথে শেয়ার করার মত না। আর কি সুন্দর সে সব চিঠির ভাষা।
সেই সব চিঠি পড়ে ভাবতাম আহা জীবন কত মধুর!!!যদি ও এখন ও মধুর!!
“ কতটা আপন হলে সবুজ মেহেদী পাতার মত লাল হয়ে যায় তুমি বোঝনি।
জীবন তো অকুপন জানি প্রিয়তমা , তবে তুমি এমনকেন,
আমি যে মেহেদী পাতার মত লাল হয়ে গেছি”!!!!!!কত কথা, কত কাব্য, কত গান থাকত সেই চিঠিতে।
রুনা লায়লার সেই গান
“ যখন থামবে কোলাহল, ঘুমে নিঝুম চারিদিকে,
আকাশের উজ্জ্বল তারাটা মিট মিট করে শুধু জল্বছে
বুঝে নিও তোমাকে আমি ভাবছি, তোমাকে কাছে ডাকছি!!
ঘুমিয়ে পড়না বন্ধু আমার, জেগে থেকো সেই রাতে!!
এমন সুন্দর চিঠি হাতে পাওয়ার পর কি ঘুমিয়ে পড়তাম নাকি পড়তাম না , আকাশের উজ্জ্বল তারাটার দিকে মনে হয় তাকিয়ে থাকতাম। রোকেয়া হলের বিরাট মাঠে তারা দেখতে মনে হয় কোন অসুবিধা হতনা। দেখতাম কি তারা মনে নেই? নাকি দেখতাম ?তবে হলের সামনের ওই বিশাল মাঠে গিয়ে বসে থাকতাম। কত রাত যে বসে থেকেছি তার কোন ঠিক নেই।
জীবনের সব কিছুতেই তখন কেমন যেন আনন্দময় ছিল।লেখা থাকতো, কেমন আছ তুমি? জানতে চাইলেই তো আর জানার উপায় নেই” এটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে হবে আরো ৪/৫ দিন।
কি না লেখা থাকতো সেখানে “ কি যে দেখেছি তোমার ওই মুখে, এরপর কত শত শত মুখ দেখলাম, কিন্তু কোন মুখই আমার চুম্বকের মত আকর্ষন করে না” । তাছাড়া অপেক্ষার দীর্ঘতা ও ছিল অনেক বেশী।
আমার মনে হয় সেই সময় যারা চিঠি লিখত তারা সবাই মনে হয় এই রকম সুন্দর সুন্দর কথা লিখত।আমাদের সময়ে এক এক চিঠি যেন বয়ে আনত একরাশ ভাললাগা আর আনন্দ।
খুব জানতে ইচ্ছা করে এখন এই টেকনোলোজির যুগের ছেলে মেয়েরা কি ইমেইল আর মেসেজ এর মাধ্যমে চিঠি পাওয়ার সেই অনাবিল সুখ পাই কিনা?
কেন জানি খুব চিঠি পেতে ইচ্ছা করে। নাকি পুরনো সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে?
আজকে সারাদিন ধরে গুন গুন করে শুধু গাইছি,
“ পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে আয় ও সেই চোখের দেখায় প্রানের কথায়, সেই কি ভুলা যায়”??????
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আবিদ আল আহসান ০৩/১২/২০১৪চিঠির যুগটা ফিরে আসলেই ভালো হতো তাইনা কবি!!
-
প্রবাসী পাঠক ২৭/১১/২০১৪চমৎকার স্মৃতি কথন।
-
অনিরুদ্ধ বুলবুল ১৩/১১/২০১৪খুব সুন্দর নস্টালজিয়ায় ছাওয়া স্মৃতি!
চিঠি তো হারিয়েই গেছে, ডাক বিভাগও উঠে যাবার পথেই।
আজকের দিনে মোবাইল ইন্টারনেটের কল্যাণে প্রতি মুহুর্তে আমরা যোগাযোগে আপডেটেড কিন্তু চিঠির যে কী মাধুর্যতা ছিলো তা একমাত্র পুরান দিনের মানুষরাই বুঝবে, আজকের তরুণ প্রজন্ম সে মজা থেকে বঞ্চিত। তারা সেই সব দিনের আনন্দের ধারা ও প্রকরণ সস্পর্কে কোন ধারণাই করতে পারবে না।
একটা চিঠি পাবার জন্য সপ্তাহ পনেরদিন বা এক মাস অপেক্ষার পর সেই চিঠি এলে কী যে ভালো লাগতো তা মনে করলে আজো মন আবেগে পূলকে বেদনায় ভরে উঠে।
স্মৃতিময় সুন্দর একটা লেখা উপভোগ করলাম।
ভাল থাকুন সতত। -
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ১৩/১১/২০১৪রোমান্টিকতার যে কোনো শব্দ ব্যবহার করলেই যেনো কম হয়ে যাবে লেখাটির জন্য। অন্নেক রোমান্টিক হয়েছে। চিঠির যুগটা আমি খুব বেশী পাইনি তবে যেটুকু পেয়েছি তা সত্যি অনেক মজার ছিলো। কবে পাবো চিঠি বা চিঠির উত্তর বা পাবোই কিনা ইত্যাদি একটা রোমাঞ্চ কাজ করতো। আর চিঠির কথা মনে হলে তো বারবার প্রেমে পড়ে যেতে ইচ্ছে হয়।