বিনয়
গত তিন মাস ধরে আমি ব্যাংকক এর মাহিদল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে যাচ্ছি আমার দাঁতের চিকিৎসার জন্য।
মাসের নির্দিষ্ট দিনে যেতে হয়। আমার ডেন্টিস্ট এর নাম ডাক্তার নুহা, উনি মালদ্বীপের, এখানে দাতের উপরে ডিগ্রী নিতে এসেছেন। এই তিন্ মাস ধরে উনি আমার চিকিৎসা করছেন।
যা হোক রিসেপ শনে পৌঁছাবার সাথে সাথে থাই মেয়েটা একটা নির্মল হাসি দেয়। যত্ন করে প্রেসার মাপে, তারপর আমাকে অপেক্ষা করতে বলে। একটু পরেই নার্স আসে, আমার নাম বলে, আমি এগিয়ে গেলে আমাকে থাই ভাষায় সালাম দেয় , সাথে মুখ ভরা হাসি থাকে। আমাকে ভেতরে নিয়ে যায় । ভেতরে মানে একটা বিরাট হল রুম, যেখানে প্রায় একশ রোগী একসাথে দেখা যায়। চার হাত দূরে দূরে রোগী দেখে অথচ কোন শব্দ নেই। যার যার কাজ করে যাই, কথা ও বলে এত আস্তে যে পাশের মানুষ শুনতে পায়না। একজন ডাক্তারের সাথে একজন করে নার্স। পাশেই এক্সরে রুম, যার যখন প্রয়োজন এক্সরে করে নিয়ে আসছে। একজন ডাক্তার দিনে মাত্র দুইটা রোগী দেখে। সকাল ৯ টা থেকে ১২ টা একজন, দুপুর ১ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত আর একজন।
আজকের গল্প বলি। আমার এসি তে এলারজি আছে। হাত, পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, আমি গেলেই নার্স আমার জন্য তোয়ালে নিয়ে আসে। আমার গায়ের উপর দিয়ে দেয়। আজকে আমাকে তোয়ালে দেওয়া হয়েছে, ডাক্তার দেখি আমার পায়ের কাছে গিয়ে আমার পা ভালমত ঢেকে দিচ্ছেন, আমি তো সাথে সাথে না না করছি। উনি বললেন “ইটস ওকে, ইউ আর মাই গেস্ট”।
কিভাবে মানুষ এত বিনয়ী হয় আমি জানিনা। নার্স, যতবার আমার গালে পানি দেয়, মুখের উপর কাপড় দেয় ততবারই বলে, আমাকে ক্ষমা করো, কিছু মনে করোনা। কি বিনয়ী আর নরম সুরে কথাগুলো বলে শুনতে ইচ্ছা করে।
আজকে আমার চিকিৎসা শেষ হতে হতে প্রায় সাড়ে বারটা বেজে যায়। ব্যাংকক এ ১২ টায় দুপুরের খাবারের সময়। আমার জন্য ডাক্তার আর নার্স খেতে যেতে পারেন নি। আমাকে অবাক করে দিয়ে ডাক্তার আমাকে বলেন “ ইসমাত আমি খুবই দুঃখিত যে তুমি এখন খেতে পারবেনা, আমি জানি তোমার ক্ষুধা লেগেছে, কিন্তু তোমাকে আরো এক ঘন্টা পরে খেতে হবে। তবে তুমি জুস খেতে পার”। কথাগুলো সে এমন বিনয়ের সাথে বলল, যে আমার লজ্জাই করতে লাগল। কোথায় আমি বলব উনাকে তা না উলটো আমাকেই...।।
আমার ঘরে দুটো বাচ্চা আছে, ওরা ও দেখি সব সময় আমি কোন কাজ করে দিলে ধন্যবাদ দেয়। ভাল খাবার রান্না করলে আমার প্রতি বিনয় দেখায়, আগে আমি বলতাম আমাকে ধন্যবাদ দিতে হবেনা, আমি তোমাদের মা, আমার দায়িত্ব তাই আমি করি। ওরা বলে না তুমি এত কস্ট করে করেছ সেই জন্য তো একটা ধন্যবাদ, আদর, বা হাগ পেতেই পার। এখন আর নিষেধ করিনা, ভাবি বলুক, ওরা যে আমি কস্ট করি এটা বোঝে এই তো কত। তারপরে ও আমি মাঝে মাঝে ওদের সাথে জোড়ে কথা বলে ফেলি। আবীর বলে “ আম্মু আমি তো তোমাকে খুব আস্তে জিজ্ঞাসা করেছি, তুমি কেন জোড়ে বললে, আর ছোটটা বলে ভয় পেলাম”।
আমার নিজেরই লজ্জা লাগে, সরি বলি। মনে মনে ভাবি আর কখন ও জোড়ে কথা বলবনা।কিন্তু বললেই কি আর মেনে চলি।
এখানে ওরা নাপিত, মুচি, দোকানদার, ড্রাইভার, সবাইকে ধন্যবাদ দেয় যে কোন কাজের জন্য।
বিনয়ী হতে আসলে কিছু লাগেনা, নিজের ইচ্ছায় যথেষ্ট। “ এরা বিনয়কে চর্চা করে আর আমরা চিল্লা চিল্লি করা চর্চা করি”।
কবে আমরা বিনয়ী হব?
মাসের নির্দিষ্ট দিনে যেতে হয়। আমার ডেন্টিস্ট এর নাম ডাক্তার নুহা, উনি মালদ্বীপের, এখানে দাতের উপরে ডিগ্রী নিতে এসেছেন। এই তিন্ মাস ধরে উনি আমার চিকিৎসা করছেন।
যা হোক রিসেপ শনে পৌঁছাবার সাথে সাথে থাই মেয়েটা একটা নির্মল হাসি দেয়। যত্ন করে প্রেসার মাপে, তারপর আমাকে অপেক্ষা করতে বলে। একটু পরেই নার্স আসে, আমার নাম বলে, আমি এগিয়ে গেলে আমাকে থাই ভাষায় সালাম দেয় , সাথে মুখ ভরা হাসি থাকে। আমাকে ভেতরে নিয়ে যায় । ভেতরে মানে একটা বিরাট হল রুম, যেখানে প্রায় একশ রোগী একসাথে দেখা যায়। চার হাত দূরে দূরে রোগী দেখে অথচ কোন শব্দ নেই। যার যার কাজ করে যাই, কথা ও বলে এত আস্তে যে পাশের মানুষ শুনতে পায়না। একজন ডাক্তারের সাথে একজন করে নার্স। পাশেই এক্সরে রুম, যার যখন প্রয়োজন এক্সরে করে নিয়ে আসছে। একজন ডাক্তার দিনে মাত্র দুইটা রোগী দেখে। সকাল ৯ টা থেকে ১২ টা একজন, দুপুর ১ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত আর একজন।
আজকের গল্প বলি। আমার এসি তে এলারজি আছে। হাত, পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, আমি গেলেই নার্স আমার জন্য তোয়ালে নিয়ে আসে। আমার গায়ের উপর দিয়ে দেয়। আজকে আমাকে তোয়ালে দেওয়া হয়েছে, ডাক্তার দেখি আমার পায়ের কাছে গিয়ে আমার পা ভালমত ঢেকে দিচ্ছেন, আমি তো সাথে সাথে না না করছি। উনি বললেন “ইটস ওকে, ইউ আর মাই গেস্ট”।
কিভাবে মানুষ এত বিনয়ী হয় আমি জানিনা। নার্স, যতবার আমার গালে পানি দেয়, মুখের উপর কাপড় দেয় ততবারই বলে, আমাকে ক্ষমা করো, কিছু মনে করোনা। কি বিনয়ী আর নরম সুরে কথাগুলো বলে শুনতে ইচ্ছা করে।
আজকে আমার চিকিৎসা শেষ হতে হতে প্রায় সাড়ে বারটা বেজে যায়। ব্যাংকক এ ১২ টায় দুপুরের খাবারের সময়। আমার জন্য ডাক্তার আর নার্স খেতে যেতে পারেন নি। আমাকে অবাক করে দিয়ে ডাক্তার আমাকে বলেন “ ইসমাত আমি খুবই দুঃখিত যে তুমি এখন খেতে পারবেনা, আমি জানি তোমার ক্ষুধা লেগেছে, কিন্তু তোমাকে আরো এক ঘন্টা পরে খেতে হবে। তবে তুমি জুস খেতে পার”। কথাগুলো সে এমন বিনয়ের সাথে বলল, যে আমার লজ্জাই করতে লাগল। কোথায় আমি বলব উনাকে তা না উলটো আমাকেই...।।
আমার ঘরে দুটো বাচ্চা আছে, ওরা ও দেখি সব সময় আমি কোন কাজ করে দিলে ধন্যবাদ দেয়। ভাল খাবার রান্না করলে আমার প্রতি বিনয় দেখায়, আগে আমি বলতাম আমাকে ধন্যবাদ দিতে হবেনা, আমি তোমাদের মা, আমার দায়িত্ব তাই আমি করি। ওরা বলে না তুমি এত কস্ট করে করেছ সেই জন্য তো একটা ধন্যবাদ, আদর, বা হাগ পেতেই পার। এখন আর নিষেধ করিনা, ভাবি বলুক, ওরা যে আমি কস্ট করি এটা বোঝে এই তো কত। তারপরে ও আমি মাঝে মাঝে ওদের সাথে জোড়ে কথা বলে ফেলি। আবীর বলে “ আম্মু আমি তো তোমাকে খুব আস্তে জিজ্ঞাসা করেছি, তুমি কেন জোড়ে বললে, আর ছোটটা বলে ভয় পেলাম”।
আমার নিজেরই লজ্জা লাগে, সরি বলি। মনে মনে ভাবি আর কখন ও জোড়ে কথা বলবনা।কিন্তু বললেই কি আর মেনে চলি।
এখানে ওরা নাপিত, মুচি, দোকানদার, ড্রাইভার, সবাইকে ধন্যবাদ দেয় যে কোন কাজের জন্য।
বিনয়ী হতে আসলে কিছু লাগেনা, নিজের ইচ্ছায় যথেষ্ট। “ এরা বিনয়কে চর্চা করে আর আমরা চিল্লা চিল্লি করা চর্চা করি”।
কবে আমরা বিনয়ী হব?
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আবিদ আল আহসান ০৩/১২/২০১৪অসাধারণ আপা।
-
দেলোয়ার হোসাইন ৩০/১১/২০১৪ভয় পেলাম
দৃশ্যটা ভাবতেই আমার হাসি পাচ্ছে। -
অহিদুল ইসলাম ২৮/১১/২০১৪সত্যি কবে আমরা বিনয়ী হবো ?
-
চন্দ্রশেখর ২২/১১/২০১৪ভাললাগল।
আসলে যস্মিন দেশে যদাচার... আমাদের দেশে সজোরে বলা মানেসততার প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা... ওখানে না -
একনিষ্ঠ অনুগত ১৩/১১/২০১৪লেখাটি আপনার সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা হলেও যতই পড়লাম মুগ্ধ হলাম, না, এ কোন কাল্পনিক গল্প নয়, কিন্তু বাস্তব যে অনেক সময় গল্পকেও হার মানায়।। সত্যি 'বিনয়' এমন একটি জিনিস মুহূর্তেই অতি দূরের মানুষকেও অনেক কাছে এনে দেয়।।
অনেক ধন্যবাদ আপনার জীবনের সুন্দর এই অভিজ্ঞতাকে আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।। -
মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ১২/১১/২০১৪অনেক ভালো লাগলো...।।
-
তুহিনা সীমা ১১/১১/২০১৪খুব সুন্দর লিখেছেন। একটা কবিতার লাইন মনে পড়ে গেলো জানি না এই লেখার সাথে যায় কিনা।
আমাদের দেশে সেই ছেলে হবে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।
অথবা মানুষ হইতে হবে এই যার পন। -
অনিরুদ্ধ বুলবুল ১১/১১/২০১৪আপনার লেখাটা ভালো লেগেছে। মনে পড়ে; আজ থেকে বছর পঁয়ত্রিশেক আগের কথা। তখনো আমরা আধুনিকতায় অনেক পিছিয়ে ছিলাম। জীবনের প্রথম থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ভ্রমণে গেলাম। তাদের বিনয় দেখে এতো অভিভূত হয়েছিলাম যে মনে হয়েছে ওদের সব আচরণ পৃথিবীর নয় - বেহেশতের! পরবর্তী কালে অবশ্য ইউরোপ আমেরিকা সহ পৃথিবীর বহুদেশ ভ্রমনের সুযোগ হয়েছে।
তখন সেইসব দেশে বিভিন্ন অফিসে ও যত্রতত্রই একটা হাসি মুখের স্মাইলী স্টিকার দেখতাম কাঁচে লাগানো। লেখা: Courtesy costs nothing but pays more কথার অর্থ ঠিকই বুঝতাম কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় তা রপ্ত করার সুযোগ পেতাম না। এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশে বিনয়ী মানুষকে হয় বোকা ভেবে অবজ্ঞা করা হয় নয়তো ভাবে কি জানি কি দূরভিসন্ধি আছে লোকটার।
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ। -
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ১০/১১/২০১৪আগে একটা কথা বলে নেই। একদম বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে ।আমি এখন যেখানে জব করি সেটি একটি চাইনিজ কোম্পানি। এখানে আমি যখন প্রথম আসি তখন সবার সাথে চেষ্টা করতাম ১০০% বিনয়ী ব্যাবহার করার জন্য। চাইনিজরা আমার প্রশংসা করা শুরু করলো বাট বাঙ্গালিরা এটা কে আমার দুর্বলতা হিসেবে নিচ্ছে এবং কি পারলে অনেকটা ইনসাল্ট করতো। যদি ও আমি আমার পথ বা আদর্শ থেকে সরে যাই নি। আর হ্যা একটা আত্নজীবনী পেতে যাচ্ছি মনে হয়। আই মিন সব লেখাগুলো একত্রে করলে হয় যাবে। ভালো থাকবেন।
-
আসগার এইচ পারভেজ ১০/১১/২০১৪সত্যিই, বিনয়ী হতে শুধু ইচ্ছাই যথেষ্ট, কিন্তু প্রবলেম হলো সেই ইচ্ছেটাই যে আমাদের নেই!!