আজ আবীরের জন্মদিনঃ
আজ আবীরের জন্মদিনঃ
২৪ শে ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
শুভ জন্মদিন বাবা!! দিন কত তাড়াতাড়ি চলে যায়, আজ তুমি ১২ বছরে পা দিলে। ১২ বছরের এই সুন্দর পৃথিবীতে তোমার ১২ বছরের ইতিহাস। ১২ বছরের ইতিহাসে তোমার জীবনে যা কিছু ঘটেছে, আমার প্রায় সব মনে আছে। কিছু কিছু অবশ্য ভুলে গেছি। আমার কাছে মনে হয় এই তো সেদিন আমাকে অপারেশন রুমে নেওয়া হল।আমার মনের ভেতরে তখন উৎকণ্ঠা, আবেগ, ভয়। তুমি কেমন হবে, কার মত হবে, সুস্থ হবে তো? এরকম হাজার ও প্রশ্ন আমার মনের ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছিল।তারপর আসল সেই আনন্দঘন মুহুরত, আমি তোমার কান্না শুনতে পেলাম, নার্স তোমাকে আমার সামনে মেলে ধরল, আমি দেখলাম তোমাকে, আদর করলাম।
যখন আমাকে কেবিনে আনা হল দেখলাম তুমি শুধু ঠোঁট চুষছ, মনে হচ্ছিল খুব ক্ষুধা লেগেছে, তাই দেখে তোমার দাদু আর নানু ভাই মার্কেট থেকে দুধ আর ফিডার কিনে নিয়ে আসলো। অবাক কান্ড তোমাকে যতটুকু দেওয়া হল তুমি খেয়ে ও ফেললে। শুরু হল তোমার খাওয়া আর ঘুম। কান্না কাকে বলে তা মনে হয় তুমি জানতে না। না কি কান্নার সুযোগ পাওনি, জানিনা আমি আজ ও এর উত্তর খুজে বেড়াই।
আর এখন একটু কিছু হলেই চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দাও, অভিমান কর আমার সাথে।
আজ এই দিনে আমি বারবার ভাবছি তোমার বেড়ে ওঠা, কথা বলা, হাসা সব কিছু নিয়ে। খুব তাড়াতাড়ি তোমার দাঁত ঊঠেছিল , বসা, হাটা, কথা বলা সবই তাড়াতাড়ি। আমি স্কুলে যেতাম, তুমি নানা, নানু আর রফিকুল মামার কাছে থাকতে। রফিকুল মামা তোমাকে ট্রলিতে করে খুব সকালে হাটতে হাটতে গ্রামের দিকে নিয়ে যেত, তুমি ট্রলির ভেতরে চুপ করে বসে থাকতে, যেরকম একটা পুতুল বসে থাকে, কোন নড়াচড়া করতনা। গ্রামের ছেলে মেয়েরা প্রায়ই তোমাকে দেখার জন্য শুটে আসত , কাছে এসে বলত, “একটু ছুয়ে দেখব এ সত্যি মানুষ না পুতুল”। রফিকুল মামার কাছ থেকে আমি এই সব গল্প পরে শুনতাম আর হাসতাম।
জীবনে প্রথমে তুমি যে গান গেয়েছিলে সেটা হল “ ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায়”। জানিনা কোথা থেকে তুমি এই গান শিখেছিলে? দাদু ভাই এর মোটর সাইকেলে তুমি বসতে আর এই গান ধরতে। আমরা তো হাসতাম। প্রথম যে কবিতাটা শিখেছিলে তা হল “ ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে রাত দুপুরে ওই”। কেমন করে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে কবিতাটা তুমি বলতে।
ছোট বেলা থেকেই তোমার চিংড়ি মাছ অসম্ভব প্রিয় ছিল। “চিংড়ি মাছকে তুমি বলতে চিনড়ি মাছ”। ভাত কে ভাক। মুরগী কে ডাকতে মুরকি। ধান কে দান, গরু কে গলু এরকম ছোট ছোট কথা আর বাক্যের ভেতর দিয়ে গড়ে উঠেছিল তোমার পৃথিবী।
দাদু যদি তোমার ডাক না শুনত, তাহলে ডাকতে শেফালী আলম বলে, কারন তুমি ওই ডাক দাদু ভাই এর কাছ থেকে শিখেছিলে।তোমার তো মনে নেই মাঝে মাঝে তুমি আমাকে “ বউমা” বলে ও ডাকতে।
এখন তুমি অনেক বড়। আস্তে আস্তে তুমি শিখে ফেলছ, ধনী গরীবের পার্থক্য, সমাজ, রাজনীতি, ডি এন এ, মানুষ কিভাবে পৃথিবীতে আসে, কিসের জন্য বাবা বা মায়ের মত দেখতে হয় সবই তুমি তোমার বই পড়ে জেনেছ, আর এই নিয়ে কত প্রশ্ন তোমার আমার কাছে।
এখন তুমি ঘর পরিস্কার কর, নিজের কাজ নিজে কর, আরিকের হোম ওয়ারক করতে সাহায্য কর, ওকে গোসল করাও, অসুখ হলে সেবা কর, সবচেয়ে বড় কথা ওকে আদর কর, কাপড় গুছিয়ে রাখ, এমন কি তুমি তোমার মায়ের প্রতি ও অনেক যত্নশীল এবং ধরযশীল।
সবচেয়ে যেটা ভাল লাগে সেটা হল, যখন আমি একা একা কাজ করি তুমি টিভি দেখা বা গেম খেলা বাদ দিয়ে আমাকে এসে জিজ্ঞাসা কর, “ আম্মু আমি কি সাহায্য করতে পারি”? যখন তোমার ছোট ভাইটা কেঁদে ওঠে তখন ও তুমি অস্থির হয়ে যাও ওকে থামানোর জন্য। কেউ যখন বেবি ট্রলি নিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠতে পারেনা , তুমি সাথে সাথে তাকে সাহায্য কর, এবং তাকে একদম দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে আস। যখন কোন অন্ধকে তুমি দেখ রাস্তায়, তাকে রাস্তা পার করিয়ে দাও। সব জায়গায় তোমার একই কথা “ আমি কি সাহায্য করতে পারি”?
আর যদি আমি হাগ করতে ভুলে যায়, তুমি অভিমান ভরা কন্ঠে আমার কাছে এসে বল, “ আম্মু ইটস ন্ট ফেয়ার , নো হাগিং, নো কিসিং ইওর বিলাভড সন” । আমি তখন তোমাদের দুই ভাইকে জড়িয়ে ধরি, আদর করি।
বাবা, তোমার ছোটকালের কিছু জিনিস আমি আমার কাছে জমা রেখেছি, যেমন প্রথম স্কুল প্যান্ট, টাই, জামা, ছোট কার, বল, এরকম আরো অনেক জিনিস আছে আমার কাছে, আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি। একদিন বড় হয়ে তুমি যখন তোমার ছেলে বেলাকে খুঁজবে তখন আমি সেগুলো বের করে দিব।
তোমার এই ১২ বছরের ইতিহাসে তোমার আনন্দ, অভিযোগ, অভিমান সবই আমার কাছে জমা আছে। সব সময় দোয়া করি সুন্দর এই পৃথিবীতে তুমি ভাল থাক, আনন্দে থাকো, তোমার চারপাশে যারা আছে বা থাকবে তাদেরকে আনন্দে রেখো। আর একটা কথা মনে রেখো তুমি যত বড়ই হওনা কেন তুমি আমার কাছে সেই ছোট্ট আবীরই থেকে যাবে, আমি সব সময় তোমার আনন্দে, কস্টে, বেদনায়। পাশে থাকব।
"আজ আমার ও জন্মদিন"...মা ও ছেলে একসাথে"।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ১১/১১/২০১৪আপনাদের মা ছেলেকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আর অসম্ভব অলৌকিক লাগলো আপনাদের মা ছেলের জন্মদিন এক সাথে। আগামী বার্থ ডে তে আমাকে ইনভাইট করবেন কিন্তু।
-
কবি মোঃ ইকবাল ০৭/০৫/২০১৪ওয়াও!!
মা ও ছেলের একই দিনে জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন। -
প্রবাসী পাঠক ২৬/০২/২০১৪মা এবং ছেলে দুজনের জন্যই রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা।