ব্যাংকক এ ২১ শে ফেব্রুয়ারী পালনঃ
২১ শে ফেব্রুয়ারী সন্ধা সাত টায় দুই ছেলেকে সাথে নিয়ে যখন থাইল্যান্ড এ অবস্থিত বাংলাদেশ এ্যাম্বাসিতে পৌঁছালাম, মনে হল যেন ছোট একটা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এসে পড়লাম। এ অনুভুতিই আলাদা, চারপাশে সবাই বাঙ্গালী, বাংলায় কথা বলছে, বাজছে বাংলাদেশের গান। আজ সেই দিন যেদিন বাঙ্গালী তার মায়ের ভাষার জন্য প্রান দিয়েছিল। স্টেজ টাকে সাজানো হয়েছে এত নিপুন ভাবে , সল্প পরিসরে ২১ শে ফেব্রুয়ারীর দিনের তাৎপর্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শহীদ মিনার ভেতরে লাল সূর্য, অনেক ফুলের সমাহার, মনে হচ্ছিল এই মাত্র শহীদ মিনারের বেদীতে সবাই ফুল দিয়ে শহীদ দেরকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। পাশের দেয়াল বিভিন্ন বর্ণমালা দিয়ে সাজানো। মনটা কেমন যেন ভাল হয়ে গেল।মুল অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে সাত টায়। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় নিযুক্ত মহামান্য রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলেন। সবার সাথে মত বিনিময়ের পরেই ঠিক সাড়ে সাত টায় অনুষ্ঠান শুরু হল নাজমুল হকের উপস্থাপনায়। প্রথমেই আলোচনা পর্ব।এই পর্বে উপস্থাপক মাননীয় রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানালেন “শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গনপ্রজাতন্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং পররাস্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে বানী দিয়েছেন তা পড়ে শোনানোর জন্য”। মাননীয় রাষ্ট্রদূত উপস্থিত সবাইকে পড়ে শোনালেন। সাথে আরো বললেন “ যে কোন বড় পাওনার পিছনে কোন মহান ত্যাগ থাকে। আজ আমরা সাধীন জাতি, এর মুলে যে ত্যাগ, যে আত্মত্যাগ সমস্ত জাতিকে একত্রিত করেছিল, তার ফলশুরুতিতে ১৯৭১ সালে যে দেশ সাধীন হয় তার বীজ বোপন হয়েছিল এই ভাষা আন্দোলনের মধ্যে।
২য় পর্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুরু হয় মোহাম্মাদ শাহরিয়ার আলম এর উপস্থাপনায় । প্রথমেই সমবেত সঙ্গীত “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি” আমরা সবাই মনের অজান্তে গেয়ে উঠলাম। চোখের কোনায় যেন পানি এসে জমা হল। এরপরে আবার ও কোরাস সঙ্গীত “ লও সালাম লও সালাম লও সালাম, সালাম লও শহীদ নওজোয়ান” । শুরু হল সুমীর একক পরিবেশনা “ ও আমার বাংলা মা তোর আকুল করা রুপের সুধায় হৃদয় আমার যায় জুড়িয়ে, যায় জুড়িয়ে, ও আমার বাংলা মা তোর”, এই গানগুলো শুনে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকা আমাদের এই অস্থির মনটা ও যেন জুড়িয়ে যাচ্ছিল। এটা সত্য যে আমরা বাঙ্গালীরা যে যেখানেই থাকিনা কেন, মনের মধ্যে সব সময় নিজের দেশ, সংস্কৃতি কে লালন করি, তাইতো থাইল্যান্ডে বেড়ে ওঠা মামান যখন আবৃতি করা শুরু করল “ একুশ মানে রফিক, সালাম, বরকতের রাঙ্গা বুক, একুশ মানে রক্তে কেনা ভাষায় কথা বলার সুখ’ ওর বলার বাচন, উচ্চারন দেখে মনেই হচ্ছিল না ও বিদেশে বড় হয়েছে। এরপরেই একসাথে সবাই গেয়ে উঠল, “ সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্য অস্তে তুমি, ও আমার বাংলাদেশ, প্রিয় জন্মভুমি”। আসলেই আমাদের প্রিয় জন্মভুমি, আমরা দেশ থেকে অনেক দূরে কিন্তু আমাদের সবাইকে যেন তার আঙ্গিনাতেই ধরে রেখেছে। কোরাস গান শেষ হতেই ছোট ভাই শাফির ভায়োলিন বেজে উঠল, “ আমি বাংলায় গান গাই”। এর পরেই সালেহীন এর কন্ঠে গান “অপমানে তুমি জলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা , সেই থেকে শুরু সেই থেকে শুরু, সেই থেকে শুরু দিন বদলের পালা ”। কয়েক মিনিটের জন্য সবাই চুপ হয়ে গিয়েছিলাম আয়াত আলীর কন্ঠে নুরুলদীনের সারাজীবন কবিতাটা শুনে। উপভোগ করলাম নাচ “ প্রতিটি বছর ফাগুন আসে’ এই গানের সঙ্গে। “ ও আমার দেশের মাটি , তোমার পরে ঠেকায় মাথা” গান ও কবিতা এক সঙ্গে। সলীল চৌধুরীর লেখা গান “ আমার প্রতিবাদের ভাষা, প্রতিরোধের আগুন, দিগুন জলে” গাইলেন বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে আসা অতিথি শিল্পী ডালিয়া নওশীন । হাসিনা হেলাল গাইলেন “ একটি সপ্ন শেষে একটি সূর্যের জন্ম নিল”। সবশেষে কোরাস এবং উপস্থাপক আহবান করলেন সবাইকে গাইবার জন্য। “ মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি”। দর্শক সারিতে বসা সবাই আমরা সুর মেলালাম। সবশেষে উপস্থাপক উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে রাষ্ট্রদূতকে মঞ্চে আমন্ত্রন জানিয়ে এবং সবাইকে আপ্যায়ন পর্বে আহবান জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। ঘোরের মধ্যে থাকা আমি মনে মনে আওরাতে লাগলাম “একুশ মানে এগিয়ে যাওয়ার গল্প শুরু , নয়তো শেষ, একুশ মানে স্বপ্ন দেখা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ”।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আবিদ আল আহসান ০৩/১২/২০১৪
-
কবি মোঃ ইকবাল ০৭/০৫/২০১৪ভালো লাগলো।
-
অরণ্য ২১/০৩/২০১৪সুন্দর পোস্ট। ভাল লাগলো। তবে ছবিগুলো আসছে না।
-
প্রবাসী পাঠক ২৩/০২/২০১৪আবীরের জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর শুভ কামনা।
শুভ জন্মদিন আবীর । সুখে সাচ্ছন্দে আর সাফল্যে ভরা হোক তোমার জীবন।
-
প্রবাসী পাঠক ২৩/০২/২০১৪
একুশ আমার অহংকার, একুশ আমার অস্তিত্ব।
একুশ মানে ক্ষুধার জ্বালায় খাও জিলাপির বড়া।
হ্যাঁ, আমার ১০ বছর বয়সে কিছু না বুঝেই এই দুই লাইনের কবিতাটি লিখেছিলাম।
আজ আপার লিখাটি পড়ে হঠাৎ মনে পড়ে গেলো