থাইল্যান্ডে রাজার জন্মদিন এবং বাবা দিবসঃ
বাবা, আব্বা, আব্বু,পাপা, ফ অথবা বাবুজি এই শব্দগুলো ভাষার দিক দিয়ে বিভিন্ন হতে পারে কিন্তু এর ঊল্লেখ সর্বত্র একই। । যেখানে রয়েছে ছেলেমেয়েদের প্রতি প্রত্যেকটা বাবার শর্তহীন ভালোবাসা, যত্ন, উদ্বেগ,এবং ত্যাগ।একজন সন্তানের জন্য বাবা হছে সর্বদা মনোযোগের কেন্দ্রস্থল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এবং প্রতিটি সংস্কৃতিতে বাবাদেরকে সম্মান করা হয় তাদের স্বার্থহীন ভালবাসার জন্য। মায়ের মত বাবার ঋণ ও কখনো শোধ করা যায়না । তারপরেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিনে বাবা দিবস পালন করা হয়, বাবাদেরকে মনে করা হয় , তাদের প্রতি ভালবাসা দেখান হয়। বিশ্বের বেশীর ভাগ দেশেই সাধারনত জুন মাসের ৩য় রবিবার বাবা দিবস পালন করা হয়। কিন্তু থাইল্যান্ডে বাবা দিবস পালন করা হয় ডিসেম্বর মাসের পাঁচ তারিখে।এই দিনে থাইল্যান্ডের বর্তমান রাজা এইচ আর এইচ ভুমিবল আডুলইয়াডেজ এর জন্মদিন। থাইল্যান্ডের রাজা থাই জনগণের কাছে বাবা হিসাবে গণ্য। ১৯৮০ সাল থেকে এই দিনেই থাই জনগনেরা রাজার জন্মদিন এবং বাবা দিবস পালন করে আসছে। থাই জনগন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই দিন পালন করে কারন অভাবগ্রস্ত এবং গরীব জনগনের প্রতি রাজার দানশীলতা এবং ভালোবাসা ।রাজা তার কাজের এবং জনগনের কল্যাণের মাধ্যমে থাই জনগনের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।১৯৫০ সালে রাজা হবার পর থেকেই তিনি প্রতিবছর থাইল্যান্ড এর প্রতিটা প্রদেশ, শহর, গ্রাম পরিদর্শন করেন, সাধারন জনগনের সাথে কথা বলেন, তাদের সমস্যা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন, এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাৎক্ষনিক সমাধানের চেস্টা করতেন। থাই জনগনের কাছে উনি হচ্ছেন মাথার উপরের ছাদ ভূমির শক্তি। তিনি রাজা IX নামে পরিচিত।
থাইল্যান্ডের বর্তমান রাজা ভুমিবল ১৯২৭ সালের ৫ই ডিসেম্বর সোমবার আমেরিকার ক্যামব্রিজ এর মাঊন্ট উবারন হাসপাতালে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন বাবা মায়ের সবচেয়ে ছোট সন্তান।
তিনি যখন জন্মগ্রহন করেন তখন তাঁর বাবা যুবব্রাজ মাহিদল হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করছিলেন। ১৯২৮ সালে হার্ভার্ড থেকে পড়ালেখা শেষ করে সপরিবারে থাইল্যান্ড এ চলে আসেন। কিন্তু ১৯৩৩ সালে রাজা ভুমিবলের মা সাঙ্গোয়ান পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে চলে যায়। এবং ওখানেই উনার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। সুইজারল্যান্ডে হাই স্কুল ডিপ্লোমা শেষ করার পর উনি ১৯৪৫ সালে বিজ্ঞান বিষয়ে Lausanne ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন।২য় বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হবার পর সপরিবারে আবার থাইল্যান্ডে চলে আসেন।
রাজা ভূমিবলের বড় ভাই আনান্দা মাহিদল ১৯৩৫ সালে থাইল্যান্ড এর রাজা হন। কিন্তু ১৯৪৬ সালে ৯ ই জুন বেড রুমে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনান্দের ডেডববি পাওয়া যায় । এই সময় সবাই প্রস্তাব করে ভূমিবলকে রাজা বানানোর জন্য, কিন্তু ঊনার মা বলেন ওর এখন ও পড়ালেখা শেষ হয় নি, আগে পড়ালেখা শেষ করুক। ১৯৪৬ সালে রাজা ভূমিবল আবার সুইজারল্যান্ডে ফিরে যান এবং আইন এবং রাস্ট্র বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে থাকেন। সুইজারল্যান্ডে পড়াকালীন তিনি মাঝে মাঝে প্যারিসে বেড়াতে যেতেন। ওখানেই পরিচয় হয় ফ্রান্সের থাই এম্বাসাডরের মেয়ে রাজয়াওংসি সিরিকিত কিটিইয়াকারার সাথে। ১৯৫০ সালের ২৮ এ এপ্রিলে উনারা দুজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।বিবাহের মাত্র এক সপ্তাহ পর ১৯৫০ সালের ৫ই মে তিনি থাইল্যান্ডের রাজা হিসাবে শপথ নেন।
রাজার জন্মদিনের কিছু সপ্তাহ আগে থেকেই জন্মদিন পালনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। এই দিন থাইল্যান্ডে সরকারী ছুটির দিন। এই অনুষ্ঠানের জন্য জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সমস্ত দালান, অফিস, স্কুল, বাড়ী, হোটেল, শপিং মল রাজার প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়। এইভাবেই থাই জনগন রাজার প্রতি তাদের আনুগত্ত এবং সম্মান প্রদর্শন করে।
তাই জনগন এই দিনে হলুদ রঙ এর জামা পড়ে রাজা্র প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। কারন সোমবারের রঙ হচ্ছে হলুদ, আর এই সোমবারেই রাজা জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাই সবাই হলুদ রঙ এর জামা পড়ে রাজার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে।
রাজধানী ব্যাংককে, রাচাদামান্যেন এভিনিউ, সানাম্লুয়াং, গ্র্যান্ড প্যালাস এর চারপাশে ঝলমলে লাইট দিয়ে সাজানো হয় এবং আতশবাজি প্রদর্শন করা হয়।এই দিনে খুব সকালে সরকারী কর্মচারী, রয়্যাল আর্মি, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক সবাই হাই কলক টাওয়ার এ সমবেত হয়। তারপর সবাই মিলে লাইন ধরে গ্র্যান্ড প্যালাস এর দিকে হাঁটতে থাকে। গ্র্যান্ড প্যালাসে যাওয়ার পথে মিউজিক ব্যান্ডগুলো রাজা রানীকে নিয়ে জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করে। গ্র্যান্ড প্যালাস এ পৌঁছানোর পর রাজার প্রতিনিধির কাছে ফুল দেয়, এই সময় যে গান বাজানো হয় সেটা হল “ফাদার অফ কিংডম”। রাজা ও রানীর প্রশংসা করে এই গান গাওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে ব্যাংকক এর সানাম লুয়াং এ অনেক বড় কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। গায়ক গায়কীরা রাজার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে একটা করে গান গায়। বেশীর ভাগ গান রাজার নিজের লেখা। । এই ভাবে থাই জনগন রাজার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং দীর্ঘ জীবন কামনা করে।
থাই জনগন এই দিনে শুধু রাজার জন্মদিনই পালন করেনা, তারা এই দিনে তাদের বাবা দাদা, এবং নানাদেরকে ও সম্মান জানায় তাদের শর্তহীন ভালবাসার জন্য। এটা শুরু হয় সকালে মঙ্কদের খাবার প্রদানের মাধ্যমে। এই দিন থাই ঐতিহ্য অনুসারে ছেলেমেয়েরা হাঁটু ভেঙে বাবাদের সামনে বসে তাদের ভালবাসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তারা বাবাকে এইসময় হলুদ রঙ এর ক্যানা ফুল উপহার দেয়।পক্ষান্তরে প্রতেক বাবা তাদের সন্তানদের জন্য দোআ করে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এই দিনে ক্যানা ফুল থাইল্যান্ডের সর্বত্র পাওয়া যায় এবং এই ফুলকে বাবার ভালবাসার প্রতীক হিসাবে দেখা হয়। দিনটি সরকারী ছুটির দিন।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দাদা মুহাইমিন চৌধূরী ০৪/০১/২০১৪নতুন কিছু জানলাম ধন্যবাদ
-
সায়েম খান ০৭/১২/২০১৩আমাদের দেশের কোন মহান ব্যক্তিকে নিয়ে লিখলে আরো ভাল হতো। আমার ব্লগে বেড়াতে আসবেন।
-
אולי כולנו טועים ০৬/১২/২০১৩valo laglo.
-
সুলতান মাহমুদ ০৬/১২/২০১৩তথ্য সমৃদ্ধ লেখা