বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রঊফঃ
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রঊফঃ
মুন্সী আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের ১ লা মে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার ( এখন মধুখালী) ছালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উনার বাবা মুন্সী মেহেদী হোসেন ছিলেন স্তানীয় মসজিদের ইমাম। ১৯৫৫ সালে আব্দুর রউফ এর বাবা মারা যান। ফলে অষ্টম শ্রেনীতে পড়াকালীন তাঁর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬৩ সালের ৮ ই মে তিনি ইস্ট পাকিস্তান রিফ্লেস এ যোগদান করেন।প্রথমে তিনি চুয়াডাঙ্গায় ই পি আর ক্যাম্পে প্রাইমারি ট্রেনিং নেন, তারপর উচ্চতর ট্রেনিং এর জন্য পাকিস্তানে যান। ছয় মাস পরে তিনি কুমিল্লায় যোগদান করেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রতিরোধযুদ্ধকালে মুন্সী আব্দুর রউফসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরক্ষা অবস্থান নিয়েছিলেন বুড়িঘাটে। রাঙামাটি জেলার নান্নেরচরের অন্তর্গত বুড়িঘাট। রাঙামাটি- খাগড়াছড়ি সড়ক বুড়িঘাট হয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত। কালুরঘাট থেকে রামগড়ে যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল বুড়িঘাট দিয়ে। এ ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ তখন ছিল না। কালুরঘাটের পতন হলে পাকিস্তানীরা বুড়িঘাট ও রামগড় দখলের জন্য তৎপর হয়ে ওঠে।
১৮ ই এপ্রিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর শক্তিশালী কমান্ডো ব্যাটালিয়ানের একটি দল বুড়িঘাটে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে আক্রমণ করে। সাতটি স্পিডবোট ও দুটি লঞ্চযোগে তারা সেখানে আসে। সংখ্যায় ছিল দুই কোম্পানীর মত। ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। ভারী অস্ত্রের মধ্যে ছিল ছয়টি তিন ইঞ্চি মর্টার ও অসংখ্য মেশিনগান।
পাকিস্তানীদের তুলনায় মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় কম ছিলেন। তার পর ও তাঁরা অসীম মনোবল ও দৃপ্ত প্রতয় নিয়ে যুদ্ধ করেন। কিন্তু পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর শত শত তিন ইঞ্চি মর্টারের গোলা আর মেশিনগানের হাজার হাজার গুলিতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়।
এই পরিস্থিতির সুযগে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল তীরে নেমে মুক্তিযোদ্ধাদের তিন দিক থেকে ঘেরাও করে ফেলে। পাকিস্তানীদের অব্যাহত গোলাগুলির মুখে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে সেখানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা সবাই জীবন- মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়েন। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাদপসারন করা ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিল না। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন কাভারিং ফায়ার।অসীম সাহসী মুন্সী আব্দুর রউফ স্বেচ্ছায় এ দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। দলনেতা খালেকুজ্জামান কে তিনি বলেন, “স্যার আপনি সবাইকে নিয়ে পশ্চাদপসরণ করুন। আমি পাকিস্তানীদের মোকাবেলা করছি।
এরপর মুন্সী আব্দুর রউফ একাই পাকিস্তানীদের মোকাবিলা করতে থাকেন। এই সুযোগে তাঁর সহযোদ্ধারা নিরাপদে পশ্চাদপসরণ করেন। রউফের অস্ত্রের নিখুঁত গুলিবর্ষণে পাকিস্তানীদের কয়েকটি স্পিডবোট ডুবে যায়। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়।
আকস্মিক ক্ষতিতে পাকিস্তানীদের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়ে। তারা নিরাপদ দুরত্তে পিছু হটে যায়। পেছনে পাকিস্তানী বাহিনী পুনর্গঠিত হয়ে মুন্সী আব্দুর রউফের অবস্থান লক্ষ্য করে আবার ও মর্টারের গুলা বর্ষণ করতে থাকে। একটা গোলা সরাসরি রউফের দেহে আঘাত করে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাঁর দেহ। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে মাংসপিণ্ড। পরে সহযোদ্ধারা রউফের দেহের খণ্ডিত অংশ সংগ্রহ ও একত্র করেন। সেখানে একটি টিলার উপর তাঁকে সমাহিত করা হয়।
“ মা গো ভাবনা কেন
আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে
তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।
আমরা হারব না হারব না
তোমার মাটির একটি কনা ও ছাড়ব না
আমরা শত্রু এলে হাসিমুখে মরতে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি”
তাই তো বাংলার বীর দামাল ছেলেরা প্রতিবাদ করেছিল, হাসিমুখে মৃত্যুকে বরন করে নিয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি। তোমাদের এ ঋণ কোনদিন শোধ হবেনা।
সুত্রঃ “একাত্তরের বীরযোদ্ধা”
খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্তগাথা
প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত।
মুন্সী আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের ১ লা মে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার ( এখন মধুখালী) ছালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উনার বাবা মুন্সী মেহেদী হোসেন ছিলেন স্তানীয় মসজিদের ইমাম। ১৯৫৫ সালে আব্দুর রউফ এর বাবা মারা যান। ফলে অষ্টম শ্রেনীতে পড়াকালীন তাঁর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬৩ সালের ৮ ই মে তিনি ইস্ট পাকিস্তান রিফ্লেস এ যোগদান করেন।প্রথমে তিনি চুয়াডাঙ্গায় ই পি আর ক্যাম্পে প্রাইমারি ট্রেনিং নেন, তারপর উচ্চতর ট্রেনিং এর জন্য পাকিস্তানে যান। ছয় মাস পরে তিনি কুমিল্লায় যোগদান করেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রতিরোধযুদ্ধকালে মুন্সী আব্দুর রউফসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরক্ষা অবস্থান নিয়েছিলেন বুড়িঘাটে। রাঙামাটি জেলার নান্নেরচরের অন্তর্গত বুড়িঘাট। রাঙামাটি- খাগড়াছড়ি সড়ক বুড়িঘাট হয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত। কালুরঘাট থেকে রামগড়ে যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল বুড়িঘাট দিয়ে। এ ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ তখন ছিল না। কালুরঘাটের পতন হলে পাকিস্তানীরা বুড়িঘাট ও রামগড় দখলের জন্য তৎপর হয়ে ওঠে।
১৮ ই এপ্রিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর শক্তিশালী কমান্ডো ব্যাটালিয়ানের একটি দল বুড়িঘাটে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে আক্রমণ করে। সাতটি স্পিডবোট ও দুটি লঞ্চযোগে তারা সেখানে আসে। সংখ্যায় ছিল দুই কোম্পানীর মত। ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। ভারী অস্ত্রের মধ্যে ছিল ছয়টি তিন ইঞ্চি মর্টার ও অসংখ্য মেশিনগান।
পাকিস্তানীদের তুলনায় মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় কম ছিলেন। তার পর ও তাঁরা অসীম মনোবল ও দৃপ্ত প্রতয় নিয়ে যুদ্ধ করেন। কিন্তু পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর শত শত তিন ইঞ্চি মর্টারের গোলা আর মেশিনগানের হাজার হাজার গুলিতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়।
এই পরিস্থিতির সুযগে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল তীরে নেমে মুক্তিযোদ্ধাদের তিন দিক থেকে ঘেরাও করে ফেলে। পাকিস্তানীদের অব্যাহত গোলাগুলির মুখে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে সেখানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা সবাই জীবন- মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়েন। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাদপসারন করা ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিল না। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন কাভারিং ফায়ার।অসীম সাহসী মুন্সী আব্দুর রউফ স্বেচ্ছায় এ দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। দলনেতা খালেকুজ্জামান কে তিনি বলেন, “স্যার আপনি সবাইকে নিয়ে পশ্চাদপসরণ করুন। আমি পাকিস্তানীদের মোকাবেলা করছি।
এরপর মুন্সী আব্দুর রউফ একাই পাকিস্তানীদের মোকাবিলা করতে থাকেন। এই সুযোগে তাঁর সহযোদ্ধারা নিরাপদে পশ্চাদপসরণ করেন। রউফের অস্ত্রের নিখুঁত গুলিবর্ষণে পাকিস্তানীদের কয়েকটি স্পিডবোট ডুবে যায়। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়।
আকস্মিক ক্ষতিতে পাকিস্তানীদের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়ে। তারা নিরাপদ দুরত্তে পিছু হটে যায়। পেছনে পাকিস্তানী বাহিনী পুনর্গঠিত হয়ে মুন্সী আব্দুর রউফের অবস্থান লক্ষ্য করে আবার ও মর্টারের গুলা বর্ষণ করতে থাকে। একটা গোলা সরাসরি রউফের দেহে আঘাত করে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাঁর দেহ। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে মাংসপিণ্ড। পরে সহযোদ্ধারা রউফের দেহের খণ্ডিত অংশ সংগ্রহ ও একত্র করেন। সেখানে একটি টিলার উপর তাঁকে সমাহিত করা হয়।
“ মা গো ভাবনা কেন
আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে
তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।
আমরা হারব না হারব না
তোমার মাটির একটি কনা ও ছাড়ব না
আমরা শত্রু এলে হাসিমুখে মরতে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি”
তাই তো বাংলার বীর দামাল ছেলেরা প্রতিবাদ করেছিল, হাসিমুখে মৃত্যুকে বরন করে নিয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি। তোমাদের এ ঋণ কোনদিন শোধ হবেনা।
সুত্রঃ “একাত্তরের বীরযোদ্ধা”
খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্তগাথা
প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
প্রবাসী পাঠক ০৩/১২/২০১৩
আমি গাইব গাইব বিজয়েরই গান
ওরা আসবে চুপি চুপি…
যারা এই দেশ টাকে ভালবেসে
দিয়ে গেছে প্রাণ ||