২৫ শে মার্চের কালো রাত এবং তারপর
কিরে তুই এখন ও হলে রয়েছিস? জানিস না শহরের অবস্থা ভয়ানক খারাপ।
আর্মি আসছে ক্যাম্পাস আক্রমণ করতে।
আমি বাড়ি চললাম তুই ও বেরিয়ে যা, লতিফ শাহাদত কে কথাগুলো বলতে বলতেই ওরা গুলির আওয়াজ পেল বাইরে।
আকাশে বাতাসে শুধু গুলির শব্দ, আলোর ঝলকানি।ওরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলের পাঁচ তলায় ছিল।
চল চল তাড়াতাড়ি নীচে চল, এখানে থাকা নিরাপদ না। তাড়াতাড়ি করে সবাই নীচে নেমে আসল। উদ্দেশ্য ছিল হল থেকে বেরিয়ে যাবে, কিন্তু কেউ আর বেরোতে পারেনি।
বাইরে ভয়ানক গোলাগুলির শব্দ। লতিফরা কয়েকজন মিলে পড়ি মরি করে হলের পিছনের দিকে একটা বাথরুমে প্রবেশ করল । গাদাগাদি করে ১০/১২ জন দাঁড়িয়ে।লতিফ দেখল শাহাদত নেই, কোথায় ছিটকে পড়েছে কে জানে।
একটু পরেই আকাশ আলো হয়ে উঠতে লাগল। একবার করে আলো জ্বলে আর গুলিগোলা ছোটে। আকাশে ট্রেজার উড়ছে।
মনে হচ্ছে মিলিটারিগুলো বোমার আগুনে হলগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে।মহসীন হলের দক্ষিণে ইকবাল হল, তার ও পাশে এস এম হল। মনে হচ্ছে ভারী কামানের গোলা দিয়ে মিলিটারিরা ইকবাল হল উড়িয়ে দিচ্ছে।
অনেক গুলি মহসীন হলের দিকে ছুটে আসছিল। দেখতে তারাবাতির মত । আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছে মেশিন গানের মুখ থেকে। বাজির শব্দের গুলি। হত্যা আর ধ্বংসের উৎসব। ঢাকার ঘুমন্ত মানুষ ভয়াবহ আতঙ্ক নিয়ে জেগে উঠল।
সবাই মিলে শুধু দোয়া পড়ছে, আর আল্লাহর কাছে মোনাজাত করছে আল্লাহ মিলিটারিরা আমাদের হলে যেন না আসে।
সারারাত কেউ বেরোবার সাহস পায়নি। একটু আগেই ভোর হয়েছে। ভয়ঙ্কর রাতের পরের যে ভোর , সেখানে কিছু আশা থাকে, কিছু আনন্দ ও থাকে। দিনের আলো মানুষকে আর কিছু না দিক ভরসা দেয়। ভোরের আলো ফোঁটার সাথে সাথে পাখি ডাকতে শুরু করে, এমনকি ভোরবেলার কাকের কা কা ধ্বনিকে ও শুভ মনে হয়।
২৫ শে মার্চের ভয়ঙ্কর রাত কেটে গেছে, ভোর হয়েছে,পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। অথচ কোনরকম ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে রাতের পর আবার রাত এসেছে। রাতের পর দিন আসেনি।
লতিফদের ভয় কাটেনি, কেউ বের ও হচ্ছেনা। কি করবে বুঝতে পারছে না। গোলাগুলি থেমে গেছে। যা মারার তা তো মেরে ফেলেছে ওরা, আর কেন গুলি করবে।
একটু বেলা হবার সাথে সাথে লতিফ বাথরুম থেকে বেরিয়ে মাঠ, খানা, খোন্দল, রেল লাইন পুরো এলাকাটা হামাগুড়ি দিয়ে পাশেই এলিফ্যান্ট রোডে পালিয়ে আসে। ওখানে দুইরাত দুই দিন এক বাসায় থাকার পর আস্তে আস্তে ওর বাড়ি মাগুরার উদ্দেশে রওনা হয়। চারদিকে শুধু মানুষের ছোটাছুটি, আতঙ্ক সবার মুখে মুখে, যে যেদিকে পারে ছুটছে প্রান টা হাতে নিয়ে।
সায়েন্স ল্যাবরেটরির কাছে আসতেই লতিফ দেখে দূরে চায়ের দোকানে ৪/৫ জন মিলিটারী চা খাচ্ছে, ওকে দেখেই দুজন মিলিটারি বন্দুক উঁচিয়ে ধরল তার দিকে। ও বুঝতে পারছে না ও কি করেছে? তাকে ডাকছেই বা কেন? ।
লতিফ বুঝতে পারছে না ও কি করবে, উল্টো দৌড় দেবে কিনা তাও বুঝতে পারছে না। কারণ সবার মনে তখন মিলিটারি আতঙ্ক।
দু এক মিনিট চিন্তা করে ও মিলিটারিদের দিকে আগাতে লাগল। কাছে যেতে না যেতেই এক মিলিটারি বলে উঠল নাম কেয়া? তোর নাম কেয়া?
“কান পাকড়াও”।
এর মানে কি ? মিলিটারীরা তাকে কান ধরতে বলছে। অপরাধটা কি?
লতিফ কান ধরল।
এইবার আর এক মিলিটারি ইশারায় দেখালো কান ধরে উঠ বস করতে।
লতিফ তাই করতে লাগল। কি সুন্দর মানুষ গুলো খুব মজা পাচ্ছে।সবার মুখ হাসি হাসি।
এক্ সময় বলে যা ভাগ ইয়াছে”।
লতিফ যেন প্রান টা হাতে ফিরে পেল। যেতে যেতে মিলিটারিদেরকে গালি দিতে লাগল মনে মনে শালা কুত্তার বাচ্চা পাকিস্তানী।
লতিফ বুঝতে পারছিল না যে কি ভাবে বাড়ী যাবে। কিছুটা পথ রিকশায় গিয়ে আবার হাঁটা শুরু করল। কিছু কিছু বাস ঢাকা থেকে যাচ্ছিল। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া বাসগুলিতে মিলিটারিরা ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছিল। মিলিটারি তল্লাশি মানে কয়েকজনের মৃত্যু।
বাসে যাওয়া নিরাপদ না ভেবে একটা মহিষের গাড়িতে উঠল। কিছুদুর গিয়ে নেমে গেল। তারপর নৌকা । বালিটানা নৌকা। তিন দিন পর আধ মরা অবস্থায় লতিফ দৌলতদিয়া ঘাটে নামল। ক্ষুধায় আর পা চলছে না।
দেখল একটা বাস ফরিদপুরের দিকে যাচ্ছে। হাঁটার আর শক্তি নেই, তাই ও বাসে উঠে পড়ল।ভাবল এদিকে মনে হয় এখন আর্মি এসে পারেনি। ফরিদপুর শহরে এসে পৌছাতেই দেখল সব মানুষ ছুটাছুটি করছে। ওদের বাস থেমে গেল। সবাই বলছে আর্মিরা পুরো শহরটাকে ঘিরে ফেলেছে।
তাড়াতাড়ি বাস থামিয়ে ওরা পাশেই একটা স্কুল ঘরে আশ্রয় নিল। ক্লাস রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল। সবাই দোয়া ইউনুস পড়ছে, কারন আর্মিরা গুলি করতে করতে স্কুলের দিকে আসছিল।
ইতিমধ্যেই মিলিটারি ফায়ার করতে করতে স্কুলের পিছন দিক দিয়ে বারাদায় উঠে দরজায় লাথি মারতে শুরু করল। সেই সাথে গালি।“কাহা হ্যায়? তোম লোক বাহার আ যাও।
লতিফ তখন দুই আলমারির চিপার মধ্যে বসে আছে, যদি ও সবাই কতকগুলি বেঞ্চ আর চেয়ার দিয়ে ভেতর থেকে দরজায় চেপে ধরে রাখার চেস্টা করেছিল, যাতে মিলিটারি দরজা ভেঙ্গে ঢুকতে না পারে। বাঁচার জন্য মানুষের কি হাস্যকর প্রচেস্টা। কিন্তু ওরা দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। আমাদের সাথে ছোট ছোট তিনটা বাচ্চাও ছিল।ওরা কাউকে লাথি মেরে, কাউকে চুলের মুঠি ধরে টেনে স্কুল এর বারান্দায় দাঁড় করাতে লাগল।
এদের মধ্যে একজন মুরব্বী ছিলেন, উনি বললেন ‘ইয়ে মেরি বাল বাচ্চা, ইসকো লেকার ভাগ যা রাহি হ্যায়।ম্যায় জামাতী ইসলাম করতা,পাকিস্তান জিন্দাবাদ। আল্লাহ আকবর।
লতিফের পাছায় প্রচণ্ড এক লাথি কেউ দিল, “শালে লোগ তু জয়বাংলা করতা, স্টুডেন্ট হ্যাঁয়।
“নেহি নেহি হামকো মালুম নেহি, স্টুডেন্ট নেহি হ্যায় । ম্যায় মোটর ওয়ারকশপ মে নোকরি করতা”।
এতকিছুর ভেতরে আমি টের পাইনি যে একটা বাচ্চা আমার গেঞ্জির ভেতর মাথা ঢুকিয়ে আত্মরক্ষার চেস্টা করছে মুখ ঢুকিয়ে। আব্বা মা সবার কথা মনে পড়ল, আর হয়ত কোনদিন কারো সাথে দেখা হবেনা।নীলুর চেহারাটা ভেসে উঠল, নীলুকে কথা দিয়েছিলাম পরিক্ষা শেষ করে ওকে আমার বউ করে ঘরে নিয়ে আসব।
মুরব্বি চাচা বারবার বলতে লাগলেন হাম লোকো ছোড় দো, বাচা দিজিয়ে।।‘
আমাদের গুলি করার জন্য মিলিটারিরা রেডি, আমাদের গুলি করার আগ মুহূর্তে আল্লাহর অসীম রহমত তার নির্দেশেই “খামোশ” বলেই এক ইয়ং আর্মি অফিসার দৌড়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এল এবং গুলি না করার নির্দেশ দিল।
কয়েকবার আমাদের দিকে কর্কশ ও কঠোর চোখে তাকিয়ে জেরা করতে শুরু করল, আমরা কে? এখানে জয়বাংলার লোক আছে কি না? স্টুডেন্ট আছে কিনা? আমরা কোথায় যাচ্ছিলাম? বিভিন্ন প্রস্ন জিজ্ঞাসা করার পর কেন জানি অফিসারটির মনে দয়া হল,
“ইন লোককো ছোর দো, যানে দো, ইয়ে সাচ্চা পাকিস্তানি আদমি হ্যায়। কর্কশ ভাষায় কমান্ড করল “সামাল রাখকে সব্ লোক ভাগ যাও হিয়াসে।
অফিসারের কথা শুনার পর এক পা দুই পা করে এগুতে লাগলাম , না ওরা আমাদের গুলি করল না। আল্লাহ পাক এ যাত্রায় আমাদের বাচিয়ে দিলেন। কোনমতে পা এগিয়ে বড় রাস্তায় উঠি দেখি দুটো রক্ত ভেজা লাশ পড়ে আছে।
চৈত্র মাস, মাটি শক্ত,বড় রাস্তা থেকে নেমেই পাশেই ক্ষেতে নেমে পড়লাম, শক্ত মাটি ভেঙ্গে হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে আধা মেইল যাবার পর এক কৃষকের বাড়ির পুকুর পাড়ে এসে বসলাম । পিছনে তাকিয়ে দেখি তখন স্কুল ঘর সহ বাজারের আশে পাশের সকল বাড়িঘর দাউ দাউ করে আগুনে জলছে। ক্ষুধা, পিপাসারত সবাই, কোন টিউব ওয়েল দেখতে পেলাম না। আপাতত আজলা ভরে দুহাতে পুকুরের পানি খেয়েই নতুন করে জীবন ফিরে পাবার আনন্দ অনুভব করলাম। শুধু ভাবছিলাম যেভাবেই হোক মাগুরায় পৌঁছাতে হবে। তারপর হাটা ধরলাম রাতের অন্ধকারে হাটতে হাটতে মধুখালী এসে পোঁছালাম। তারপর কামার খালী হয়ে পারনান্দুয়ালী গ্রামে আমাদের বাড়িতে
পৌঁছালাম।
কদিনেই মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, রক্তাভ চোখ, উষ্কখুষ্ক চুল নিয়ে লতিফ বাড়ীতে ঢুকল।
মা, তোমরা কোথায়, মা। বাড়িতে ঢুকেই লতিফ মাকে ডাকতে লাগল।
২।
লতিফদের বাড়ি যশোর জেলার মাগুরা মহাকুমায় পারনান্দুয়ালী গ্রামে। এই গ্রামে ওই প্রথম ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। ওর বাবা স্থানীয় পোষ্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার। এই বছরই ওর মাস্টারস ফাইনাল পরীক্ষা দেবার কথা ছিল।
সন্ধ্যার সময় লতিফদের বারাদায় লতিফ, লতিফের মা, বাবা, চাচাতো বোন শীলা (কলেজে পড়ে ), পাশের বাড়ীর রবিউল,(মাগুরার কলেজে বি এস সি পরে।)তাজরুল ( একটা মুদিখানার দোকান চালায়) ওরা ও এসেছে ওর মুখ থেকে সব শুনবার জন্য।
রবিউল বলল ভাইজান আমরা গ্রামে বসে একটু একটু শুনছি, যশোরে ও কারফিউ দিয়েছিল, মিলিটারিরা অনেক মানুষ মেরে ফেলেছে, যশোর এখন ফাকা, সব মানুষ গ্রামের দিকে চলে গেছে। তুমি তো ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ছিলে তুমি তো সচক্ষে সব দেখেছ, আমাদেরকে সব বল।
লতিফ বলতে লাগল, সাধারন নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতিয় পরিষদে আওয়ামী লীগ একক সঙ্খাগরিশটতা পাওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করে। “১লা মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেলা একটার সময় রেডিওতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে। সঙ্গে সঙ্গে সব জায়গায় হৈ চৈ পড়ে যায়। লোকেরা দলে দলে অফিস আদালত ছেড়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পরে, ছেলেরা সবাই দলে দলে ক্লাস থেকে ,হল থেকে বেরিয়ে বটতলায় জড়ো হয়। শেখ মুজিব ২ রা মার্চ ঢাকা শহরে , আর ৩ রা মার্চ সারা দেশে হরতালের ডাক দেয়। আর ৭ ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে মিটিং এর ঘোষণা করে। আমরা তখনই বুঝতে পারছিলাম, গোলমাল হবে এবং তা বড় আকারে।
তোরা কি জানিস সাধীন দেশের পতাকা ও উত্তোলন করা হয়েছে, সবুজের মাঝে লাল বৃত্ত তার ভেতরে হলুদ রঙ এর বাংলাদেশ এর ম্যাপ। পল্টনের জনসভায় শেখ মুজিবের উপস্থিতিতে “ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি এই গানটা ও গেয়েছে।
ইয়াহিয়া খানের সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠক ব্যর্থ হয় ঢাকায়। ভুট্টোর প্ররোচনায় বাঙ্গালী জাতিকে চিরদিনের মত ধ্বংস করে দেবার বিশাল এক ষড়যন্ত্র শুরু হয় গোপনে। বঙ্গবন্ধু বুঝে গেলেন ওরা কখনই ক্ষমতা হুস্তান্তর করবে না।
সাথে সাথে শীলা বলল, হা সেই জন্যই তো শেখ মুজিব ৭ই মার্চ ভাষণে সবাধীনতার ডাক দিয়েছেন “ তোমাদের কাছে যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আর দেব, তবু এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম সাধীনতার সংগ্রাম”।
হ্যাঁ শেখের এই ভাষণের পরেই তো প্রতিদিন প্লেনে করে সাদা পোশাকে প্রচুর মিলিটারি এসে নেমেছে বিমানবন্দরে। চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র বোঝা জাহায এসে ভিড়েছে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে, সে অস্ত্র চট্রগ্রামের বীর বাঙ্গালীরা খালাস করতে দেবেনা বলে মরনপন করে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছে। ওদের কে ছত্র ভঙ্গ করার জন্য মিলিটারি ওদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে।
২৩ শে মার্চ ছিল প্রতিরোধ দিবস, সেই দিন সব অফিস আদালতে ঢাকার অনেক বাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশ এর পতাকা উড়িয়েছে। আর ২৫ শে মার্চ রাতেই ওরা নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। কত মানুষকে যে মেরে ফেলেছে তার কোন হিসাব নেই।
জানিস ২৭ ২৮ শে মার্চ মেজর জিয়া চত্রগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।আমার মনে হ্য় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। বহু জায়গায় বাঙ্গালী আর্মি অফিসাররা রিভোলড করছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ই পি আর, ই বি আর পুলিশ আন্ সারের লোকজন।
এতক্ষণে ওর বাবা বললেন বাবা সবখানে তো শুধু জল্লাদের নৃশংস হত্যার উল্লাস হাতবাধা চোখবাধা অসহায় নিরীহ জনগনের উপর হায়েনাদের ঝাপিয়ে পড়ার নিষ্ঠুর মত্ততা। আর যুদ্ধ শুরু হলে ও পাকিস্তানী মিলিটারিরা তাদের আধুনিকতম মারনাস্ত্র দিয়ে বিদ্রোহী বাঙ্গালীদের গুড়িয়ে মাটিতে পিষিয়ে ফেলবে।
জানিনা বাবা কি হবে তবে যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে।এভাবে আর কতদিন আমরা নির্যাতিত হব।
৩
নীলু আর লতিফ পাশাপাশি বসে আছে।
নীলু লতিফের ভালবাসার মানুষ। লতিফের মায়ের ও খুব পছন্দ। ইচ্ছা ছিল ছেলে এম এ পাশ করে আসলেই বিয়ে দিয়ে বউ ঘরে নিয়ে আসবেন।
দুজনেই চিন্তিত। দেশের অবস্থা ভাল না।
চারদিকে মানুষের ছোটাছুটি। মানুষ প্রানের ভয়ে এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রামে ছুটে বেড়াচ্ছে।
নীলু আমি যুদ্ধে যাব।
কিন্তু কোথায় যাবে, কোথায় যুদ্দ হচ্ছে। তোমাদের তো কোন অস্ত্র নেই, এভাবে যুদ্ধ করলে তো তোমরা সবাই মারা যাবে।
জানিনা তবে শুনেছি সবাই সিমান্তের ওপারে গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, অনেকেই গিয়েছে, আমি ও যাব। ও পাড়ার তাজরুল, শরিফুল এক সপ্তাহ হল সীমান্তের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
খুব শীগ্রই ৩/৪ জনের একটা দল আবার রওনা হবে,ওদের সাথে আমি ও যাব।
পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হলে এদেশে একদিন সাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়বে।আমরা স্বাধীন দেশে বাস করব। আমাদের আর কোন কস্ট থাকবে না।
নীলু আমি যদি কোনদিন ফিরে না আসি, আমাকে ক্ষমা করে দিও।
তোমাদের সাথে যেতে পারলে আমার ও ভাল লাগত, কিন্তু তা তো সম্ভব নয়।
দেশের জন্য কিছু করতে আমার ও যে মন চায়।
৪
এপ্রিল মাসের শেষ দিক।
লতিফ, ওর ছোট চাচার ছেলে রবিঊল, আর ওদের গ্রামের ছেলে হেমায়েত এই তিনজন পায়ে হেঁটে অজানা ভারতের পথে ট্রেনিং নেবার উদ্দেশে বের হল ।
সাথে ১৪০ টাকা পাকিস্তানী মুদ্রা, আর এক সাইড ব্যাগে একটা জামা, প্যান্ট, কিছু চিড়া,পাটালি, আর একটা কাসার থালা।কাসার থালা টা মা জোর করে দিয়ে দিয়েছেন। এতে খাওয়া বাসনের কাজ ও সেই সাথে বিপদে পড়লে বিক্রয় করে কিছু পয়সা পাব, বিপদের সময় কাজে লাগবে এই আশায়।
গ্রামের বাড়িতে আস্রয় নিয়ে তিন দিন তিন রাত পর কালিগঞ্জ, ঝিনাইদাহ, কুস্টিয়ার রাস্তা ক্রস করে চারদিনের দিন দুপুরের পর চৌগাছা বর্ডারের কাছে সীমান্তে থামলাম । সন্ধ্যার মধ্যে ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে বনগাঁ পৌঁছে একটা আশ্রয় খুজছিলাম। চারদিকে রিফিউজে ভর্তি। বৃষ্টি হয়েছে, কাঁদা পানি স্যাঁতস্যাঁতে। রাস্তার পাশে ডোবার উপরে “অন্নপূর্ণা মা দুর্গা হোটেল রেস্তোরা” সাইনবোর্ড দেখে ঢুকে পড়লাম।
তিনদিন পর লুচি আর লাবড়া পেয়ে গোগ্রাসে গিলে ফেললাম।
দাম দেবার সময় বললাম ভারতীয় টাকা নেই।
দোকানী বললেন তাতে কি আপনারা জয়বাংলা থেকে এসেছেন। এবেলা লাগবে না দাদা।
রাত্রে থাকতে চান, তিন জনের জায়গা হবে। দোকানের পিছনে ছোট দুই তিনটা রুম আছে। আর কয়েকজনের সাথে আপনারা ও থাকতে পারেন এ রাতটা। রাতে আর যাবেন কোথায়, এত কস্ট করে ৪ দিন পায়ে হেটে এখানে এসেছেন, রাতটা কস্ট করে থেকে না হয় সকালে রওনা দেবেন।
উনি আর বললেন , এখানে আওয়ামীলীগের কিছু নেতা আছেন যারা রিফিউজি ক্যাম্পের দায়িত্তে আছেন। ওখানে সকালে দেখা করতে পারেন।
আমরা সানন্দে রাজী হয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই রিফিউজি ক্যাম্পের দায়িত্তে থাকা এম পি সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলাম।
উনি বললেন আপাতত তোমরা এখানে বিশ্রাম নাও দুই দিন তারপর তোমাদের সময় সুযোগ মত ট্রেনিং এ পাঠাব।
এখানে থাকতেই আমাদের শপথ নিতে হল, ট্রেনিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। আমাদের কোথায় নেওয়া হবে তা জানানো হবে না।শুধু নির্দেশ অনুসরন করতে হবে। ত্যাগ স্বীকার করে শহীদ হবার মানসিকতা থাকতে হবে, বাবা, মা, ভাই, বোন, প্রেমিকা কারো জন্য বিন্দুমাত্র কোন ইমোশন থাকলে হবেনা। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার মানসিকতা থাকতে হবে।
আমাদেরকে শিলাগুরি ট্রেনিং ক্যাম্পে নেওয়া হল। প্রায় এক সপ্তাহ ফিজিক্যাল ট্রেনিং আর মেন্টাল ফিটনেস পর্ব শেষ করে মুল ট্রেনিং এর জন্য জল পাইগুড়ির বিমানবাহিনীর দফতর বাগডোরা থেকে সামরিক বিমানে করে দেরাদুনের টান্দুয়া গেরিলা ক্যান্টনমেন্ট এ নিয়ে যাওয়া হল। ।
প্রতিদিন সকালে ভোরবেলা বিউগল বাজার সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠেই প্রাতঃকাজ সেরেই ৬টায় প্যারেড গ্রাউন্ডে পিটি, সকাল আটটায় প্রাতঃভোজ পুরী চানা ডাল, ৯ টায় থিওরী ক্লাস, দুপুর দুইটায় রুটি আর লাবড়া দিয়ে দুপুরের খাবার। দুইটা থেকে ৫ টা পর্যন্ত প্রাক্টিকাল ক্লাস।ছোট ছোট গ্রুপ এ ভাগ হয়ে শুটিং প্রাকটিস, ,গ্রেনেড ছোড়া, খালি হাতে ধারালো বেয়নেট দিয়ে শত্রুকে ঘায়েল করা সব শিখতে লাগলাম।
৫
লতিফরা মাগুরায় ফিরে এসেছে আজ কয়েকদিন হল। অক্টোবার মাস। ওদের সবাই কে কিছু দায়িত্ত দিয়ে এখানে পাঠানো হয়েছে।
লতিফ আছে সজল মাস্টারের বাড়িতে, এখানেই ওদের প্লান হয় ওরা কি করবে, কি ভাবে পাকিস্তানী সেনাদের ঘায়েল করবে।
বাড়ি যেতে পারছে না কারন এর মাঝেই রশিদ রাজাকার কয়েকবার ওর বাবাকে ওর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছে, কোথায় থাকে, কি করছে, দেখি না কেন?
নভেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহ। চারদিকে কেমন একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। সকলেরই মনের অবস্থা খারাপ। দুঃখ, হতাশা, ভয়, ভীতি সব যেন মানুষকে পাগল বানিয়ে ছাড়ছে। তার উপর রয়েছে রাজাকারের ভয়, যে কোন সময় ধরা পড়ার ভয়।
ওদের গ্রুপ এর ওপর দায়িত্ত পড়ল মাগুরা টু মুহম্মদপুর থানার মাঝে বিনোদপুর লোহার ব্রিজ ঊড়িয়ে দেয়া এবং সেই সাথে মুহম্মদপুর থানা সদরে পাক বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমন করা।
কয়েকদিন আগে থেকেই ওরা সব তথ্য নিয়েছে, এ ব্যাপারে মাস্টার সাহেব ওদের সাহায্য করেছে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে। নির্দিষ্ট সময়ে ওরা প্রায় ৮/১০ জন ওখানে পৌঁছে দেখে দুজন রাজাকার পাহাড়া দিচ্ছে। খুব কৌশলে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের ঘায়েল করে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়।
আর এর মাঝেই অন্য ৬ জন করটেজ কেবল লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, সময় খুবই কম, কারন এই সময়ের মধ্যে মাগুরা শহর থেকে পাকিস্তানী বাহিনীর থানা ক্যাম্পের মিলিটারিরা পৌছাতে না পারে সেদিকে ও খেয়াল রাখতে হবে।
ওরা খুব তাড়াতাড়ি ব্রিজের চার পিলার এর শেষ প্রান্তে একটা ডেটোনেটর ঢুকিয়ে ডেটোনেটর টিকে নরম বা ইটের মত শক্ত জি ই স্লাব মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। খুব সাবধানে পরে শক্ত টেপ দিয়ে ব্রিজের চারটা পিলারের গায়ে শক্ত করে সেট করে । চার পিলারের জন্য কে জি স্লাব চারটি সারকিট এর আলাদা করটেক্স ক্যাবল এরপর ব্রিজ এর গোড়ায় দুই মাথায় নীচে মাটির মধ্যে দুইটা জি ই স্লাব সব মিলিয়ে মোট ছয়টা সারকিট ক্যাবল সেট করার পরে ছয়টা চার্জ পয়েন্ট এর মাথা একসাথে টেনে টেপ দিয়ে একত্রে একটি একটি করে টাইম ফিউজ এ ঢুকিয়ে ফায়ার দিতে হবে। এবং যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে। কারন পাঁচ মিনিটের টাইম ফিউজ ব্যবহার করে চার্জ অন করলে ঠিক পাচ মিনিট অদৃশ্য আগুন টাইম ফিউজ এর মধ্যে জ্বলতে জ্বলতে করটেক্স এর মাথায় লম্বা আঙ্গুলের মত সিলভার ডেটোনেটর নিজে বিস্ফোরন করে তৎক্ষণাৎ একই সাথে হাই এক্সপ্লোসিভ ডিনামাইটকে বিস্ফোরণ করতে সাহায্য করে।
ওরা মেশিন সেট করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। আর সাথে সাথে বিকট শব্দে ব্রিজটি ধ্বংস হয়ে গেল, এবং আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মিলে ওই সময়েই মুহম্মদপুর থানা আক্রমন করে পাকিস্তানীদের পরাজিত করে ক্যাম্প দখল করে নেয়।
৭।
নভেম্বার মাসের ৩য় সপ্তাহ। লতিফের গ্রুপ খবর পেল ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস স্টেশনের ডিজেল শেষ হয়ে গেছে। ভাটিয়াপারা গোপাল গঞ্জ জেলা সদর থেকে উত্তরে মধুমতী নদীর তীরে অবস্থিত। নদীর ওপাড়ে নড়াইল জেলা।মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী বাহিনি সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে। ঈদের দিন পাকিস্তানী সেনারা নড়াইল থেকে সেখানে ডিজেল নিয়ে যাবে। কারন ওই ওয়্যারলেসে বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল জেনারেটরের মাধ্যমে। জেনারেটর চালানোর জন্য প্রয়োজন হত ডিজেলের। পাকিস্তানিরা কিছুদিন পর পর ডিজেল আনত ফরিদপুর, গোপালগঞ বা নড়াইল থেকে।
লতিফরা সিধান্ত নিল, পাকিস্তানী সেনারা যখন ডিজেল নিয়ে যাবে, তখন আক্রমন করবে। নড়াইল থেকে তারা আসবে সড়কপথে। পথে ছোট নবগঙ্গা নদী পার হয়ে তারপর মধুমতী নদী। এই নদী পার হতে হবে গানবোটে।
লতিফ তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঈদের আগের রাতে অবস্থান নিল নবগঙ্গা নদীর পারে।
ভোর হয় হয়, এ সময় ওরা দেখতে পেল, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ছয়টি জিপ আসছে। কাছে আসতে আসতেই ওরা পাকিস্তানীদের উপর গুলি করা শুরু করে।
পাকিস্তানী সেনারা ও দ্রুত জিপ থামিয়ে আড়ালে পজিশন নিয়ে আক্রমন শুরু করে। নিমেষে শান্ত এলাকা পরিণত হল রণক্ষেত্রে।
যেহেতু পাকিস্তানীরা অবস্থান নিয়েছে জিপের আড়ালে , মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমনে তাদের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। তাই মুক্তি সেনারা মাথা দেখে গুলি করতে লাগে। এই কৌশলে বেশ কাজ হল। তাদের হাতে একের পর এক পাকিস্তানী সেনা নিহত আর আহত হতে থাকে।আর যা বাকী ছিল তারা পালিয়ে যায়।
এই দুটো ঘটনার পর পাকিস্তানী মিলিটারীরা মরিয়া হয়ে উঠল মুক্তিবাহিনীর খোঁজে।
লতিফ আর তার সহযোদ্ধারা জায়গা পরিবর্তন করল। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে কোন এক রাত। লতিফ নিলুদের বাড়িতে ছিল। রাতের অন্ধকারে হঠাত দরজায় লাথির শব্দ। পালাবার কোন পথ নেই। মিলিটারিরা প্রথমে ওদের বাড়ি যায় ওখানে না পেয়ে নীলুদের বাড়িতে আসে। রশিদ রাজাকার পথ চিনিয়ে নিয়ে আসে।
প্রায় ২৫ জন মিলিটারী সাথে সিভিল আর্মস ফোরসের একজন অফিসার। চোখ লাল করে হিংস্রভাবে সে লতিফকে বলল, “তু মুক্তি হো, জয় বাংলা করতা হো, শালা,চল হামারা সাথ। লে যা উসকো “।
লতিফের হাত আর চোখ বেঁধে ওরা নিয়ে যায়। ওই একই রাতে শরিফুল আর তাজরুল কে ও ধরে নিয়ে যায়। কোথায় নিয়ে যায় কেউ জানে না।
যে রাতের অন্ধকারে নিঃশব্দ, ক্ষিপ্র পদসঞ্চারে আঘাত হানত শত্রুকে, সেই শত্রু একদিন নির্ভুল লক্ষে আঘাত হেনে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে গেল।
৮
৬ ই ডিসেম্বর ভারত প্রথম বাংলাদেশ কে প্রথম স্বীকৃতি দেয়। ১৬ ই ডিসেম্বর পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পণ করে। সারা বাংলার মানুষ একই সাথে হাসছে আর কাঁদছে। স্বাধীনতার জন্য হাসি, দেশ স্বাধীন হয়েছে তার জন্য হাসি। কিন্তু হাসিটা ধরে রাখা যাচ্ছেনা। এত বেশী রক্তের দাম দিতে হয়েছে যে কান্নার স্রোতে হাসি ডুবে যাচ্ছে।
নীলু বাড়ীর বাইরে বের হয়ে এসেছে। মুখে হাসি, চোখে পানি । স্বাধীনতার নতুন সূর্য দেখছে, আর ভাবছে লতিফ কি জানে দেশ স্বাধীন হয়েছে, ও কি বেঁচে আছে না ওকে মেরে ফেলেছে। পাক আর্মি বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেছে এটা সমর্থিত খবর, কিন্তু ওদের কে মেরে ফেলেছে কিনা এইটার কোন সমর্থিত খবর তো আজ ও পাইনি। দেশ স্বাধীন হয়েছে, হয়ত ওরা সবাই ফিরে আসবে, আর যদি না আসে তাহলে বাংলার বিশাল প্রান্তরের কোথা ও না কোথাও অন্যান্য হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের মত ওদের ও হয়ত কবর হয়েছে। নীলুর মন বলছে লতিফ মরে নাই, ও ফিরে আসবে কোন বৃষ্টি ভেজা রাতে,রুপালী জোছনার আলোয় নীলুর নরম হাত দুটি ধরে বলবে দেখ আমি বেঁচে আছি, তোমার ভালবাসা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তাই তো তোমার কাছে ফিরে এসেছি।
সুত্রঃ
একাত্তরের দিনগুলিঃ জাহানারা ইমাম
দেয়ালঃ হুমায়ূন আহমেদ
জ্যোৎস্না ও জননীর গল্পঃ হুমায়ূন আহমেদ
এক মুক্তিযোদ্ধার হারিয়ে যাওয়া দিনগুলিঃ আকতার এম জামান।
(হৃদয়ে একাত্তর)
আর্মি আসছে ক্যাম্পাস আক্রমণ করতে।
আমি বাড়ি চললাম তুই ও বেরিয়ে যা, লতিফ শাহাদত কে কথাগুলো বলতে বলতেই ওরা গুলির আওয়াজ পেল বাইরে।
আকাশে বাতাসে শুধু গুলির শব্দ, আলোর ঝলকানি।ওরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলের পাঁচ তলায় ছিল।
চল চল তাড়াতাড়ি নীচে চল, এখানে থাকা নিরাপদ না। তাড়াতাড়ি করে সবাই নীচে নেমে আসল। উদ্দেশ্য ছিল হল থেকে বেরিয়ে যাবে, কিন্তু কেউ আর বেরোতে পারেনি।
বাইরে ভয়ানক গোলাগুলির শব্দ। লতিফরা কয়েকজন মিলে পড়ি মরি করে হলের পিছনের দিকে একটা বাথরুমে প্রবেশ করল । গাদাগাদি করে ১০/১২ জন দাঁড়িয়ে।লতিফ দেখল শাহাদত নেই, কোথায় ছিটকে পড়েছে কে জানে।
একটু পরেই আকাশ আলো হয়ে উঠতে লাগল। একবার করে আলো জ্বলে আর গুলিগোলা ছোটে। আকাশে ট্রেজার উড়ছে।
মনে হচ্ছে মিলিটারিগুলো বোমার আগুনে হলগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে।মহসীন হলের দক্ষিণে ইকবাল হল, তার ও পাশে এস এম হল। মনে হচ্ছে ভারী কামানের গোলা দিয়ে মিলিটারিরা ইকবাল হল উড়িয়ে দিচ্ছে।
অনেক গুলি মহসীন হলের দিকে ছুটে আসছিল। দেখতে তারাবাতির মত । আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছে মেশিন গানের মুখ থেকে। বাজির শব্দের গুলি। হত্যা আর ধ্বংসের উৎসব। ঢাকার ঘুমন্ত মানুষ ভয়াবহ আতঙ্ক নিয়ে জেগে উঠল।
সবাই মিলে শুধু দোয়া পড়ছে, আর আল্লাহর কাছে মোনাজাত করছে আল্লাহ মিলিটারিরা আমাদের হলে যেন না আসে।
সারারাত কেউ বেরোবার সাহস পায়নি। একটু আগেই ভোর হয়েছে। ভয়ঙ্কর রাতের পরের যে ভোর , সেখানে কিছু আশা থাকে, কিছু আনন্দ ও থাকে। দিনের আলো মানুষকে আর কিছু না দিক ভরসা দেয়। ভোরের আলো ফোঁটার সাথে সাথে পাখি ডাকতে শুরু করে, এমনকি ভোরবেলার কাকের কা কা ধ্বনিকে ও শুভ মনে হয়।
২৫ শে মার্চের ভয়ঙ্কর রাত কেটে গেছে, ভোর হয়েছে,পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। অথচ কোনরকম ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে রাতের পর আবার রাত এসেছে। রাতের পর দিন আসেনি।
লতিফদের ভয় কাটেনি, কেউ বের ও হচ্ছেনা। কি করবে বুঝতে পারছে না। গোলাগুলি থেমে গেছে। যা মারার তা তো মেরে ফেলেছে ওরা, আর কেন গুলি করবে।
একটু বেলা হবার সাথে সাথে লতিফ বাথরুম থেকে বেরিয়ে মাঠ, খানা, খোন্দল, রেল লাইন পুরো এলাকাটা হামাগুড়ি দিয়ে পাশেই এলিফ্যান্ট রোডে পালিয়ে আসে। ওখানে দুইরাত দুই দিন এক বাসায় থাকার পর আস্তে আস্তে ওর বাড়ি মাগুরার উদ্দেশে রওনা হয়। চারদিকে শুধু মানুষের ছোটাছুটি, আতঙ্ক সবার মুখে মুখে, যে যেদিকে পারে ছুটছে প্রান টা হাতে নিয়ে।
সায়েন্স ল্যাবরেটরির কাছে আসতেই লতিফ দেখে দূরে চায়ের দোকানে ৪/৫ জন মিলিটারী চা খাচ্ছে, ওকে দেখেই দুজন মিলিটারি বন্দুক উঁচিয়ে ধরল তার দিকে। ও বুঝতে পারছে না ও কি করেছে? তাকে ডাকছেই বা কেন? ।
লতিফ বুঝতে পারছে না ও কি করবে, উল্টো দৌড় দেবে কিনা তাও বুঝতে পারছে না। কারণ সবার মনে তখন মিলিটারি আতঙ্ক।
দু এক মিনিট চিন্তা করে ও মিলিটারিদের দিকে আগাতে লাগল। কাছে যেতে না যেতেই এক মিলিটারি বলে উঠল নাম কেয়া? তোর নাম কেয়া?
“কান পাকড়াও”।
এর মানে কি ? মিলিটারীরা তাকে কান ধরতে বলছে। অপরাধটা কি?
লতিফ কান ধরল।
এইবার আর এক মিলিটারি ইশারায় দেখালো কান ধরে উঠ বস করতে।
লতিফ তাই করতে লাগল। কি সুন্দর মানুষ গুলো খুব মজা পাচ্ছে।সবার মুখ হাসি হাসি।
এক্ সময় বলে যা ভাগ ইয়াছে”।
লতিফ যেন প্রান টা হাতে ফিরে পেল। যেতে যেতে মিলিটারিদেরকে গালি দিতে লাগল মনে মনে শালা কুত্তার বাচ্চা পাকিস্তানী।
লতিফ বুঝতে পারছিল না যে কি ভাবে বাড়ী যাবে। কিছুটা পথ রিকশায় গিয়ে আবার হাঁটা শুরু করল। কিছু কিছু বাস ঢাকা থেকে যাচ্ছিল। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া বাসগুলিতে মিলিটারিরা ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছিল। মিলিটারি তল্লাশি মানে কয়েকজনের মৃত্যু।
বাসে যাওয়া নিরাপদ না ভেবে একটা মহিষের গাড়িতে উঠল। কিছুদুর গিয়ে নেমে গেল। তারপর নৌকা । বালিটানা নৌকা। তিন দিন পর আধ মরা অবস্থায় লতিফ দৌলতদিয়া ঘাটে নামল। ক্ষুধায় আর পা চলছে না।
দেখল একটা বাস ফরিদপুরের দিকে যাচ্ছে। হাঁটার আর শক্তি নেই, তাই ও বাসে উঠে পড়ল।ভাবল এদিকে মনে হয় এখন আর্মি এসে পারেনি। ফরিদপুর শহরে এসে পৌছাতেই দেখল সব মানুষ ছুটাছুটি করছে। ওদের বাস থেমে গেল। সবাই বলছে আর্মিরা পুরো শহরটাকে ঘিরে ফেলেছে।
তাড়াতাড়ি বাস থামিয়ে ওরা পাশেই একটা স্কুল ঘরে আশ্রয় নিল। ক্লাস রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল। সবাই দোয়া ইউনুস পড়ছে, কারন আর্মিরা গুলি করতে করতে স্কুলের দিকে আসছিল।
ইতিমধ্যেই মিলিটারি ফায়ার করতে করতে স্কুলের পিছন দিক দিয়ে বারাদায় উঠে দরজায় লাথি মারতে শুরু করল। সেই সাথে গালি।“কাহা হ্যায়? তোম লোক বাহার আ যাও।
লতিফ তখন দুই আলমারির চিপার মধ্যে বসে আছে, যদি ও সবাই কতকগুলি বেঞ্চ আর চেয়ার দিয়ে ভেতর থেকে দরজায় চেপে ধরে রাখার চেস্টা করেছিল, যাতে মিলিটারি দরজা ভেঙ্গে ঢুকতে না পারে। বাঁচার জন্য মানুষের কি হাস্যকর প্রচেস্টা। কিন্তু ওরা দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। আমাদের সাথে ছোট ছোট তিনটা বাচ্চাও ছিল।ওরা কাউকে লাথি মেরে, কাউকে চুলের মুঠি ধরে টেনে স্কুল এর বারান্দায় দাঁড় করাতে লাগল।
এদের মধ্যে একজন মুরব্বী ছিলেন, উনি বললেন ‘ইয়ে মেরি বাল বাচ্চা, ইসকো লেকার ভাগ যা রাহি হ্যায়।ম্যায় জামাতী ইসলাম করতা,পাকিস্তান জিন্দাবাদ। আল্লাহ আকবর।
লতিফের পাছায় প্রচণ্ড এক লাথি কেউ দিল, “শালে লোগ তু জয়বাংলা করতা, স্টুডেন্ট হ্যাঁয়।
“নেহি নেহি হামকো মালুম নেহি, স্টুডেন্ট নেহি হ্যায় । ম্যায় মোটর ওয়ারকশপ মে নোকরি করতা”।
এতকিছুর ভেতরে আমি টের পাইনি যে একটা বাচ্চা আমার গেঞ্জির ভেতর মাথা ঢুকিয়ে আত্মরক্ষার চেস্টা করছে মুখ ঢুকিয়ে। আব্বা মা সবার কথা মনে পড়ল, আর হয়ত কোনদিন কারো সাথে দেখা হবেনা।নীলুর চেহারাটা ভেসে উঠল, নীলুকে কথা দিয়েছিলাম পরিক্ষা শেষ করে ওকে আমার বউ করে ঘরে নিয়ে আসব।
মুরব্বি চাচা বারবার বলতে লাগলেন হাম লোকো ছোড় দো, বাচা দিজিয়ে।।‘
আমাদের গুলি করার জন্য মিলিটারিরা রেডি, আমাদের গুলি করার আগ মুহূর্তে আল্লাহর অসীম রহমত তার নির্দেশেই “খামোশ” বলেই এক ইয়ং আর্মি অফিসার দৌড়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এল এবং গুলি না করার নির্দেশ দিল।
কয়েকবার আমাদের দিকে কর্কশ ও কঠোর চোখে তাকিয়ে জেরা করতে শুরু করল, আমরা কে? এখানে জয়বাংলার লোক আছে কি না? স্টুডেন্ট আছে কিনা? আমরা কোথায় যাচ্ছিলাম? বিভিন্ন প্রস্ন জিজ্ঞাসা করার পর কেন জানি অফিসারটির মনে দয়া হল,
“ইন লোককো ছোর দো, যানে দো, ইয়ে সাচ্চা পাকিস্তানি আদমি হ্যায়। কর্কশ ভাষায় কমান্ড করল “সামাল রাখকে সব্ লোক ভাগ যাও হিয়াসে।
অফিসারের কথা শুনার পর এক পা দুই পা করে এগুতে লাগলাম , না ওরা আমাদের গুলি করল না। আল্লাহ পাক এ যাত্রায় আমাদের বাচিয়ে দিলেন। কোনমতে পা এগিয়ে বড় রাস্তায় উঠি দেখি দুটো রক্ত ভেজা লাশ পড়ে আছে।
চৈত্র মাস, মাটি শক্ত,বড় রাস্তা থেকে নেমেই পাশেই ক্ষেতে নেমে পড়লাম, শক্ত মাটি ভেঙ্গে হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে আধা মেইল যাবার পর এক কৃষকের বাড়ির পুকুর পাড়ে এসে বসলাম । পিছনে তাকিয়ে দেখি তখন স্কুল ঘর সহ বাজারের আশে পাশের সকল বাড়িঘর দাউ দাউ করে আগুনে জলছে। ক্ষুধা, পিপাসারত সবাই, কোন টিউব ওয়েল দেখতে পেলাম না। আপাতত আজলা ভরে দুহাতে পুকুরের পানি খেয়েই নতুন করে জীবন ফিরে পাবার আনন্দ অনুভব করলাম। শুধু ভাবছিলাম যেভাবেই হোক মাগুরায় পৌঁছাতে হবে। তারপর হাটা ধরলাম রাতের অন্ধকারে হাটতে হাটতে মধুখালী এসে পোঁছালাম। তারপর কামার খালী হয়ে পারনান্দুয়ালী গ্রামে আমাদের বাড়িতে
পৌঁছালাম।
কদিনেই মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, রক্তাভ চোখ, উষ্কখুষ্ক চুল নিয়ে লতিফ বাড়ীতে ঢুকল।
মা, তোমরা কোথায়, মা। বাড়িতে ঢুকেই লতিফ মাকে ডাকতে লাগল।
২।
লতিফদের বাড়ি যশোর জেলার মাগুরা মহাকুমায় পারনান্দুয়ালী গ্রামে। এই গ্রামে ওই প্রথম ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। ওর বাবা স্থানীয় পোষ্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার। এই বছরই ওর মাস্টারস ফাইনাল পরীক্ষা দেবার কথা ছিল।
সন্ধ্যার সময় লতিফদের বারাদায় লতিফ, লতিফের মা, বাবা, চাচাতো বোন শীলা (কলেজে পড়ে ), পাশের বাড়ীর রবিউল,(মাগুরার কলেজে বি এস সি পরে।)তাজরুল ( একটা মুদিখানার দোকান চালায়) ওরা ও এসেছে ওর মুখ থেকে সব শুনবার জন্য।
রবিউল বলল ভাইজান আমরা গ্রামে বসে একটু একটু শুনছি, যশোরে ও কারফিউ দিয়েছিল, মিলিটারিরা অনেক মানুষ মেরে ফেলেছে, যশোর এখন ফাকা, সব মানুষ গ্রামের দিকে চলে গেছে। তুমি তো ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ছিলে তুমি তো সচক্ষে সব দেখেছ, আমাদেরকে সব বল।
লতিফ বলতে লাগল, সাধারন নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতিয় পরিষদে আওয়ামী লীগ একক সঙ্খাগরিশটতা পাওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করে। “১লা মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেলা একটার সময় রেডিওতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে। সঙ্গে সঙ্গে সব জায়গায় হৈ চৈ পড়ে যায়। লোকেরা দলে দলে অফিস আদালত ছেড়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পরে, ছেলেরা সবাই দলে দলে ক্লাস থেকে ,হল থেকে বেরিয়ে বটতলায় জড়ো হয়। শেখ মুজিব ২ রা মার্চ ঢাকা শহরে , আর ৩ রা মার্চ সারা দেশে হরতালের ডাক দেয়। আর ৭ ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে মিটিং এর ঘোষণা করে। আমরা তখনই বুঝতে পারছিলাম, গোলমাল হবে এবং তা বড় আকারে।
তোরা কি জানিস সাধীন দেশের পতাকা ও উত্তোলন করা হয়েছে, সবুজের মাঝে লাল বৃত্ত তার ভেতরে হলুদ রঙ এর বাংলাদেশ এর ম্যাপ। পল্টনের জনসভায় শেখ মুজিবের উপস্থিতিতে “ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি এই গানটা ও গেয়েছে।
ইয়াহিয়া খানের সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠক ব্যর্থ হয় ঢাকায়। ভুট্টোর প্ররোচনায় বাঙ্গালী জাতিকে চিরদিনের মত ধ্বংস করে দেবার বিশাল এক ষড়যন্ত্র শুরু হয় গোপনে। বঙ্গবন্ধু বুঝে গেলেন ওরা কখনই ক্ষমতা হুস্তান্তর করবে না।
সাথে সাথে শীলা বলল, হা সেই জন্যই তো শেখ মুজিব ৭ই মার্চ ভাষণে সবাধীনতার ডাক দিয়েছেন “ তোমাদের কাছে যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আর দেব, তবু এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম সাধীনতার সংগ্রাম”।
হ্যাঁ শেখের এই ভাষণের পরেই তো প্রতিদিন প্লেনে করে সাদা পোশাকে প্রচুর মিলিটারি এসে নেমেছে বিমানবন্দরে। চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র বোঝা জাহায এসে ভিড়েছে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে, সে অস্ত্র চট্রগ্রামের বীর বাঙ্গালীরা খালাস করতে দেবেনা বলে মরনপন করে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছে। ওদের কে ছত্র ভঙ্গ করার জন্য মিলিটারি ওদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে।
২৩ শে মার্চ ছিল প্রতিরোধ দিবস, সেই দিন সব অফিস আদালতে ঢাকার অনেক বাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশ এর পতাকা উড়িয়েছে। আর ২৫ শে মার্চ রাতেই ওরা নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। কত মানুষকে যে মেরে ফেলেছে তার কোন হিসাব নেই।
জানিস ২৭ ২৮ শে মার্চ মেজর জিয়া চত্রগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।আমার মনে হ্য় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। বহু জায়গায় বাঙ্গালী আর্মি অফিসাররা রিভোলড করছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ই পি আর, ই বি আর পুলিশ আন্ সারের লোকজন।
এতক্ষণে ওর বাবা বললেন বাবা সবখানে তো শুধু জল্লাদের নৃশংস হত্যার উল্লাস হাতবাধা চোখবাধা অসহায় নিরীহ জনগনের উপর হায়েনাদের ঝাপিয়ে পড়ার নিষ্ঠুর মত্ততা। আর যুদ্ধ শুরু হলে ও পাকিস্তানী মিলিটারিরা তাদের আধুনিকতম মারনাস্ত্র দিয়ে বিদ্রোহী বাঙ্গালীদের গুড়িয়ে মাটিতে পিষিয়ে ফেলবে।
জানিনা বাবা কি হবে তবে যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে।এভাবে আর কতদিন আমরা নির্যাতিত হব।
৩
নীলু আর লতিফ পাশাপাশি বসে আছে।
নীলু লতিফের ভালবাসার মানুষ। লতিফের মায়ের ও খুব পছন্দ। ইচ্ছা ছিল ছেলে এম এ পাশ করে আসলেই বিয়ে দিয়ে বউ ঘরে নিয়ে আসবেন।
দুজনেই চিন্তিত। দেশের অবস্থা ভাল না।
চারদিকে মানুষের ছোটাছুটি। মানুষ প্রানের ভয়ে এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রামে ছুটে বেড়াচ্ছে।
নীলু আমি যুদ্ধে যাব।
কিন্তু কোথায় যাবে, কোথায় যুদ্দ হচ্ছে। তোমাদের তো কোন অস্ত্র নেই, এভাবে যুদ্ধ করলে তো তোমরা সবাই মারা যাবে।
জানিনা তবে শুনেছি সবাই সিমান্তের ওপারে গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, অনেকেই গিয়েছে, আমি ও যাব। ও পাড়ার তাজরুল, শরিফুল এক সপ্তাহ হল সীমান্তের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
খুব শীগ্রই ৩/৪ জনের একটা দল আবার রওনা হবে,ওদের সাথে আমি ও যাব।
পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হলে এদেশে একদিন সাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়বে।আমরা স্বাধীন দেশে বাস করব। আমাদের আর কোন কস্ট থাকবে না।
নীলু আমি যদি কোনদিন ফিরে না আসি, আমাকে ক্ষমা করে দিও।
তোমাদের সাথে যেতে পারলে আমার ও ভাল লাগত, কিন্তু তা তো সম্ভব নয়।
দেশের জন্য কিছু করতে আমার ও যে মন চায়।
৪
এপ্রিল মাসের শেষ দিক।
লতিফ, ওর ছোট চাচার ছেলে রবিঊল, আর ওদের গ্রামের ছেলে হেমায়েত এই তিনজন পায়ে হেঁটে অজানা ভারতের পথে ট্রেনিং নেবার উদ্দেশে বের হল ।
সাথে ১৪০ টাকা পাকিস্তানী মুদ্রা, আর এক সাইড ব্যাগে একটা জামা, প্যান্ট, কিছু চিড়া,পাটালি, আর একটা কাসার থালা।কাসার থালা টা মা জোর করে দিয়ে দিয়েছেন। এতে খাওয়া বাসনের কাজ ও সেই সাথে বিপদে পড়লে বিক্রয় করে কিছু পয়সা পাব, বিপদের সময় কাজে লাগবে এই আশায়।
গ্রামের বাড়িতে আস্রয় নিয়ে তিন দিন তিন রাত পর কালিগঞ্জ, ঝিনাইদাহ, কুস্টিয়ার রাস্তা ক্রস করে চারদিনের দিন দুপুরের পর চৌগাছা বর্ডারের কাছে সীমান্তে থামলাম । সন্ধ্যার মধ্যে ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে বনগাঁ পৌঁছে একটা আশ্রয় খুজছিলাম। চারদিকে রিফিউজে ভর্তি। বৃষ্টি হয়েছে, কাঁদা পানি স্যাঁতস্যাঁতে। রাস্তার পাশে ডোবার উপরে “অন্নপূর্ণা মা দুর্গা হোটেল রেস্তোরা” সাইনবোর্ড দেখে ঢুকে পড়লাম।
তিনদিন পর লুচি আর লাবড়া পেয়ে গোগ্রাসে গিলে ফেললাম।
দাম দেবার সময় বললাম ভারতীয় টাকা নেই।
দোকানী বললেন তাতে কি আপনারা জয়বাংলা থেকে এসেছেন। এবেলা লাগবে না দাদা।
রাত্রে থাকতে চান, তিন জনের জায়গা হবে। দোকানের পিছনে ছোট দুই তিনটা রুম আছে। আর কয়েকজনের সাথে আপনারা ও থাকতে পারেন এ রাতটা। রাতে আর যাবেন কোথায়, এত কস্ট করে ৪ দিন পায়ে হেটে এখানে এসেছেন, রাতটা কস্ট করে থেকে না হয় সকালে রওনা দেবেন।
উনি আর বললেন , এখানে আওয়ামীলীগের কিছু নেতা আছেন যারা রিফিউজি ক্যাম্পের দায়িত্তে আছেন। ওখানে সকালে দেখা করতে পারেন।
আমরা সানন্দে রাজী হয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই রিফিউজি ক্যাম্পের দায়িত্তে থাকা এম পি সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলাম।
উনি বললেন আপাতত তোমরা এখানে বিশ্রাম নাও দুই দিন তারপর তোমাদের সময় সুযোগ মত ট্রেনিং এ পাঠাব।
এখানে থাকতেই আমাদের শপথ নিতে হল, ট্রেনিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। আমাদের কোথায় নেওয়া হবে তা জানানো হবে না।শুধু নির্দেশ অনুসরন করতে হবে। ত্যাগ স্বীকার করে শহীদ হবার মানসিকতা থাকতে হবে, বাবা, মা, ভাই, বোন, প্রেমিকা কারো জন্য বিন্দুমাত্র কোন ইমোশন থাকলে হবেনা। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার মানসিকতা থাকতে হবে।
আমাদেরকে শিলাগুরি ট্রেনিং ক্যাম্পে নেওয়া হল। প্রায় এক সপ্তাহ ফিজিক্যাল ট্রেনিং আর মেন্টাল ফিটনেস পর্ব শেষ করে মুল ট্রেনিং এর জন্য জল পাইগুড়ির বিমানবাহিনীর দফতর বাগডোরা থেকে সামরিক বিমানে করে দেরাদুনের টান্দুয়া গেরিলা ক্যান্টনমেন্ট এ নিয়ে যাওয়া হল। ।
প্রতিদিন সকালে ভোরবেলা বিউগল বাজার সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠেই প্রাতঃকাজ সেরেই ৬টায় প্যারেড গ্রাউন্ডে পিটি, সকাল আটটায় প্রাতঃভোজ পুরী চানা ডাল, ৯ টায় থিওরী ক্লাস, দুপুর দুইটায় রুটি আর লাবড়া দিয়ে দুপুরের খাবার। দুইটা থেকে ৫ টা পর্যন্ত প্রাক্টিকাল ক্লাস।ছোট ছোট গ্রুপ এ ভাগ হয়ে শুটিং প্রাকটিস, ,গ্রেনেড ছোড়া, খালি হাতে ধারালো বেয়নেট দিয়ে শত্রুকে ঘায়েল করা সব শিখতে লাগলাম।
৫
লতিফরা মাগুরায় ফিরে এসেছে আজ কয়েকদিন হল। অক্টোবার মাস। ওদের সবাই কে কিছু দায়িত্ত দিয়ে এখানে পাঠানো হয়েছে।
লতিফ আছে সজল মাস্টারের বাড়িতে, এখানেই ওদের প্লান হয় ওরা কি করবে, কি ভাবে পাকিস্তানী সেনাদের ঘায়েল করবে।
বাড়ি যেতে পারছে না কারন এর মাঝেই রশিদ রাজাকার কয়েকবার ওর বাবাকে ওর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছে, কোথায় থাকে, কি করছে, দেখি না কেন?
নভেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহ। চারদিকে কেমন একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। সকলেরই মনের অবস্থা খারাপ। দুঃখ, হতাশা, ভয়, ভীতি সব যেন মানুষকে পাগল বানিয়ে ছাড়ছে। তার উপর রয়েছে রাজাকারের ভয়, যে কোন সময় ধরা পড়ার ভয়।
ওদের গ্রুপ এর ওপর দায়িত্ত পড়ল মাগুরা টু মুহম্মদপুর থানার মাঝে বিনোদপুর লোহার ব্রিজ ঊড়িয়ে দেয়া এবং সেই সাথে মুহম্মদপুর থানা সদরে পাক বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমন করা।
কয়েকদিন আগে থেকেই ওরা সব তথ্য নিয়েছে, এ ব্যাপারে মাস্টার সাহেব ওদের সাহায্য করেছে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে। নির্দিষ্ট সময়ে ওরা প্রায় ৮/১০ জন ওখানে পৌঁছে দেখে দুজন রাজাকার পাহাড়া দিচ্ছে। খুব কৌশলে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের ঘায়েল করে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়।
আর এর মাঝেই অন্য ৬ জন করটেজ কেবল লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, সময় খুবই কম, কারন এই সময়ের মধ্যে মাগুরা শহর থেকে পাকিস্তানী বাহিনীর থানা ক্যাম্পের মিলিটারিরা পৌছাতে না পারে সেদিকে ও খেয়াল রাখতে হবে।
ওরা খুব তাড়াতাড়ি ব্রিজের চার পিলার এর শেষ প্রান্তে একটা ডেটোনেটর ঢুকিয়ে ডেটোনেটর টিকে নরম বা ইটের মত শক্ত জি ই স্লাব মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। খুব সাবধানে পরে শক্ত টেপ দিয়ে ব্রিজের চারটা পিলারের গায়ে শক্ত করে সেট করে । চার পিলারের জন্য কে জি স্লাব চারটি সারকিট এর আলাদা করটেক্স ক্যাবল এরপর ব্রিজ এর গোড়ায় দুই মাথায় নীচে মাটির মধ্যে দুইটা জি ই স্লাব সব মিলিয়ে মোট ছয়টা সারকিট ক্যাবল সেট করার পরে ছয়টা চার্জ পয়েন্ট এর মাথা একসাথে টেনে টেপ দিয়ে একত্রে একটি একটি করে টাইম ফিউজ এ ঢুকিয়ে ফায়ার দিতে হবে। এবং যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে। কারন পাঁচ মিনিটের টাইম ফিউজ ব্যবহার করে চার্জ অন করলে ঠিক পাচ মিনিট অদৃশ্য আগুন টাইম ফিউজ এর মধ্যে জ্বলতে জ্বলতে করটেক্স এর মাথায় লম্বা আঙ্গুলের মত সিলভার ডেটোনেটর নিজে বিস্ফোরন করে তৎক্ষণাৎ একই সাথে হাই এক্সপ্লোসিভ ডিনামাইটকে বিস্ফোরণ করতে সাহায্য করে।
ওরা মেশিন সেট করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। আর সাথে সাথে বিকট শব্দে ব্রিজটি ধ্বংস হয়ে গেল, এবং আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মিলে ওই সময়েই মুহম্মদপুর থানা আক্রমন করে পাকিস্তানীদের পরাজিত করে ক্যাম্প দখল করে নেয়।
৭।
নভেম্বার মাসের ৩য় সপ্তাহ। লতিফের গ্রুপ খবর পেল ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস স্টেশনের ডিজেল শেষ হয়ে গেছে। ভাটিয়াপারা গোপাল গঞ্জ জেলা সদর থেকে উত্তরে মধুমতী নদীর তীরে অবস্থিত। নদীর ওপাড়ে নড়াইল জেলা।মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী বাহিনি সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে। ঈদের দিন পাকিস্তানী সেনারা নড়াইল থেকে সেখানে ডিজেল নিয়ে যাবে। কারন ওই ওয়্যারলেসে বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল জেনারেটরের মাধ্যমে। জেনারেটর চালানোর জন্য প্রয়োজন হত ডিজেলের। পাকিস্তানিরা কিছুদিন পর পর ডিজেল আনত ফরিদপুর, গোপালগঞ বা নড়াইল থেকে।
লতিফরা সিধান্ত নিল, পাকিস্তানী সেনারা যখন ডিজেল নিয়ে যাবে, তখন আক্রমন করবে। নড়াইল থেকে তারা আসবে সড়কপথে। পথে ছোট নবগঙ্গা নদী পার হয়ে তারপর মধুমতী নদী। এই নদী পার হতে হবে গানবোটে।
লতিফ তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঈদের আগের রাতে অবস্থান নিল নবগঙ্গা নদীর পারে।
ভোর হয় হয়, এ সময় ওরা দেখতে পেল, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ছয়টি জিপ আসছে। কাছে আসতে আসতেই ওরা পাকিস্তানীদের উপর গুলি করা শুরু করে।
পাকিস্তানী সেনারা ও দ্রুত জিপ থামিয়ে আড়ালে পজিশন নিয়ে আক্রমন শুরু করে। নিমেষে শান্ত এলাকা পরিণত হল রণক্ষেত্রে।
যেহেতু পাকিস্তানীরা অবস্থান নিয়েছে জিপের আড়ালে , মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমনে তাদের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। তাই মুক্তি সেনারা মাথা দেখে গুলি করতে লাগে। এই কৌশলে বেশ কাজ হল। তাদের হাতে একের পর এক পাকিস্তানী সেনা নিহত আর আহত হতে থাকে।আর যা বাকী ছিল তারা পালিয়ে যায়।
এই দুটো ঘটনার পর পাকিস্তানী মিলিটারীরা মরিয়া হয়ে উঠল মুক্তিবাহিনীর খোঁজে।
লতিফ আর তার সহযোদ্ধারা জায়গা পরিবর্তন করল। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে কোন এক রাত। লতিফ নিলুদের বাড়িতে ছিল। রাতের অন্ধকারে হঠাত দরজায় লাথির শব্দ। পালাবার কোন পথ নেই। মিলিটারিরা প্রথমে ওদের বাড়ি যায় ওখানে না পেয়ে নীলুদের বাড়িতে আসে। রশিদ রাজাকার পথ চিনিয়ে নিয়ে আসে।
প্রায় ২৫ জন মিলিটারী সাথে সিভিল আর্মস ফোরসের একজন অফিসার। চোখ লাল করে হিংস্রভাবে সে লতিফকে বলল, “তু মুক্তি হো, জয় বাংলা করতা হো, শালা,চল হামারা সাথ। লে যা উসকো “।
লতিফের হাত আর চোখ বেঁধে ওরা নিয়ে যায়। ওই একই রাতে শরিফুল আর তাজরুল কে ও ধরে নিয়ে যায়। কোথায় নিয়ে যায় কেউ জানে না।
যে রাতের অন্ধকারে নিঃশব্দ, ক্ষিপ্র পদসঞ্চারে আঘাত হানত শত্রুকে, সেই শত্রু একদিন নির্ভুল লক্ষে আঘাত হেনে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে গেল।
৮
৬ ই ডিসেম্বর ভারত প্রথম বাংলাদেশ কে প্রথম স্বীকৃতি দেয়। ১৬ ই ডিসেম্বর পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পণ করে। সারা বাংলার মানুষ একই সাথে হাসছে আর কাঁদছে। স্বাধীনতার জন্য হাসি, দেশ স্বাধীন হয়েছে তার জন্য হাসি। কিন্তু হাসিটা ধরে রাখা যাচ্ছেনা। এত বেশী রক্তের দাম দিতে হয়েছে যে কান্নার স্রোতে হাসি ডুবে যাচ্ছে।
নীলু বাড়ীর বাইরে বের হয়ে এসেছে। মুখে হাসি, চোখে পানি । স্বাধীনতার নতুন সূর্য দেখছে, আর ভাবছে লতিফ কি জানে দেশ স্বাধীন হয়েছে, ও কি বেঁচে আছে না ওকে মেরে ফেলেছে। পাক আর্মি বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেছে এটা সমর্থিত খবর, কিন্তু ওদের কে মেরে ফেলেছে কিনা এইটার কোন সমর্থিত খবর তো আজ ও পাইনি। দেশ স্বাধীন হয়েছে, হয়ত ওরা সবাই ফিরে আসবে, আর যদি না আসে তাহলে বাংলার বিশাল প্রান্তরের কোথা ও না কোথাও অন্যান্য হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের মত ওদের ও হয়ত কবর হয়েছে। নীলুর মন বলছে লতিফ মরে নাই, ও ফিরে আসবে কোন বৃষ্টি ভেজা রাতে,রুপালী জোছনার আলোয় নীলুর নরম হাত দুটি ধরে বলবে দেখ আমি বেঁচে আছি, তোমার ভালবাসা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তাই তো তোমার কাছে ফিরে এসেছি।
সুত্রঃ
একাত্তরের দিনগুলিঃ জাহানারা ইমাম
দেয়ালঃ হুমায়ূন আহমেদ
জ্যোৎস্না ও জননীর গল্পঃ হুমায়ূন আহমেদ
এক মুক্তিযোদ্ধার হারিয়ে যাওয়া দিনগুলিঃ আকতার এম জামান।
(হৃদয়ে একাত্তর)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আফিয়া খাতুন মলি ১৩/১২/২০১৩ভালো লিখেছো ইয়াসমিন।
-
সুবীর কাস্মীর পেরেরা ১২/১২/২০১৩খুব ভাল লাগল
-
אולי כולנו טועים ০১/১২/২০১৩khub valo laglo.
ref hisabe neya prothom tinti boi ami porechi -
amar priyo boigulo.
suveccha roilo. -
প্রবাসী পাঠক ৩০/১১/২০১৩অনেক রক্তের দাম দিয়ে কেনা আমাদের এই স্বাধীনতা। তবে কষ্ট লাগে রশিদ রাজাকাররা এখনও বাংলার আলো বাতাসে বেঁচে আছে।
অনেকদিন পর আপু আপনার পোষ্ট পেলাম ব্লগে , খুব ভাল লাগল। আপু, বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে বাকি লেখাগুলো কবে পাচ্ছি? -
ডাঃ প্রবীর আচার্য নয়ন ৩০/১১/২০১৩খুব ভালো লেগেছে লেখা। আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইল
-
সুলতান মাহমুদ ৩০/১১/২০১৩মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। একদম জীবন্ত যেন আমি যুদ্ধের ময়দানে দাড়িয়ে। লেখক কে ধন্যবাদ।