বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান
বাংলাদেশ এর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ঘটনা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহস, বীরত্ব ও আত্মত্যাগ, অগনিত শহীদের রক্ত এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সীমাহীন ত্যাগ ও সংগ্রামের ভেতর দিয়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের মধ্যরাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আকস্মিক আক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই এ দেশের সব শ্রেনী-পেশার মানুষ মিলিতো হয়েছিল মুক্তির অভিন্ন মোহনায়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করে মাত্র নয় মাসের মধ্যে সবাই মিলে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছিল।
বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অগনিত সাধারন মানুষের অসাধারণ যোদ্ধায় পরিনত হওয়ার রুদ্ধশ্বাস কাহিনী। ছাত্র যুবক ক্রিশক- শ্রমিকসহ সর্বস্তরের সাধারন মানুষ কোন ধরনের প্রশিক্ষন ও পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই দেশের ডাকে শত্রুর বিরুদ্ধে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। ১৯৭১ সালে তাঁরা সুশৃঙ্খল ও অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধ করেছিলেন, তা অবিশ্বাস্য।
স্বাধীনতা যুদ্ধে সাত জন মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব পেয়েছেন। এদের মধ্যে মতিউর রহমান একজন।
উনার পৈত্রিক বাড়ী নরসিংদী জেলায়। শহীদ হন ২০ শে আগস্ট ১৯৭১।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ছিলেন মতিউর রহমান। তাঁর কর্মস্থল ছিল পাকিস্তানের করাচির মশরুর বিমান ঘাঁটিতে। ১৯৭১ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসেন। ১ লা মার্চ তাঁর ছুটি শেষ হলে ও তিনি পাকিস্তানে যান নি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যান। ৬ মে তিনি করাচি ফিরে যান।
করাচিতে যাওয়ার কিছুদিন পর মতিউর মনে মনে পরিকল্পনা করতে থাকেন কি ভাবে পাকিস্তানী বিমানবাহিনীর একটি বিমান ছিন্তাই করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া যায়। তাঁর এ পরিকল্পনার কথা তিনি কাউকে বলেন নি। এমন কি নিজের স্ত্রীকে ও বুঝতে দেন নি।
দেশে আসার আগে মতিউর পাকিস্তানি শিক্ষানবিশ পাইলট রাশেদ মিনহাজকে বিমান উড্ডয়ন শিক্ষা দিতেন। গ্রাউন্ডেড হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেন মিনহাজ যখন প্লেন নিয়ে উড়তে যাবেন, তখন তিনি ওই প্লেনে চড়ে সেটি ছিনতাই করবেন। বিমান ঘাঁটির কাছাকাছি সীমানের ওপাড়ে আছে ভারতের এক বিমানঘাঁটি। বিমান ছিনতাই করতে পারলে তিনি সেখানে যাবেন।
মতিউর তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তারিখ নির্ধারণ করেন ২০ শে আগস্ট, শুক্রবার। সেদিন বেলা ১১ টায় মিনহাজের একাই টি ৩৩ বিমান নিয়ে ওড়ার সিডিউল ছিল। আর কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে এ বিমানের যোগাযোগের সাংকেতিক নাম ছিল "ব্লু বার্ড"। সেদিন নির্ধারিত সময় মিনহাজ বিমান নিয়ে ৪ নম্বর ট্যাক্সি- ট্রাক দিয়ে রানওয়েতে ঢোকার জন্য এগিয়ে আস্তে থাকেন। এ সময় মতিউর ও নিজের গাড়ি চালিয়ে ওই ট্যাক্সি-- ট্রাকে রওনা দেন। বিমান্টি সেখানে একটি টিলার আড়ালে পৌঁছামাত্র তিনি বিমান থামানোর সংকেত দেন।
তাঁর সংকেত শুনে মিনহাজ বিমান থামান। কারণ, কন্ট্রোল টাওয়ার ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার পর ও ফ্লাইট সেফটি অফিসার কোন বৈমানিককে বিমান থামানোর সংকেত দিলে তিনি বিমান থামাতে বাধ্য। মতিউর সেফটি অফিসারের এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।
মতিউর দ্রুতগতিতে বিমানের ককপিঠে উঠে পড়েন। এর একটু আগে একটি যুদ্ধবিমান অবতরণ করায় তখন রানওয়ে খালিই ছিল। হকচকিত মিনহাজ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি বিমান্টি রানওয়েতে নিয়ে আকাশে ওড়ান। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমানটি দিগন্তে মিলিয়ে যায়। তবে মতিউর বিমান্টির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিতে পারেন নি। আকাশে ওড়ার পর দুজনের ধস্তাধস্তিতে চলা অবস্থায় সেটি বিধ্বস্ত হয় এবং তারা দুজনই নিহত হন।
সুত্র " একাত্তরের বীরযোদ্ধা" প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত
বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অগনিত সাধারন মানুষের অসাধারণ যোদ্ধায় পরিনত হওয়ার রুদ্ধশ্বাস কাহিনী। ছাত্র যুবক ক্রিশক- শ্রমিকসহ সর্বস্তরের সাধারন মানুষ কোন ধরনের প্রশিক্ষন ও পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই দেশের ডাকে শত্রুর বিরুদ্ধে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। ১৯৭১ সালে তাঁরা সুশৃঙ্খল ও অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধ করেছিলেন, তা অবিশ্বাস্য।
স্বাধীনতা যুদ্ধে সাত জন মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব পেয়েছেন। এদের মধ্যে মতিউর রহমান একজন।
উনার পৈত্রিক বাড়ী নরসিংদী জেলায়। শহীদ হন ২০ শে আগস্ট ১৯৭১।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ছিলেন মতিউর রহমান। তাঁর কর্মস্থল ছিল পাকিস্তানের করাচির মশরুর বিমান ঘাঁটিতে। ১৯৭১ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসেন। ১ লা মার্চ তাঁর ছুটি শেষ হলে ও তিনি পাকিস্তানে যান নি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যান। ৬ মে তিনি করাচি ফিরে যান।
করাচিতে যাওয়ার কিছুদিন পর মতিউর মনে মনে পরিকল্পনা করতে থাকেন কি ভাবে পাকিস্তানী বিমানবাহিনীর একটি বিমান ছিন্তাই করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া যায়। তাঁর এ পরিকল্পনার কথা তিনি কাউকে বলেন নি। এমন কি নিজের স্ত্রীকে ও বুঝতে দেন নি।
দেশে আসার আগে মতিউর পাকিস্তানি শিক্ষানবিশ পাইলট রাশেদ মিনহাজকে বিমান উড্ডয়ন শিক্ষা দিতেন। গ্রাউন্ডেড হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেন মিনহাজ যখন প্লেন নিয়ে উড়তে যাবেন, তখন তিনি ওই প্লেনে চড়ে সেটি ছিনতাই করবেন। বিমান ঘাঁটির কাছাকাছি সীমানের ওপাড়ে আছে ভারতের এক বিমানঘাঁটি। বিমান ছিনতাই করতে পারলে তিনি সেখানে যাবেন।
মতিউর তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তারিখ নির্ধারণ করেন ২০ শে আগস্ট, শুক্রবার। সেদিন বেলা ১১ টায় মিনহাজের একাই টি ৩৩ বিমান নিয়ে ওড়ার সিডিউল ছিল। আর কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে এ বিমানের যোগাযোগের সাংকেতিক নাম ছিল "ব্লু বার্ড"। সেদিন নির্ধারিত সময় মিনহাজ বিমান নিয়ে ৪ নম্বর ট্যাক্সি- ট্রাক দিয়ে রানওয়েতে ঢোকার জন্য এগিয়ে আস্তে থাকেন। এ সময় মতিউর ও নিজের গাড়ি চালিয়ে ওই ট্যাক্সি-- ট্রাকে রওনা দেন। বিমান্টি সেখানে একটি টিলার আড়ালে পৌঁছামাত্র তিনি বিমান থামানোর সংকেত দেন।
তাঁর সংকেত শুনে মিনহাজ বিমান থামান। কারণ, কন্ট্রোল টাওয়ার ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার পর ও ফ্লাইট সেফটি অফিসার কোন বৈমানিককে বিমান থামানোর সংকেত দিলে তিনি বিমান থামাতে বাধ্য। মতিউর সেফটি অফিসারের এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।
মতিউর দ্রুতগতিতে বিমানের ককপিঠে উঠে পড়েন। এর একটু আগে একটি যুদ্ধবিমান অবতরণ করায় তখন রানওয়ে খালিই ছিল। হকচকিত মিনহাজ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি বিমান্টি রানওয়েতে নিয়ে আকাশে ওড়ান। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমানটি দিগন্তে মিলিয়ে যায়। তবে মতিউর বিমান্টির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিতে পারেন নি। আকাশে ওড়ার পর দুজনের ধস্তাধস্তিতে চলা অবস্থায় সেটি বিধ্বস্ত হয় এবং তারা দুজনই নিহত হন।
সুত্র " একাত্তরের বীরযোদ্ধা" প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
প্রবাসী পাঠক ২১/১১/২০১৩
আর হতাশ এই পোষ্টে কোন কমেন্ট না দেখে। মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা কোন পোস্ট কমেন্ট বিহীন সত্যি হতাশাজনক।